নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুদের আমলনামা-১ : : তিন ডানার চড়ুই পাখি টোকন ঠাকুর ।। রেজা ঘটক

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:২৪

নব্বইয়ের দশকের কবিদের মধ্যে টোকন ঠাকুর বাংলাদেশের ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আলোচিত প্রধান কবি। তরুণ কবিদের মধ্যে একই সঙ্গে সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিদের মধ্যেও টোকন ঠাকুর একজন। টোকন ঠাকুরকে কিভাবে পরিচয় করাবো? তিন ডানাওয়ালা ডোডো পাখি নামে? রঙের কারিগর নামে? কবিতার ফেরিওয়ালা নামে? নাকি ক্যামেরার পেছনের ফড়িং নামে? ছোটবেলায় টোকন পৃথিবীর সেরা বাই-সাইকেলওয়ালা হতে চেয়েছিল। সাইকেল নিয়ে তখন ছুটে বেড়াতো হরিণাকুণ্ডুর মেঠো পথ-ঘাট-মাঠ। বাই-সাইকেলে চড়ে হারিয়ে যেতো গাড়াগঞ্জ বাজার পেরিয়ে দূরে মহিষপুরের ভূবনডাঙ্গায়। কখনো বাই-সাইকেলে চড়ে হরিণাকুণ্ডু থেকে চলে যেতো বহুদূরের মাগুরার শ্রীপুরের মহেশচন্দ্র পাইলট হাইস্কুল মাঠের ফুটবল খেলায়- একজন মধ্যমাঠের তুখোর মিডফিল্ডার হিসেবে। আবার কখনো টিং টিং করতে করতে ছুটে যেতো ঝিনাইদহের সিনেমা হলে। দলভারী হলে কখনো ছুটে যেতো বাই-সাইকেলে চড়েই যশোরের মনিহার সিনেমা হলে। বাই-সাইকেল জামানা শেষ করে টোকনের সঙ্গী হল মটর সাইকেল। এবার আর টোকনের নাগাল পায় কে? এবার দূরত্ব অটোমেটিক বেড়ে গেল। খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুস্টিয়া, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, মেহেরপুর ছুটে বেড়াতে লাগল ইঞ্জিনওয়ালা ফড়িং।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা:
১৯৭২ সালের ১ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানার ভায়ানা গ্রামের নিজ মাতুলালয়ে টোকন ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা পেশায় একজন ব্যাংকার। আর মা একজন সুগৃহিণী। টোকন তার বাবার চেয়ে মাত্র ২১ বছরের আর মায়ের চেয়ে মাত্র ১৬ বছরের ছোট। টোকনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে হরিণাকুণ্ডুর ভায়ানা গ্রাম আর গাড়াগঞ্জের নিজেদের বাড়িতে। টোকন সাঁতার শিখেছে গাড়াগঞ্জের কুমার নদে।

পড়াশুনা:
টোকনের প্রথম স্কুল হরিণাকুণ্ডুর ভায়ানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিন বছর পর বাবার চাকুরির কর্মস্থলের বদলের কারণে টোকনের স্কুলও বদল হলো। এবার নতুন স্কুল হলো পৈতৃক নিবাসের বাড়ির পাশে কুমার নদের পারের গাড়াগঞ্জ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে প্রাইমারি শেষ করে গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলো টোকন। তিন বছরের মাথায় আবারো বাবার কর্মস্থলের বদল জনিত কারণে টোকনেরও স্কুল বদল হলো। এবারের নতুন স্কুলের নাম মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার মহেশচন্দ্র পাইলট হাইস্কুল। সেখান থেকে এসএসসি পাশের পর টোকন ভর্তি হলো ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র কলেজে। টোকনের বাবা-মা গাড়াগঞ্জের পৈতৃক নিবাস ছেড়ে তখন ঝিনাইদহ শহরের শুকান্ত সড়কে নিজেদের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ শুরু করলেন। টোকনের এইচএসসি শেষ না হতেই শুকান্ত সড়কের বাড়ির কাজও শেষ হলো। এতোদিন টোকন বাস বা বাই-সাইকেলে চড়ে ঝিনাইদহ-গাড়াগঞ্জ যাতায়াত করতো। বাড়ি নির্মাণ শেষ হবার পর পরিবারের সবাই যখন ঝিনাইদহের নতুন বাড়িতে উঠলেন, টোকনের নতুন ঠিকানা হলো তখন খুলনা আর্ট কলেজ। খুলনা আর্ট কলেজে এক বছর পড়াশনা শেষ করেই রঙের কারিগর রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টসের ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগে ভর্তি হলো টোকন। এমএ ফাইনাল পার্ট নিজের ইচ্ছায়ই আর শেষ করলো না। ফলে টোকন এখনো চারুকলার মাস্টার্সের বড় ভাই।

