নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমালয় কন্যার দেশে সাত রজনী। পর্ব পাঁচ ।। রেজা ঘটক

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৭

আপনারা যারা নেপালে ভ্রমণ করতে যেতে চান তাদের জন্য কিছু ছোট্ট টিপস দিতে পারি। ঢাকার জাতিসংঘ রোডে নেপালি হাইকমিশন অফিস। সেখানে ভিসার জন্য আবেদন করলে কোনো ঝামেলা না থাকলে পরিদন ভিসা পেয়ে যাবেন। ঢাকা থেকে বিমানে নেপালে গেলে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েও ভিসা নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার এয়ারপোর্টে একটু সময় লাগবে বেশি। এয়ারপোর্টের ফরমালিটিসে ঢাকা থেকে ভিসা নেওয়া থাকলে এক্কেবারে দুই মিনিটের ব্যাপার। নেপাল একটি পর্যটন দেশ হওয়ায় ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বেশ ভিড় থাকে। সো, ঢাকা থেকে ভিসা নেওয়া অনেক ভালো। আপনি যদি নেপালে প্রথম বেড়াতে যাবার জন্য কোনো পর্যটক হন, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো ভিসা ফি লাগবে না। এটা সার্ক দেশভুক্ত হওয়ায় আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে এই সুযোগটি পাবেন। আর দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার হলে অবশ্যই ফি লাগবে। এটা এখন মাত্র দুই হাজার টাকা। ক্যাশ দিতে পারবেন। অনলাইন থেকে ভিসা ফরম ডাউনলোড করে তা প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করলেই চলবে।

আপনি নেপালে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে ডলার না ভাঙানোই ভালো। কারণ, বিমানবন্দরে ডলারের রেট সবচেয়ে কম। সেক্ষেত্রে আপনার পরিচিত কেউ কাঠমুন্ডুতে থাকলে একটু বাড়তি সুবিধা পাবেন। আমরা কাঠমুন্ডু'র পর্যটন প্রাণকেন্দ্র থামেলে উঠেছিলাম। থামেলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানি এক্সচেঞ্জ আছে। আপনি যে কোনো টি থেকে ডলার ভাঙাতে পারবেন। কিন্তু একটু বুদ্ধি করে দর কষাকষি করতে ভুলবেন না। আমাদের ডলার ভাঙানো নিয়ে স্বামীজী রামকৃষ্ণ একটা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। রামে'র থামেলে একটা ছোট্ট ফ্যাশন হাউজ আছে। রাম অবশ্য তেমন বসে না। রাম নতুন নতুন ফ্যাশনের ডিজাইন করা নিয়ে মেইন অফিসে ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া রাম আবার বৌদ্ধনাথ স্তূপা সংঘের একজন নিয়মিত সদস্য। সপ্তাহে দুইদিন রাম স্তূপায় যায় প্রার্থণা করার জন্য। যদিও রাম একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি রামের বিশেষ দুর্বলতা আছে। রাম বৌদ্ধ ধর্মের সব ফিলোসপি খুব সুন্দর ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করতে পারে।

থামেলের মেইন সড়কে রামে'র যে ফ্যাশন হাউজের দোকান সেখানে বসেন রামের পিসামশাই। অমায়িক ভদ্রলোক। খুব মৃদুভাষী। কিন্তু খুব হাসিখুশি। রাম তার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনিই আমাকে ডলার ভাঙাতে খুব সহযোগিতা করেছিলেন।

খোদ থামেলে আমি ডলার ভাঙাতে গিয়ে দেখি আমাকে দিতে চায় ১০০ ডলারে ৮, ৫৩৪ নেপালি রূপি। আর সেখানে দশ মিনিট পরে রামের পিশামশাই সেই ১০০ ডলার ভাঙিয়ে এনে আমাকে দিলেন ৮, ৮৮৭ নেপালি রূপি। এবার বুঝুন, পার্থক্যটা কেমন হয়? পরে আমি পিশামশাইয়ের মাধ্যমেই প্রায় সময় ডলার ভাঙিয়েছি। বড় বড় খাবারের রেঁস্তোরায় আপনি ইচ্ছে করলে ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন। কিন্তু তাতে আপনার নিশ্চিত লস হবে। সো, যা খরচ করবেন, তা আগে নেপালি রূপিতে ট্রান্সফার করে নিতে ভুলবেন না।

গোটা কাঠমুন্ডু শহর এখন ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে এসেছে। আপনি যে কোন রেঁস্তোরা বা হোটেলে বা বড় বড় দোকান থেকে খুব সহজেই একটি নম্বর নিয়ে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার হাতে অবশ্যই একটি নেপালি সিম বা ইন্টারন্যাশনাল সিমসহ মোবাইল থাকতে হবে। আর নেটওয়ার্ক ঢাকার চেয়ে একশো ভাগ উন্নত। কিন্তু কাঠমুন্ডু'র সাইবার ক্যাফেগুলো এখনো ঢাকার চেয়ে পিছিয়ে। আর ওরা পর্যটনের দোহাই দিয়ে দাম হাকায় ইচ্ছে মতো। সো, প্রয়োজন ছাড়া সাইবার ক্যাফেতে না বসাই ভালো। আপনি যদি লোকাল কল ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফোন কল করতে চান, সেক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দোকানে দোকানে আলাদা রেট। সো, যাচাই বাছাই করে ফোন করুন।

