নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমালয় কন্যার দেশে সাত রজনী। পর্ব চার ।। রেজা ঘটক

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ সাল। নেপালের পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, এখন থেকে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান হবে এবং নেপাল একটি রিপাবলিক হিসেবে পরিচিত হবে। ৬০১ আসনের নেপালি অ্যাসেম্বলি'র মাত্র ৪ জন সাংসদ রাজতন্ত্রের পক্ষে ভোট দেন। ফেডারেল রিপাবলিক অব নেপালের নতুন শাসক নির্বাচনের জন্য ১০ এপ্রিল ২০০৮ সালে নেপালে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে। নির্বাচনে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৬০১ আসনের নেপালি সংসদের ৫৭৫ টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) নির্বাচনে ২২০ টি আসনে জয়ী হয়। নেপালী কংগ্রেস পায় ১১০ টি আসন। নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) পায় ১০৩ টি আসন। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) ও নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) যৌথভাবে সরকার গঠন করে। ১৬ আগস্ট ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মাও নেতা পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড)। ১৮ আগস্ট প্রচণ্ড শপথ নেন। নেপালি কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যায়।

ফেডারেল রিপাবলিক অব নেপালের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ডক্টর রাম বরন যাদপ। নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী কমিউনিস্ট নেতা পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড) নেপালের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল রু্কম্যানগুড কোতোয়াল-এর সঙ্গে এক অনাকাঙ্খিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রচণ্ড সেনাপ্রধান কোতোয়ালকে বরখাস্ত করলে রাষ্ট্রপতি রাম বরন যাদপ তার বিরোধিতা করেন এবং সেনাপ্রধানকে বহাল রাখেন। ফলে নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) প্রচণ্ড সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০৯ সালের ৪ মে প্রচণ্ড পদত্যাগ করেন। ২৩ মে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাধব কুমার নেপালকে নিযুক্ত করেন। ২৫ মে ২০০৯ মাধব কুমার নেপাল নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মাধব কুমার নেপাল হল নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন)-এর সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু মাধব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন নি। প্রচণ্ডের নের্তৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) সমর্থন প্রত্যাহার করলে ৩০ জুন ২০১০ সালে তিনিও বিরোধীদলের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। সুদীর্ঘ প্রায় সাত মাস রাজনৈতিক টানাপোড়নের পর ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন)-এর সভাপতি ঝালানাথ কানাল। কিন্তু আবারো রাজনৈতিক টানাপোড়নে প্রচণ্ডের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) সমর্থণ প্রত্যাহার করলে কানাল পদত্যাগে বাধ্য হন। ২৯ আগস্ট ২০১১ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কমিউনিস্ট পার্টি (মাও)-এর ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর বাবুরাম ভট্টরাই। ২০১২ সালের মার্চ মাসে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে অন্তবর্তী সরকার হিসেবে নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতি খিল রাজ রেগমি অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি নেপালের অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। নেপাল রিপাবলিক হওয়ার প্রথম চার বছরে চারজন প্রধানমন্ত্রীকে শাসনভার নিতে হয়েছে।

বর্তমানে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তী সরকার কাজ করছে। নেপালে রাজনৈতিক টানাপোড়নের শুরু ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হিমালয় জনপদ ছিল সত্যি সত্যিই অশান্ত। প্রচণ্ডের নের্তৃত্বে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাও) এবং নেপালের সেনাবাহিনী পিপল'স ওয়ারে জড়িয়ে যায়। সুদীর্ঘ ১০ বছরের সিভিল ওয়ারের ফলশ্রুতিতে নেপাল থেকে রাজতন্ত্র বিদায় নেয়। দীর্ঘ ১০ বছরের গৃহযুদ্ধে নেপালে প্রায় ১৫০০০ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে সরকারি বাহিনীর হাতে মারা যায় প্রায় ৮,২০০ জন এবং মাওবাদী কমিউনিস্টদের হাতে মারা যায় প্রায় ৪,৫০০ জন। এছাড়া প্রায় এক থেকে দেড় লাখ মানুষ তাদের জনবসতি হারিয়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয় নেয়।

