নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
প্রথম আলো'র জরিপ নিয়ে কথা বলার আগে প্রথম আলো'র চরিত্র কি তা একটু বুঝে নেওয়া যাক। কিছু দুষ্টু লোক সাংবাদিকতার সকল নিয়ম ভঙ্গ করে নিজেদের অর্থ বিত্ত আর সম্পদের স্বার্থ রক্ষার্থে একটি প্লাটফরম গঠন করে। সেই প্লাটফরমের ছদ্মনাম সুশীল সমাজ। এটি আসলে নব্য উদীয়মান একটি স্বার্থন্বেসী শ্রেণী, যারা ঘোলা জলে মাছ শিকার করায় ওস্তাদ। এই শ্রেণী'র কথাবার্তায় যে কারো প্রথমেই মনে হবে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় এরাই ঠিক আছে। কিন্তু এদের সকলের সম্পত্তি আর ওঠাবসা যদি একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, দেখবেন, এরা আসলে নতুন আরেকটি শ্রেণী, যারা নিজেদের আখেরের জন্য সাধারণ মানুষের ব্রেনওয়াশ করে একটি জায়গা করার চেষ্টা করছে। প্রথমেই এই শ্রেণী'র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে বিরোধীদের পক্ষে ওয়াজ করা। তখন কিছু রাজনৈতিক সমর্থণ তাদের পক্ষে দাঁড়ায়। তারপর কিছু সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহনের মাধ্যমে এটা জাহির করা যে, আমরা সমাজের আমুল পরিবর্তন চাই। সে লক্ষ্যে এরা কিছু সাফাই কর্মসূচি চালু রাখে।
একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এদের মাদক নিরাময় কর্মসূচি'র যারা প্রবক্তা, তারা নিজেরা আড়ালে আবডালে মাদক সেবা করেন। এদের যারা গণিত অলিম্পিয়াড নিয়ে ঝড় তোলেন, তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচলিত গণিত ব্যবস্থা'র পরিবর্তনে সুপারিশ করেন। নতুন প্রবর্তিত সেই সুপারিশ অনুসারে পরীক্ষায় এখন গণিত হয়ে গেছে বিপদজ্জনক একটি বিষয়। গণিত কি করে নৈর্বত্তিক হয়? ছাত্রছাত্রীদের মনন গঠনে এরা সোজাসাপটা শর্টকাট পদ্ধতি'র উদ্ভাবক। এটা ছাত্রছাত্রীদের গণিত শিক্ষায় নেগেটিভ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এদের কিছু প্রতিযোগিতা আছে, যেখানে ছোট, বুড়ো, নারী, যুবতী, ছেলেমেয়ে সবাই অংশগ্রহন করার সুযোগ পায়। এটি আসলে মোটিভেটেড স্টেজ। মানুষের মনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করার একটি অপকৌশল। তারপর আছে, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক, সেম্পুজিয়াম। যেখানে এদের গৃহপালিত সুশীলরা নানা বিষয়ে বক্তৃতা করেন। সেই বক্তৃতা এদের প্রচার ইউনিট যেমন প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও সাপ্তাহিক ২০০০ প্রচার করে বেড়ায়।
এরা দেখবেন বিদেশী সংস্কৃতি প্রমোটের জন্য খুব সাবধানে কিছু কৌশল গ্রহন করে। কর্পোরেট পুঁজি'র অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এরা বিদেশী বিভিন্ন স্বার্থ গোষ্ঠী'র সঙ্গে যৌথভাবে অপারেশান পরিচালনা করে। যেমন হে ফেস্টিভাল। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি সংগঠনের ব্যানারে এরা প্রথম বছর ব্রিটিশ কাউন্সিলে এবং পরের বছর খোদ বাংলা একাডেমিতে লোক দেখানো লেখক সম্মেলনের আয়োজন করলো। উদ্দেশ্য কিন্তু নিজেদের ছেলেমেয়েদর একটু সবার সামনে বড় লেখক হিসেবে হাজির করা। বাংলায় এদের আপনি বলতে পারেন হাইব্রিড লেখক। দেশের আসল সংস্কৃতি'র কিছুই জানে না অথচ বিদেশী সংস্কৃতি প্রচারে এরা মনোনিবেশ করেছে। বাংলা একাডেমি'তে অনুষ্ঠিত সেই হে ফেস্টিভালে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, দেশের প্রখ্যাত লেখকদের কিছু নকল উচ্চারণে ইংরেজি বলা হাইব্রিড ছেলেমেয়েরা পরিচয় জানতে চেয়েছে আর বলেছে, আপনি এই পথে যান! এরা দেশীয় লেখকদের বইয়ের প্রচার না করলেও বিদেশী লেখকদের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজেদের স্বার্থের জন্য পত্রিকার পাতায় জুড়ে দেয়।
