নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাজেট বিশ্লেষণ-পর্ব ২ ।। রেজা ঘটক

০৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

৬ জুন ২০১৩ তারিখে জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন সেখানে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে। ২০১৭ সালের মধ্যে ১৯,৭০১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে এই উচ্চাভিলাষ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী দাবী করছেন, যদি এই লক্ষ্য পূরণ হয় তাহলে তখন বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্যে তিনি আগামী অর্থ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে বরাদ্দ দিয়েছেন ১১ হাজার ৩৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

প্রথমেই বলতে হয় শুধুমাত্র দলীয় লোকদের বাছাই করে পাওয়ার প্লান্টের কাজ দিলেই তা দিয়ে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে না। দলীয় লোকদের চুরি চামারির একটা মোক্ষম উপায় হবে মাত্র। পাওয়ার প্লান্টের নামে দেশে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে সব দলীয় বিবেচনায়। দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য নয়। বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক যে পাওয়ার প্লান্টের নীল নকশা করা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায়, সেটি আমাদের সুন্দরবনকে ধ্বংস করে সেখানে বিরাম মরুভূমি করবে। রামপাল পাওয়ার প্লান্ট যদি সরকার বন্ধ না করে তা নিয়ে দেশে দুর্বার আন্দোলন হবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ যে কোনো মূল্যে সুন্দরবনকে কারো আখের গোছানোর শয়তানী থেকে রক্ষা করবে। তাই রামপাল কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্টের বিষয়টি যদি বাজেটে পুনঃবিবেচিত না হয় তা নিয়ে বাংলাদেশকে অনেক কঠিন শিক্ষা মোকাবেলা করতে হবে। তাছাড়া গ্যাস, কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ নিয়ে বিদেশী চোরাকারবারী সিন্ডকেটের সঙ্গে সরকারের বা যে কোনো দলের যে ধরনের বিনিময় চুক্তি হোক না কেন সেখানে দেশীয় স্বার্থ লঙ্ঘনের একটি ভূমিকা আমরা সবসময় লক্ষ্য করেছি। দেশীয় স্বার্থ লঙ্ঘন করে বিদেশী স্বার্থে কেবল ক্ষমতায় যাবার সিড়ি হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালীনী খাতকে অগ্রাধিকার দিলে তার জন্য বাংলাদেশকে সামনে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

বাজেটে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার স্বপ্নকে। বা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ডিজিটালের নামে সরকারি সেক্টরগুলো যে লেজেগোবরে অবস্থা তাতে আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না যে, আগামীতে এই দুরাবস্থা আরো বাড়বে। এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো জাতীয় ডিজিটাল নীতি ঠিক হয় নাই। চুরি চামারির জন্যে ডিজিটালের নামে এখন পর্যন্ত যা করা হয়েছে সব ভুয়া। একটা সরকারি অফিসের ওয়েব পেইজ ভিজিট করে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ডিজিটালের নামে যারা তোড়জোর করেন তারা নিজেরাই জানেন না কিভাবে কি করতে হয়। কিন্তু সরকার কোনো বিশেষজ্ঞ টিম না করেই যাকে যেভাবে পারছে এই খাতে টাকা দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকার চুরির একটি নতুন খাত তৈরি করেছে। সরকারি অফিসের কোনো পাতায় নিয়মিত কোনো আপডেট নাই। এমনকি মন্ত্রণালয়গুলোর ওয়েব পাতায় অনেক মন্ত্রীর নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ভিডিও কনফারেন্স করা আর ডিজিটাল বাংলাদেশ মোটেও এক জিনিস নয় রে ভাই। ডিজিটাল মানে ডেইলি আপডেট ব্যাপার স্যাপার সেখানে থাকার কথা। ছাগল দিয়ে যেমন লাঙল চাষ করা যায় না, তেমনি একটি অদক্ষ মাথাভারী প্রশাসন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা যায় না। ডিজিটাল মানে চলতি সংসদে সাংসদের বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র তা জাতীয় সংসদের ওয়েব পাতায় এতজন নাগরিকের দেখতে পাওয়ার কথা। ডিজিটাল মানে মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে পাতা ভরে রাখা নয়। ওই ওয়েব পাতায় ঢু মারলে আবার ৪০৪ এরর আসে। আহারে আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ!! ডিজিটাল মানে একটি অদক্ষ বিটিআরসি নয়। যে কারণ দর্শিয়ে সরকার ইউটিউব বন্ধ করেছিল, আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত, যারা ব্যক্তিগতভাবে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাপার স্যাপার নাড়াচাড়া করেন, তারা সবাই সেই ভিডিও ফুটেজ দেখতে পেরেছে। ভিডিও ভুটেজ দেখার জন্য শুধুমাত্র বিটিআরসি;র কথিত ইউটিউব বন্ধ রাখলেই ল্যাঠা চুকে গেল, কে বলেছে? অদক্ষ প্রশাসন দিয়ে ডিজিটিল হবে না বাট চুরির ব্যাপার স্যাপার হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন বাংলাদেশে ডিজিটালের নামে কতোজন কতো কামাই করেছে। ব্যাপারটা স্রেফ সরকারের সমর্থনে চুরি করার একটি ওপেন সিক্রেট খাত। আর কিছু না।

তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হল কৃষি খাত। ভালো কথা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বছরের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করবেন। আগের বছরে কৃষিতে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি ছিল যা সংশোধিত বাজেটে ১২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। যে দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষক। সেই দেশের বাজেটে কৃষি কিভাবে তিন নাম্বারে যায়? আর কৃষিতে যতো বাজেটই ধরা হোক, তা কেন ভর্তুকির তকমা পাবে? বাজেটে কৃষিতে যা কিছু বরাদ্দ হয়, তাকে আমি একজন কৃষকের ছেলে হিসেবে অর্থনীতির ভাষায় ভর্তুকি বলতে পারি না। এটা জাতীয় লজ্বার কথা। ভর্তকি হতে পারে ডিজিটাল খাতে। ভর্তকি হতে পারে প্রতিরক্ষা খাতে অস্ত্র কেনার খাতে। কৃষিতে কেন ভর্তুকি লাগবে? কৃষক তো আমার দেশের প্রাণ। কৃষক তো আমাদের উদর পূরণের খাদ্য উৎপাদন করে। তাই খেয়ে আমরা আকডুম বাগডুম করি। কৃষকের জিনিস খেয়ে আমরা সহজেই কৃষকের কথা ভুলে যাই। একমাত্র জাতীয় বেঈমানরাই কৃষককে ভুলতে পারে। কৃষিখাতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা মাত্র।

বাংলাদেশের বাজেটে কৃষি খাতে মিনিমাম শতকরা ৩৩ ভাগ বরাদ্দ হওয়া উচিত। শিল্প শিল্প করে আমরা এদেশে কিছু ভুরিমোটা চোর বাটপার তৈরি করেছি। আর কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনির কষ্টের চেয়ে মধ্যবর্তী দালাল বা ফরিয়ারাই কৃষি উৎপাদন থেকে মুনাফা ঘরে তোলে। আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় ঘোড়ারোগ কৃষককে অবহেলা করা। কৃষকের ধন চুরি করা। কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনিকে অমর্যাদা করা।

বাংলাদেশ কৃষকের দেশ। যে ভাত খেয়ে আমরা এসিরুমে বসে চুরি করার কুমতলব করি, সেই ভাতের চাল যিনি উৎপাদন করেন, তার টিনের চালও নাই। তার নাড়ার চাল দিয়ে বৃষ্টি পরে। এটাই বাস্তবতা। শুধুমাত্র কৃষককে অবহেলা করার জন্যে বাংলাদেশে আইন দরকার। কৃষকের কোনো মজুরি চুরি করার জন্য সরাসরি ফাঁসির আইন দরকার। যিনি চাল উৎপাদন করেন তিনি না খেয়ে থাকেন, আর দেশে যিনি আরামসে চাল বিক্রির দালালি করেন, তিনি এসি রুমে ঘুমান। আহারে দেশ আমার। বাংলাদেশ যতোদিন বাঁচবে কৃষকের হাত ধরেই বাঁচবে। বাংলাদেশে কৃষক যেদিন আর থাকবে না, সেদিন এই সোনার বাংলাও থাকবে না। অতএব সাধু সা্বধান।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

সোহাগ সকাল বলেছেন: "বাংলাদেশে কৃষক যেদিন আর থাকবে না, সেদিন এই সোনার বাংলাও থাকবে না"

২| ০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪৩

গ্রীনলাভার বলেছেন: "বাজেটে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার স্বপ্নকে।" - আমার ভারতীয় একজন ক্লাশমেটকে বললাম, আমাদের দেশের প্রায় সব ব্যাংকে তোমাদের তৈরী করা সফট্‌ও্য়্যার চলে। এটা শুনে ও এত অবাক হয়েছিল যে আমার দেশীয় সফট্‌ও্য়্যার খাত নিয়ে তো আর কোন প্রশ্ন করেই নি বরং ও আফসোস করছিল যে, আমরা আমাদের দেশীয় মুদ্রাগুলো বিদেশে পাচার করছি।

"ছাগল দিয়ে যেমন লাঙল চাষ করা যায় না, তেমনি একটি অদক্ষ মাথাভারী প্রশাসন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা যায় না।" - কি করবেন? বিষ্ফোরিত জনসংখ্যা আজ জনশক্তি নয় বরং বোঝা হয়ে গেছে। আর এই অভুক্ত, অশিক্ষিত, বেকার যুব সমাজই আজ ওদের শক্তি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.