নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। হোটেলের ছাদে গিয়ে অনেক ছবি তুললাম। কাঠমুন্ডু হল পাহাড়ের নগরী। গোটা কাঠমুন্ডু ভ্যালীর আয়তন প্রায় ২১৮ বর্গ কিলোমিটার। আর কাঠমুন্ডু মেট্রোপলিটান সিটির আয়তন প্রায় ৫০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার। আর কাঠমুন্ডু ভ্যালী সমুদ্র লেভেল থেকে প্রায় ১৩৩৬ মিটার থেকে ১৫২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। কাঠমুন্ডু নগরী আবার সাব-মেট্রোপলিটাস সিটি দিয়ে ঘেরা। কাঠমুন্ডু থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে কীর্তিপুর মিউনিসিপলিটি, দক্ষিণে ললিতপুর মিউনিসিপলিটি, পূর্বে মধ্যপুর থিমি মিউনিসিপলিটি, আর গোটা কাঠমুন্ডু'র উত্তর, উত্তর-পশ্চিম আর পশ্চিম পার্শ্ব ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রামে ঘেরা। গোটা কাঠমুন্ডু ভ্যালী কাঠমুন্ডু, পাতান, কীর্তিপুর, থিমি, ভক্তপুর দিয়ে ঘেরা। গোটা নগরী ছোট ছোট হিন্দু মন্দির, ছোট ছোট স্তূপা, দেব-দেবীর মূর্তি, শিব, বিষ্ণু, গণেশ, গৌতম বুদ্ধ, মা-কালী, দূর্গা, স্বরস্বতি, লক্ষী, ইত্যাদি মন্দির আর মূর্তিতে ভরপুর। সূর্যোদয়ের সময় ছাদ থেকে নেপালের শেষ রাজার বাড়ি 'নারায়নহিতি প্যালেসে'র ছবি তুললাম। ছাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে চোখে পড়ে নগরঝুন পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দক্ষিণে চন্দ্রগিড়ি আর পূর্ব-দক্ষিণে নীলগিড়ি পাহাড়ও চোখে পড়বে।
সূর্য ওঠার পর আকাশ পরিষ্কার না থাকায় আমাকে অগত্যা নিচে আসতে হল। প্রতীক আর মায়া তখনো ঘুমোচ্ছে। আমি বারান্দায় বসে কবুতরের বাগবাকুম খেলা দেখলাম। এরমধ্যে প্রতীক উঠলো। প্রতীকের কাছে থেকে কাঠমুন্ডু'র কালচারাল হেডকোয়ার্টারের সকল খবরাখবর নিলাম। আমাদের পুরান ঢাকার মতো দেখতে হলেও পুরান কাঠমুন্ডু হল কাঠমুন্ডুর কালচারাল হেডকোয়ার্টার। মায়া ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা পুরান কাঠমুন্ডু ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করি। ৭ এপ্রিল কাঠমুন্ডুতে সরকার বিরোধী ৩৩ টি রাজনৈতিক দল সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেয়। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খিল রাজ রেগমিকে দেশের পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার প্রতিবাদে ওই ধর্মঘট। ফলে রাস্তায় কোনো গাড়ি চলবে না। পায়ে হেঁটে আমাদের যা দেখার দেখতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দরবার স্কয়ারে যাবার।
গাইয়া রেঁস্তোরায় নাস্তা করে আমরা পায়ে হেঁটে পুরাতন কাঠমুন্ডুতে ঢুকলাম। প্রথমে আমরা বসন্তপুরে একটি ছোট বৌদ্ধ স্তূপায় গেলাম। চারদিকে প্রচুর গণেশ মূর্তি চোখে পড়ল। পুরাতন বৌদ্ধস্তূপা থেকে আমরা বসন্তপুর দরবার স্কয়ারে গেলাম। দশম শতাব্দিতে গুনাপো বা গুপো রাজার বংশধর রাজা গুনাকামাদেব এই প্যালেস নির্মাণ করেন। কাঠমুন্ডু ভ্যালী স্বাধীন হলে মাল্লা রাজা রত্না মাল্লা (১৪৮৪-১৫২০) এই প্যালেসকে রাজার দরবার হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭৬৯ সালে যখন রাজা পিথ্বী নারায়ন শাহ কাঠমুন্ডু ভ্যালী শাসন করার দায়িত্ব নেন এবং নেপালে শাহ রাজবংশের সূচনা করেন, তখন এই রয়্যাল প্যালেসকে তিনি কাঠমুন্ডু দরবার স্কয়ার নামে অভিহিত করেন। আর ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত শাহ রাজবংশের সবাই এই দরবার স্কয়ার থেকেই নেপাল শাসন করেন। ১৮৬৯ সালে রাজবাড়ি বর্তমানের নতুন নারায়নহিতি রয়্যাল প্যালেসে স্থানান্তর করা হয়।