এই নব্য শ্রেণীস্বার্থ গোষ্ঠী রাজনৈতিক সরকারের মেয়াদ শেষের সময় কিছু ভেলকি শুরু করে। সেই ভেলকি এরা পাকাপোক্তভাবে করেছিল ২০০৭ সালে ১/১১ এর সময়। এরা তখন একটি তৃতীয় শক্তির রাজনৈতিক দল দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের সুযোগ নিয়ে এবারো এরা সরকারের মেয়াদ শেষের এই সময়টায় সক্রিয়। ঘোলা জলে মাছ শিকার করার প্রত্যয় নিয়েই এরা আবারো মাঠে নেমেছে। সেই প্রত্যয়ের সুস্পষ্ট অংশ হল প্রথম আলো'র জরিপ।
সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল কয়লা ভিত্তিব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদের কোনো সংবাদ এরা প্রথম পাতায় ছাপে নি। কারণ বিদেশী সেই স্বার্থের সঙ্গে এরাও পরোক্ষভাবে নানাধরনের সুবিধা নেয়ার জন্যে অপেক্ষা করছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র যেখানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থেকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নিকটে আসার জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেখানে প্রথম আলো গং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে আরো দূরত্ব তৈরি করার অপকৌশলে ব্যস্ত। এই কৌশলটি কখনো দেশের মঙ্গল বয়ে আনে না। বরং অমঙ্গল আরো ঘনীভূত করে। আর সেই অমঙ্গল থেকেই প্রথম আলো গংরা মাছ শিকার করতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
প্রথম আলো'র এখন অনেকগুলো উইয়িং। প্রথমা নামে তারা সম্প্রতি একটি সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনা উইয়িংও চালু করেছে। প্রথম বছর প্রথমা বাংলা একাডেমি'র অমর একুশে বইমেলায় এক ইউনিটের স্টল পেয়েছিল। দ্বিতীয় বছরে সেটি হয়ে গেল তিন ইউনিটের মহা সমারোহ। এটি কিসের লক্ষণ? ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তার করেই বাংলা একাডেমি'র অমর একুশে বইমেলায় এরা এই অপকর্মটি করেছে। অথচ দেশ স্বাধীনের পর অনেক সৃজনশীল প্রকাশনা বছরের পর বছর বাংলা একাডেমি বইমেলায় অংশ নিচ্ছে এক, দুই বা তিন ইউনিট নিয়ে। তাদের প্রভাব না থাকায় রাতারাতি তারা এমন ফুলে ফেঁপে উঠতে পারছে না। এই রাতারাতি ফুলে ওঠার পেঠনে অসৎ উদ্দেশ্য এবং অসৎ উপায়ে ধান্ধা করে অর্থ উপার্জনের একটি কৌশল রয়েছে। যা সাধারণ মানুষের সরল চোখে নজরে আসে না।
বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা কমলো না বাড়লো তা জরিপে ঠিক প্রতিফলন ঘটবে না। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আপনি যদি নিরপেক্ষভাবে জরিপ করেন, ৬৪ ধরনের রেজাল্ট পাবেন। একটি জিনিস খেয়াল করবেন, প্রথম আলোকে কেউ কিন্তু বলেনি, তুমি জরিপ কর। প্রথম আলো নিজেদের স্বার্থে এই জরিপ করেছে। জরিপের প্রশ্নমালা দেখে বুঝবেন, এই সরকারের যেখানে যেখানে দুর্বলতা রয়েছে, সেই সব প্রশ্নে যাতে নেগেটিভ উত্তর বেশি আসে, প্রশ্নগুলো অত্যন্ত কৌশলে সেভাবে তৈরি করা। আমার দীর্ঘ ১৫ বছর নানা ধরনের জরিপ কাজে অভিজ্ঞতা আছে। জরিপে আপনার নেগেটিভ এবং পজেটিভ দুই ধরনের প্রশ্ন সমানভাবে রাখতে হয়। আসল কথা জরিপে আপনার অবজেক্টিভ কি? আপনি কি বের করতে চান? আপনি যদি বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চান, তাহলে তাদের অর্জনগুলোও জরিপের প্রশ্নমালায় রাখতে হবে। আবার ব্যর্থতাগুলোও রাখতে হবে। আবার আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করা, তাহলে আপনি দুই ধরনের প্রশ্নই জরিপের প্রশ্নমালায় রাখবেন। তারা কেন সংসদে যায় না। তারা কেন অহেতুক হরতাল দেয়, তারা কেন সংসদে না গিয়েও সুযোগ সুবিধা নেয় ইত্যাদি। আবার তারা কেন সংসদীয় এলাকায় জনগণের কাছে যায় না সেসব প্রশ্নও রাখতে হবে।
কিন্তু সবার আগে আপনার জরিপের উদ্দেশ্য ও মোটিভ এবং নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু প্রথম আলো কি করলো? তাদের মনগড়া কিছু প্রশ্ন দিয়ে পছন্দের ৫০০০ লোকের উপর জরিপ করলো। এটাকে কোনো জরিপের সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। এটা আসলে একটি পক্ষপাতদুষ্ট সমীক্ষা। এটি আপনি ঘরে বসেও তৈরি করতে পারেন। জরিপের প্রধান শর্ত হল, প্রশ্নকর্তা উত্তরকারীকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারবে না। কিন্তু প্রথম আলো'র জরিপের ফলাফল দেখে মনে হয়, এটি নিজেই একটি কনফ্লিক্ট। নিজেই কনফিউজ। অর্থ্যাৎ ঘরে বসেই কেবল এমন জরিপ তৈরি করা যায়। আর সেটি এসি রুম হলে তো কথাই নেই। মনের রঙ মিশিয়ে আপনি বলে দিতে পারেন, ফলাফল হল এই। প্রথম আলো জাতিকে এখন জরিপের নামে আরেকটি তামাশা শুরু করেছে।
জরিপে বয়স একটা প্রধান ফ্যাক্টর। তারপর আছে লিঙ্গ। তারপর শিক্ষা, নগর, গ্রাম, যাতায়াত। আপনি ঢাকায় একজন মানুষের কাছ থেকে একই প্রশ্নের যে উত্তর পাবেন, সেই উত্তর আপনি ভুরুঙ্গামারীতে পাবেন না। উখিয়াতেও পাবেন না। আবার গোপালগঞ্জে যে উত্তর পাবেন, বগুড়া বা ফেনিতে সেই উত্তর পাবেন না। ভোলাতে যে উত্তর পাবেন যশোরে বা পঞ্চগড়ে তা পাবেন না। প্রথম আলো জরিপের নামে এবার জরিপকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলো। একই সঙ্গে তারা জরিপের প্রচলিত নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে একটি অপরাধ করেছে। পাশাপাশি প্রথম আলো জরিপের মোটিভে একটি সুনির্দিষ্ট কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। জরিপে আপনি কোনো কৌশলের আশ্রয় নেবার সুযোগ নেই।
এতে করে প্রথম আলো মানুষকে আরো বাটপার, আরো আকাম-কুকাম, আরো ভণ্ডামি করতে উসকে দিচ্ছেন।
প্রথম আলো জরিপ করে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছে, আমরা যা চাই, বাংলাদেশে পরবর্তী সময়ে তাই ঘটবে। এটা সেই নব্য শ্রেণী স্বার্থের ঔদ্বত্ত্যকেই স্বরণ করিয়ে দেয়। আপনি দেখবেন, এরা জয় আর তারেক জিয়ার তুলনামূলক আলোচনার পাশে ডক্টর ইউনুসকে কৌশলে হাজির করছেন। আপনি যদি প্রথম আলো'র মোটিভ না ধরতে পারেন, তাহলে আপনার ব্রেন ওয়াশ করা তাদের জন্য মাছভাতের মত সোজা। আর যদি আপনি এটা বুঝতে পারেন, দেখবেন সেখানে গভীর ষড়যন্ত্রের একটি নকশা ফাঁদা হয়েছে।
প্রথম আলো'র জরিপ সেই গভীর ষড়যন্ত্রের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। দেশের সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে দূরত্ব নিরসনে যেখানে প্রথম আলো' গঠনমূলক উদ্যোগ নিতে পারতো, তারা সেটি না করে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে। এখন বিএনপি যদি মনে করে প্রথম আলো'র জরিপে'র সত্যতা অনুযায়ী তাদের জনপ্রিয়তা বেশি এবং নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। তাহলে তো তাদের আন্দোলন বাদ দিয়ে কোথায় কাকে নমিনেশান দেবেন এবং পুরো নির্বাচনী ব্যস্ততায় নেমে পড়া উচিত। অথবা এই জরিপ বিএনপি'র যে অংশটি বিশ্বাস করবে, তারা নির্বাচনে নামার জন্য দলের ভেতরে চাপ তৈরি করবে। বাস্তবে নির্বাচনে ফলাফল তার উল্টো আসলেই বিএনপি কঠিনভাবে ধরা খাবে। আর যদি বিএনপি এই জরিপ বিশ্বাস করে আন্দোলন বাদ দিয়ে সোজা নির্বাচনে নামে, তাহলে এতোদিন তারা যে সব দাবী নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, সেগুলো সব ভূয়া ছিল। সেজন্য জনগণের কাছে নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা জনগণ সেই ভুল রাজনীতি যারা করেছে তাদের বর্জন করতে পারে।
জরিপে বিশ্বাস করলেও বিএনপি'র কিন্তু দুই ধরনের ঝুঁকি আছে। যদি প্রথম আলো'র কথা সত্য না হয়, তাহলে আম-ছালা দুটোই যাবে। বিএনপি তখন মুসলিম লীগের মতো একটি দলে পরিনত হবে। আর যদি প্রথম আলো সরকারকে আরো রিজিট হবার জন্য একটি বেকায়দা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, সেক্ষেত্রে সরকার বিরোধীদলের সাথে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং আগামী নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনী ব্যবস্থা কেমন হবে, তা নিয়ে যে সংলাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই জরিপের ফলাফল, সরকারের যারা কট্টরপন্থী, তাদেরকে আরো রিজিট হতে উৎসাহীত করবে। সংলাপ হবার সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। প্রথম আলো'র এই জরিপ চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের প্রস্তুতিকালে একটি নতুন ধরনের ষড়যন্ত্রের বোমা। এই বোমা সংলাপকে আরো সংকটে ফেলে দিল। মাঝখানে সেই তৃতীয় শ্রেণীচরিত্ররা মাছ শিকার করার সকল আয়োজন সম্পন্ন করতেই সময় বের করে নিবে।
প্রথম আলো'র জরিপ একটি সুনির্দিষ্ট ষড়যন্ত্রের অংশ এবং নির্লজ্ব বহিপ্রকাশ। জরিপের নিয়ম কানুনের ধার না ধেরে মনগড়া একটি প্রচার চালিয়ে প্রথম আলো চলমান রাজনৈতিক সংকটকে আরো অধপতনে নিয়ে যেতে চায়। উদ্দেশ্য দেশের সংকটকালীন অচলাবস্থায় ঘোলা জলে মাছ শিকার করা। প্রথম আলো'র জরিপ কোনো মতেই জরিপ নয়, এটা একটি জরিপের প্রহসন। এটা দেশের বিদ্যমান দুষ্টু দুবৃত্ত শ্রেণীকে আরো দুষ্টু কাজে উৎসাহিত করবে এবং প্রচলিত সংকট নিরসনের বদলে এই জরিপ আরো সংকটকে উসকে দেবে।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রথম আলোর জরিপটা যদি আপনি পুরোপুরি পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে, জরিপের এই ফলাফলই যে সঠিক সেটা দাবি করা হয় নি, বলা হয়েছে ৩% পর্যন্ত প্লাস-মাইনাস হতে পারে। তারা দেশের ৩০ জেলার ৫০০০ মানুষের উপর জরিপ করেছেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর। জরিপের প্রতিটা বিষয় ও ধাপই তারা প্রকাশ করেছেন, গোপন রাখেন নি। আমার যদ্দূর মনে পড়ে, আর্টিকেলে তারা জরিপের মানদণ্ড বজায় রেখেই জরিপ করেছেন। আমি ধরে নিচ্ছি যে, পুরো আর্টিকেলটা পড়েই আপনি এ বিশ্লেষণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বিশ্লেষণ জেনারেলাইজ না করে ঐ জরিপ থেকে পয়েন্ট উদ্ধৃত করে দিলে আপনার বিশ্লেষণ যৌক্তিক ও শক্তিশালী হতো।
মোটের উপর, এ ধরনের জরিপ করার জন্য কেউ কাউকে বলে দেয় না। অন্যান্য দেশেও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়েই জরিপ চালিয়ে থাকে। স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে বলে আমি মনে করি না, যেমন আপনার এই বিশ্লেষণটার পেছনেও কিছু স্বার্থ থাকা অপরিহার্য।
প্রথম আলোর জরিপ আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে; এমনকি, ব্লগ, ফেইসবুকে যেরূপ প্রতিক্রিয়া ও মনোভাব দেখা যায় মানুষের, তদানুযায়ী বিএনপির জনপ্রিয়তা আরও কিছু বেশি হওয়াই যৌক্তিক ছিল।
দেশে যতগুলো সংবাদপত্র আছে তার কোনোটাই শতভাগ নিরপেক্ষ নয়। দেশের সবগুলো সংবাদপত্রকে যদি আমরা নেগেটিভ রেটিং করি, তাহলে প্রথম আলোই মন্দের মধ্যে সবচেয়ে সেরা পত্রিকা। এর চেয়ে ভালো পত্রিকা আর কোন্টি আপনার মতে?
সর্বোপরি, আপনার বিশ্লেষণটা আমার কাছে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়েছে প্রিয় রেজা ঘটক ভাই। এটাকে নিরপেক্ষ করতে চাইলে জরিপের টেক্সট থেকে পয়েন্ট একটা একটা করে তুলে তা খণ্ডন করা প্রয়োজন যা আপনি করেন নি।
আপনার লেখার হাত ভালো।
ভালো থাকুন রেজা ঘটক ভাই।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১০
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি প্রশ্নগুলো আর জরিপের ফলাফল খেয়াল করেন-
১. এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে দেশের ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ বিএনপিকে ভোট দিতে চান। আর আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চান ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ।
২. জরিপে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সমর্থক বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে অপেক্ষাকৃত বেশি। বিএনপির সমর্থক বেশি বরিশাল ও রাজশাহীতে। জাতীয় পার্টি রংপুরেই বেশি জনপ্রিয়। জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি খুলনা।
৩.আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েরই সমর্থক শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে বেশি। আওয়ামী লীগের পুরুষ সমর্থক বেশি, বিএনপির বেশি নারী সমর্থক। নিজ সমর্থকদের ভেতরে আওয়ামী লীগ বেশি জনপ্রিয় চল্লিশোর্ধ্বদের মধ্যে। বিএনপির জনপ্রিয়তা তার সমর্থকদের ভেতরে ৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বেশি।
৪. ষমতাসীন মহাজোট সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা তাদের নেই। তবে ৪৮ শতাংশ মানুষ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রেখেছেন।
৫. দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়া আগামী সাধারণ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে ইচ্ছুকদের মধ্যেও ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন।
৬. সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন হবে বলে মত দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ মানুষ।
৭. জরিপে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে প্রতি দশজনের মধ্যে অন্তত আটজন (৮০ শতাংশ) মানুষ সমর্থন জানিয়েছিলেন।
