নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঞ্চল্যকর কালিদাশ বড়াল হত্যাকাণ্ডের রায়!! কিছু প্রশ্ন!! রেজা ঘটক

০৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:০৮

বাগেরহাটের জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ও চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কালিদাস বড়াল হত্যা মামলায় আদালত দুই সহোদরসহ পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম সোলায়মান এ রায় ঘোসণা করেন। একই সঙ্গে এ মামলার দায় থেকে নয় আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত। দীর্ঘ ১২ বছর নয় মাস পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হল। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কেবল আলমগীর সিদ্দিকী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন আসামি পলাতক রয়েছে। মামলার বিচার কার্য চলাকালে অভিযোগপত্রভূক্ত পাঁচ আসামির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ক্রসফায়ার ও গণপিটুনিতে চারজন নিহত হয় এবং একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরোও দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন আদালত।

এদিকে আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন যে, পাঁচ আসামিগণ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু মামলা চলাকালে আসামিগণ মুত্যুবরণ করায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া গেল। বিগত ২০০০ সালের ২০ আগস্ট বাগেরহাট শহরের ব্যস্ততম এলাকা সাধনার মোড়ে রাস্তার ওপর প্রকাশ্যে আসামিরা কালিদাস বড়ালকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরের দিন ২১ আগস্ট তাঁর স্ত্রী হ্যাপী বড়াল পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে বাগেরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোপত্র দাখিল করে। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ গত ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর অধিকতর তদন্ত শেষে উক্ত ২২ আসামির বিরুদ্ধে ফের অভিযোপাত্র দাখিল করে। পুলিশের ওই অভিযোগপত্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পাটির আঞ্চলিক কমাণ্ডার আব্দুর রশিদ তাপু ওরফে মামুনসহ চরমপন্থী দলের কয়েক জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে বিচারের জন্য বাগেরহাট থেকে গত ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল খুলনায় পাঠানো হয়। পরে ‌একই বছরের ১৯ অক্টোবর মামলাটি পুনরায় জেলা জজ আদালতে বিচারের জন্য ফেরত আসে।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার রহমতপুর গ্রামের আলমগীর সিদ্দিকী ও তার সহোদর নাসির সিদ্দিকী, একই উপজেলার কলতলা গ্রামের স্বপন সরদার, ঘোলা গ্রামের শহিদুর রহমান ওরফে বাবলু কাজী, ও বড়বাড়িয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম ওরফে সাঈদ ফকির। এ ছাড়া মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার চর গ্রামের বাবলু মোল্যা, সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মানিক ও বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার রহমতপুর গ্রামের শওকত সিদ্দিকী।

উল্লেখ্য, চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণার পর নিহত কালিদাস বড়ালের পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

কালিদাশ বড়াল হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণসমূহ:

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতার নাম ছিল কালিদাস বড়াল। কালিদাস বড়ালরা দুই ভাই। অশোক বড়াল ও কালিদাস বড়াল। খাসেরহাটের সবচেয়ে ধর্ণাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবার হল তারা। এরশাদের আমলে কালিদাস বড়াল চিতলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন কালিদাস বড়াল জাতীয় পার্টি করতেন। সুধাংশু শেখর হালদার, অশোক বড়াল আর কালিদাস বড়াল হলেন ভায়রা। সুধাংশু শেখর হালদারের স্ত্রী সাধনা হালদার বর্তমানে সংসদে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মহিলা সাংসদ। সাধনা হালদার, নমিতা হালদার ও হ্যাপি হালদারের বাবা ছিলেন পিরোজপুরের নাজিরপুরের ঘোষকাঠি ইউনিয়নের সবচেয়ে ধর্ণাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সুধাংশু শেখর হালদার পিরোজপুরের দুইবারের নির্বাচিত সাংসদ। অশোক বড়ালের বিয়ের পর কালিদাস বড়াল বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে ভাগিয়ে নিয়ে বাগেরহাট গিয়ে বিয়ে করেন। কালিদাস বড়াল খুব ভালো ফুটবল খেলোয়ার, একজন দক্ষ রাজনৈতিক সংগঠক এবং বলিষ্ঠ নের্তৃত্বগুনের অধিকারী ছিলেন। আমার বড় ভাইয়ের ক্লাশফ্রেন্ড হিসাবে আমাদের বাড়িতে খুব আসতেন।

কালিদাস বড়ালকে আমরা ডাকতাম কালা'দা। কালা'দা ছিলেন আমার ছোটবেলার প্রথম আইডল। কালা'দার বাবা ছিলেন আমার কাকার শিক্ষক। কালা'দাদের বাড়িতে থেকে আমার কাকা হাইস্কুলের পড়ালেখা শেষ করেছিলেন। আর কালা'দার বাবা ছিলেন আমার বাবার পরম বন্ধু। পারিবারিকভাবেই কালা'দার পরিবারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। অশোক দা'র চেয়ে কালা'দা ছোটবেলা থেকেই নায়ক। ছোটবেলায় কালা'দা ফুটবল খেলা দেখার জন্য অনেক দূরের মাঠেও যেতাম আমি। পরে আমাদের খেলায় কালা'দা রেফারি থাকতো। কালা'দা ছিলেন আমাদের সকল কিশোর-তরুণদের আইডল।

কালা'দা তৎকালীন রাষ্টপতি এরশাদের সঙ্গে দেখা করলে, এরশাদ তাকে বলেছিলেন, তুই নাকি এলাকায় আমার চেয়েও জনপ্রিয়? জবাবে কালা'দা বলেছিলেন, হ্যা। জবাবে এরশাদ বলেছিলেন, তুই হিন্দুর ছেলে না হয়ে কোনো মুসলমানের ছেলে হলে একদিন এই আমার চেয়ারে বসতি! সত্যিই কালা'দার সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। যে দু্'বার কালা'দা চিতলমারীর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন, তখন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বির হামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে কালা'দা আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও তার জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি বরং বেড়েছিল। কালা'দার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন শেখ হাসিনার কাজিন শেখ হেলাল। এলাকাবাসী'র দৃড় বিশাবাস কালিদাস বড়াল হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। কারণ, কালিদাস বড়াল চিতলমারী থেকে আওয়ামী লীগের নমিনেশান না পেলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি হতেন। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারও বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভাবে হবে এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই।

কালিদাস বড়ালের স্ত্রী হ্যাপি বড়াল প্রথমে বড় বোন সাধনা হালদার, সাধনা হালদারের স্বামী পিরোজপুরের তৎকালীন সাংসদ সুধাংশু শেখর হালদার, অশোক বড়াল সহ তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাকাণ্ডের সকল ঘটনা অবহিত করেছিলেন। কালা'দা ও হ্যাপি বড়ালের তিন মেয়ের মধ্যে বড় জন অদিতি বড়াল ব্যারেস্টারি, দ্বিতীয় জন ইশিতা বড়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ছোট জন ঋদিতা বড়াল স্কুলে পড়ছে। কালা'দা কুন হবার পর হ্যাপি দি সরাসরি বলেছিলেন, এই হত্যার সুষ্টু বিচার কোনো দিনও হবে না। কারণ এই হত্যার পেছনের গডফাদার ধরা ছোয়ার বাইরে আছেন। অধিকাংশ আসামি পলাতক আছে। তারা হ্যাপি বড়ালকে নানাভাবে হুমকিও দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর ৯ মাস পরে চাঞ্চল্যকর এই কালিদাস হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হলেও ন্যায়বিচার হয়নি। এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.