নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি...বলতে বলতে কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন জয়নগরের বাড়িতেই গেলেন।। রেজা ঘটক

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯

কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন শেষ পর্যন্ত জামালপুরের শরিষাবাড়ির জয়নগরের বাড়িতেই চলে গেলেন। পেছনে রেখে গেলেন অসংখ্য স্মৃতি। প্রতি বছর বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বই মেলায় যে মানুষটির সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা হতো, তিনি ছিলেন কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন। আমি ডাকতাম খন্দকার ভাই। সম্ভবতঃ ২০০১/২ সালের দিকে বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা মোবারক হোসেন (কবি সাজ্জাদ আরেফিন) ভাইয়ের রুমে আমি আর কবি খায়রুল আলম সবুজ বসে আড্ডা দিচ্ছিলুম। আমরা সিগারেট ফুকছিলুম আর মেলার ধুলা নিয়ে ক্ষোভ ঝারছিলুম। তখন ওই রুমে প্রবেশ করলেন কাজী নজরুলের মতো ঝাকরা চুলের এক আধুনিক বাউল। সবুজ ভাই আর খন্দকার ভাই কুশল বিনিময় করলেন। আর মোবারক ভাই আমার সঙ্গে খন্দকার ভাইয়ের পরিচয় করিয়ে দিলেন। শুনলাম, খন্দকার ভাই হুমায়ুন আজাদ স্যারের ডিপার্টমেন্টে ইংরেজি পড়ান। আমি একটু বিব্রত ছিলুম, স্যার বলবো নাকি ভাই বলবো? খন্দকার ভাইরে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার তো আমি ছাত্র না, সো সিগারেট কিন্তু ফেলতে পারছি না। খন্দকার ভাই ভরাট গলায় এমুন একটা হাসি দিলেন, তখন থেকেই বুঝলুম, মানুষটা রসিক বটে।

তারপর সবুজ ভাই, খন্দকার ভাই আর আমি একসঙ্গে কেওড়াতলায় আসলুম। 'একবিংশ'-এর অনেক পুরানো সংখ্যা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে লাগলুম। আমি পড়ছিলুম টোকন ঠাকুরের সাত দিনের নামে সাতটি চমৎকার সনেট। সবুজ ভাই আমাকে ধমক দিলেন, তুই আমার কবিতা না পড়েই টোকনের কবিতা পড়া শুরু করলি? দে, আমার সিগারেট ফেরত দে? জবাবে বললুম, সবুজ ভাই, আপনার কবিতা তো বড়োরা পড়ে। আমরা লিলিপুটরা কি কবিতা বুঝি? একবিংশের সামনে আমাদের আড্ডা তখন জমে উঠেছে। আড্ডায় এসে যোগ দিল আমার কবি বন্ধু আলফ্রেড খোকন। খোকন তখন রোদ্দুর নিয়ে খুব মাতামাতি করছিল। রোদ্দুর নিয়ে খোকনের অনেক কবিতা হয় আমাকে খোকনের মুখে শুনতে হয়েছে, নতুবা পড়তে হয়েছে। আমরা আড্ডার এক ফাঁকে খোকন আর আমি মেলা ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লুম।