৮. তবে বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের মনোভাব মিশ্র। ৫৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বিচার যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হচ্ছে না।
৯. যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় প্রশ্নে বিএনপির নীরবতা নিয়ে মানুষের মতামত প্রায় দ্বিধাবিভক্ত। অর্ধেকের সামান্য কিছু বেশি উত্তরদাতা তাদের নীরবতা সমর্থন করেননি। অর্ধেকের সামান্য কম উত্তরদাতা বলেছেন, এ নীরবতা যথাযথ।
১০. জরিপে জামায়াতের জনসমর্থন ৩ শতাংশের নিচে নেমে গেলেও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। এমনকি আওয়ামী লীগকে যাঁরা ভোট দিতে চেয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দেননি।
১১. এবারের জরিপে ৫৭ শতাংশ মানুষ সামগ্রিকভাবে সরকার পরিচালনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, দেশ ঠিক পথে এগোচ্ছে না।
১২. দেশের ৬৯ শতাংশ মানুষ নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে সরকারের ভূমিকা সমর্থন করেননি।
১৩. ৪৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যাশা করছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হবে। তাদের মধ্যে সমঝোতা না হলে দেশে নৈরাজ্য শুরু হবে, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ৭৩ শতাংশ মানুষ।
সংক্ষেপে এই হল জরিপের নমুনা। একটু খেয়াল করেন, যে ইস্যুগুলো জরিপের জন্য নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বর্তমান সরকারের বিপক্ষে যায় এমন সব ইস্যু। কোনো কোনো বিষয়ে কনট্রাডিকটরি ফলাফল। যেমন ধরুন, ১০ নং পয়েন্ট। আবার, জরিপে সরকারের পক্ষে যায় এমন বিষয় যেমন ধরুন, বছরের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া, ঢাকার উড়াল সেতু, চট্টগ্রামের উড়াল সেতু, খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্নতা অর্জন, পরীক্ষায় নকল বন্ধ, দুর্নীতির বিচার, যুদ্ধাপরীদের বিচার শুরু, মায়ানমারের সাথে সমুদসীমা বিরোধে বিজয়, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস, ব্যাংক রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় ইনটেনশনালি জরিপে রাখা হয়নি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে অংশ নিয়ে বিএনপি'র একটা গোজামিল আছে, সেটার একটা মনগড়া ফলাফল দেখা যায়। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কথা আছে কেবল নির্বাচনে যে বিষয়গুলো মানুষ সহজে গিলবে, সেই বিষয়গুলো। আর তার মনগড়া ফলাফল।
জনপ্রিয়তায় বিভাগ অনুযায়ী যে ফলাফল দেওয়া হয়েছে, ওটার পক্ষে যুক্তি কি? জরিপ চালানো হয়েছে ৩০টি জেলায়। দেশের অর্ধেকের বেশি জেলা জরিপেরই বাইরে!!!! আবার কোন জেলায় কতজনের জরিপ তা অস্পষ্ট।
আবার জরিপের সাফাই গাইতে প্রথম আলো'র পেইড স্পেসালিস্ট সাজ্জাদ শরিফ একটি ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছেন। যেখানে আসল কথাগুলো'র কোনো ব্যাখ্যা নেই। বিগত বছরগুলোতে তারা সরকারের বর্ষপূর্তির আগে এমন জরিপ করেছেন এটাই যুক্তি। তাহলে চলতি বছর একটি বিশেষ জরিপ করা হয়েছিল এপ্রিল মাসে। ওটা কিসের ভিত্তিতে? নাকি ওটার ফলাফল তেমন কাজে লাগেনি, তাই আরেকটি একচোখা জরিপের দরকার পড়লো?
