নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুদের আমলনামা-৭ : : উনুনের ভাজে মহাকাশ হাঁটে জাফর আহমদ রাশেদ ।। রেজা ঘটক

২৪ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

একদিন পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যোদয়ের সময় পৃথিবীর ভারী অসুখ করলো। মাথা ঝিম মেরে ভূবন বসে রইল কৈবল্যধামে। ঋষিকেশ কি কাজে যেনো ভারী ব্যস্ত। কিন্তু রাশেদ দুলতে দুলতে ঠিকই মধুবনে গিয়ে হাজির। সেখানে কবি সৌমেন ধর একা একা বসে পাতার বাঁশি বানানোর গবেষণায় মত্ত। সেখান থেকে কত্তো দূরে সমুদ্র? হাই তুললেই প্রতিধ্বনি হবে হয়তো। নয়তো ওরা সেখানে কি করবে শুনি? পাতার বাঁশি বোনা শেষে কবি সৌমেন কহে, বদ্দা, আঁর কবিতা খান পড়র। রাশেদকে কবিতা ধরিয়ে দিয়ে সৌমেন গান ধরলো, 'দেওয়াল ধরে দাঁড়াও না......'

জাফর আহমদ রাশেদ ১৯৭০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়ার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। চট্টগ্রামের পটিয়ার হুলাইন সালেহ-নূর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। রাশেদের ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। কিন্তু অনার্স ও মাস্টার্সে দুটোতেই প্রথম স্থান থাকা স্বত্ত্বেও শিক্ষকতা পেশায় যাওয়া হলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য টিচার হতে প্রথম বিভাগ লাগবে। রাশেদ অল্পের জন্য দুটো প্রথম শ্রেণী মিস করেছে। আর ওদের ব্যাচে কেউ প্রথম শ্রেণী পায়নি। পেলে রাশেদই পেতো।

রাশেদ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম প্রধান কাজ। রাশেদ কবিতা লেখেন। একমাত্র মেয়ে পত্র নন্দিতা পাতাকে নিয়ে একটি মজার ছোটদের উপন্যাস লিখেছেন। কবিতার বই এখন পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে চারটি। 'কাঁচের চুড়ি বালির পাহার', যজ্ঞযাত্রাকালে', 'দোনামোনা' ও 'ছেলেদের মেয়েদের স্নানের শব্দ'।

শিক্ষকতায় যেতে না পারার দুঃখ নিয়েই রাশেদ সাংবাদিকতা করছেন দীর্ঘদিন। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় 'সহকারী সম্পাদক' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ভোরের কাগজে 'সম্পাদকীয় সহকারী' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম আলো বই প্রকাশের উদ্দ্যোগ নিয়ে প্রকাশনী 'প্রথমা যাত্রা শুরু করলে রাশেদ প্রথমা'র সঙ্গে জড়িয়ে যান। বর্তমানে রাশেদ প্রথমা'র প্রধান সমন্বয়কারী।

রাশেদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০০১ সালে আমরা যখন কাঁঠালবাগানে আমিন নিলয়ে থাকি। আমিনুর রহমান মুকুলের নেতৃত্বে নাট্যদল পালাকার-এর সূচনা পর্ব থেকে। রাশেদও পালাকারের একজন ফাউন্ডার মেম্বার। আমরা যখন আমিন নিলয় ছেড়ে ১৯ কাঁঠালবাগানে উঠলাম, তখনও রাশেদ ভোরের কাগজে। রোজ পত্রিকার অফিসের কাজ শেষে রাশেদ আর শামিম ভাই (শামীম আহমেদ, ভোরের কাগজ) আমাদের ব্যাচেলর বাসায় আড্ডা দিতে আসতেন। শীত-গ্রিষ্ম, বর্ষা-শরৎ, হেমন্ত-বসন্ত বাদ যেতো না কোনো কাল।