দরবার স্কয়ারের একেবারে উত্তর পার্শ্বে একটি তালেজু ভাওয়ানি মন্দির। এটি নির্মাণ করেছিলেন শংকরাদেব (১০৬৯-১০৮৩)। মূল চোকের সামনে এটি বিহারা স্টাইলে নির্মিত। আর দরবার স্কয়ারের কার্নেল চোক হল দেশের সবচেয়ে পুরানো ঐতিহাসিক নিদর্শন। রাজা মাল্লা দেব এটি ১৫০১ সালে নির্মাণ করেন। অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে রাজা জগোজয়া মাল্লা দরবার স্কয়ারে নির্মাণ করেন একটি ভগবতী মন্দির। যাকে সবাই নারায়ন মন্দির নামে চেনে। নারায়ন মন্দিরের মূল সোনার নারায়ন মূর্তিটি চুরি হয়ে গেলে রাজা পিথ্বী নারায়ন শাহ সেখানে একটি নারায়ন মূর্তি পুনঃস্থাপন করেন। এছাড়া দরবার স্কয়ারে আরো তিনটি মন্দির রয়েছে। জগন্নাথ মন্দির, কটিলিংশ্বরা মহাদেব মন্দির, মহেন্দ্রশ্বরা মন্দির আর তালেজু মন্দির। এগুলো ১৫৬৪ সালের দিকে নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন রাজা মহেন্দ্র মাল্লা।
১৬৭০ সালে রাজা প্রতাপ মাল্লা আরেকটি মন্দির পুনঃনির্মাণ করেন। দরবার স্কয়ারের একেবারে দক্ষিণে এই মন্দির। এটার নাম কাষ্ঠামান্দপ। কাষ্ঠা মানে হল কাঠ। আর মান্দপ মানে হল আবৃত প্রতিরক্ষা। মানে কভার সেল্টার। কাষ্ঠমান্দপ নির্মাণ করেছিলেন রাজা লক্ষী নরসিংহ মাল্লা। এটাকে সবাই মরু সাতাল নামে ডাকে। এটি প্রথমে নির্মাণ করা হয় ১৫৯৬ সালে। দরবার স্কয়ারে এতো সব মন্দির ছাড়াও আছে রাজ-দরবার। রয়্যাল পালেস। গোটা দরবার স্কয়ার এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। আর হ্যা, নারায়ণ মন্দির বা রয়্যাল প্যালেসের ভিতরে ঢুকতে হলে আপনাকে অবশ্যই টিকেট কাটতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ৩০০ নেপালি রূপি, সার্ক কান্ট্রি হওয়ায় বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০ নেপালি রূপি আর নেপালের জনগণের জন্য মাত্র ৫০ রূপি টিকেটের মূল্য। দরবার স্কয়ার ঘুরে আমরা বসন্তপুরের আরেকটি পুরাতন বৌদ্ধ স্তূপা দেখতে যাই। সেখানের সকল মূর্তি তামার তৈরি। পথে একটি ছোট কালী মন্দিরেও যাই। গোটা বসন্তপুর আমাদের পুরান ঢাকার মতো। কিন্তু মোড়ে মোড়ে নানান স্ট্যাচু আর গণেশ মূর্তি। কোথাও আবার মহাদেব বা বিষ্ণুর মূর্তি। কোথাও আছে হরেক রকম দেব-দেবীর মূর্তি।
পুরাতন কাঠমুন্ডু ছেড়ে আমরা পায়ে হেঁটে গেলাম সার্ক সচিবালয় দেখতে। তারপর সার্ক সচিবালয়ের ঠিক উল্টো পাশে ড্রিম গার্ডেনে। গার্ডেন অব ড্রিম বা ড্রিম গার্ডেন একেবারে ওয়েস্টার্ন রীতিতে আধুনিক শিল্পকলায় তৈরি। এখানেও টিকেট লাগে। বিদেশীদের জন্য ১৫০ রূপি, সার্ক দেশের জন্য ১০০ রূপি আর নেপালীদের জন্য ৫০ রূপি। ড্রিম গার্ডেনে রয়েছে গ্রিক, রোম, প্যারিস, মাদ্রিদের নানা ধরনের স্থাপত্যকলার অনুরূপ নানান ধরনের শিল্প নির্দশন। ড্রিম গার্ডেনের ভেতরে ঢুকলে আপনার মনে হবে আপনি নেপালে নয় ইউরোপের কোনো দেশে ঘুরতে এসেছেন। আধুনিক ইউরোপের স্থাপত্য শিল্পের সঙ্গে নেপালী স্থাপত্যের একটি সংযোগ সাধনের চেষ্টাও আছে কোনো কোনো স্থাপত্যশিল্পে। আফ্রোদিতির স্টাইলে শ্রীমতী লক্ষী দেবী তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এখানে আছে গ্রিসের একাডেমী অব এথেন্সের আদলে লাইব্রেরি, আছে এথেন্সের প্যাথোননের আদলে আর্কপলিস অব এথেন্স, আছে রোমের ক্যাথিড্রালের আদলে রাসান ক্যাথিড্রাল, আছে মাদ্রিদের ভাসমান লেকের মতো জীবন্ত লেক, আছে প্যারিসের জলধারার স্ট্যাচুর মতো হরেক রকম স্ট্যাচু। ড্রিম গার্ডেনে যে কেউ ঢু মারলেই ইউরোপের অনেক কিছু একই বাউন্ডারিতে পেয়ে যাবেন।
