নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুদের আমলনামা-১২ : : বিশ্ব ভালোবাসা দিবস মানে প্রাণেশ চৌধুরী ।। রেজা ঘটক

০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। অমর একুশে বইমেলায় সেদিন থাকে উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড় শেষ হতে রাত নয়টা সাড়ে নয়টা বেজে যায়। আমি পাঠসূত্রের সঙ্গে বইমেলায় জড়িত বলে আমাকে দোকান বন্ধ করে তারপর বের হতে হয়। ভালোবাসা দিবস শুধু মুখে বললে হবে? কাজ করে প্রমাণ দিতে হবে সত্যিই এটা ভালোবাসা দিবস। সেই প্রমাণ দিলেন আমার প্রিয় দাদা প্রাণেশ চৌধুরী আর তার প্রিয়তমা প্রেমিকা শিল্পী চৌধুরী। বাংলা একাডেমীর ঠিক উল্টো পাশে রমনা কালী মন্দির। সেখানে প্রাণেশ দা আর শিল্পী বৌদি বিয়ে করে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ফোন করে প্রাণেশ দা বললেন, তুমি কোই? তাড়াতাড়ি আসো। আমরা বিয়ে করেছি। নতুন বিয়ে করা বর-কনেকে দেখতে খালি হাতে কিভাবে যায়? আমার সঙ্গে একগাদা বন্ধুরা। হাতের কাছে বাংলা একাডেমীর সামনের মেইন সড়কে পেলাম গজা-সন্দেশ। তাই কিনে ছুটলাম নতুন বর-কনেকে স্বাগত জানাতে। ইউসুফ জুলেখা তখন মহানন্দে। রোমিও ও জুলিয়েত তখন আপ্লুত। শিরি-ফরহাদ তখন বসন্তের উড়যনচণ্ডি হাওয়ায় প্রেমের নেশায় আত্মহারা। প্রাণেশ দা আর শিল্পী বৌদিকে নিয়ে আমরা ছবির হাটে গিয়ে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের প্রেমের কুঞ্জ কোথায় সাজাইছো? প্রাণেশ দা হেসে দিয়ে বললো, ওকে এখন কাজীপাড়ার বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। তারপর আমি ফকিরাপুলের বাসায় যাবো। আহারে স্বাদের বিয়ে। এই হচ্ছে আমার প্রাণেশ দা। বিয়ে করে বৌকে মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে ছুটলেন। কারণটা অবশ্যই আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিচারে এখনো সভ্যতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিল্পী বৌদি মুসলমান ঘরের মেয়ে। আর প্রাণেশ দা হিন্দু ব্রাহ্মণ। তাই এভাবে বিয়ের পর বৌকে চুপিচুপি পৌঁছে দিতে হল মায়ের বাড়ি। আহা মরি মরি।

১৯৬৩ সালের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার মুজিব রোডে প্রাণেশ চৌধুরী জন্ম গ্রহন করেন। বাবা নরেশ চন্দ্র চৌধুরী ও মা বিমলা চৌধুরী। বিয়ে করেছেন শিল্পী চৌধুরীকে। প্রাণেশ চৌধুরী আর শিল্পী চৌধুরী দু'জনেই আমার বন্ধু। প্রাণেশ চৌধুরীকে আমি ডাকি প্রাণেশ দা। প্রাণেশ দা মঞ্চ নাটকের একজন একনিষ্ঠ কারিগর। প্রাণেশ দা মঞ্চে একদিকে নির্দেশনা দিয়েছেন, দিচ্ছেন, অভিনয় করেছেন, করছেন; পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। নিজে টেলিভিশনের নাটক পরিচালনা করেন, মঞ্চে অভিনয় প্রশিক্ষণ দেন। এ পর্যন্ত প্রাণেশ দা প্রায় ২৮ টি মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন, অভিনয় করেছেন। এই ২৮ টি নাটক প্রায় এগারো শো'র উপরে শো হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রে প্রায় ২১টি ছবিতে প্রাণেশ দা অভিনয় করেছেন। ছবিগুলো হল-

শওকত ওসমানের 'জননী', মতিন রহমানের 'এই মন চায় যে', এফআই মানিকের 'পাল্টা হামলা', হুমায়ুন আহমেদের 'দুই দুয়ারী', এফআই মানিকের 'স্ত্রীর মর্যাদা', বাদল খোন্দকারের 'দুই ভাইয়ের যুদ্ধ', আরএ খানের 'ওরা জিম্মি', স্বপন চৌধুরীর 'মহিলা হোস্টেল', স্বপন চৌধুরীর 'আগুন আমার নাম', স্বপন চৌধুরীর 'বাদশাহ ভাই এলএলবি', আরএ খানের 'ব্যারিকেড', এফআই মানিকের 'বাবা', জাহাঙ্গীর আলমের 'কালা মানুষ', জাহাঙ্গীর আলমের 'ডিরেক্ট অ্যাকশান', রাকিবুল ইসলাম রাকিবের 'রিক্সাওয়ালার প্রেম', রাকিবুল ইসলাম রাকিবের 'ঠেকাও গুন্ডামী', এমবি মানিকের 'দুর্দান্ত', সা্য়িদ খানের 'ওরা সাহসী', সোহানুর রহমান সোহানের 'সত্যের বিজয়', মতিন রহমানের 'তোমাকেই খুঁজছি', মতিন রহমানের 'রাক্ষুসি' ইত্যাদি।

প্রাণেশ চৌধুরী প্রায় ১৫টি নাটকে মঞ্চে নির্দেশনা দিয়েছেন। মঞ্চ নাটক, বাংলা চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের নাটক ও ধারবাবাহিকে প্রাণেশ চৌধুরী সবখানেই সমান প্রাণবন্ত। একটি মহা আনন্দ প্রাণ আছে যার, তিনিই প্রাণেশ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রোডাকশান হাউজ 'লাগাম'। এছাড়া 'প্রাণেশ থিয়েটার' নামে প্রাণেশ দা'র একটি নাট্যদল আছে। উড়ুনচণ্ডি মনের এই সদাহাস্য মানুষটি দুনিয়ার যেখানেই যান একেবারে চির তরুণদের মতো ভারী হৈ চৈ করেন। সবাইকে আনন্দ দেন, নিজে আনন্দ পান। এটাই তার জীবন। যাকে ভালোবাসেন মন থেকে ভালোবাসেন। যাকে অপছন্দ করেন অকপটে স্বীকার করেন। খুবই স্পষ্টভাষী প্রাণেশ দা'র এই স্বভাবগুলো আমার ভারী পছন্দ।

একবার ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাণেশ দা'র খুব গলা ভাঙলো। ব্যাপার হল অমর একুশের উপর একটি নাটক লিখেছেন কবি ও সাংবাদিক সাইফুল বারী। প্রাণেশ দা সেই নাটকটি বানিয়ে একুশের রাতে প্রচারের জন্য ভারী ব্যস্ত এবং চিন্তিত। শুটিংয়ের সময় একদল বানর থাকে যারা কাজের প্রতি সহযোগিতার চেয়ে কাজটায় একটু ঝামেলা পাকাতে পারলে মনে মনে শান্তি পায়। এটা বাঙালির চিরায়ত খাসিলত। তো প্রাণেশ দা সেরকম একটি বাঁদর দলের খপ্পরে পড়ে গলা টলা ভেঙে একাকার। প্রাণেশ দা'র কণ্ঠ পুরোপুরি চলে গেছে। জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ আমার মা মারা গেল। আমি ঢাকায় এসে প্রাণেশ দাকে ফোন করলাম। দাদা বললেন, শুটিং করতেছি। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। খুবই ছ্রাড়াব্যাড়া অবস্থা। আমি বললাম, দাদা মেজাজটা ঠাণ্ডা রেখে আগে শুটিংটা শেষ করো। তুমি যতো মাথা গরম করবা ততোই তোমার ক্ষতি হবে। বান্দর ঠিক করতে পারবা না। তারপেয়ে আগে কাজটা শেষ করো। পরে যখন নাটকটি এডিটিং প‌্যানেলে নিলেন, আমি একদিন ফুটেজ দেখতে গেলাম। প্রাণেশ দা কথা একদম বলতে পারেন না। তবু সেই কষ্টের কথা আমাকে বারবার বলতে চাইছেন। পাশাপাশি মা মারা যাবার কারণে আমাকেও শান্তনা দিচ্ছেন। আমি বললাম, চল শাহবাগ যাই। তুমি কোনো এসিট্যান্টকে এডিটরের সঙ্গে বসিয়ে নিজে একটু রেস্ট নাও। একটু খোলা হাওয়া লাগাও। আর কথা বলা একদম নিষেধ। কাগজে লিখে কথা বলো। প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া তাও বলার দরকার নেই। শেষ পর্যন্ত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে এটিএন বাংলায় নাটকটির অন-ইয়ার হল। প্রাণেশ দাকে বললাম, এখন তুমি আগে তোমার গলার চিকিৎসা করাও। নইলে কণ্ঠ আর ফিরে আসবে না। প্রাণেশ দা চিকিৎসা করাতে তখন কলকাতা গেলেন।

প্রাণেশ দা পড়াশুনা করেছেন জ্ঞানদায়িনী হাই স্কুল ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে। তারপর নাট্যাঙ্গনে প্রবেশের পর আর ইচ্ছে করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেন নি। বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র....শিল্পী চৌধুরী পাত্রী আর আমাদের প্রাণপ্রিয় দাদা প্রাণেশ চৌধুরী হল পাত্র। আরো কতো কিছু বলতে বাকি, এ তো শুরু মাত্র....

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫

সরদার হারুন বলেছেন: পুরাতন আচারে তেল দিয়ে কি লাভ ?।অজথা অসন্দি কচলানো ।

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৬

ডি মুন বলেছেন: জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ আমার মা মারা গেল*

মায়ের মৃত্যুর কথা এমন অবলীলায় বলা যায়, কেমন যেন অনুভুতিশুন্য মনে হলো। আর মারা গেলেন লিখতে যেয়ে মারা গেল লিখেছেন বোধকরি।

কারণ দুটো কথার বেশ অনেকটা তফাত আছে বলে আমার ধারণা ।

[ ধৃষ্টতা ক্ষমা করবেন, কেন যেন না কমেন্ট করে থাকতে পারলাম না ]

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.