রাশেদের বউ অলকা নন্দিতাও একজন কবি। পড়াশুনা করেছেন রাশেদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। নন্দিতাও পাস করেছেন রাশেদের সঙ্গে। ভোরের কাগজে তখন রাশেদের প্রায় ছয় মাস কোনো বেতন হয় না। ওদিকে নন্দিতা তখন প্রেগন্যান্ট। পাতা যখন জন্মগ্রহন করলো ১৮ ডিসেম্বর ২০০২ সালে, তখন রাশেদ-নন্দিতার ভারী কষ্টের দিন গেছে। পাতার জন্মের পরপরই রাশেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে লাগলো। রাশেদ হুট করে ভোরের কাগজ ছেড়ে দিয়ে প্রথম আলো'র সাহিত্য সাময়িকীর দায়িত্ব নিলেন।

রাশেদের বাসাও ছিল কাঁঠালবাগানে। পাতার জন্মের পর ছোট বাসায় আর চলে না তখন। তাছাড়া আলো বাতাসের খুব দরকার। আর নন্দিতার অফিস তখন লালমাটিয়ায়। নন্দিতারও তখন অফিসে যেতে ভারী দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বাসা বদল করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাশেদ। রাশেদ আর আমি মিলে শংকর এলাকায় কয়েকটা বাসা দেখে দুইটা মোটামুটি পছন্দ করে আসলাম। শংকর এলাকায় আমি ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলাম। শংকরের জাফরাবাদে। সেই হিসেবে শংকর এলাকা খুব ভালো চিনি আমি। দ্বিতীয় দিন গিয়েই আমরা বাসা ফাইনাল করে আসলাম। ফিজিক্যাল কলেজের পেছনে ইত্যাদি মোড়ে রাশেদ যে বাসায় তখন উঠলেন, এখনো সেই ইত্যাদি মোড়েই আছেন।

কাঁঠালবাগানে তখন আমরা একসঙ্গে থাকি গল্পকার ও সাংবাদিক রাজীব নূর, গল্পকার খোকন কায়সার, গল্পকার রোকন রহমান, সুরকার সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, রেজাউল কবির মাহমুদ নাছিম, পুলক বিশ্বাস, মনোতোষ তালুকদার মনি, শাহাদুজ্জামান মাসুদ, চার্টার্ড সেক্রেটারি রিয়াজ হক শিকদার আর আমি। ঢাকা শহরে আমাদের এমন কোনো বন্ধু খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা সেই বাসায় আড্ডা দেয় নাই। নিয়মতি যারা তখন আড্ডায় আসতেন তারা হলেন- শিল্পী শাহীনূর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, হযরত মহাত্মা গোলাম রসুল, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, শামীম আহমেদ ভোকা, কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, কবি আলফ্রেড খোকন, সাংবাদিক তরুণ সরকার, মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, কণ্ঠশিল্পী কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম, জায়েদউদ্দীন, শিবলী সাদিক, তুহিন, রিজভী আহমেদ জনি, বড় তুহিন (সাইফুল ইসলাম), খোকন মজুমদার, বাবু, তারেক সাইফুল্লাহ, নাট্যকার ও নির্মাতা আমিনুর রহমান মুকুল, নয়ন মনি চৌধুরী, অজয় দাশ, পংকজ ওয়াদ্দেদার, কবি অলক চক্রবর্তী, কবি আরণ্যক টিটো, গল্পকার মিনহাজ রিপন, ছোট জনি, চালচিত্র সম্পাদক কবি জাহাঙ্গীর হোসেন রাজা, বন্ধু মিজানসহ আরো অনেকে।

আমরা তখন 'দণ্ড' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ করার কথা ভাবছি। রাশেদ চট্টগ্রাম থাকাকালীন 'আড্ডারু' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করতেন। কবি সৌমেন ধর 'উৎকর্ণ' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন। আর কবি হাফিজ রশীদ খান 'পুষ্পকরথ' নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন। চট্টগ্রামের এই তিন কবিকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি বলেই তাদের সঙ্গে আমার অনেক কিছু'রই বিনিময় হয় নিঃস্বার্থভাবেই। আমরা তখন ১৯ কাঁঠালবাগানে প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় 'দণ্ড'র আড্ডা দেই। সবাই যার যার লেখা কবিতা ছোটগল্প পড়ি। অন্যরা পড়া শেষে তার উপর বিশদ আলোচনা করেন। তখন মঙ্গলবারের আড্ডার জন্য আমরা পুরো সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতাম। কিন্তু রাশেদ আর শামীম ভাই আমাদের সঙ্গে রোজ আড্ডা মারতেন। সেই আড্ডা এক সময় কাঁঠালবাগানে আর সীমাবদ্ধ থাকেনি।