ড্রিম গার্ডেন পেরিয়ে একটু সামনে আগালেই নারায়নহিতি রাজ প্যালেস। রাজা জ্ঞানেন্দ্র অপসারণের পর এটি এখন জাদুঘর। এটাকে সবাই ডাকে নারায়নহিতি দরবার। ২০০১ সালে নেপাল রাজ পরিবারে যে দুঃখজনক নিঃসংশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এটা্ সেই করুণ স্মৃতি এখনো ধারণ করে আছে। ২০০৬ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে অপসারণের পর এটি এখন জাদুঘর। নারায়নহিতি রয়্যল প্যালেসে আমরা ইচ্ছে করেই ঢুকিনি। নারায়নহিতি দরবারে একটি ইতালিয়ান রেঁস্তোরায় আমরা লান্স করলাম। তারপর পায়ে হেঁটে আবার মাস্তাং হোটেলে। বিকেলে আমরা হোটেলেই আড্ডা দিলাম। সন্ধ্যায় ডেনিস আসলো। প্রতীক নাক্সালের বাসায় গিয়ে গিটার নিয়ে আসলো। ডেনিস খুব ভালো করে। মায়াও খুব ভালো গান করে। ডেনিস কৈলাস খেরের গান খুব ভালো গায়। রাতের ডিনারের জন্য আমরা একবার বের হয়েছিলাম। ডিনারের পর আবার গানে গানে ভরপুর আড্ডা। ও মেরে দেওয়ানি। ও মেরে দেওয়ানি।
......................চলবে........................
১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: পোষ্টে ছবি দেবার চেষ্টা করেন, সেটা হলে আরো জমবে বলে মনে করি। +।
১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩
রেজা ঘটক বলেছেন: সামুতে আমার এখান থেকে ছবি পোস্ট করা একটু ঝামেলা হচ্ছে...ধন্যবাদ
৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:১৯
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ছবি পোস্ট করতে ঝামেলা হচ্ছে? ...কী আর করা!
ভ্রমণ-বিষয়ক লেখা ছবি ছাড়া পানশে লাগে, কিন্তু আপনার লেখায় ততটা লাগে নি। পুরাতন আর অতীতে বাস কার একটি বাতিক আমার আছে! পুরাতন পত্রিকার পোকা আমি!
শাহ, দেব আর মাল্লাদের কাহিনী জানলাম। আচ্ছা জ্ঞানেন্দ্র তো অবশেষে স্বেচ্ছায়ই প্রাসাদ ত্যাগ করেছিলেন, নাকি? রাজতান্ত্রিক নেপালের শেষ রাজা। হায় নিয়তি!
লেখাটি উপভোগ করলাম। পরের পর্বের জন্য ‘অনুসরণ’ করে রাখলাম
১৪ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:১৮
রেজা ঘটক বলেছেন: হ্যা, ত্যাগ করতে সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য হয়েছিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে
৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৩৫
মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: ভালো লিখেছেন দাদা
১৪ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:১৯
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৫৬
কর্নের পুনর্জন্ম বলেছেন: নেপাল আর ভুটান যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার, দেখি কখন যাইতে পারি, আর আপনি পারলে ছবিগুলা নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দিয়েন।
৬| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫১
েবনিটগ বলেছেন: ওঁম মেনে পাদমে হোম
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯
শেরজা তপন বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম...