নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুদের আমলনামা-১০ : : ধাগে তেটে নাগে ধিনা অজয় দাশ ।। রেজা ঘটক

২৬ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩০

'ধুম না ধুম না, না না ধুম না না না....বাজে গোবিনা....' মান্না দে-এর এই গান যখন পবন গায় তখন অজয় ছাড়া বন্ধুদের আর কারো পক্ষে সেই তাল বাজানো কঠিন। থুব ছোটবেলায় বাবার হাতের মার খেয়ে তবলা শিখতে হয়েছিল অজয়কে। তারপর অজয় আর তবলা ছাড়ে নি। অজয় এতো মিষ্টি বোল বাজাতে পারে, যারা শোনে নি, তারা নিশ্চয়ই অভাগা। সেই হিসেবে আমি ভারী ভাগ্যবান। অসংখ্য রাত অজয়ের তবলার বাজনায় পবনের গানে আমরা রাত উজার করেছি। চট্টগ্রামে এক সময় পবন অজয় জুটি ছিল দেখার মতো এক মানিক জোড়। যদি সারা রাত মান্না কণ্ঠী চলে সারারাত পবন মান্না দে-এর গান করতো আর অজয় বাজাতো সেই রকম। যদি সারা রাত পবন নচিকেতা গায় তো অজয় বাজায় সেই হৃদয় হরণ করা তাল। আহা ধা ধি না, না থু না। কিংম্বা ধাগে তেটে নাগে ধিনা।

অজয় দাশের জন্ম ১৯৭৪ সালের ৭ জুলাই চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে। হোম ডিস্ট্রিক চাঁদপুর হলেও অজয় পুরোপুরি চাটগাঁওয়ের । চট্টগ্রমের মুসলিম এডুকেশান সোসাইটি (এমইএস) স্কুল থেকে ক্লাশ এয়ান থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার পর চট্টগ্রামের নিউ মডেল হাইস্কুলে নবম এ দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে অজয়। নিউ মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশের পর ভর্তি হয় চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করার পর অজয় সঙ্গীতে মাস্টার্স করে ঢাকার ইউডা (ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেট) থেকে। অজয়ের ক্যারিয়ারও সঙ্গীতে। মঞ্চ নাটকে মিউজিক ডিরেকশানের পাশাপাশি অজয় টেলিভশান নাটকেও মিউজিক করছে বর্তমানে। অজয় অনেক গানে সুরও করছে। নিজের একটি মিউজিক স্টুডিও না হওয়া পর্যন্ত অজয়কে আরো পরিশ্রম করতে হবে। দায়ে পড়ে অনেকের কাজ করে দিতে হয় অজয়কে। অনুরোধের আসরে অজয় সরাসরি কাউকে না বলতে পারে না। এই না বলতে না পারার জন্যই অজয়ের মিউজিক ক্যারিয়ার বারবার পিছিয়েছে। নিজের কাজ ফেলে তখন অনুরোধের ঢেঁকি নিয়ে সময় নষ্ট করে অজয়।