৮ এপ্রিল ২০১৩ । সকালে মায়া আর আমি গাইয়াতে নাস্তা করতে করতেই প্রতীক হাজির হল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, গোটা থামেল একটু পায়ে হেঁটে ঘুরবো। কোথায় কি পাওয়া যায়, জিনিসপত্র দেখা আর দরদাম যাচাই বাছাই করা। আমরা দুইটি মিউজিক স্টলে কয়েকটি বাদ্যযন্ত্রের দাম যাচাই বাছাই করলাম। একটি বইয়ের দোকানে অনেকক্ষণ ঢু মারলাম। প্রায় সকল বই নেপালের টুরিজ্যমের উপর। কয়েকটি ছবির দোকানে ঢু মারলাম। কয়েকটি ফ্যাশন হাউজে ঢু মারলাম। একটি ছেলে বয়স একুশ বছর। খুব সুন্দর ইংরেজি বলে। মায়াকে খুব সুন্দর করে পটালো। মায়া তার দোকান থেকে চুলের ফিতা, ওড়না আর কি কি যেনো কিনলো। আমি একটা নেপালি টুপি পছন্দ করে দাম জিজ্ঞেস করলাম। ছেলেটি জবাবে বললো, এটা আমার ন্যাশনাল সিম্বল। আপনি যা দিবেন, আমি তাই নেব। ছেলেটি জানালো, টি-২০ বিশ্বকাপ দেখতে সে ঢাকায় এসেছিল। তখন তিন দিন ঢাকায় ঘুরেছে। সময় পেলে আবার ঢাকায় বেড়াতে আসবে। ১৮ হাজার টাকা রূপি নিয়ে এই ছোট্ট দোকান শুরু করেছে। দোকান ভাড়া তিন হাজার রূপি। মাসে তার ভালোই আয় হয়। সে পরিকল্পনা করছে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিয়ে করবে। মাসিক আয় থেকে বাবা-মাকে আর ছোট বোনের পড়ার খরচ দেয় সে। নিজের লেখাপড়া এইট ক্লাশ পর্যন্ত। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওই ছেলেটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা অনেক ছেলেমেয়ের চেয়ে ইংরেজিতে ভালো কথা বলতে সক্ষম। উন্নতি তার হবেই।

নেপালে আরেকটা জিনিস খুব চোখে পড়ার মত, শিক্ষিত শ্রেণী ছাড়াও ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রায় সবাই ইংরেজিতে চালিয়ে নেবার মতো দক্ষতা সম্পন্ন। যা পর্যটন নগরী হিসেবে কাঠমুন্ডুকে অনেক দ্রুত উন্নত করাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নেপালে বাহারি খাবারের বাহাদুরি সেই রকম চোখে পড়ার মতো। আপনি কোন ধরনের খাবার চান? নেপালি? ইন্ডিয়ান? চাইনিজ? তিব্বতী? থাই? জাপানিজ? ইতালীয়? ড্যানিস? সবই পাওয়া যায় কাঠমুন্ডুতে। আপনি যদি খুব ঘরোয়া পরিবেশে একেবারে নেপালি লোকাল খাবার খেতে চান সেই ব্যবস্থাও আছে। আপনি খরচ বাঁচাতে চান? সেই ব্যবস্থাও আছে। আবাসিক হোটেল ফাইভ স্টার থেকে শুরু করে দুইশত পঞ্চাশ রূপিতে রুম পাওয়া যায়, এমন আবাসিক হোটেলও আছে।

সাধারণত যারা মাউন্টারিং করতে যায় তারা কাঠমুন্ডু কয়েক দিন থেকে তারপর চলে যায় তাদের সুনির্দিষ্ট ক্যাম্পে। সাধারণত মে মাসে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের জন্য সেখানে মাউন্টারিয়ানরা যায়। যে কারণে এপ্রিল মাসে তাদের প্রাথমিক ভিড়টা থাকে কাঠমুন্ডু শহরে। কাঠমুন্ডুতে অসংখ্য মাউন্টারিং ক্লাব আছে। সেখানে তারা প্রথমে ওরিয়েন্টশান করে। তারপর সিলেকটেডদের নিয়ে তারা ক্যাম্প করে। মাউন্টারিয়ানদের জন্য আছে অসংখ্য দোকান। তাদের নির্দিষ্ট পোষাক, জুতা, ব্যাকপ‌্যাক ইত্যাদি সব জিনিসপত্র সেসব দোকানে অনায়াসেই চোখে পড়বে।