তারপর প্রায় প্রতি বছরই খন্দকার ভাইয়ের সঙ্গে বই মেলায় আড্ডা মেরেছি। এভাবে ধীরে ধীরে কবি খন্দকার আশরাফ হোসেনের সঙ্গে আমার আন্তরিকতার শুরু। অমায়িক ভদ্রলোক বলতে যা বুঝায় এক কথায় খন্দকার ভাই তাই ছিলেন। দাম্ভিকতা একদম ছিল না। আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ 'বুনো বলেশ্বরী'র প্রথম ক্রেতা ছিলেন খন্দকার ভাই। আলফ্রেড খোকন ছিল দ্বিতীয় ক্রেতা আর আমাদের বন্ধু সাংবাদিক নজরুল কবির ছিল তৃতীয় ক্রেতা। খোকন আমার বইয়ের প্রথম ক্রেতা হতে না পারার দুঃখে সেদিন আমাকে কড়া ধমক দিয়েছিল। প্রতি বছরই আমার মনে হত এবার কবিতায় বা প্রবন্ধে বা অনুবাদে কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন বাংলা একাডেমী পরুষ্কার পাচ্ছেন। এই পারপাস অ্যাডভান্স আমরা চা খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমার ধারণা পাল্টে দিয়ে রাম শ্যাম যদু মধুরা বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পেয়েছেন। খন্দকার ভাই পেলেন না। বাংলা একাডেমী পুরষ্কার নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছিলুম একাডেমী'র মোবারক ভাইয়ের রুমে। হঠাৎ সেখানে অরুনাভ সরকার দাদা ঢুকলেন। দাদা সেবার বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান। দাদাকে বললুম, একটা দুইটা ছাড়া বাংলা একাডেমী'র অধিকাংশ পুরষ্কার যায় তোষামোদীদের কপালে, ব্যাপার কি দাদা? জবাবে অরুনাভ সরকার দাদা বলেছিলেন, আমারে তুমি কোন দলে রাখলা? কইলাম, আপনি দাদা সেইভ সাইডে পড়েছেন। আমি আপনার গল্পের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। টোকন ঠাকুরের কাছে আপনার ধানমণ্ডির ১৯-এর অনেক গল্প শুনেছি।

আজ বড় আফছোস লাগছে, কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন বাংলা একাডেমী পুরষ্কার না পেয়েই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গতকাল হঠাৎ তাঁর স্থায়ীভাবে বাড়ি যাবার কথা মনে হল। মনে পড়ল তার সেই বাড়ি যাবার কবিতা-



''বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি...

পথ ছাড়ো অন্ধকার, পথ ছাড়ো দূরত্বের দূরগামী পথ

বাড়ি যাবো, বাড়ি...



বৈশাখের বটবৃক্ষ তালুতে কপোল রেখে বলে, 'হায়,

এ ছেলেকে কিছুতেই ফিরতে দেয়া চলবে না'; নগরীর পথ,

দালানের পরভৃত কোকিলের পঞ্চস্বর ডেকে বলে, শোন

তোর কোনো বাড়ি নেই,

অন্তরঙ্গ উচ্চারণে যাকে বলে হোম

সুইট হোম - সে আজ ভেসে গেছে বিস্মৃতির যমুনার জলে।



তোমার আসার জন্য কেউ নেই হাট করে ঘরের দরোজা,

পলাতক সময়ের ঝুঁটিবাঁধা কাকাতুয়া

দাঁড় ছেড়ে পালিয়েছে সেই কবে; ঘাটলার কাঠগুলো

কবে কোন চোর

নিয়ে গেছে অন্তপুরে চুলোর হৃদয় জুড়ে শান্তি দেবে বলে।



তবু বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি....

পথ ছাড়ো সুসময়, প্রতিশ্রুত সুখনিদ্রা, নিমগ্ন বালিশ,

পথ ছাড়ো জীবনযাপন ব্যথা, পথ করে দাও।



আজ যাবো

ঝিনাই নদীর জল হাঁটুতে কাপড় তুলে পার হবো,

মধ্যরাতে ডাক দেবো

মা মাগো এসেছি আমি! সেই কবে গভীর নিশীথে

তোমার নিমাইপুত্র ঘর ছেড়েছিল, আজ কাশী বৃন্দাবন

তুলোধুনো করে ফের তোর দীর্ণ চৌকাঠে এসেছি।



আমার কিছুই হলো না মা, লোকে বলে আমি ভীষণ নারাজ

জীবনের তপ্ত গালে চুমু খেতে,

আমি ভীতু, জীবনের দ্রুতগাড়ি বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে কেন থামাতে পারি না,

হিচহাইকিঙ করে কত লোক চলে গেলো দূরতম গন্তব্যে, তবুও

আমি একা এখানে দাঁড়িয়ে আছি,

বাসভাড়া হয়েছে লোপাট অন্য কারো কলাবতী আঙ্গুলের হাতে

তবু আমি বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো, বাড়ি

এ বিশাল পৃথিবীতে এ মুহূর্তে অন্য কোনো গন্তব্য তো নেই!



পথ ছাড়ো অন্ধকার, পথ ছাড়ো দূরত্বরে দূরগামী পথ

বাড়ি যাবো, বাড়ি..''



বাংলা একাডেমী অনেক আকাম করেছে। গত বছর প্রথম আলো ডেইলি স্টারের তোষামোদী রোষে 'হে ফেস্টিভাল'-এর নামকা ওয়াস্থে আয়োজক হয়েছিল। তখন 'হে ফেস্টিভাল' নিয়ে আমরা যারা বিরুদ্ধাচারণ করেছিলাম, বাংলা একাডেমী তাদের জামায়াত পন্থী বলে গালি দিয়েছিল। কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন তখন আমাদের দলেই ছিলেন। আমার অনেক লেখায় তখন খন্দকার ভাই কমেন্ট করেছিলেন নিঃস্কোচে। অনেক লেখক কবি বন্ধুরা তখন বাংলা একাডেমীর কুনজর এড়াতে কমেন্ট থেকে বিরত ছিলেন। অনেকে চেহারা দেখাতে তখন বাংলা একাডেমীতে কাঁঠালের বিচি টোকাতে গিয়েছিলেন। ডক্টর আনিসুজ্জামানরা কিছু তোষামোদী পাণ্ডা পোষেন। কিছু তেল মাখা বানরও রাখেন দলে। আর বছর ঘুরে তাদের পকেটে যায় বাংলা একাডেমী পুরষ্কার। কিন্তু কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন-এর মত নিরেট নির্লোভ সত্যিকারের কবি, প্রবন্ধকার বা অনুবাদকদের ভাগ্যে দৈববাণী না হওয়া পর্যন্ত কোনো পুরষ্কার জোটে না। দুঃখটা সেখানে। এমন কি শুদ্ধ বাক্য লিখতে জানেন না এমন লোকও বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পাবার রেকর্ড আছে। তখন সেই দুঃখ ক্ষোভের নদী পার হয়ে ভূবনডাঙ্গায় পাড়ি জমায়। দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে আমাদের কিছু তোষামোদি লোক আরামছে লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায়। এ দুঃখ রাখি কোথায়?

খন্দকার ভাই যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন। আমরা বরং আপনার 'মানুষ' কবিতাটি একটু এই ফাঁকে পড়ে নি-



মানুষ

কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন



মানুষকে কেউ ধারণ করতে পারে না

না নিসর্গ ঈশ্বর না প্রেম না ঘৃণা

মানুষের হাতে নীল বেলুন তার চোখে দুই কালো মাছি

মানুষকে কেউ ধারণ করতে পারে না, মানুষের

কোনো জন্মদাতা নেই, তার কটির উত্তাল যৌবন কারো

উত্তরাধিকার নয়।



মানুষকে কেউ ধারণ করতে পারে না

না নিসর্গ না ঈশ্বরের দিগন্ত-প্রসারী আলখাল্লা

না নদী না জন্মভূমি।

মানুষের কোনো উপমা নেই, রূপকল্প নেই, ব্যতিহার

বহুব্রীহি নেই, স্বরলিপি ব্যাকরণ নেই

শাসনতন্ত্র, অর্থ-অভিধান চর্যাচর্য নেই।



মানুষ আত্মভেদী, আত্মনাশী নীল পতঙ্গ

একদিন সে পাঁজরের হাড় দিয়ে গড়েছিল এ পৃথিবী

একদিন মানুষই ধ্বংস করবে তাকে।

না ঈশ্বর না দেবতা না পাষাণ মৃদঙ্গ না প্রভাত না

মধ্যরাতে নিমগ্ন বালিশ না ফোয়ারা না যোনি না

কবন্ধ রাত্রির ঘুম কোনো কিছু না।

শুধু মানুষই পারে নিজেকে ভাঙতে। যেমন সাজাতে।

আমি সেই ভঙ্গুর ভঙ্গপ্রিয় ত্রিভঙ্গ মুরারির জন্যে

আমার কবিতা রেখে যাই।

আর কেউ নয়, আর কারো জন্যে আমার

দীর্ঘশ্বাস নেই, না গ্রন্থ না সুহৃদ না পলাতক

ভ্রমর গুঞ্জন না নারী না নিশ্চল বসন্ত বাহার…



আমি মানুষকে ভালোবাসি কেননা সে একদিন

নিজহাতে নিজেকে পোড়াবে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:০৯

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: উনি আমার শিক্ষক। অনেক কপালগুণে এরকম সহৃদয়, সুরসিক মানুষকে শিক্ষক হিসেবে পাওয়া যায়। আপনার লেখাটা খুব মন দিয়ে পড়লাম। ধন্যবাদ স্যারের কবিতা আর স্মৃতিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১৪

রেজা ঘটক বলেছেন: যেতে হলে যাবো
কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন

একদিন রাঙাবালিয়ায় যাবো, একদিন সন্দিগ্ধপুকুর পাড়ে
নামাবো কষ্টের ভার। একদিন হরিষবিষাদপুর ডানে রেখে
তীব্র এক বাঁক খেয়ে ঢুকে যাবো আনন্দনিশ্চিন-গড়ে
কোনো একদিন শুভক্ষণ দেখে

দূর্বাঘাসের দেশে মৌপিপাসার নদে খেলবো ঝাঁপই
জন্মাবো পিপুলবৃক্ষ আত্রেয়ীর জলধোয়া কোনো এক মাটির উঠানে
হেঁটে গিয়ে বসবো দুখি কানাইবংশীর থানে
লোকে বলবে ক্যাংকা করে আলেন বাপই

আলোচাল ধোয়া হাতে কলাবউ নবীনা সুজাতা
নিগৃহী যুবার জন্যে কদলিপাতায় দেবে সুগন্ধ পায়স
একদিন চলে যাবো পায়ে ঠেলে মুগ্ধপুর কামুক তেমাথা
অশোক বৃক্ষের ডালে ত্রিকালের স্বপ্নচোষা অতৃপ্ত বায়স

একদিন সুখসমসি-পুর যাবো হাতের তালুতে নিয়ে কৃষ্ণ মধুমাছি
যাতি হলি যাব'খন আপাতত কেষ্টনগরে নষ্ট গোঁসাই হয়াছি ॥

২| ১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: তাঁকে মিস করবো। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

রেজা ঘটক বলেছেন: প্রমিথি
কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন

কতবার জাহান্নামের আগুনে পোড়াতে চেয়েছ আমাকে
কতবার বুরুজ পর্বত থেকে ঝুলিয়ে রেখেছ
তোমার তরবারি
কত দিন ক্ষুধার্ত উদর নিয়ে কেঁদে কেঁদে
রাত করেছি কাবার
কত লক্ষ বছরের পাথর ঠেলেছি
পাহাড়ের ঢাল ঠেলে কেবলই উজানে
কতবার তোমার ইগল এসে ঠুকরে ঠুকরে
খেয়েছে নাড়িভুঁড়ি

তোমাকে দেখেছি অলিম্পাসের তুষারধবল
চূড়ার মহিমায়
তুমি ধরে আছ দুই হাতে বজ্র আর অশনির চাবুক
তুমি সেমিলির ঘরে যখন স্বর্ণবৃষ্টি
হয়ে নেমেছিলে, অপার তৃষ্ণায়
তোমার প্রেমের দান ভেবে ঘরে নিয়ে-
ছিলাম আগুন।

তোমার কাছে চেয়েছিলাম জীবনজিজ্ঞাসার উত্তর
তুমি আকাশ থেকে ভয়াল শব্দে ছুড়ে দিলে
দুইখণ্ড পাথর
দশটি নিষেধ দিলে, চেয়েছিলাম পিপাসার জল
রক্তের কম্বল দিলে, চেয়েছিলাম মিলনের হাত
তীব্র দ্রংষ্ট্রার ঘায়ে আমাকে ঝুলিয়ে রাখলে-
দুই পাশে দুজন তস্কর!