এরপর আমরা ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে ধানমন্ডি নদীর পাড়ে সান্ধ্য আড্ডা চালু করলাম। ২০০৩ সাল থেকে সেই আড্ডা ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় আট বছর টিকে ছিল। ধানমন্ডি নদীর পারের আড্ডায় যারা নিয়মিত কমরেড ছিলেন তারা হলেন- মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, রিয়াজ হক শিকদার, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, পুলক বিশ্বাস, জাফর আহমদ রাশেদ, শামীম আহমেদ, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, ফিরোজ এহতেশাম, অলক চক্রবর্তী, জায়েদউদ্দিন ও ডিডি মঈনুল বিপ্লব। এছাড়া অনিয়মিত যারা আসতেন তারা হলেন- টোকন ঠাকুর, সুমন শামস, শিল্পী শাহীনূর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, মহাত্মা গোলাম রসুল, নজরুল, বুলবুল, চট্টলা সুমন, রাজীব নূর, রোকন রহমান, খোকন কায়সার, মোবাশ্বির আলম মজুমদার, হুমায়ুন কবির, কমল, অরূপ রাহী, কামরুজ্জামান কামুসহ আরো অনেকে।

আমার অফিস তখন ধানমন্ডির সাতাশ নম্বরের মাথায় ছায়ানট ভবনের পাশে। প্রফেসর নজরুল ইসলাম স্যারের নগর গবেষণা কেন্দ্র। সন্ধ্যায় তখন ধানমন্ডি নদীর পারের নিয়মিত আড্ডা তো আছেই, এর বাইরে সকালে আমি এক পশলা অফিসে যাবার পথে বা লাঞ্চ আওয়ারে আড্ডা মারতে ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে যাই। সকালে আমার সঙ্গে আড্ডায় থাকেন শিল্পী মাসুক হেলাল, গল্পকার রুদ্রাক্ষ রহমান, কথা সাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব (শাহীন ভাই), গল্পকার শেখর ইমতিয়াজ, সাংবাদিক দুলালদা, শিল্পী রাজীব রায়, সাংবাদিক জসিম উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পাগলা রিপন, বেবি মওদুদের ছোট ছেলে পুটু মামা। মাঝে মাঝে সেই আড্ডায় থাকতেন এপি'র ফটোগ্রাফার পাভেল রহমান। অফিসের চেয়ে আড্ডাই আমার বেশি ভালো লাগতো, এখনো আড্ডা মেরেই জীবন চলছে।

যেদিন বেশি বৃষ্টি হতো, সেদিন আড্ডার শুরুটা হতো ১৯ কাঁঠালবাগানে। অথবা পরে যখন আমরা ১০০ কাঁঠালবাগানের চিলেকোঠায় চলে যাই, সেখানে। একবার সারা ঢাকায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হলো। কোথাও যাবার সুযোগ নেই। আমাদের চিলেকোঠার বাসায় একে একে সেদিন আসলেন জাফর আহমেদ রাশেদ, শামীম আহমেদ, ফিরোজ এহতেশাম, কামালউদ্দিন কবির, নাসরুল্লাহ মোহাম্মদ নাহিদ, পুলক বিশ্বাস, সুমন শামস, দীপক কুণ্ডু ও চট্টলা সুমন। রিয়াজ হক শিকদার আর আমি তখন হোস্ট। কবির ভাই (কামালউদ্দিন কবির) সেদিন শোনালেন- কীভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল-দীনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হলো, সেই গল্প। বাংলা নাটকের একজন দিকপালকে নিয়ে সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা যা ঘটেছিল, তার পূঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা করছিলেন কবির ভাই। যা শুনে উপস্থিত আমরা সবাই একেবারে থ' মেরে গিয়েছিলাম। মানুষ ধর্মকে নিয়ে এতো বেশি বাড়াবাড়ি করে যা ডক্টর হুমায়ুন আজাদের বেলায়ও ঘটেছিল। কেন যে মানুষ মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে এমন উন্মাদ হয়ে যায়, বুঝি না !!!