গোটা থামেল পায়ে হেঁটে চষে আমরা যখন ক্লান্ত তখন লান্স করার জন্য একটা মিনি-ওয়েস্টার্ন-কাম নেপালি রেঁস্তোরায় ঢুকলাম। সেখানে সাইবার ক্যাফেও আছে। মায়া আধা ঘণ্টা কম্পিউটারে বসলো। আমি ক্যাফে মালিকের সঙ্গে কথা বলি। ভদ্রলোক চমৎকার ইংরেজি বলেন। একেবারে শুদ্ধ উচ্চারণে। আমি জানতে চাইলাম, তিনি এতো ভালো ইংরেজি কিভাবে শিখলেন? তিনি জানালেন, ১৪ বছর তিনি ইউরোপে ছিলেন। তারমধ্যে ৬ বছর ছিলেন খোদ লন্ডনে। আর তার পার্টনার হলেন হোটেলের প্রধান পাচক। সে ১৭ বছর দুবাই ছিল। দুই পার্টনারে হোটেল এবং সাইবার ক্যাফে চালান। তাদের কোনো এসিট্যান্ট নেই। আমরা দুপুরের খাবারের অর্ডার দিলাম। পাচক রান্না করতে গেলেন। সাধারণত অর্ডারের পরেই ওই হোটেলে রান্না শুরু হয়। আমরা সময় কাটাতে একটু ড্রিংকস নিলাম। লেবুর সরবত সে এমনভাবে পরিবেশন করলেন, আমাদের ঢাকায় পাঁচতারা হোটেল তার কাছে ফেল। তারপর পাচকের রান্না শেষ। পরিবেশন করলেন তার পার্টনার। যে আইটেম রান্না শেষ হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে গরম গরম আমাদের সামনে তা পরিবেশন করছেন ভদ্রলোক। দুই পার্টনারের কেরামতি দেখে আমার অবস্থা কেরোসিন। এছাড়া আবার তাদের একটি টুরিস্ট গাইডের ব্যবসা আছে। কাঠমুন্ডু থেকে যারা শহরের বাইরে এসি বা নন এসি বাস বা মাইক্রোবাসে ঘুরতে যেতে চান, সেই ব্যবস্থাও ওনারা করে দেন।

আমরা নগরকোট যাবার খরচ এবং আনুষঙ্গিক সবকিছু ওনাদের কাছে বিনা পয়সায় ধারণা নিয়ে নিলাম। লান্সের পর আমরা আমাদের হোটেল রুমে ফিরে আসি। সেখানে নতুন একজন ভদ্রলোকের আগমন ঘটেছে আমাদের পাশের রুমে। আমরা তা জানি না। ইতোমধ্যে ডেনিসও এসে পড়লো। আমরা চিৎকার করে গান বাজনা করছি। হঠাৎ আমাদের দরজায় ডাকাত পড়ার মতো জোড়ে জোড়ে কে যেনো নক করলো। প্রতীক উঠে দরজা খুললো। ভদ্রলোক বললেন, তিনি ব্যাংকক থেকে একটু আগে লম্বা জার্নি করে এসেছেন। এখন আমাদের হৈ হল্লার কারণে তার ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। আমরা গান বন্ধ করে ছাদে গেলাম। তখন বিকাল চারটার মতো বাজে। কিছুক্ষণ পরে লোকটিও ছাদে আসলো। এবং এক ধরণের অপরাধ বোধ নিয়ে আমাদের দেখলো।

সন্ধ্যায় গাইয়া রেঁস্তোরায় কফির টেবিলের পাশেও লোকটির আগমন ঘটলো। তার সঙ্গে এবার ১৪ বছরের এক নেপালি বালক। ভদ্রলোক দু'জনের খাবার অর্ডার করলেন। প্রতীক আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, গান বন্ধ করুন। আমি খুব টায়ার্ড। এখন আপনাদের জন্য ঘুমোতেও পারছি না। আসল ব্যাপার হলো, লোকটিকে দেখামাত্র আমরা অটোমেটিক গান গেয়ে উঠলাম সবাই। ও মেরি দেওয়ানি। ও মেরি দেওয়ানি....



..............চলবে.........................

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৪

নানাভাই বলেছেন: চলুক। ++++++

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৭

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ নানাভাই....

২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৭

পাকাচুল বলেছেন: ভালো লাগলো, চলুক।

সেই সাথে কোথায় কেমন খরচ লাগছে, জানাবেন।

২জন ঘুরে আসতে কেমন খরচ লাগতে পারে?

আপনি কিভাবে গেলেন?

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২১

রেজা ঘটক বলেছেন: ৫০০ মার্কিন ডলার নিয়ে গেলে অনায়সে এক সপ্তাহ কাঠমুন্ডু ও আশে পাশে কোথাও ভালোই কাটাতে পারবেন। আমরা বিমানে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ বিমানের চেয়ে ইউনাইটেডে খবরচ একটু কম। কিন্তু আসার সময় বেশ ভোগান্তি হয়েছিল। পরে সকথা বলবো। ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৪২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.