নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

'ব্ল্যাকআউট' ছবি’র সিলেট শো।। রেজা ঘটক

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১৬

২০০৯ সালের ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর তিন দিনের প্রথম শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখ ফিল্ম সোসাইটি। চোখ ফিল্ম সোসাইটির প্রথম শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনীতে আমারও যাবার সুযোগ হয়েছিল। টোকন ঠাকুরের নের্তৃত্বে আমাদের ফিল্ম ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম সিলেটে। প্রদর্শনীতে তিন দিনে মোট ১৩ টি স্বল্প ও পূর্ণ্য দৈর্ঘের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। ছবিগুলো হল- ‘ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি’, ‘মানুষ কয়টা আসছে?’, ‘শিকড়’, ‘জলছাপ’, ‘পাতার নৌকা’, ‘কুমির’, ‘দুধ কয়লা’, ‘বাউল করিম’, ‘Define Bangladesh’, ‘Innocent Face’, Snore’, ‘Peace’ ও ‘Blackout’। ফিল্ম প্রদর্শনী শেষে প্রতিদিন ছিল একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে দর্শকের মুখোমুখী অনুষ্ঠান। ২১ ডিসেম্বর দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর, ২২ ডিসেম্বর দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা টোকন ঠাকুর এবং ২৩ ডিসেম্বর দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা শ্যামল কান্তি ধর। যদিও ফ্যাস্টিভালের নামকরণ ছিল ফার্স্ট শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল কিন্তু ফ্যাস্টিভালে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ফুললেন্থ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল ‘ব্ল্যাকআউট’।



‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে সিলেট যাবার পরিকল্পনায় যিনি প্রথম ঢাকায় সচেষ্ট ছিলেন তিনি হলেন মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন। ঢাকায় আমরা তখন আমাদের নতুন টেলিভিশন সিরিয়াল ’ভুলগুলি ফুলগুলি’ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। এর আগে ১১ ডিসেম্বর ২০০৯, শুক্রবার ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ধানমণ্ডি আলমগীর কবির চলচ্চিত্র কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘দর্শকের মুখোমুখী টোকন ঠাকুর’ অনুষ্ঠানে প্রথমে ‘ব্ল্যাকআউট’-এর সর্বশেষ এডিটিং ভার্সান প্রদর্শিত হল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বাদল রহমানের অসুস্থতা জনিত অনুপস্থিতির কারণে সভাপতিত্ব করেছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সাধারণ সম্পাদক সুশীল সুত্রধর। ছবি প্রদর্শন শেষে অনুষ্ঠানে ‘ব্ল্যাকআউট’ ছবির উপর আলোচনা করেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সাধারণ সম্পাদক সুশীল সুত্রধর। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন। অনুষ্ঠানে ‘ব্ল্যাকআউট' নিয়ে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ‘ব্ল্যাকআউট’-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর। ওই অনুষ্ঠানেই মামুনের মাধ্যমে সিলেটের চোখ ফিল্ম সোসাইটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মামুন আমাদের সিলেটে ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে যাবার জন্যে অনুরোধ করলেন। যদিও সিলেটের ফিল্ম ফ্যাস্টিভালের আয়োজনটি শর্ট ফিল্ম নিয়ে, তাই নির্মাতা টোকন ঠাকুরের প্রথমে আপত্তি থাকলেও মামুনের অনুরোধ উপেক্ষা করার চেয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহে আমরা ওই ফ্যাস্টিভালে ‘ব্ল্যাকআউট’ দেখাতে রাজী হলাম। ঢাকায় তখন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও সিলেটে যাবার জন্যে আমাদের আগ্রহকে টোকন ঠাকুর প্রথমে ভর্ৎসনা করলেও পরে একটা শর্তে নিমরাজী হলেন। শর্ত হল চলমান প্রডাকশনের কোনো ধরনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকটা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেলেই কেবল আমরা ২১ তারিখ সকাল ৭টায় কমলাপুর থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ধরবো। আর ২২ তারিখ ‘ব্ল্যাকআউট’ প্রদর্শন শেষে ওই রাতেই ঢাকায় ফিরবো। ১১ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত সিলেট পর্বের সকল ঝামেলা সামলানোর দায়িত্ব নিলেন স্বয়ং মামুন।