গ্যালিলির জলে রক্তমাখা হাত ধুয়ে নিয়ে
তোমার স্তোত্র পড়তে বসেছি খড়ের আগুনের আলোয়
তখন পূর্বাকাশে মন্দিরা বাজাচ্ছিল কার দুটি মোহন হাত
কেউ কেউ তোমার নাম করে গালমন্দ করতে করতে
পাহাড়ে ঢুকে গিয়েছিল, আর ফেরেনি
দুটি শহর আগুনে ছাই হলে পর স্বনিযুক্ত পরিত্রাতারা
তোমার নামের জয়ধ্বনি দিচ্ছিল দশ দিগন্তে
আমি তোমার নাম জিহ্বার অগ্রভাগে এনে
ছুড়ে দিলাম নিষ্ঠীবনের সাথে
আমাকে ক্ষমা করার কোনো অবকাশ তোমাকে দেব না
বলে গর্জমান মানুষের স্রোতে মিশে গেলাম
কেননা মানুষের গায়ের গন্ধ তখন আমার কাছে
পারিজাত কুসুমের চেয়েও আকর্ষণীয়

তোমার ইগলেরা জানি আজও আমাকে খুঁজছে।

৩| ১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:০৭

বটের ফল বলেছেন: তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৫

রেজা ঘটক বলেছেন: আবার আসতে পেলে যা যা করবো (না) তার তালিকা
কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন

আবার আসতে পেলে আটঘাট বেঁধে আসবো
এবারের মতো ভুলে যাবো না পারের কড়ি দূরের টিকেট
ঘরের চাবি; দুপায়ে দু'রকম জুতা, দেখা আর
লেখার চশমার বিভ্রাট আর নয়, নয় আর
টুথপেস্ট ভেবে ব্রাশে শেভিং ক্রিম মাখানো,
সখের হাড়িতে কেউটে সাপের বাচ্চা পোষা
আর নয়, কারো উপরোধে
বাসনার ঢেঁকি আমূল গিলে ফেলাও নৈব নৈব চ।
আবার আসতে পেলে পড়া মুখস্ত করে আসবো,
মঞ্চে উঠে ভুলে যাওয়া পার্ট আর নয়,
অন্যের ফেলে যাওয়া হার্ট ও আমার
ভালোবাসার ধন বলে কাঙালিপনা করবো না আর,
তার চেয়ে নিজের হৃদয়টাকে তরমুজের ফালি ক'রে
প্রাইস্ ট্যাগ লাগিয়ে হাজির করবো, ভাইরে,
কিরিচ আর কাটামুণ্ডু দুহাতে নিয়ে
আমিও দেখাবো ভয়, সাপের মুখে ব্যাঙ
হাসাবার উদ্ভট আশায়
ভুয়োদর্শী যুবা হওয়ার আহ্লাদ করবো না।
এবারের হাটে-হাটে হেনস্থা তো কম হলো না
কোমরের বেল্টে বাঁধা তোড়ার মানিক
কোন ফাঁকে লোপাট হয়ে গেল
হট্টগোলে পড়ে-পাওয়া চোদ্দআনা সামলাতে গিয়ে
হারালাম হাজার টাকার মূলধন, এবার এলে
একসাথে সাপ আর বেজির মুখে চুম্বন করার আর্ট
ঘুম আর সিঁদকাঠির সরল সমীকরণ
মুখস্ত করেই আসবো।
যদি আসি আগুন হয়ে আসবো তৃষ্ণার জল নয়
একসাথে হবো ছুরি আর ক্ষতের মলম
জিহ্বা থাকবে দুটো, ফেলে আসবো অপ্রসন্ন কলমের ভার
প্রেমে হবো চতুর কৃষ্ণ, যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যুক অর্জুন
আবার আসতে পেলে তোমাদের
মিথ্যেবাদী বিদ্যালয়ে অনাচার্য হবো।

৪| ১৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১০

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮

রেজা ঘটক বলেছেন: প্রার্থনায় নম্র হও পাবে
কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন

আমাকে পাবে না প্রেমে, প্রার্থনায় নম্র হও পাবে,
কামে-ঘামে আমি নেই, পিপাসায় তপ্ত হও পাবে।

পাখিরা প্রমত্ত হলে সঙ্গিনীকে ডেকে নেয় দেহের ছায়ায়-
ছায়া নয়, রৌদ্রতাপ জ্বালাবার শক্তি ধরো, কেবল আমাকে
তপ্তজলে দগ্ধ করো, রুদ্ধ ক্রোধে দীপ্ত করো, পাবে।

পৃথিবীর সর্বশেষ কবি আমি অহঙ্কার আমার কবিতা
বিষাদে বিশ্বাসে পূর্ণ হৃদয়ের জলাধারে ধরো,
আমাতে নিবদ্ধ হও পূর্ণপ্রাণ ফলবন্ত হও-
আমাকে পাবে না ফলে, পরাগ-নিষিক্ত হও, পাবে।


আমি তো নিষিদ্ধ প্রেম, শুদ্ধ ব্যথা, বিষাক্ত আঙুর,
আমার বিষের দানা জিভে কাটো, রক্তরস যিশুর রুধির
পান করো, নতুন প্রজন্ম সাধ তুঙ্গ করো, পাবে।
আমাকে পাবে না দুঃখে, একটি হতাশা শুধু দেহে
ছুরির ফলায় জমা একফোঁটা প্রাকৃতিক স্বেদের মতোন
তীক্ষ্ণ করো, মূর্ত করো, পাবে।

তেত্রিশ বছর ধরে বুকের সন্তাপ জমা সে সন্তাপ তুলে নাও চুলে,
মেঘের উড়াল-দেয়া পাখিদের ফেলে যাওয়া অবিন্যস্ত ছায়া
চোখের মণিতে গাঁথো, উড়ালে বিশ্বাসী হও, পাবে।

আমাকে পাবে না প্রেমে, প্রার্থনায় নম্র হও, পাবে,
তৃপ্তির সন্ত্রাসে নয়, পিপাসায় তপ্ত হও, পাবে।

৫| ১৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০২

ভিটামিন সি বলেছেন: ভাই, প্রথম কবিতাটা পড়েই আমার শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেছে। ঝাড়া দিয়ে উঠেছে মাথা।

১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯

রেজা ঘটক বলেছেন: সুদূরের পাখি
কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন

কী খুঁটছ সারা দিন অননন্তের পাখি?
খুঁটছি যবের দানা, শস্যবীজ, খুঁটছি জীবন।

কী খোঁজো সমস্ত দিন ডালপালা লতার ভেতর?
খুঁজছি নিজেরই বুক, এখানে ফেলে যাওয়া আগের জনম;
হারানো যৌবন খুঁজি, পুঁজিপাটা যা ছিল অক্ষয়
প্রমত্ত ঝড়ের পরে এই বৃক্ষ অশোকের গোপন কোটরে
জমা রেখে চলে যাই, অতীতের শীতল সন্তাপ
কাম প্রেম শঙ্খনীল চিরজীবী পাথরের কাছে
জমা ছিল, তারপর বিস্মৃতির ঝড়ে উড়ে গেছি।

সারা দিন কাকে ডাকে অনন্তের পাখি?
ডাকি ছায়া, নম্র আলো, ডাকি পূর্ণ ফলের বিশ্রাম,
আলোচাল-ধোয়া হাতে একবার আত্মার সঙ্গিনী
কপালের ঘাম মুছেছিল; উঠানের এক প্রান্তে বেড়ে ওঠা
পুঁইডালিমের পাতা একবার গেয়েছিল নির্বাণের গান--
তারপর মিশে গেছি জল পাতা ধূলার শরীরে।

দিনান্তে কোথায় ফের ওড়ে যাও পাখি?
প্রমত্ত ঝড়ের পরে যেইখানে উড়ে যায় মেঘ,
আলো ছায়া যেইখানে গড়ে তোলে অভিন্ন আশ্রয়--
সেই ঘুম বিস্মরণ, সেই বৃক্ষ লতার ভেতর।

কী নিচ্ছ ঠোঁটের ফাঁকে সুদূরের পাখি?
আমি নিচ্ছি দুটো খড়, এই মৃত্যু, আরেক জীবন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.