রাশেদ এমনিতে তুখোর বক্তা। কোনোদিন কোনো জনসভায় অবশ্য আমি রাশেদকে বক্তব্য দিতে দেখিনি। আড্ডায় রাশেদ খুব ভালো আড্ডারু। তবে টোকন ঠাকুর থাকলে রাশেদের চেয়ে টোকনই বেশি ফ্লোর নেয়। টোকন আর রাশেদ চিঠি চালাচালি করে ঝিনাইদহ টু চট্টগ্রাম কবিতার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় পড়াশুনা করেছিল শাহিনূর রহমান আর মোবাশ্বির আলম মজুমদার। শাহীনদের চট্টগ্রাম অংশের সেসব গল্প আমরা রাশেদের মুখে প্রায় সবই শুনেছি। সৌমেন আর রাশেদ কখন কখন কোথায় কোথায় হারিয়ে যেতো, সেসব গল্প থাকতো খুশির কোনো মুহূর্ত এলে। বৃষ্টির মুহূর্ত এলে পল্লবীর কলা খাওয়া প্রসঙ্গ আসতো। পল্লবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাশ করেছে। পরে শাহীন আর পল্লবী বিয়ে করেছে। রাশেদ তখন চট্টগ্রামে দৈনিক পূর্বকোণ-এ কাজ করে। আর অফিসের ঠিক পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকে। পল্লবী যদি কলা খায় তাহলে আর বৃষ্টি হবে না- এমনটি বোধহয় ছিল মিথ!

একবার মোবাশ্বির আর শাহীন চট্টগ্রাম রেললাইনে রাত তিনটায় ছবি আঁকা প্রাকটিস করছে। পুলিশ এসে দু'জনকে ধরলো। সরকারি রেললাইনে এতো রাতে নাকি ছবি আঁকা নিষেধ। তো এক দুই কথায় লাইগা গেল প‌্যাচ। মোবাশ্বির তো ঢাকায় এখন অনেক ভদ্র পোলা। তখন খুব ঘাউরা ছিল। সেই ঘাউরামির কারণে পুলিশ আরো নাছোরবান্দা। গাড়িতে উঠতে বললো ওদের। শাহীনরা গাড়িতে উঠবে না। শেষ পর্যন্ত ক্যাচাল চলতে চলতে আযান দিল। শাহীন বললো, এখন তো আর সমস্যা নাই ছবি আঁকতে। কারণ, আযান হয়েছে। যার যে ধর্ম এখন সে সেই ধর্ম কর্ম করবে।

রাশেদের মুখে চইয়া'র গল্প যে শোনে নাই, সে পৃথিবীর সেরা গল্পটাই আসলে শোনে নাই। গ্রামের এক মুদি দোকানের সামনে শীতের সকালে সবাই বিবিসি'র খবর শোনার জন্য ভিড় করেছে। সাধারণত সন্ধ্যায় বিবিসি'র খবরের সময় এই দোকানের সামনে ভিড়টা একটু বড় থাকে। তো টহল পুলিশের একদল পুলিশ খবর শোনার জন্য সেই মুদি দোকানের সামনে উঁকি মারলো। একজন জগাই সেখানে শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে খবর শুনছিল, বা হতে পারে খামাখা বসে বসে মানুষের জটলা দেখছিল। এক পুলিশ কনস্টেবল হাতের বন্দুক মাটিতে ঢ্যাস দিয়ে একটু আরাম করে দাঁড়াতে গেলেন। কিন্তু বন্দুকের বাটে জগাই'র হাটুতে লাগলো টাক। শীতের মধ্যে যদি কারো হাটুতে অমন টাক লাগে, কেমন লাগতে পারে ভাবুন! অমনি জগাই খিস্তি মেরে উঠলো, চইয়া ইবা সামলাই রাখবার ন পারো? রাশেদের সেই গল্পের পর থেকে আমাদের আড্ডায় বন্দুকের নাম হয়ে গেল 'চইয়া'।