২০ ডিসেম্বর রাতেও আমরা জানি না সিলেট যাওয়া হচ্ছে কিনা? রাত একটায় মামুন ফোন করে জানালো পারাবাত এক্সপ্রেসে ৩টা টিকিটি কাটা হয়েছে। সকাল সাত টায় কমলাপুর থাকতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সারা রাত চলমান প্রডাকশানের কাজ করে সিলেটে যাবার ট্রেনে ঘুমিয়ে নেবো। সকাল ছয়টায় আমরা চলমান প্রডাকশানের কাজ স্টপ রেখে সাড়ে ছয়টায় কমলাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের দলে তখন ‘ব্ল্যাকআউট’-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর, ‘ব্ল্যাকআউট’-এর এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার রেজা ঘটক, ‘ব্ল্যাকআউট’-এর এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার জন রোমেল, চলমান প্রডাকশনের শিক্ষানবিশ এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার ডিজি শাকিল ও চলমান প্রডাকশনের শিক্ষানবিশ এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার ইমন। মামুনের কাছে তিনটা টিকেট। আমাদের আরো তিনটা টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। মামুন বাসা থেকে সরাসরি কমলাপুর যাবে।



আমরা কমলাপুর পৌঁছালাম সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে। মামুনের দেখা নাই। মামুন জানালো কারওয়ান বাজার ক্রস করছে। মামুন অবশ্য ট্যাক্সি নিয়ে আসছে। সকালে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা থাকে সেটাই ভরসা। কমলাপুর টিকেট কাউন্টার থেকে আমাদের জানালো আপনাদের লোক না আসলেও ট্রেন ঠিক সাতটায় সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আপনারা টিকেট নিলে নেন, না নিলে বাড়ি চলে যান। কথা ফাইনাল। আমরা কাউন্টার বন্ধ করছি। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সাতটা। মামুনের দেখা নাই। সো, সিলেট যাওয়া হচ্ছে না। ঢাকার ট্রেন কি ঠিক টাইমে স্টেশান ছাড়ে? আমাদের দুর্ভাগ্য ২১ ডিসেম্বর ২০০৯ সকাল সাতটায় পারাবাত এক্সপ্রেস একেবারে পাংকুচয়াল। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমরা হতাশ হয়ে নাস্তা করা যায় কোথায় তাই ভাবছি। ওই সময় পেছন থেকে মামুনের চিৎকার। আইসা পরছি ভাইজান!



এখন উপায়? টিকেট কাউন্টার বন্ধ। ওনারা বললেন, ট্রেনে টিকেট কাটতে পারবেন। যেতে চাইলে দৌড়ে ট্রেনে ওঠেন। তারপর আমরা সবাই এক একজন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। আমরা সবাই বাংলাদশের শাহ আলম। আমরা সবাই আমেরিকার টাইসন গে। পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌঁড়াচ্ছি কমলাপুর স্টেশান প্লাটফরমে। গোটা স্টেশানের মানুষ আমাদের বিখ্যাত দৌড় দেখে রীতিমত থ। কেউ কেউ আমাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করল, ‘পাগল’। স্টেশান যেখানে শেষ ঠিক তার আগেই আমরা পারাবাতের দরজায় একজন একজন করে বাঁদুরের মত ঝুললাম। ট্রেনের লাস্ট বগির লাস্ট দরজায় টোকন ঠাকুর আর মামুন, তারপরের দরজায় রোমেল আর আমি, আর তারপরের বগির লাস্ট দরজায় শাকিল আর ইমন। ট্রেন ছুটছে আমরা দরজায় বাঁদুর ঝোলা ঝুলে আছি। আমাকে এক ঝটকায় ট্রেনের ভেতর টেনে তুললো রোমেল। টোকন ঠাকুরকে টেনে তুললো মামুন। শাকিল আর ইমন তো চড়ুই পাখি। নিজেরাই ট্রেনের ভেতর উঠে পড়লো। এবার আমাদের কোন বগিতে আসন তা খোঁজার পালা। আমরা ট্রেনে উঠতে পেরেছিলাম একেবারে লাস্ট বগিতে। আর আমাদের টিকেট অনুযায়ী আসন মাঝামাঝি 'ছ' নাম্বার বগিতে। ট্রেনের দোলায় দোল খেয়ে খেয়ে আমরা আমাদের আসন খুঁজে পেলাম। কিন্তু তিনজনের টিকেট নেই। এখন উপায়?



