নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নব্বই দশকের এক তরুণ অবহেলিত কবি ও কথাসাহিত্যিক মামুন মিজান ভারী অবেলায় হারিয়ে গেলেন।। রেজা ঘটক

২০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২৯

কাল রাতে ফেইসবুক খুলে দেখি প্রিয় খালেদ ভাই (কবি খালেদ হোসেইন) একটি স্টাটাস দিয়েছেন-''কবি মামুন মিজানের মৃত্যু-সংবাদও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? ছাত্র ছিল আমার। ভালোবাসতাম।'' আমি খবরটি ধাতস্থ হবার আগেই কিকো চিৎকার শুরু করলো। কিকো আমাদের নতুন ফ্যামিলি মেম্বার। আমেরিকান এক্সিমো ডগ। কিকোর বয়স মাত্র ২ মাস। ১৮ জুন ২০১৩ থেকে আমাদের সঙ্গী। কিকোর চিৎকারে আমি কম্পিউটার ছেড়ে উঠে যাই। কিকো বাথরুম করেছে ড্রয়িং রুমে। সেই ঝামেলা সামাল দিয়ে রাতে আর ফেইসবুকে বসা হয় নি। সকালে আবার খবরটি পড়ার আগেই চোখ যায় বন্ধু টোকন ঠাকুরের স্টাটাসে। টোকন ঠাকুর লিখেছেন- ''আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে মামুনের জন্য। মামুন খুব ভালো কবিতা লিখত, কলেজে পড়াত, গাইবান্ধায়। ও যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে, আমি পড়তাম ঢাকায়, চারুকলায়। আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের দিনগুলোতে। তখন বাংলা একাডেমি থেকেই, প্রকল্পের আমাদের ৪০ জনের বই একসঙ্গে বের হয়, প্রথম বই প্রায় সব্বারই। গত সপ্তাহে মামুন ঢাকায় এলো, হঠাৎ আমাদের সঙ্গে ওর দেখা হলো চারুকলার সামনে। অনেকদিন পর দেখা... কয়েকটি কথাও হলো। আজ খালেদ ভাইয়ের ( কবি খালেদ হোসেইন) স্ট্যাটাস পড়ে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, মামুন মারা গেছে। মামুন ঢাকায় এসে একবার ওর উপন্যাস পড়তে দিল। খুবই পরিশ্রম করে লেখা। আরেকটি উপন্যাসের প্লট শোনাল একবার আমার বাসায় বসে...আজ সেই মামুন নেই? আমাদের অনেক স্মৃতি আছে জ্বলজ্বলে...মামুনের কবিতা আমার পছন্দ ছিল প্রথম থেকেই। খুব খারাপ লাগল এই সংবাদটা...আমাদের বন্ধু, কবি মামুন মিজান নেই? শোকাহত আমি...''