রাশেদের গল্প বলার ঢঙটি হলো সবাই হাসলেও রাশেদ শুধু মিটমিট করবে। সবাই যখন হেসে একেবারে গড়াগড়ি যাবে তখন হয়তো রাশেদ একটু শব্দ করে হাসবে। আমাদের আড্ডায় দশ টাকা করে নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে চায়ের দাম পরিশোধ করার থিউরির প্রথম আবিস্কারক ছিল রাশেদ। অবশ্য আমাদের আড্ডায় বেশ কয়েকজন দানবীর হাজী মহসীন ছিলেন তখন। যেমন নাসরুল্লাহ মোহাম্মদ নাহিদ, শিল্পী শাহীনূর রহমান, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, মহাত্মা গোলাম রসুল বা আমিনুর রহমান মুকুল। এরা সরাসরি বলে দিতো আমি এতো দিলাম। বা বিল দেওয়া শেষ। আর যদি কিছু হিসেবের বাইরে বাকি থাকে সেই বাকিটা তোমরা দাও। হাবিবুর, হাবিবুরের মা আর হাবিবুরের বড় ভাই আনিচারদের সঙ্গে প্রায়ই ধানমন্ডি নদীর পারের আড্ডা শেষে চায়ের হিসেবে ভুল করতাম আমি। রাশেদের প্রধান কাজ ছিল সেই গন্ডগোল মিটিয়ে ঠিকঠাক হাবিবুরকে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া। আহা, কতোদিন যে সবাই মিলে ধানমন্ডি নদীর পারে আড্ডা হয় না। ধানমন্ডির সেই আড্ডাটা খুব মিস করি আমি।

ধানমন্ডি নদীর পারের আমাদের আড্ডাটা একসময় বন্ধ হয়ে গেল। কেউ বলতে পারে না আড্ডা বন্ধ হবার আসল কারণ? তবে আমি ধানমন্ডি যাওয়া বন্ধ করার পর নতুন করে আবার যোগসূত্রের পান্থপথের অফিসে আড্ডা শুরু হয়েছিল। আমি যোগসূত্র ছেড়ে দেবার পর সেই আড্ডাও একসময়ে বন্ধ হয়ে গেল।

আমাদের থিয়েটার গ্রুপ পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীত লিখলেন কবি জাফর আহমেদ রাশেদ। আমাদের প্রিয় বন্ধু রাশেদকে আমি ডাকি জাফর ভাই। রাশেদের লেখা সেই গানটির যতোদূর মনে পড়ছে, এখানে তুলে দিলাম-

'আজ, কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছে
কাল, ঝড়া পাতার রোদন ছিল
প্রসূতি মা'র বোধন হল
আজ, কণ্ঠ থেকে আদিমতার কান্না জেগেছে।
...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....

কাল, দিন থাকতে সূর্য গেছে নেমে
সাথে অন্ধ পথে চন্দ্র গেছে থেমে
আজ মেঘনা পারে ডাকবে পাখি বংশি বেজেছে।
...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....

আজ, দিন ফুরাবে অনেক কাজের শেষে
সব হাওয়ায় হাওয়ায় সহজে অক্লেশে
ঠিক খুলে দেবে অভিমন্যুর পথ
তাই দিক-বিদিকে ছুটছে রঙিন রথ
আজ, হাতে সবার পাখির পালক, ফড়িং সেজেছে।
...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....

রাশেদের লেখা এই গানটির সুর করেছে বন্ধু সুদত্ত চক্রবর্তী পবন। আর পবন সুর করার সময় তবলার বায়া বাজিয়ে তাল দিয়েছিলাম আমি। গানটি আমিন নিলয়ে বসে সুর করা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫৯

এপোলো বলেছেন: amar elakar ek guni vai er bepare jante pere valo lagse.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.