ইতোমধ্যে মামুনের মাধ্যমে ট্রেনের টিটি জেনে গেলেন আমরা সবাই ফিল্মের মানুষ। তারা সবাই আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়ে গেল। ট্রেনের কয়েকজন টিটি এসে আমাদের সঙ্গে ছবি তুললেন। আমরা চা খুঁজতে ট্রেনের ক্যান্টিনে গেলাম। সেখানেও ফিল্মের মানুষ হওয়ায় আলাদা খাতির যত্ন। ট্রেনে উঠেই বুঝলাম সিলেটে আমাদের জন্যে আরো অনেক বড় খাতির যত্ন অপেক্ষা করছে। তারপর যে যার মতো একটু ঘুম দিলাম। আমাদের ‘ব্ল্যাকআউট’-এর স্টিল ফটোগ্রাফার রিচার্ড রোজারিও সিলেট দলে না থাকায় ক্যামেরা চালানোর দায়িত্ব আমার কাঁধে পরলো। কে কিভাবে ঘুমালো, কে কিভাবে ঘুরলো, কে কিভাবে লম্ফঝম্ফ করলো সব ধরা পরলো ঝন্টু যোগী’র কাছ থেকে ধার করা আমার হাতের ক্যামেরায়।

আমরা সিলেট পৌঁছালাম বেলা তিনটায়। স্টেশানে আমাদের নিতে আসলো চোখ ফিল্ম সোসাইটি’র সভাপতি মামরুল ইসলাম রাকিব আর সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান। তিনটা সিএনজি ভাড়া করে আমরা সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। তার আগে অবশ্য স্টেশানে আমরা অনেক ছবি তুললাম। পূণ্যভূমি সিলেটে ওটাই যে আমাদের প্রথম পা রাখা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আমরা যখন ক্যাম্পাসে ঢুকলাম তখন আবিষ্কার হল কারো কাছেই রোমেলের সঙ্গে থাকা গিটারটি নেই। গিটার হারিয়ে রোমেল অনেকটা পোটকা মাছ পেটের হাওয়া ছেড়ে যেমন গুটিয়ে যায় তেমনি চুপষে গেলো রোমেল। টোকন ঠাকুর শাকিল আর ইমনকে একটু বকাঝকা করলেন। রোমেল ঠাকুরকে থামালো। বললো- দাদা, গিটার ঢাকায় গিয়ে আবার কেনা যাবে। আমরা আনন্দ করতে আসছি, সবাই ডু স্ফূর্তি। গিটারের কথা ভুলে যান। আমরা সবাই গিটার হারানোর বিষয়টি সহজে ভুলতে পারছিলাম না। যখনই মনে পড়ছে তখনই শাকিল আর ইমনের দিকে সবার বাঁকা নজর। ওরাই সিএনজিতে গিটার রেখে বেরিয়ে এসেছিল।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে চোখ ফিল্ম সোসাইটি’র রাকিব, ইমরান, মুরাদ, বাবু, সোহেল, কিরণ, টুটুল, সামি, বাদল, সুজনরা আমাদের নিয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয় রেস্ট হাউজে। সেখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা। প্রত্যেক রুমে দুটো করে খাট। ১ নাম্বার রুমে শাকিল আর ইমন ঢুকে পরলো সবার আগে। ২ নাম্বার রুমে ঢুকলো রোমেল আর মামুন। ৩ নাম্বার রুমে ঢুকলাম ঠাকুর আর আমি। আমরা হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হতেই কিরণরা আমাদের নিয়ে গেল রেস্ট হাউজের ডায়েনিং রুমে। বিশাল দোতলা রেস্ট হাউজ। বিশাল ডায়েনিং রুম। বিশাল ডায়েনিং টেবিল। খুব পরিচ্ছন্ন রেস্ট হাউজ। রাকিবরা জানালো, ভিসি স্যার প্রথম এই রেস্ট হাউজে উঠেছিলেন। সকল নতুন টিচার এখানে এসে প্রথম এই রেস্ট হাউজে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো ধরনের অতিথিদের জন্য এই রেস্ট হাউজ সব সময় উন্মুক্ত। রেস্ট হাউজের পাশেই পাহাড়ের টিলার উপরে ভিসি স্যারের সরকারি বাসভবন।



সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুব সুন্দর। অনেক খোলামেলা। বিশাল ক্যাম্পাস। সিলেট শহর থেকে বাইরে। মূল ক্যাম্পাসের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, টিচার কোয়ার্টার এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাসা। ক্যাম্পাসের একেবারে পেছনে উত্তর-পশ্চিমের দিকে পাহাড়ের উপরে নৈসর্গিক এক ম্যান মেড সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। বাংলাদশে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর এবং পরিকল্পিত শহীদ মিনারটি নিঃসন্দেহে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসের সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রও এই শহীদ মিনার। গোটা বিকাল আমরা শহীদ মিনারের ছায়া শীতল পাহাড়ি পরিবেশে পাখির কুঞ্জনে সবার গুঞ্জনে শান্তির নিরিবিলি আবেশে ভারী বিভোর ছিলাম।



সন্ধ্যা ছয়টায় ফিল্ম প্রদর্শনী শুরু হল। ভাইস চ্যাঞ্চেলর প্রফেসর গাজী সালেহউদ্দীন তিন দিনের ফিল্ম প্রদর্শনীর শুভ উদ্ভোধন করেন। ‘Define Bangladesh’ শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী দিয়ে শুরু হল ফার্স্ট শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল। এরপর একে একে সেদিন প্রদর্শিত হয় ‘ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি’, ‘Innocent Face’, ‘মানুষ কয়টা আসছে?’। এরপর রাত সাড়ে দশটায় দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর। উৎসুক দর্শকদরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নির্ঝর ভাই।

তারপর আবার সবাই চলে যাই রেস্ট হাউজে রাতের ডিনারের জন্য। ডিনারের পর নির্ঝর ভাইয়ের ল্যাপটপে আমরা দেখে ফেলি তাঁর বহুল আলোচিত ছবি ‘আহা’। ‘আহা’ নির্মাণ পর্বের নানা ঘটনার স্টিল ফটোগ্রাফস দেখা আর জাম্পিস আড্ডা চলে শেষরাত পর্যন্ত। সূর্য উঠতে কত দেরী, মাধুকরী?



সূর্য উঠতে না উঠতেই ক্যামেরা নিয়ে আমি আর ঠাকুর বেড়িয়ে যাই গোটা ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখার জন্যে। আমাদের টিমের সবাই ঘুমোচ্ছে আর আমরা গোটা ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। শাহ পরাণ হল, দ্বিতীয় ছাত্র হল ঘুরে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে পাহাড়ের টিলা ভেঙ্গে চিকিৎসা কেন্দ্রের সামনে চা পান। আবার এলোমেলা ঘোরাঘুরি আবার চায়ের দোকানে ঢু। এভাবে সকাল নয়টা। আমরা তখন চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে আমরা সবার কাছে ফিল্মের মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছি। যারাই আমাদের দেখছে তারাই আমাদের সঙ্গে ছবি তুলছে। এরমধ্যে এক ছেলে এসে আমাকে বললো, ভাই, আপনাদের এক লোক খুঁজছে? জানতে চাইলাম, কোথায়? ছেলেটি বললো, ওই খানে বাসে আছে। ছেলেটির সঙ্গে সেখানে গিয়ে দেখি, লোকটিকে আমার পরিচিত মনে হল না। দু’এক কথায় লোকটি জানালো, গতকাল আপনারা আমার সিএনজিতে একটা গিটার ফেলে গেছেন। আজ আমি কাজে না গিয়ে আপনাদের খুঁজতে বের হলাম। ঠাকুরকে ডাকলাম। সিএনজি ড্রাইভার সেদিন আমাদের কারণে কাজ বন্ধ রেখে রোমেলের গিটার নিয়ে শাহজালাল ক্যাম্পাসে হাজির হলেন। সঙ্গে তার বউ। তাদের সঙ্গে আমরা ছবি তুললাম। চা খেলাম। রোমেলকে ফোন করে চায়ের দোকানে আসতে বললাম। রোমেল এসে দেখে তার গিটারে ঠাকুর টুং টাং করছেন। ব্যাপার কী? তারপর লোকটিকে জড়িয়ে ধরে রোমেল প্রায় কেঁদে ফেললো। সকল মূহূর্তের ছবি আমি ক্যামেরাবন্দী করলাম।



আমরা গিটার পেয়ে আবার রেস্ট হাউজে ফিরে এসে গা গোসল করলাম। তারপর নাস্তা খেয়ে ক্যাম্পাসে সবাই মিলে এলোমেলো ঘোরাঘুরি। রোমেল গিটার পেয়ে গিটার নিয়েই চায়ের দোকানের সামনে ছোটখাটো জটলা পাকিয়ে ফেললো। ইমন বেঞ্চে তাল বাজালো। আহা হারানো গিটার ফিরে পেয়ে রোমেল যেনো নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠলো। আমরা ঘুরে ঘুরে গোটা ক্যাম্পাসে তুমুল আড্ডা দিলাম। আমাদের ইচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ায় লান্স করে সরাসরি রেস্ট হাউজে ফিরে একটু রেস্ট নেব। কারণ, সন্ধ্যায় ‘ব্ল্যাকআউট’-এর শো।



গতকাল নতুন অডিটোরিয়ামে ফিল্ম শো হয়েছিল। সাউন্ড নিয়ে আমাদের খুব খুঁতখুঁত ছিল। আমরা রেস্ট না নিয়ে আবার অডিটোরিয়ামে গেলাম সাউন্ড টেস্ট করতে। না, এখানে ‘ব্ল্যাকআউট’ শো করলে দর্শকদের খুব একটা সুবিধা হবে না। আমরা ভিসি স্যারকে রিকোয়েস্ট করলাম। এর আগে ইমরানদের কাছে শুনেছিলাম, টিচার্স কাউন্সিল অডিটোরিয়ামের সাউন্ড সিস্টেম অনেক ভালো। আমরা ভিসি স্যারকে অনুরোধ করলাম, অন্তঃত ‘ব্ল্যাকআউট’ শো-টা যেনো সেখানে আয়োজন করা হয়। সে অনুযায়ী নতুন করে আবার ভেনু বদল করে ‘ব্ল্যাকআউট’-এর জন্য সেখানে ব্যবস্থা করা হল। ছবি শুরুর আগে নির্মাতা টোকন ঠাকুর ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে ছোট্ট বক্তৃতা করলেন। একে একে আমাদের সবাইকে মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ঠাকুর। দর্শকদের মুহূর্মুহু করতালির মধ্যে আমরা মঞ্চ থেকে নেমে ‘ব্ল্যাকআউট’ অন করে দিলাম। দর্শকদের চোখ তখন হলের বিশাল পর্দায়। আর আমাদের চোখ অন্ধকারের দর্শকদের চোখে মুখে কী যেনো খুঁজে ফিরলো। ছবি শেষ হতেই সবাই উচ্চারণ করলো 'আর্ট ইজ গুড ফুড'। লাস্ট ডায়লগ অব ব্ল্যাকআউট। দর্শকদের ‘ব্ল্যাকআউট’ ভালো লেগেছে এটাই আমাদের মধ্যে অনেক স্পিরিট এনে দিল। ভিসি স্যারের সঞ্চালনে মঞ্চে আবার উঠলেন ‘ব্ল্যাকআউট’-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর। দর্শকদের নানান কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব শেষে হলরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি রাত তখন দশটা।



এর আগে সন্ধ্যায় আমাদের বন্ধু দম্পতি প্রশান্ত মৃধা আর ফারজানা সিদ্দিকা রনি প্রদর্শনী শুরু আগে তাদের বাসায় আমাদের ডিনারের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রশান্ত সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের বাংলা’র শিক্ষক আর রনি শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি’র শিক্ষক। ওদের বাসা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মেইন গেটের ঠিক উল্টো পাশের গলিতে। প্রশান্ত আর রনি’র একমাত্র ছেলে আট বছরের তাতা। তাতা’র পছন্দ স্পাইডারম্যান। বাসায় তাতা সারাক্ষণ স্পাইডারম্যান সেজে সবাইকে নানান ভেলকি দেখাল। রাত সাড়ে দশটায় ওদের বাসায় ঢুকে প্রথম পনের মিনিট আমরা তাতা’র নানান স্পাইডারম্যানশিপ কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করলাম। তারপর রনি’র হাতের সুস্বাদু খাবারে বেজায় ভুরি ভোঁজ। রাত বারোটা নাগাদ আমরা ওদের বাসা থেকে বের হয়ে রেস্ট হাউজে গিয়ে ছটপট লাগেজ গুছিয়ে সোজা ফাজিল চিস্ত আবাসিক এলাকায় ইমরান-বাবুদের ব্যাচেলর মেসে। সারারাত সেখানে ছবি দেখা, গান শোনা, পানাহার আর আড্ডা চললো। শেষ রাতে একটা পাখির ঘুম।



