নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে 'ব্ল্যাকআউট' প্রদর্শিত ও কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা।। রেজা ঘটক

১০ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮

৩ জুলাই থেকে ৯ জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি যৌথভাবে ‘সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসব’ আয়োজন করেছিল। উৎসবের জুরি কমিটি ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্মিত প্রায় সাড়ে ৫০০ চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে ২১টি চলচ্চিত্র বাছাই করেছিল। চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনী হয়েছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা, বেলা তিনটা, বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায়। 'সমকালীন দেশীয় উৎসবে'র চলচ্চিত্রগুলো হল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার', তানভীর মোকাম্মেলের 'লালন', চাষী নজরুল ইসলামের 'শুভা', সাইদুল আনাম টুটুলের 'আধিয়ার', মুরাদ পারভেজের 'চন্দ্রগ্রহণ', সারাহ বেগম কবরীর 'আয়না', গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের 'স্বপ্নডানায়', হুমায়ূন আহমেদের 'শ্যামল ছায়া', তৌকীর আহমেদের 'জয়যাত্রা', কাজী মোরশেদের 'ঘানি', নুরুল আলম আতিকের 'ডুবসাঁতার', তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' ও 'রানওয়ে', কোহিনুর আক্তার সুচন্দার 'হাজার বছর ধরে', আবু সাইয়ীদের 'শঙ্খনাদ', গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'মনপুরা', মোরশেদুল ইসলামের 'প্রিয়তমেষু', এনামুল করিম নির্ঝরের 'আহা!', নোমান রবিনের 'কমন জেন্ডার', টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা'। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' আর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা'। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্রের একটি জমজমাট আয়োজনের জন্য। ম্যুভিখোর দর্শকরা অনেক দিন পর সমকালীন বাংলা চলচ্চিত্রের একটি জমজমাট আয়োজনকে দীর্ঘদিন মনে রাখবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি অনুরূপ নানান আয়োজন করে চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

চলচ্চিত্রের যে কোন উৎসবেই ম্যুভিখোর দর্শকদের মনে ভালো ছবি একটি বিশেষ স্থান দখল করে নেয়। 'সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে'ও তেমনটি ঘটেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিগত ১০ বছরের ৫৫০ টি ছবি থেকে ২১ টি ভালো ছবি বাছাই করতে উৎসবের জুরি কমিটিকেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। উৎসবে একমাত্র টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' ছবিটি ছিল আনরিলিজড ছবি। আমি উৎসবের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটিকে এই সাহসী উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। একটি আনরিলিজড ছবি উৎসবের জুরি কমিটির নজরে আসতে পারায় 'ব্ল্যাকআউট'-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুরকেও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই।

টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' ছবি টি আনরিলিজড সত্বেও যে উৎসবে প্রদর্শনের জন্য বিবেচিত হল এবং প্রদর্শিত হল, সেজন্য উৎসব কমিটিকে আমি 'ব্ল্যাকআউট' টিমের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানাই। আরেকটা কথা, যারা 'ব্ল্যাকআউট' এখনো দেখেন নি, তাদের বলবো, টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট'-এ আপনাদের জন্য অনেক গোপন খনি আছে। বাংলা চলচ্চিত্রে মুন্সিয়ানার দিক থেকে টোকন 'ব্ল্যাকআউট'-এ অনেক কিছুই এপ্লাই করেছেন। সাধারণ দর্শকদের চেয়ে যা নির্মাতাদের চোখে বেশি পড়ার কথা। টোকন ঠাকুর উৎসবে বিলি করা লিফলেটে পরিচালকের বক্তব্যে আমাদের জানিয়েছেন যে, ''শীতাবসান। ডাকে নেশা, ডাকে জুয়া। জুয়াড়ির পূর্বপুরুষ ছিল জোসনাখোর। তাই মাতাল হবার অধিকার শুধু তারই, যার জিন থেকে হ্রেষা ছুটে আসে, পাহাড়ি ঘোড়ার। বসন্তকালীন খর্খরে মন-অবাধ্য আবহাওয়ায় একটি ডিভি ফোর হ্যান্ড্রেড ক্যামেরা, পর্যাপ্ত লাইটসহ একদল বন্ধুভাবাপন্ন দেবশিশুকে জড়ো করে চৈত্রময় ফুরফুরে দিনে স্টার্ট করে শ্রাবণের বৃষ্টি পর্যন্ত ইনডোর-আউটডোর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা এবং এরপর আরো অনেকখানি সময় নিয়ে চলে সম্পাদনা-পর্ব; ব্যাপক কাটাকুটির শেষে নির্বাচিত দৃশ্য-শব্দ-সংলাপ-কবিতা-গান-সঙ্গীত-চিত্রকলা-ফটোগ্রাফি-অ্যানিমেশনের সহযোগিতায় যদ্দুর পারা গেল, ব্যাপারটা সাজিয়ে-গুছিয়ে সানাই বাজিয়ে কনে-বিদায়ের মতো, আনন্দ-বেদনায় ষোলআনা আপ্লুত। সত্যি, এই লগ্নের অনুভূতির সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি। ব্ল্যাকআউট-এ যা যা পারা হয়নি, আমার চেয়ে তো তা কেউ বেশি জানে না। বাংলায়, কথাটা এখন প্রায় প্রবাদ- কৃতিত্বটুকু প্রডাকশনের সবার, আর না পারার ব্যথাটুকু, ব্যর্থতাখানি একান্তই কার? তারপরও, প্রিয় দর্শক, আড়চোখে আমি আপনার চোখ দেখতে থাকব, যখন আপনি ব্ল্যাকআউট দেখবেন। জানি, ঠোঁটের চেয়ে চোখই বেশি সত্য বলে থাকে।'' টোকন ঠাকুরের হাতে যে সোনার কলমটি আছে আমি গ্র্যান্টি দিয়ে বলতে পারি সমকালীন বাংলা সাহিত্যে অমন একটি কলম আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকের হাতেই নেই। সেই টোকন ঠাকুর যখন ছবি বানালেন, সেখানে শিল্প-সাহিত্যের অনেক ম্যাট্রিক্স এক্সপারিমেন্ট করবেন এটাই স্বাভাবিক। টোকন ঠাকুর ক্যামেরা দিয়েও সেইরকম একটি সমকালীন জটিল ম্যাট্রিক্স অথচ মনোলগ রচনা করেছেন, যা কারো কারো কাছে একবার-দু'বার-তিনবারের দর্শনেও উন্মোচিত নাও হতে পারে। বারবার না দেখলে 'ব্ল্যাকআউট' সম্পর্কে টোটাল ধারণা অর্জন করাটা তাই একটু দুরূহ। সেই অর্থে টোকন ঠাকুর 'ব্ল্যাকআউট'-এর মাধ্যমে নির্মাতাদের নির্মাতা হিসেবে আমাদের সামনে আসেন। আপনি যদি ফিলোসপি না বোঝেন, আপনি যদি ডায়লগ না বোঝেন, আপনি যদি একবিংশ শতাব্দীর তারুণ্য না বোঝেন, আপনার যদি সারা বিশ্বের বিশাল আর্ট-কালচার-শিল্প-সাহিত্যের উপর ব্যাপক পড়াশুনা না থাকে, আপনার যদি ল্যাটিন আমেরিকার ম্যুভি সম্পর্কে ধারণা না থাকে, আপনার যদি আলবেয়ার কামু পড়া না থাকে, আপনার যদি রোম, মাদ্রিদ ও প‌্যারিসের আর্টের উপর ধারণা না থাকে, আপনার যদি ইরানি ফিল্ম দেখা না থাকে, আপনার যদি মধ্যরাতে একা একা গহীন অরণ্যে বা সমুদ্র পারে হাঁটার অভ্যাস না থাকে, আপনার যদি ঘোর অন্ধকারের বিভিষিকায় রাতের তারাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না থাকে, আপনার যদি অমর বাল্যকালে ঘোর লাগা কোনো লাল বাউলের প্রতি আসক্তি না থাকে, আপনার যদি নাগরিক সন্ধ্যায় হাজারো ব্যস্ততায় ফুটপাতের সান্ধ্য বাঁশরির সুমধুর সুরের মধ্যে হারিয়ে যাবার অভ্যাস না থাকে, আপনার যদি অন্তর্দহন বিশ্লেষণ করার মতো মগজ না থাকে, আপনার যদি একাকী নিসঙ্গতায় নির্লিপ্ততার অতলে হারিয়ে মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ পান করার তৃষ্ণা না থাকে, আপনার যদি কালের যাত্রার ধ্বনি কানে না লাগে, আপনার যদি নিজের প্রতি একটুখানি খামখেয়ালীও না থাকে, আপনার পক্ষে টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' দেখে সবকিছু আবিষ্কার করা কঠিন হবে।