কবিতার সঙ্গে বসবাস:
গাড়াগঞ্জ হাইস্কুলে পড়ার সময় স্কুল ম্যাগাজিনে কবিতা লেখার মাধ্যমেই কবিতার সঙ্গে টোকনের ওঠাবসা শুরু। স্কুল দেয়ালিকার টোকন ছিল নিয়মিত কবি। তারপর ঝিনাইদহ থেকে প্রকাশিত সাহিত্যের ছোট কাগজে লেখা শুরু করে টোকন। কবিতায় টোকন পাকনা হতে শুরু করে মূলত কলেজ জীবন থেকে। ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র কলেজে শহীদুল স্যারের কাছেই টোকন কবিতা, আর্ট, কালচার বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রেরণা লাভ করে। তারপর খুলনা আর্ট কলেজে পড়ার সময় শিল্পী এসএস সুলতানের নৈকট্য লাভ, এবং ঢাকার দৈনিকে কবিতা প্রকাশ শুরু হয়। আর ঢাকায় আসার পর তো টোকন রাজধানী থেকে প্রকাশিত প্রায় সকল দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকী এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রাহশাহী থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনের নিয়মিত কবি হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলো হলো-

কবিতার বই-
১. অন্তরনগর ট্রেন ও অন্যান্য সাউন্ড, ১৯৯৮
২. দূরসম্পর্কের মেঘ, ১৯৯৯
৩. আয়ুর সিংহাসন, ২০০০
৪. কবিতা কুটিরশিল্প, ২০০২
৫. ঝাঁ ঝাঁ ঝিঁ ঝিঁ, ২০০৩
৬. নার্স, আমি ঘুমোইনি, ২০০৮
৭. টোকন ঠাকুরের কবিতা, ২০১০
৮. ভার্মিলিয়ন রেড, ২০১০
৯. রাক্ষস @ gmail.com, ২০১০
১০. তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, ২০১০
১১. শিহরণসমগ্র, ২০১১
১২. ঘামসূত্র, ২০১১
১৩. রোম ওয়াজ নট বিল্ট ইন আ ডে, ২০১২

গদ্য লেখায়ও টোকনের হাত কবিতার মতোই শক্তিশালী। শব্দ নিয়ে খেলতে পারা এই দক্ষ শব্দজুয়ারি'র এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ছোটগল্পের সংকলন তিনটি। সেগুলো হলো-

ছোটগল্প:
১. জ্যোতি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল, ২০১১
২. সুঁই ও ব্লেড, ২০১১
৩. মি. অ. মি. টি. এণ্ড মিসেস মেঘের গল্প, ২০১১

টোকন উপন্যাস লিখেছে অনেকগুলো। দৈনিক পত্রিকার ঈদসংখ্যার হিসাবটা আমার জানা নেই। তবে বই আকারে প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর একটা তালিকা দেয়া যেতে পারে। টোকন ঠাকুরের প্রকাশিত উপন্যাস দুইটি।
উপন্যাস:
১.মমি, ২০১২
২. চরৈবেতি, ২০১২

টোকন ঠাকুর সম্পাদিত চিত্রকলার স্মারকগ্রন্থের সংখ্যা দুইটি।
১. একবার পায় তারে ( অকালপ্রয়াত শিল্পী সনাতন বিশ্বাসের জীবন ও কর্ম), ২০০৪
২. ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী ( শিল্পী শশীভূষণ পালের জীবন-শিল্পকর্ম ও মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট এর শতবর্ষ বার্ষিকী ১৯০৪-২০০৪), ২০০৫

টোকন ঠাকুর ছোটদের জন্যও প্রচুর লেখেন। টোকনের ছোটদের জন্য প্রকাশিত কবিকার বইগুলো হলো-
১. মেঘলা দুপুর
২. ফড়িঙের বোন
৩. সব পাখিরাই পাখি না