পাখির ঘুমে সকাল দশটা বাজল। গা গোসল দিয়ে নাস্তা খেয়ে সবাই বেরিয়ে পরলাম শাহজালাল (দ.)-এর মাজার দেখতে। চট্টগ্রাম আর সিলেট শহরকে বলা হয় মাজারের শহর। বাস্তবেও তাই দেখলাম। চট্টগ্রাম শহর আমার খুব চেনা। সিলেটে প্রথম এসেই দেখলাম এটাও চট্টগ্রামের মত মাজারের শহর। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে মাজার। রিক্সায় আমরা শাহজালাল (দ.)-এর মাজারে পৌঁছে এক মজার অভিজ্ঞতা হল। শাকিল আর রোমেল মোমবাতি আর মাছের খাবার কিনল। মোমবাতি জ্বালিয়ে দীঘির জলে হাজার হাজার গজার মাছকে খাবার দেওয়া শেষে আমরা কিছুক্ষণের জন্য জালালী কবুতরের ভিড়ে হারিয়ে গেলাম। ভিড় থেকে বেরিয়ে দেখি কোথাও মামুন নেই। কোথায় গেল মামুন? মামুনকে খুঁজতে আমরা মাজারের মেইন গেটে হাজির হতেই সেখানে পুলিশের ডিটেক্টটিভ ব্রাঞ্জের সদস্যরা আমাকে চ্যালেঞ্জ করলেন। তাদের বক্তব্য মাজারে ছবি তোলা নিষেধ। আমাদের রিক্সা পেছনের গেট দিয়ে মাজারে প্রবেশ করেছিল। আর মামুন ও ঠাকুর প্রবেশ করেছিল মেইন গেট দিয়ে। আমরা ঠাকুরকে মেইন গেটের সামনে খুঁজে পেলেও মামুনকে তখনো পাইনি। মাঝখানে পুলিশের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ শুরু হল। পুলিশের সদস্যরা জানেই না যে আমার হাতের ক্যামেরায় মাজারের অসংখ্য ছবি ইতোমধ্যেই তোলা হয়েছে। বললাম, ভাই মাজারে এসে ছবি তোলা যাবে না এমন কোন সাইনবোর্ড আমার চোখে এখনও পড়েনি। আপনারাই প্রথম এমন কথা বলছেন। তাছাড়া অনেকেই তো ছবি তুলছে। আমার ছবি তুলতে দোষ কোথায়? তক্ষুণি মামুন আগরবাতি, মোমবাতি আর কি কি সব জিনিসপত্র একটা ছোট্ট ব্যাগে নিয়ে সেখানে হাজির হল। মামুন ছদ্মবেশি পুলিশ ভাইদের বলল, ভাই আপনাদের আর কোনো কাজকাম নাই? ছবি তোলার জন্য তর্ক করতাছেন? ঠাকুর পুলিশদের অনেকটা ধমকের সুরে বললেন, আমরা আমাদের কাজ করছি, আপনারা আপনাদের কাজ করেন। কারো কাজে বাগরা দিয়েনা না। জানতাম, পুলিশ মানুষের বন্ধু। এখন অভিজ্ঞতা বলছে উল্টো। পুলিশ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন নেয় আর মানুষকে খামাখা বিরক্ত করাই তাদের কাজ। ব্যাপার বেশি সুবিধার নয় বুঝে তারা মটর সাইকেল স্ট্যার্ট দিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। এই পর্যায়ে মামুন বললো, মা কিছু ফরমায়েস করেছিলেন। মাজারে গেলে কি কি করতে হবে? মায়ের আদেশ পালন করছি। চলেন আমরা মাজারে যাই।