সত্যিই এটা মানা খুব কষ্টের। একজন তরুণ লেখকের মৃত্যু আমাকে আরো বেশি অপরাধী করে দেয়। আরো বেশি খারাপ লাগলো যখন দেখলাম বন্ধু মাহবুব মোর্শেদের স্টাটাস। ''পত্রিকা খুলে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কালের কণ্ঠের ১৩ পৃষ্ঠায় বেশ যত্ন করে একটা খবর ছাপা হয়েছে। কবি মামুন মিজান আর নেই। Mamun Mizan আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড, তারও চেয়ে বড় কথা জাহাঙ্গীনগরের বড় ভাই। বাংলাবিভাগে ২০ তম ব্যাচে পড়তেন। ক্যাম্পাসে খুব বেশি সময় তাকে পাইনি। ঢাকায় কিছুটা পেয়েছি। খুব সামান্যই যোগাযোগ। তবু এলাকার সূত্রে কি না জানি না, উনি আমার সঙ্গে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতেন। মাঝে মাঝে ফোন দিতেন। ৩১ মে শুক্রবার ১২টার দিকে বেরিয়েছি, শাহবাগ এলাকায় যাবো। মামুন ভাই ফোন দিলেন। বললেন, ঢাকা এসেছেন। আমার সাথে কি দেখা হওয়া সম্ভব? আমি বললাম, আজকে সারাদিন শাহবাগ এলাকায় থাকবো আপনি এলেই দেখা হবে। শাহবাগ গিয়ে আজিজ মার্কেটে বই দেখলাম। অনুরণনের জন্য সুকুমার রায় সমগ্র কিনলাম। প্রিন্স এলো, কল্লোল এলো, Mohammad Arjuও। মামুন ভাই আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে গেল। হালকা ভাঙ্গা পদক্ষেপে উনি বৃষ্টি নিয়ে এলেন। Shakoor ভাইও আসলেন। অনেক কথা হচ্ছিল। মামুন ভাইয়ের মধ্যে একটা উদ্বেগ টের পাচ্ছিলাম। লেখকত্ব নিয়ে গভীর এক উদ্বেগ। কোনো ঈদ সংখ্যায় যদি উপন্যাস ছাপা যায় বা কোনো নামী প্রকাশনা সংস্থা থেকে যদি বের করা যায়, তবে হয়তো তার খেটে লেখা উপন্যাস কেউ কেউ পড়বে। লেখা পড়ানো একটা চ্যালেঞ্জ বটে, বিশেষ করে যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। আমি যে বিশেষ কোনো সহযোগিতা করতে পারবো না তা উনি বুঝতে পারছিলেন। সাহিত্যের জগৎটা নিষ্ঠুর। কারো কারো জন্য মাখনের মতো নরম, কারো কারো জন্য লোহার মতো কঠিন। আমি মামুন ভাইয়ের উদ্বেগের ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ব্যস্তটার কী আছে? হাতে সময় আছে, ধীরে ধীরে আগাতে হবে, এমনই নানা কথা আমি বলছিলাম। এইসব পলিটিক্স অব সাইলেন্সের মধ্যে মামুন মিজানের মতো সাহিত্যিকের সার্ভাইভাল কীভাবে সম্ভব ভাবছিলাম। আমি তো আর জানতাম না মামুন ভাই এরই মধ্যে পরপারের ডাক পেয়েছেন। যে একবার যে ডাক পায় তাকে তো একটু তাড়াহুড়া করতেই হয়। শেষ দিন ১৪ জুন বসুন্ধরা সিটিতে মোস্তফা মার্টে কেনাকাটার ফাঁকে তার কথা মনে হয়েছিল। ফোন করার কথা ছিল। কেন যেন ওই সময়েই মনে পড়লো। বলছিলাম, ব্যস্ততার কিছু নেই। ধীরে ধীরে সবই জয় করা যাবে। তা আর হলো কই?

গুড বাই মামুন ভাই।''

তারপর আমি কালের কণ্ঠে চোখ বুলাই। কালের কণ্ঠ লিখেছে-''নব্বই দশকের কবি ও কথাসাহিত্যিক মামুন মিজান আর নেই। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধার ডেভিড কম্পানিপাড়ায় প্রথম জানাজা এবং নলডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে। ১৯৭০ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মামুন মিজান। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'আন্তঃস্বরের গান' (কাব্যগ্রন্থ), 'হাড় বণিক' (উপন্যাস), 'অপরাজেয়' (গল্পগ্রন্থ) ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন দৈনিক ও লিটল ম্যাগাজিনে তাঁর বহু কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সম্পাদনায় 'সবুজপাতা' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার অনেকগুলো সংখ্যা বের হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি গাইবান্ধা আবুল হোসেন সরকার মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।''