বামপন্থী মাওবাদীরা এবং মার্ক্স-লেনিনবাদীরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব স্বত্ত্বেও এর সঙ্গে নেপালি কংগ্রেস যুক্ত হয়ে একটি সংগঠিত এবং খাপছাড়া গৃহযুদ্ধ দীর্ঘ ১০ বছর হিমালয় জনপদে চলছিল। এরমধ্যে নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) হল ভারত পন্থী আর মাওবাদীরা হল চীনপন্থী। ১৯৯০ সালে নেপালের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো 'সংযুক্ত রাষ্ট্রীয় জন-আন্দোলন' বা 'ইউনাইটেড ন্যাশনাল পিপল'স মুভমেন্ট' বা সংক্ষেপে 'ইউএনপিএম' নামে একটি বাম মোর্চা গঠন করে। এই বামমোর্চার প্রধান করা হয় তখন ডক্টর বাবুরাম ভট্টরাইকে। কিন্তু রাজনৈতিক নের্তৃত্ব নিয়ে টানাপোড়নে ১৯৯৬ সালে এটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি ভাগে মাওবাদী কমিউনিস্টরা পুষ্প কমল মহল (প্রচণ্ড)-এর নের্তৃত্বে গঠন করে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী) এবং অন্যটি গঠিত হয় মার্ক্সবাদ লেলিনবাদ সমর্থক ঝালানাথ কানালের নের্তৃত্বে ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন)। এরপর প্রচণ্ডের নের্তৃত্ব মাওবাদীরা সরাসরি নেপালি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নেপালি রাজতন্ত্রের সরকার তখন মাওবাদীদের দমাতে নেপালি পুলিশকে মাঠে নামায়। মাওবাদীরা তখন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে নেপালী পুলিশকে সহায়তা করতে নেপালের সেনাবাহিনী মাঠে নামলে শুরু হয় মাওবাদীদের সঙ্গে নেপালি সেনাবাহিনীর যুদ্ধ।

রাজা জ্ঞানেন্দ্র তখন ঘোষণা দেন ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে গোটা গৃহযুদ্ধ সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মুল করবেন। মাওবাদীরা তখন আরো বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী নেপালের শহর এলাকার দখল নিলেও মাওবাদীরা পাহাড়ি গ্রাম ও জনপদে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর দিল্লীতে এক কনফারেন্সে ইউনাইটেড পিপল'স ফ্রন্ট ১২ দাফা দাবী ঘোষণা করে। দীর্ঘ এই গুহযুদ্ধে নেপালের প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস নেপালি পর্যটন থেকে আয় প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। শেষ পর্যন্ত রাজা জ্ঞানেন্দ্র'র বিদায়ের পর মাওবাদীরা নেপালের ক্ষমতায় আসলে মাওবাদী কমিউনিস্টদের আর্ম উয়িং 'পিপল'স লিবারেশান আর্মি বা সংক্ষেপে পিএলএ-কে সরাসরি নেপালি সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়।

প্রথম পর্যায়ে নভেম্বর - ডিসেম্বর ২০১১ সালে ৯,৭০৫ জন পিএলএ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনাইটেড ন্যাশন মিশন ইন নেপাল ২০০৭ সালের ২৬ মে অন্তঃত ১৯,৬০২ জন পিএলএ সদস্যের নাম রেজিঃস্ট্রেশান করে। সেখান থেকে একটি অংশ নেপালের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এবং একটি অংশকে রিহাবিলাইজেশান দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে যাওয়ার জন্য বাছাই করা হবে। ১৯ এপ্রিল ২০১২ সালে নেপালের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল যথা নেপালি কংগ্রেস, নেপালের মার্ক্সবাদ-লেলিনবাদ কমিউনিস্ট পার্টি ও ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক মাধেশি ফ্রন্ট জাতিসংঘ মিশনকে আর নেপালি সেনাবাহিনীকে এই কাজে সহায়তা করার জন্য একটি চুক্তি সই করে। কিন্তু নেপালের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং টানাপোড়ন এখনো যে কোনো সময় মাওবাদীদের নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যে ভারতীয় ও চীনা পন্থীরা তা উসকে দিলে দেশটির সদ্য রাজতন্ত্র থেকে বেড়িয়ে আসা শিশু গনতন্ত্র আবারো হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।



..........................চলবে..............

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.