তাই আপনাকে বলি, ভাই, 'ব্ল্যাকআউট' বারবার দেখুন। 'ব্ল্যাকআউট'-এ টোকন ঠাকুর ক্যামেরা দিয়ে যে কবিতা লিখেছেন, সেটি চট করেই বুঝতে পারার কথা নয়। খামাখা সমালোচনা করাটা যতোটা সহজ, 'ব্ল্যাকআউট' বারবার দেখে আসুন নিজেরাই নিজেদের চোখ আর লুকিয়ে থাকা শিল্পের খনি আবিষ্কার করি। 'ব্ল্যাকআউট' টিমের আমি নিজে একজন ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা। যুদ্ধ আমাদের এখনো শেষ হয়নি। আর যুদ্ধে থাকতেই জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দ। তাই 'ব্ল্যাকআউট' নিয়ে আরো যুদ্ধ যে বাকি আছে তা আমরা ভুলে যাইনি। আর সেই যুদ্ধ করার মতো যথেষ্ট গোলাবারুদ এখনো ব্যাকপ্যাকে বাধা আছে। সো, সাধু সাবধান। নির্মাণ পর্বের অনেক চড়াই উৎড়াই শেষে দীর্ঘ সাত বছরে 'ব্ল্যাকআউট' ম্যুভিখোর দর্শকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা করেছে বলেই আমি বিশ্বাস করি। খুব শীঘ্রই 'ব্ল্যাকআউট' মুক্তি পাবে। তখন আরো এ নিয়ে কথা হবে। সময় সবুজ ডাইনি। সে পৃথিবীর উপকণ্ঠে থাকে। সন্ধ্যার উঠোনে সেই সবুজ ডাইনি, হারিয়ে যাওয়া জাহাজের নাবিকের হাড় দিয়ে, সেই নাবিকের উত্তরপ্রজন্মের কোনো বালকের হাতে সেই জাহাজের ছবি আঁকে খোলা আকাশের সন্ধ্যার উঠোনে। বালক জানে না যে হাড় দিয়ে সে ছবি আঁকার চেষ্টা করছে, তা তার হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ সেই দুঃসাহসী নাবিকের হাড়। আর যে ভাঙা জাহাজের সে ছবি আঁকার চেষ্টা করছে, সেই জাহাজেই তার সেই পূর্বপুরুষ ছিল। হয়তো মলয় সাগরে সেই জাহাজ ডুবি হয়েছিল। নয়তো ভারত মহাসাগরে। বালক তা জানে না। তবু সেই বালক কুড়িয়ে পাওয়া সেই নাবিকের ভাঙা হাড় দিয়ে সেই ভাঙা জাহাজের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। এটাই হয়তো জিনের ধর্ম। বংশ পরম্পরায় সেই বালক তারই যোগ্য উত্তরসুরী। সবশেষে 'ব্ল্যাকআউট' -এর সকল শুভাকাঙ্খীদের আমি 'ব্ল্যাকআউট' টিম থেকে অন্তরের শুভেচ্ছা জানাই। আমরা আরো বেশি সমকালীন বাংলা ছবি দেখে নিজেদের আরো অভিজ্ঞ বানাবো এটাই সকলের কাছে প্রত্যাশা। জয়তু 'ব্ল্যাকআউট'। জয়তু 'ভারমিলিয়ন রেড'।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৩

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: প্রথম কথা হল ছবিটা শেষ হইছে অবশেষে।

১০ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:০২

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭

বটের ফল বলেছেন: জয়তু টোকন ঠাকুর। জয়তু ব্ল্যাকআউট। দেখার অপেক্ষায় ক্ষন গননা শুরু হলো।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখনী উপহার দেওয়ার জন্য।

সবশেষে- আপনার জন্য-
একগুচ্ছ প্লাস।
+++++++++

১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২১

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫২

মাহমুদুল হাসান (সুমন)। বলেছেন: টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' না দেখে মিস করলাম। লেখককে ধন্যবাদ।
আমি তারেক মাসুদের 'রানওয়ে' এবং মোরশেদুল ইসলামের 'প্রিয়তমেষু' দেখেছি।

১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২২

রেজা ঘটক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.