এখন আমি খালেদ ভাইয়ের আক্ষেপটা বুঝতে পারি। বুঝতে পারি টোকন ঠাকুর কেন শোকাহত। বুঝতে পারি মাহবুব মোর্শেদ কেন বাংলাদেশের সাহিত্য রাজনীতির চড়াই উৎড়াইয়ের মধ্যে মামুন মিজানের মতো সাহিত্যিককে নিয়ে উদ্বিগ্ন। বুঝতে পারি বন্ধু আলফ্রেড খোকন কেন মামুনের কবিতার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ও জানাজানি আছে বলে চুপ হয়ে যায়। আর মামুনের সাথে আমার পরিচয় ২০০৯ সাল থেকে। সেটা সম্ভবত ২০০৯ সালের ঘটনা। আমি তখন পাঠসূত্রে বন্ধু গল্পকার রাজীব নূরের সঙ্গে কাজ করি। পাঠসূত্রের পাণ্ডলিপি বাছাইয়ের সঙ্গেও আমি তখন জড়িত। পাঠসূত্র নিয়ে আমরা তখন অনেক বড় বড় পরিকল্পনা করতাম। তখন এক দিন মামুন মিজান পাঠসূত্রের অফিসে এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল। রাজীব নূর মামুনের বই প্রকাশের ব্যাপারে 'না' বললেও মামুনের লেখা নিয়ে বেশ প্রশংসাই করেছিল। তখন মামুন মিজানের বুকে একটি ক্ষত সৃষ্টি করেছিল বটে, তা আমরা টেরও পেয়েছিলাম। আমরা চা আড্ডায় সেই ছোট্ট অনুশোচনা হজম করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মামুনের বই আর প্রকাশ করা হয়নি।

তারপর ২০১০ সালের অমর একুশে বইমেলায় মামুন মিজানের সঙ্গে আবার আমার দেখা হয়। ততোদিনে পাঠসূত্র অনেক নামকরা নবীন প্রকাশনা হিসেবে দেশ জয় করে ফেলেছে। অনেক পুরষ্কারও বাগিয়েছে। মামুন তখন কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে আড্ডা দিল। মামুন বলছিলেন, খুব কষ্ট করে একটা ভালো উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছেন। আমি আমার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছিলুম। সম্ভবত বাংলা একাডেমী'র গল্পকার মাহবুব আজিজ আমাকে ধরে নিয়ে যান তার রুমে কি যেনো দেখাবেন বলে। সেখান থেকে ফিরে মামুনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয় নি। তারপর অনেক দিন আর দেখা হয় না। সাধারণত অমর একুশে বইমেলার সময় ঢাকার বাইরের লেখক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। আড্ডা হয়।

মামুন গাইবান্ধা একটি কলেজে বাংলা পড়াতেন। লেখার হাত চমৎকার। ব্যক্তি মামুন মিজানের চেয়ে তার লেখনির সঙ্গেই আমার বেশি পরিচয়। মামুনের 'আন্তঃস্বরের গান' (কাব্যগ্রন্থ), 'হাড় বণিক' (উপন্যাস), 'অপরাজেয়' (গল্পগ্রন্থ) আমার পড়া। মামুনের লেখায় একটি অভিমান লুকিয়ে থাকে। শব্দের ব্যবহারে ব্যঞ্জনা প্রাধান্য পায়। আর ইঙ্গিত করে না বলা অনেক জটিল মানবিক বায়বীয় জলতরঙ্গ। সেই তরঙ্গের মধ্যে সাহিত্যের পাঠক মাত্রই হারাতে পারেন নিযুত সময়। মামুনের লেখা উপন্যাসটি কোনো ভালো প্রকাশনা থেকে প্রকাশ পেলে আমার ভালো লাগবো।