মাজারের উপরে উঠলে জুতা খোলার নিয়ম। উপরে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলাও নিষেধ। মসজিদের ভেতরেও ছবি তোলা নিষেধ। আমরা জুতা খুলে সবাই দলবেধে উপরে গেলাম। মাজারের দেয়ালে একটা ছোট্ট সাইনবোর্ডে চোখ আটকে গেল। ওজু করার স্থানে সেই ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা- ‘সাবধান, পকেট চোর, ছদ্মবেশী ধোকাবাজ হইতে সাবধান’। ঠাকুরকে দেখিয়ে বললাম, পকেট সাবধান! জবাবে ঠাকুর বললো, এখানেও ধোকাবাজ পকেটমার আছে? পরে আমরা গোটা মাজার ঘুরলাম। মামুন দোয়া করলো। আর আমরা খুঁজে পেলাম বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি সাহেবের কবর। ঠাকুরের নের্তৃত্বে আমরা বঙ্গবীরকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার প্রদান করলাম। ক্যামেরা বের করে গার্ড অব অনারের ছবিও তুললাম। তারপর জেনারেল সাহেবকে ঘিরে অনেকক্ষণ আমরা বসে থাকলাম। ঠাকুর বললো, সিলেট আসা স্বার্থক হল। জেনারেল সাহেবকে স্যালুট করতে পারায় এখন দিলে একটু শান্তি লাগছে। পাশে শুয়ে থাকা হুমায়ন রশীদ চৌধুরী সাহেব আমাদের তারুণ্য দেখে হো হো করে হাসলেন। মাজার থেকে ফেরার পথে এক পাগল আমার হাতের ক্যামেরা দেখিয়ে বললো, ওটা দিয়ে কি করো? বললাম, ছবি তুলি। পাগল চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো, ওটায় আমার ছবি উঠবে না? পরপর সেই পাগলের কয়েকটা ছবি তুললাম। রোমেলও সেই পাগলের সঙ্গে ক্যামেরায় পোস দিল। পরে পাগলকে দেখালাম, এটা দেখো, চিনতে পারো কিনা? জবাবে পাগল বললো, বাড়িতে গিয়ে দেখবি, কোনো ছবি নাই!



মাজার থেকে ফিরে আমরা ক্যাম্পাসে খুব ঘুরলাম। আবারো শহীদ মিনারে গেলাম। শহীদ মিনারে রোমেল আর ইমন গিটার নিয়ে গান করলো। আমরা শাহ পরানের থেকে পাওয়া তামাকে ধোয়া উড়ালাম। সন্ধ্যায় বাবুদের মেসে ভুড়ি ভোঁজ শেষে আমরা খাসি পল্লীতে পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলাম। সেখানে খোলা চা বাগানের ছোট্ট রাস্তায় আমরা বেঞ্চিতে বসলাম। খাসি পল্লী’র ছোট্ট ঘরের মায়াবি জলপানে আমরা অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার উদযাপন করলাম। আর মনে হল আবার কখন সিলেট আসবো? দেখা হল না শাহ পরাণের সঙ্গে। কথা হল না হাছন রাজার সঙ্গে। ভাব বিনিময় হল না রাধা রমনের সঙ্গে। গান শোনা হল না শাহ আবদুল করিমের। ঘোরা হল না মনিপুরি, গাড়ো, বিষ্ণুপ্রিয়া, পাত্র, ত্রিপুরা, সাঁওতাল পল্লী।



দেখা হল না ঐতিহ্যবাহী কিয়ান ব্রিজ আর আল আমজাদ ঘড়ি। তবু ‘ব্ল্যাকআউট’-এর ফিল্ম শো’র কল্যানে স্বল্প সময়ের সিলেটে অবস্থান সারা জীবন আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠা জুড়ে থাকবে। স্টেশান রোডে আমাদের রাত বারোটার ঢাকার গাড়ি অপেক্ষা করছে। আমরা খাসি পল্লী’র গাঢ় অন্ধকার ফুড়ে স্টেশানে আসতেই ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই। ঝটপট স্টেশানের হোটেল ইতালিয়ায় ইন্ডিয়ান খাবার গিলে বাসে উঠে বসতেই চোখ জুড়ে নেমে আসলো বিগত তিন দিনের কান্তি। ওম শান্তি। ওম খাসি পল্লী’র দো’চোয়ানী। ওম ব্ল্যাকআউট। ওম অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকার। জয়তু সিলেট ট্যুর। জয়তু 'ব্ল্যাকআউট'। জয়তু কিচ্ছু 'মনে নেই'।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.