নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ও কিছু খোলামেলা কথা ।। রেজা ঘটক

০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫১

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা হল- 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথেই শত্রুতা নয়'। খুব ভালো কথা। বইয়ের কথা। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। সারা বিশ্বের মোট ৪৯ টি দেশে আমাদের অ্যাম্বাসি বা হাইকমিশন ডিপলোমেটিক মিশন রয়েছে। এর মধ্যে আবার ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে তিনটি করে। লন্ডনে হাই কমিশন মিশন আর বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে এসিসট্যান্ট হাই কমিশন মিশন। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অ্যাম্বাসি এবং লস এঞ্জেলস ও নিউ ইয়র্কে কনসুলেট জেনারেল। এছাড়া ৫টি স্থায়ী মিশন আছে সেগুলো হল ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থায়ী মিশন, জেনেভায় জাতিসংঘের ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য স্থায়ী মিশন, নিউ-ইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন, প‌্যারিসে ইউনেস্কোর স্থায়ী মিশন এবং রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার স্থায়ী মিশন। মানে বাংলাদেশের সর্বমোট ৫৮ টি মিশন বা অফিস আছে বিশ্বের নানান দেশে। খুব ভালো কথা।

এই ৫৮টি মিশনে কতো লোকবল আছে? একটি মিশনে গড়ে ২৫ জন হিসেব করলে তা প্রায় ১৪৫০ জন। এই ১৪৫০ জন কারা? তাদের কার কি যোগ্যতা? নাকি শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ই তাদের যোগ্যতার মূল ইস্যু? এই ১৪৫০ জনকে বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন দিতে হয়। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এই ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২,৭৯৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বা বেতন বাবদ ধরা হয়েছে ৬৯,২৪৮ হাজার কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,৫৫০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় হয় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তা কোনো কালেই জানতে পারে না।

বিদেশে যে সকল বাংলাদেশের মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য যায়, তারা এই সব বিলাসী মিশন থেকে নামমাত্র সেবাও পায় না। এই মিশনগুলোর প্রধান কাজ হল বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অন্য কোনো মন্ত্রী সেই দেশ সফরে গেলে তাদের আপ‌্যায়ন করা। বাকি সারা বছর এরা সেই দেশে ডিপলোমেসির ড-ও করে না। খায় দায় আর বিদেশী বড় বড় অনুষ্টানে যোগদান করাই তাদের সবচেয়ে বড় কাজ। বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের জন্য এতো বিশাল সাইজের বিলাসী মিশন লালন পালন করাই একটা বড় ধরনের বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না।



ডিপলোমেসি কি?

অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কি কি সুযোগ সুবিধা আদায় করা যায়, আরো নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে সেই সুবিধা আরো কতো নিজেদের পক্ষে আনা যায়, তা যাছাই বাছাই করে, দেন-দরবার করে, দর কষাকষি করে নিজেদের জন্য আদায় করা। আমাদের মিশন গুলো সেই কাজে কতোটা দক্ষতার সঙ্গে পরিচয় দিয়ে বিগত ৪২ বছর ধরে করে আসছে তা এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নইলে এই মরা হাতি পুষে বাংলাদেশের মানুষের কি লাভ হচ্ছে?

ডিপলোমেসি মানে বিদেশী পক্ষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ। সারা বছর শুনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অমুক জায়গায় তমুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আরে বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের কাজ ছাড়া খামাখা কোনো সৌজন্য সাক্ষাতের দরকার টা কি শুনি? অমুক বিশ্বসভায় বাংলাদেশের অতো বড় সাইজের বিশাল বহর রাষ্ট্রীয় খরচে বেড়াতে গেছে। সেখানে তমুক তমুক বক্তৃতা করেছেন এবং তমুক তমুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এই খরচের পয়সাটা বাংলাদেশকে কে দেয়? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের টাকায় এই সব করেন আমাদের শাসকরা। আর বিদেশে অবস্থিত একজন বাংলাদেশীকে একটা পাসপোর্ট রেন্যু করাতে মিনিমাম ১০ বার কাজ বন্ধ রেখে সেই মিশনের কর্তাদের পেছন পেছন ঘুরতে হয়। এটাই হল বাস্তবতা।

