নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার অবস্থা আশংকাজনক ।। রেজা ঘটক

২৭ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষ। সারা বিশ্বের অবিসংবাদিত এই নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত এবং আশংকাজনক। ফুসফুসের সংক্রমণে অসুস্থ হওয়ার পর ৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলাকে প্রিটোরিয়া হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার হাসপাতালে তাঁকে দেখার পর আজ বৃহস্পতিবার মোজাম্বিক সফর বাতিল করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। বিবিসির খবরে জানানো হয়, ৯৪ বছর বয়সী বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহান নেতাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

বিবিসি অনলাইন জানায়, ম্যান্ডেলার শারীরিক অবস্থা পরিদর্শনে গতকাল রাতে ওই হাসপাতালে যান প্রেসিডেন্ট জুমা। ম্যান্ডেলার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জুমাকে জানান হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। তাঁরা ম্যান্ডেলাকে সুস্থ করে তোলার জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করে যাচ্ছেন।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র মোজাম্বিকে অনুষ্ঠিতব্য সাউথার্ন আফ্রিকান ডেভেলাপমেন্ট কমিউনিটির (এসএডিসি) শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান বাতিল করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। ওই সম্মেলনে আঞ্চলিক অবকাঠামোগত বিষয়ে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। ম্যান্ডেলার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। হাসপাতালে গতকাল ম্যান্ডেলাকে দেখে এসেছেন এমন দু'জন জানান, তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। যন্ত্রের সাহায্যে তাঁকে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি সূত্র জানায়, ম্যান্ডেলার কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এক দিন পর পর তাঁকে তিন ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, ম্যান্ডেলার অবস্থা সংকটাপন্ন। হূদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসকদের একটি দল তাঁর চিকিৎসা করে যাচ্ছে। কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার যন্ত্রটি খুলে ফেলার বিষয়টি নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চিকিৎসকেরা কথা বলেছেন।

বর্ণবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের সময় ২৭ বছর কারাগারে ছিলেন ম্যান্ডেলা। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ম্যান্ডেলাকে ১৯৯৩ সালে এফ ডাব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে তিনি দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গুরুতর শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। বিবিসির এক খবরে বলা হয়, ৯৪ বছর বয়সী বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহান নেতাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ম্যাক মাহারাজ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাদিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।' দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীরা তাদের প্রিয়নেতা ম্যান্ডেলাকে স্থানীয়ভাবে ‘মাদিবা’ বলে ডেকে থাকে। এটি তার গোত্র নাম।

মাহারাজ জানান, ম্যান্ডেলার অবস্থা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। তবে গণমাধ্যমে ‘ম্যান্ডেলাকে প্রিটোরিয়া হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে’ বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি জানান, তাঁর (ম্যান্ডেলা) ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানানো উচিৎ।

গত ছয়মাসে ম্যান্ডেলা এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হয়েছেন। তবে এবার তিনি হাসপাতালে ২০ দিন অতিবাহিত করেছেন। আর এ কারণে দেশটির অধিবাসীরা বুঝতে শুরু করেছে, তাদের প্রিয় নেতা সম্ভবত আর তাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। জোহানেসবার্গের অর্থনৈতিক জেলা স্যান্ডটনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৬০ বছর বয়সী ইদা মাসেগো বলেন, 'ম্যান্ডেলা খুব বয়স্ক মানুষ। তার জীবনের অবস্থা ভাল নয়। আমি শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এখনই তুমি তাঁকে (ম্যান্ডেলা) নিয়ে যাও। তার অবশ্যই চলে যাওয়া উচিৎ। তাঁর অবশ্যই বিশ্রাম পাওয়া উচিৎ।'

এরআগে বুধবার থেকেই ম্যান্ডেলাকে চিঠি, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসীরা। হাসপাতালের চারদেয়াল ছেয়ে যায় ম্যান্ডেলার প্রতি শুভাকাঙ্খীদের লেখা বার্তা, ফুলের তোড়ায়। বিলবোর্ডগুলোতে লেখা হয় ম্যান্ডেলাকে নিয়ে বার্তা, পুতুলের গলাতেও ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শ্রদ্ধার বাণী। ম্যান্ডেলার সুস্থতা কামনা করে এক ভক্তের বার্তায় লেখা হয়, 'আমরা জানি তার চিরবিদায় নেয়ার দিনটি আসবে। কিন্তু এটা মেনে নেয়া কষ্টকর।' আরেকজন লেখেন, 'তিনি আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার স্তম্ভ। শান্তি আর সম্প্রীতির স্তম্ভ। ম্যান্ডেলার জন্য ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আরেক ভক্ত বলেন, 'তিনি আমাদের জন্য যিশু খ্রিস্টের মতো। তাঁর সোনার হাত। ম্যান্ডেলা যে কষ্ট ভোগ করেছেন তার জন্য কখনো প্রতিশোধ না নিয়ে বরং বলেছেন আসুন আমরা এক হয়ে যাই।' আরকে ভক্ত বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকান এবং আফ্রিকানদের জন্য কঠিন সময় যাচ্ছে। প্রবীণ এই মানুষটা একজন আইকন।'