অজয়কে মিউজিকে কিছু করতে হলে আরো বেশি ওয়ার্ল্ড মিউজিক শুনতে হবে। ওয়ার্ল্ড মিউজিকের পরিবর্তনের ধারাটি সুতীক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেই কাজে অজয়ের নিজেরই কিছুটা গাফিলতি আমি লক্ষ্য করেছি। কারণ ওই অনুরোধের ঢেঁকি গেলা। একজন তুরণ লেখক কখনোই ভালো লিখতে পারবে না যদি না সে সারা বিশ্বের তাবৎ ভালো লেখকরা কি লিখছে সেটি না পড়ে। তেমনি একজন তরুণ মিউজিসিয়ান ততোক্ষণ ভালো গান করতে পারবে না যতোক্ষণ না সে ওয়ার্ল্ড মিউজিকে কি কি ঘটছে তার খবর না রাখে। অজয়কে এই জায়গায় আরো বেশি সিরিয়াস হতে হবে। নইলে শাহবাগে যেমন হাজার হাজার তরুণ কবি আছে, যারা কারো বই পড়ে না। নিজেকে নিজেই এরিস্টটলের মতো বড় পণ্ডিৎ মনে করে। নিজে যা লেখে মনে করে পৃথিবীর সেরা কাব্য সে লিখে ফেলেছে। অজয়ের ক্ষেত্রেও ওয়ার্ল্ড মিউজিকের সংস্পর্শ ছাড়া তেমন ব্যাপার ঘটার ব্যাপারে আমি বড়োই আতংকিত। অজয়কে মিউজিক করতে হবে, করতে হবে নিজের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার দিয়েই। সঙ্গে যোগ করতে হবে ওয়ার্ল্ড মিউজিকের সমৃদ্ধ জ্ঞান। নইলে অজয় আমি বড় হতাশ হব বন্ধু।

২০০২ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে কাঁঠালবাগানের আমিন নিলয়ে অজয় আর পবনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। কলাবাগান লেকসার্কাস থেকে আমরা এক প্রকার উচ্ছেদ হয়ে ওদের কাছে আশ্রয় নিয়েছি। জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে আমাদের বাড়িওয়ালী আন্টি আমাদের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেন। অতো স্বল্প সময়ে রাজধানী ঢাকায় ব্যাচেলর বাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। রিয়াজ-নাছিমের বন্ধু মুকুল। সেই সূত্রে রিয়াজ আর নাছিম একদিন আগেই মুকুলদের আস্তানা আমিন নিলয়ে উঠলো। পরদিন আমি আর মনি'দা তল্পিতল্পা সহ হাজির। তারপর শুরু হয় মুকুলের নের্তৃত্বে নাট্যদল পালাকার প্রতিষ্ঠার কাজ।

চট্টগ্রামে অজয়-পবন-পংকজ এই ত্রিরত্নের হাড়ির খবর অনেক আমার জানা। কানাগলিতে দেয়াল টপকে ড্রেনের মধ্যে লটকে পড়ার রহস্যও জানি। ঘটনা সামান্য। সন্ধ্যায় দোচোয়ানির মোহনীয় টানে ওরা সেখানে যায়। পুলিশ চাঁদা না পেলে হঠাৎ কখনো সেই জায়গা রেড দেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নব্য মওদুদীরা দেয়াল টপকে পড়বি তো পড় একেবারে ময়লার ভাগারে। আহারে শীতকালে অমুন দশায় কার ইচ্ছে করে ভেজা জামাকাপড়ে বাসায় ফিরতে। পুলিশ চলে যাবার পর তাই দেয়াল টপকে আবারো পানশালায় হানা। এভাবে কতো খানাপিনার খবর আছে আমার ঘটে। মাঝে মধ্যে ভুলে যদি দু'চারটি রটে, মন খারাপ করিসনে বন্ধু।

একবার অজয় একটা সাইকেল কিনলো। সারা ঢাকা শহর সাইকেলে চষে বেড়াতে লাগল অজয়। কাওরান বাজারে রেলরাইনে বসে সারা রাত একতারা শেখা শুরু করলো অজয়। পাশেই এক খিচুরি বিক্রেতা অবসরে অজয়ের কাছে তবলার বোল শেখে। আর অজয় রাতে বেরাতে সাইকেল নিয়ে চলে যায় কাওরান বাজার একতারা হাতে। এক রাতে অজয় কাঁঠালবাগান আমার সঙ্গে চিলেকোঠার বাসায় থাকবে তেমনিই ছিল সিডিউল। অজয়ের সাথে কথা হল। অজয় বললো রাত বারোটার মধ্যেই আসবো। অজয়ের আর কোনো খবর নাই। অজয়ের ফোনও বন্ধ। ব্যাপার কি?