রঙের মিস্ত্রী:
টোকন ঠাকুর আর্ট কলেজের ছাত্র। ওরিয়েন্টাল আর্টে স্নাতকধারী আর স্বেচ্ছায় এমএ ফাইনাল পরীক্ষা বিসর্জন প্রণেতা। ছবি আঁকার দারুন হাত। কর্মজীবনের শুরুতে শাড়ির ডিজাইন করতেন। অনেক লিটল ম্যাগাজিনের লোগো টোকনের হাতের লেখায় করা। বইয়ের প্রচ্ছদও করেছেন অনেকগুলো। কিন্তু কবিতার নেশায় ছবি আঁকাতে মন বসলো না এই রঙ মিস্ত্রী'র।

চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাণ ও পরিচালনা:
টোকন একজন আধুনিক স্ক্রিপ্ট রাইটার। এখন পর্যন্ত অনেক চিত্রনাট্য লিখেছেন। ফুল-লেন্থ ছবি বানিয়েছেন একটি। নাম 'ব্ল্যাকআউট', ২০১০। ছবিটি এখনো সিনেমা হলে প্রদর্শনের জন্য সেন্সর বোর্ডের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। টেলিভিশন নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন অসংখ্য। টোকন ঠাকুর নির্মিত ও পরিচালিত টেলিভিশন নাটক গুলো হলো-
১. পুতুল বউ (রচনা- টোকন ঠাকুর)
২. ভূত্নী (রচনা- ধ্রুব এষ)
৩. টিকটিকি (রচনা- ধ্রুব এষ)
৪. তাহার নামটি যন্ত্রণা ( রচনা-পরিচালনা: টোকন ঠাকুর)

এছাড়া বাংলার ষড়ঋতু নিয়ে টোকন ঠাকুর ছয়টি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছে। যেগুলো এখনো এডিটিং টেবিলে আছে। টোকন ঠাকুর রচিত, নির্মিত ও পরিচালিত শর্ট ফিল্ম গুলো হলো-
১. তরমুজ (গ্রীস্মকাল)
২. শালিক দিবস (বর্ষাকাল)
৩. শুধু শুধু (শরৎকাল)
৪. ওয়ানস আপোন অ্যা টাইম (হেমন্তকাল)
৫. দ্যা গ্রেট অস্কার (শীতকাল)
৬. স্প্রিং উইদাউট স্ক্রিপ্ট (বসন্তকাল)

চলতি বছর সরকারি অনুদানে টোকন ঠাকুর নির্মাণ করতে যাচ্ছে শহীদুল জহিরের 'কাঁটা' গল্প অবলম্বনে পূর্ণাঙ্গ বাংলা ছায়াছবি 'কাঁটা'।

১৪ বছরে ১৯ চাকরি অতপর বেকার:
টোকন ১৪ বছরে ১৯ চাকরি করেছে আর বেকারত্বের স্বাধীনতা নিয়েছে।টোকন ঠাকুর কাজের সন্ধানে বারবার চাকরি ধরেছে আর ছেড়েছে। প্রায় সবগুলোই বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলে। টোকন ঠাকুরের চাকরির কর্মস্থল ছিল দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক সমকাল, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক নতুন ধারা, ইত্যাদি। বাংলাদেশ আর্মি হেডকোয়ার্টার এর সামরিক জাদুঘর 'বিজয় কেতন' এ, মুক্তিযুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সম্মুখ সমরের যুদ্ধ-ইতিহাসের টেক্সট এডিটর হিসেবে, কখনো এনজিও তে, কখনো প্রাইড টেক্সটাইলস-এর শাড়ির ডিজাইনার হিসেবে...
এবার শুধু ছবি বানাবে বলেই মনস্থির করেছে টোকন। এখন সরকারি অনুদানে শহীদুল জহিরের 'কাঁটা' নির্মাণ ও পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত আছে টোকন ঠাকুর। ব্যক্তি জীবনে শিল্প, সাহিত্য, নাটক, মঞ্চনাটক, ফটোগ্রাফার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, ছাড়াও টোকন ঠাকুর বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের রচয়িতা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:৪৭

নীল জানালা বলেছেন: বহুমুখী প্রতিভার একজন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। টোকন ঠাকুর তো ব্লগেও লিখেন তাই না?

২| ২২ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৭:১৩

ভিটামিন সি বলেছেন: ভেজাইল্লা লোক মনে হইতাছে। ভাই একটা বিয়া করাইয়া দেন (যদিও বয়স বলে উনার ছেলে-মেয়ে কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ে)। তাইলে দেখবেন সব বাদড়ামি ছাইড়া কেমন বউয়ের পিছে ঘুর ঘুর করে। হা হা হা হা হা হা হা।

৩| ২২ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: কবির আসল নামটাই দিলেন না !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.