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই সাউথ আফ্রিতার কেপ প্রদেশের উমতাটুর এমভেজো গ্রামে নেলসন ম্যান্ডেলা জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর জন্ম সময়ের নাম ছিল রোলিহলাহলা। যার অর্ধ ট্রাবলমেকার। পরবর্তীতে তিনি সবার কাছে মাদিবা নামে পরিচিতি পেতে থাকেন। ম্যান্ডেলার দাদুভাই এনগুবেনগুকা ছিলেন কেপ প্রদশের থেম্বু জনসাধারণের ট্রানস্কেইন টেরিটরির শাসক। ম্যান্ডেলা তাঁর দুই বোনের সঙ্গে মায়ের কাছে কুনু গ্রামে রাখাল বালক হয়ে অন্য ছেলেদের সাথে বড় হন। থেম্বু শাসকদের কারো একজনের নাম ছিল ম্যান্ডেলা। তাই মাদিবা'র ফ্যামিলি নাম হয় ম্যান্ডেলা। তাঁর বাবা ছিলেন অশিক্ষিত কিন্তু মা ছিলেন একজন ডিভোটেড ক্রিশ্চিয়ান, যিনি ম্যান্ডেলাকে মেথোডিস্ট স্কুলে সাত বছর বয়সে ভর্তি করান। সম্যান্ডেলার শিক্ষক তখন তাঁর নাম দেন নেলসন। পরে ম্যান্ডেলা মিশনারির শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি, এক্সোসা, ইতিহাস ও ভূগোলের উপর ব্যাপক পড়াশুনা করেন। পরে তিনি ইংকোবোতে ক্লার্কবারি বোর্ডিং ইনস্টি্টিউটে

থেকে অস্টম শ্রেণী পাস করেন। পরে মাত্র দুই বছরে তিনি হাই স্কুল শিক্ষা শেষ করেন। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হারে-তে ১৫০ জন ছাত্রের সঙ্গে বিএ ভর্তি হয়ে এবক বছর পড়াশুনা করেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ওদিকে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনও চলতে থাকে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নের্তৃত্ব। কিন্তু ম্যান্ডেলা সবকিছু থেকে শুরুতে মুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মান সম্পন্ন খাবার সরবরাহ বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ করে ম্যান্ডেলা ডিগ্রি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

১৯৪৩ সালে ম্যান্ডেলা উইটওয়াটাস্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। শুরু করেন এএনসি ইয়োথ লীগের সঙ্গে যোগাযোগ। ১৯৪৪ সালের ৫ অক্টোবর ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন এএনসি একটিভিস্ট ইভলিন মাসেকে। এই সময় তিনি বড় বড় রাজনৈতিক নেতার কাছে ভেড়ার সুযোগ পান। ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইভলিন-ম্যান্ডেলার প্রথম ছেলে মাদিবা জন্ম গ্রহন করে। ১৯৪৭ সালে জন্ম গ্রহন করে তাঁদের মেয়ে মাকাজিউ। রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় থাকার কারণে ম্যান্ডেলা পরীক্ষায় ফেল করেন এবং ১৯৪৯ সালে ডিগ্রি না নিয়েই বিশ্ববিম্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৫২ সালে ম্যান্ডেলা প্রথম গ্রেফতার হন। এরপর তার জীবনে বারবার জেলে যাওয়া একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের বিনা অনুমতিতে বিদেশ সফর করার জন্য ১৯৬২ সালে ম্যান্ডেলাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। প্রথম দফায় ম্যান্ডেলার পাঁচ বছরের জেল হয়। জেলখানায় বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অপরাধে পরে তাঁর শাস্তির মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়। ১৯৬৪ সালের ১২ জুন রাষ্ট্রপক্ষের আনীত সকল প্রমাণ মিলে গেলে ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারদণ্ড প্রদাণ কর সেদেশের আদালত। ম্যান্ডেলাকে রোব্বেন দ্বীপপুঞ্জের জেলখানায় রাখা হয় ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তাঁকে কেপটাউনের পুলসমোর কারাগারে রাখা হয়। ম্যান্ডেলার কুশলীরা ৩ বছর আদালতে লড়াই করে ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি করেন। ১৯৯০ সালের মধ্যে তিনি এএনসি পুনর্গঠন করেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সালে তিনি আফ্রিকার দেশগুলো ভ্রমণ করেন।

১৯৯৩ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য রোধের জন্য এস ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৯৪ সালের ২৭ এপ্রিলের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল এএনসি বিজয়ী হলে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

২০০৪ সালে তিনি ৮৫ বছর বয়সে স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। এ পর্যন্ত তিনি অন্তঃত ২০ বার শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। সর্বশেষ ৮ জুন তিনি ভর্তি হবার পর এবার অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। গোটা বিশ্বের মানুষ বর্ণবাদ বিরোধী এই অবিসংবাদিত নেতার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এবং তাঁকে চিরবিদায় জানানোর প্রহন গুনছেন।







মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমার ভীষণ প্রিয় ম্যন্ডেলা, ওনার সুস্থ্যতা কামনা করছি।

২| ২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪২

দুরন্ত-পথিক বলেছেন: বাংলাদেশে ম্যান্ডেলা র মত নেতা চাই।

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪২

দুরন্ত-পথিক বলেছেন: বাংলাদেশে ম্যান্ডেলা র মত নেতা চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.