এমনিতে ঢাকার বাইরের লেখক. কবি, সাহিত্যিকরা সবচেয়ে অবহেলিত বাংলাদেশে। লিটল ম্যাগাজিন, বিভিন্ন সাহিত্যের কাগজই তাদের মূল ভরসা। আর ঢাকার দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে কবিতা গল্পের নামে যে চাটুকরী তামাশা ছাপা হয়, সেই তামাশায় আমিও আগে জড়িয়েছিলাম। পরে রাজনীতিটা বুঝতে পেরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। দেখা গেল সাহিত্য পাতার যে সম্পাদক, তারই সাহিত্য জ্ঞান আমার কাছে প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। তার কাছে আমি কি লেখা দেব। সে তো আমার লেখা বুঝতেই পারবে না। উল্টো ভাব-ভঙ্গি দেখাবে যেনো সে নোবেল কমিটির সভাপতি। বাংলায় বললে বলতে হয় সোজা কথায় এই ভাব ...টাইম নাই আমার।

লেখার কাজটা আমি আমার মত করি। এটাই আমার লেখার বৈশিষ্ট্য। কারো খবরদারী আমার পছন্দ না আমার লেখায়। আমার গল্প হল কি হল না, তার বিচারক কাকে বানাবো আমি? যার পড়াশুনা নেই। বিশ্ব সাহিত্যের ক খ গ...ও জানে না। কিন্তু ভাবটা বিশাল পণ্ডিৎ। তার কাছে অনুরোধের আসরের নাটক করার আমার টাইম নেই, ভাই। মামুন মিজান সাহিত্যের রাজনীতিটা ধরতে পারেন নি। ঢাকার বাইরে থাকায় সেই সুযোগও তার কম ছিল। কিন্তু মামুনের কলমটি কারো রাজনীতির কোপানলে পড়েনি বলে মামুনের নির্ভেজাল গদ্য, বুক উচাটন কবিতা, শব্দ নিয়ে খেলাটা আমার ভালো লাগে। আর দুঃখ লাগে যে, বাংলাদেশে মামুনদের কদর নেই। খোন্দকার আশরাফ হোসেনদের দাম নেই। সব তোষামোদী সাহিত্যকর্মীদের ভারী দাম। তাদের নাকের উচু ভাব দেখলে মনে হবে, তাদের সাহিত্য চর্চা না করে দেশের নষ্ট রাজনীতি করাটা বড় ভালো ছিল। মামুনদের যতোদিন আমরা সত্যি সত্যি মূল্যায়ন করতে না পারব ততোদিন আমরা মূর্খদের তেলেভাঁজা গোবর গণেশ নিয়েই হৈ চৈ করে কাটাব। আর নিরবে নির্ভতে একে একে চলে যাবেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন, মামুন মিজান...আরো কতো জন!!! মামুন মিজান, আপনি যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন। অন্তরের আশির্বাদ থাকবে আমার।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩

রেজা ঘটক বলেছেন: মামুন মিজান-এর ক্রম কবিতা-৪৪

এই বর্তুলাকার বারুদগ্রাম পেরিয়ে
করতলে বিদ্যুতের বহতা বেগ ধরতে যাই
যেন আমি এক ওরিয়ন।কবিতার শাশ্বত ছেলে।

এ্যান্ড্রোমিডা, তোমারই গুপ্ত লাভাস্রোতে
ভেসে যাওয়া স্বপ্নগুলো
সমুদ্র থেকে উঠে আসার পর দ্যাখো, আজও কাঁপছে…
যেন সব দুঃখের ফোটন-ধুলো মাখা ঠোঁটে।

আমারই বুকপকেটে লুকিয়ে থাকা মৃত্যুকে
যখন পোষ মানিয়ে নিয়ে যাই মোহনায়-যাবতীয় জলীয় মতে।
তখন ওই চর ফেলে
অভিমানে সরে যাওয়া বিদ্যুতের নদী জানায় শত বরফট্টাই।
মাথার ওপর তুলে ধরে কবিতার স্বর্ণকুলো-
আজও থেকে থেকে যেন বা সেই অমৃতজল এই চোখের কোণায় ছোটে…

২| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.