ভোর রাত সাতে তিনটায় মুকুলের একটা এসএমএস আসলো আমার মোবাইলে- অজয় অ্যাকসিডেন্ট করেছে। আমরা সমরিতা হাসপাতালে। আমি মরিপরি তখনই ছুটলাম। গিয়ে দেখি মুকুল আর জুয়েল মামু চুপচাপ বসে ঝিমোচ্ছে। পাশের খাটে অজয় শুয়ে আছে। চোখ খুলৈ আমাকে এক পলক দেখলো অজয়।

বাংলা মটর থেকে সাইকেলে কাওরান বাজার যাবার জন্যে সার্ক ফোয়ারায় টার্ন নেবার সময় পেছন থেকে একটা লড়ি অজয়ের সাইকেলকে ধাক্কা মারে। অজয় সেখানেই রাস্তায় পড়েছিল। তিন তরুণ পান্থপথ দিয়ে শুক্রাবাদের দিকে যাচ্ছিলৌ। তারাই অজয়কে কিপ করে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওদিকে আমাদের আরেক বন্ধু দিপু অজয়ের সঙ্গে তখন দেখা করার কথা। দিপু মটর সাইকেল নিয়ে পান্থপথের সার্ক ফোয়ারা থেকে রাসেল স্কয়ার পর্ৃন্ত পাক খাচ্ছে। অজয়কে খুঁজে পাচ্ছে না। স্কয়ারের সামনে চটলা দেখে সেখানে থেমে দিপু দেখল রক্তমাথা অজয়কে। তারপর স্কয়ারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দিতে মুকুল জুয়েল ফয়সালরা হাজিরা হয়। তারপর ওরা অজয়কে সমরিতায় নিয়ে আসে। এটা ২০০৮ সালের ঘটনা। তারপর পৃথিবীতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। অনেক ঝড় ঝঞ্ঝ্বা হয়েছে। অনেক তপ্ত রোদ উঠেছে। কিন্তু আমার বন্ধু অজয় এখনো ঠিক আগের মতোই আছে। সত্যিকারের স্ফূতিবাজ বলতে যা বুঝায় তার ষোলকলাই আছে অজয়ের মধ্যে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৫

মোহাম্মদ হারুন বলেছেন: রেজা ভাই কেমন আছেন, অনেক দিন যাবৎ আপনার পোষ্ট দেখতেছি ও পড়তেছি, ভালই লিখেন, ইদানিং খূব ঘন ঘন আপনার পোষ্ট দেখা যাচ্ছে,


একটি প্রশ্ন আপনাকে

প্রতিটি পোষ্টে আপনি শিরোনামের শেষে আপনার নামটা ( রেজা ঘটক) জুড়ে দেন কেন।

যেমন

বন্ধুদের আমলনামা-১০ : : ধাগে তেটে নাগে ধিনা অজয় দাশ ।। রেজা ঘটক

এর রহস্য বা গুরুত্ব কি ? কেন আপনি এই রকম করেন?

২৭ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৩৯

রেজা ঘটক বলেছেন: এটাতে তো আপনার কোনো সমস্যা হবার কথা না...

২| ২৭ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:১০

মোহাম্মদ হারুন বলেছেন: অদ্ভুদ উত্তর,
সমস্য হবে কেন? বরং মজাপাই, কারণ নিজের ( নিক) টা শিরোনামে সাথে বড় হরফে লিখলে সবার কাছে (রেজা ঘটক) নামটা বিশেষ ভাবে নজরে আনা সম্ভব হয়, চিন্তা করতেছি
আমিও আমার নিকটা প্রতিটি পোষ্টের শিরোনামের সাথে জুড়ে দিবে,

২৭ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

রেজা ঘটক বলেছেন: আপনাকে কেউ তো নিষেধ করেন নি তাই না? লেখার বিষয়ে কথা না বলে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে নাক গলানো বাঙালির চারিত্রিক খাসিলত!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.