বাংলাদেশের মিশনগুলোতে বিগত ৪২ বছরে কর্ম দক্ষতার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে নিজেদের কর্ম সম্পর্কে এইসব কর্ম কর্তাদের অনেকের কোনো সুস্পষ্ট ধারণাই নেই। কি করতে তারা সেই মিশনে কাজ করছেন? ফাইলে সিগনেচার করা? দেশে একটু ফোন করা? বন্ধুরা কেউ বেড়াতে গেলে তাদের নিয়ে সরকারি গাড়িতে করে ঘোরাঘুরি করা? এসব খুব হচ্ছে সেখানে। ডিপলোমেসির ছিটেফোটাও কারো নজরে পড়ে না। কয়েক দিন আগে নিউ ইয়র্কে মাত্র ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের জন্য একটি বাড়ি কিনেছেন!!! সেই বাড়িতে আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের দূত বসবাস করবেন। সেই বাড়িতে হোয়াইট হাউজের সমান সুযোগ সুবিধা বর্তমান। তাতে নাকি ভাড়া বাসার চেয়ে বছরে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার কম খরচ হবে!!!! তাহলে ভাবুন, বিদেশে আমাদের মিশনগুলোতে ডিপলোমেসির নামে কি পরিমাণ বিলাসিতা করা হচ্ছে।

তারপর, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশ সফরে গেলে তার বিশাল সফরসঙ্গীরা থাকেন সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিলাসী হোটেলে। প্রধানমন্ত্রীর যারা সফরসঙ্গী থাকেন সেই দলে অন্তঃত ৮০ ভাগ থাকেন খামাখা। যাদের বেড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজকাম থাকে না। কিন্তু খরচের টাকা মেটাতে হয় বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায়। আর আপনারা বুলি ছোড়েন দেশপ্রেমের? আহারে আমার দেশপ্রেম?? দেশপ্রেম এতো সস্তা নয় ভাইডি।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বিশ্বব্যাংক আইএমএফের মতো বড় বড় ধুরন্দরদের মেম্বারশিপের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন। আমরা নিজেদের জমিতে নিজেরা ফসল বানাবো। তাই দিয়ে মাছ ভাত খাবো। কারোর ধার ধারলাম না। কারণ আমরা স্বাধীন দেশ। কারোর দরকার পড়লে সে কানে হেঁটে আমাদের কাছে আসবে। সে কি নিয়ে ব্যবসা করতে চায় তা বলবে। আমাদের পোষালে আমরা সেই ব্যবসায় রাজি হব। না পোষালে নাই। আমাদের এতো বিদেশী সংস্থায় মেম্বারশিপ নিয়ে কি লাভ হয়েছে? সেই হিসাব মেলানোর সময় এসেছে। বছরে আমরা মেম্বারশিপ ফি কতো হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করি, তাও সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করার সময় এসেছে। নইলে আইটি ডেভলপমেন্টের কল্যানে সেই তথ্যও আমরা ঘরে বসে জেনে যাব।

একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী'র কি কি যোগ্যতা লাগে? আর আমাদের মাননীয় দিপু মনি'র কি কি যোগ্যতা আছে? আমরা সেই হিসাব মেলাতে চাই। এমন কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও দক্ষ এবং দূরদর্শী সম্পন্ন, প্রাজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক বিয়ষে পটু লোককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানাতে হয়। নইলে মুচকি হাসি দিয়ে পেট ভরে না। দেন দরবারে বিদেশীরা যা যা লুট করে নেবার চুক্তি করে চোখের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবেই নিয়ে যায়। আমরা কোনো পাটের ছড়াটাও আনতে পারি না তাদের থেকে। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হলে আমাদের সারা জীবনের ঐতিহ্য সুন্দরবন আর বেঁচে থাকবে? নাকি তা ধ্বংস করার জন্য তা ভারতের হাতে চলে যাবে? টিফকা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে আমাদের গ্যাস, কয়লা, জ্বালানী, সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রামের পাবর্ত্য এলাকা আর আমাদের থাকবে? নাকি তা আমেরিকার হাতে চলে যাবে? মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি তাদের দীর্ঘদিনের মিশন। এজন্য হিলারী এবং বারাক ওমাবা আমাদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মায়ানমার সফর করেন। ফিলিপাইনসে বা জাপানের সমুদ্র সীমায় মার্কিন নৌবাহিনী রেখেও চীনের সঙ্গে আর ভারতের সঙ্গে তারা টেক্কা দিতে পারছে না। তাই চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর তাদের প্রধান টার্গেট। গরিব দেশগুলোর প্রতি তাবেদারী করাও যাবে। আবার চীন ভারতের মতো উদয়মান পরাশক্তির সঙ্গে টেক্কা মারাও সহজ হবে। যে টিফকা চুক্তি গত ২২ বছর ধরে ঝুলে আছে, তা এই সরকারের বিদায় বেলায় তড়িঘড়ি করে সই করা হবে সবচেয়ে বিপদজনক একটা কাজ।

ক্ষমতা আর টাকার গরম মানুষ চেপে রাখতে পারে না। এটা প্রকাশ পাবেই। এটা হাতের মুঠোয় এলে চেহারার জৌলুসও বাড়ে। মানুষকে তখন আর মানুষ মনে হয় না। আমাদের দেশে যারাই ক্ষমতায় যায় তাদেরই কয়েক বছরের মধ্যে জৌলুস বাড়ে। যে আগে লোকাল বাসে ঝুলে ঢাকায় ঘুরতো, দল ক্ষমতায় গেলে সে নতুন মডেলের গাড়ি চালায়। সে কি কোনো আলাদিনের চেরাগ পেল যে মাত্র চার সাড়ে চার বছরে তার ভাগ্যের এমন আমুল পরিবর্তন বনে যায়? কই সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কেন এমন আমুল পরিবর্তন হয় না?

বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের ১০ টির বেশি মিশন থাকা মানেই বিলাসিতা। আপনি যতো বড় রাজনৈতিক পণ্ডিৎ ব্যক্তিই হন, বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজ কর্ম বিশ্লেষণ করলে সেখান থেকে কোনো লাভের বা সুখবর পাওয়া যাবে না। একজন দিপু মনি'র দৌড় ঝাঁপের পেছনে রাষ্ট্রের কতো মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়? আর তার বিনিময়ে বাংলাদেশের ঘরে কয় টাকা আসে? সেই হিসেব মেলানোর সময় এসেছে। আর মাত্র সাত/আট বছর পর আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করব। সিঙ্গাপুর আমাদের চেয়ে পরে স্বাধীন হয়ে কোথায় অবস্থা করছে? আর আমরা কোথায় পড়ে আছি? কারণ রাজনৈতিক নের্তৃত্বের দুর্বলতা। লুটপাট। চুরি-চামারি। দুর্নীতি। বিলাসিতা। অদক্ষতা। এক সময় প্রণব মুখার্জি বাবু ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ছিলেন। কেন? কারণ, বিদেশ নীতি তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গেই পরিচালনা করতে জানেন। আর একজন দিপু মনি কেবল মুচকি হাসি জানেন। এটাই পার্থক্য।

বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের মতো লোকসানি খাত পুষে তো বাংলাদেশের কোনো লাভ হচ্ছে না রে ভাই। ৪২ বছরেও যদি এটা ঠিক করা না যায়, তাহলে কে এটা ঠিক করবে? অন্য গ্রহ থেকে কোনো পয়গম্বর এসে তো আর আমাদের এতো অব্যবস্থাপনা ঠিক করে দেবে না। তাই সময় এসেছে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ও এর পরিধি নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবার। নতুন করে কিছু করার। নইলে সব মিশন বন্ধ করাই উত্তম। কথার অর্থ না বুঝলে খামাখা কেউ আমার এই দুঃশ্চিন্তা নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না। এটাই সবার প্রতি অনুরোধ রইলো। সবাই ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। আনন্দে থাকলে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কম।। সো, সাধু সাবধান।।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

আিম এক যাযাবর বলেছেন: ভালো লিখেছেন, কিন্তু যাদের হাতে ক্ষমতা তারা তো এসব ভাববেন না, কয়েকদিন আগেই আমাদের মাননীয় প্রধানমণ্ত্রী বিশাল দলবল নিয়ে ভাগ্‌নীর বিয়ে খেলেন, তিনি কি কোনো জবাব দিবেন? দিবেন না, এসব তো তাদের অধিকার!

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

স্বপ্ন বাংলা বলেছেন: একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী'র কি কি যোগ্যতা লাগে? আর আমাদের মাননীয় দিপু মনি'র কি কি যোগ্যতা আছে? আমরা সেই হিসাব মেলাতে চাই। X( X(
বাকি গুলার কথা কইলাম না, তয় এই বেডির নাম হুনলেই ঠান্ডা মাথা গরম হইয়া যায় । X( X(

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


+++++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.