জরিপের মোটিভ এবং উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার। সরকারের কিছু বদনাম করা। বিএনপি যে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে এটা বোঝানো। আর সেই সুযোগে আসন্ন নির্বাচনে কিছু আগাম খবরদারী করার প্রয়াস নিয়েই এই জরিপ।
আমি প্রথম আলো'র অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেছি। সরকার বা বিএনপি কে লাভবান হবে সেদিকে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি বলতে চেয়েছি, একটা প্রথম সারির দৈনিক নীতি বিসর্জন দিয়ে দালালিতে নেমেছে। এবং একটি বিশেষ শ্রেণী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষাই তাদের উদ্দেশ্য। চলমান সংকটকে পুঁজি করে সেই ঘোলা জলে তারা মাছ শিকারের ইচ্ছা নিয়েই এটা করছেন।
জরিপ হচ্ছে লোক দেখানে খেলা। প্রথম আলো'র পেছনের খেলাটা বুঝতে না পারলে আপনার সাথে তর্ক করার খায়েস আমার নেই। ধন্যবাদ
৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫
সবখানে সবাই আছে বলেছেন: জরিপে একটা জিনিষ খুব অবাক লেগেছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায় ৮০ পার্সেন্ট মানুষ, ৫৯ পার্সেন্ট মানুষ এই বিচার ঠিকভাবে চলছে বলে মনে করে না, আবার ৭০ ভাগ মানুষ জামাতের রাজনীতির পক্ষে, আবার ৪৯ ভাগ মানুষ মনে করে বিএনপি যুদ্ধপরাধীদের ব্যাপারে যে বক্তব্য দিচ্ছে তা ঠিক আছে। এই চারটাকে এক লাইনে ফেললে বোঝা যায় কোথাও একটা কিন্তু আছে। একমাত্র বিএনপি সাপোর্টারাই বলবে তারা যুদ্ধপরাধীদের পক্ষে(তবে সেটা হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের এই কথাটা এখানে উহ্য রাখুন কারন পরের জরিপে আছে তার উত্তর), ৫৯ ভাগ মানুষ এই বিচার মানে না(কারন পরের জরিপে আছে তার উত্তর) , ৭০ ভাগ মানুষ জামাতের রাজনীতি পচ্ছন্দ করে (একেবারে গোড়া শিবির বা বিএনপি ছাড়া এই জিনিশ কারো মাথা থেকে বের হবে না, এই জরিপে মানুষের ভ্রু কুচকে আকাশে তোলার কথা কিন্তু সেই জন্য পরে একটা লাইন যুক্ত হয়েছে লীগের ৩৯ ভাগ মানুষ নাকি জামাতের রাজনীতির পক্ষে, আজকে তাদের পত্রিকাতে তাদের পেইড কলামিস্ট সেইটা নিইয়ে অদ্ভুত একটা সাফাই গাইসে এই ৭০ ভাগ মানুষ নাকি আসলে জামাতকে আদর্শিক ভাবে লড়াই করে পরাজিত করতে চায়, যেই ৩৫০০ গ্রামের লোক এই জরিপে অংশ নিছে তাদের কাছ থেকে এই উত্তর পাওয়া অসম্ভব এবং এই ব্যাপারে তাদের জরিপেও কিছু বলা নাই যে তারা আদর্শিক ভাবে লড়াই করতে প্রস্তুত কি অপ্রস্তুত, এই ফ্ল টা চোখে পড়ার মত বলেই আগামী কিছু দিন এই জিনিষ নিইয়ে প্রথম আলো ত্যানা পেচাবে) এবং সর্বশেষ বিচার নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার পক্ষে ৪৯ ভাগ মানুষ। ভেন ডায়াগ্রামে এই চারটা জরিপ ফেললে পরিষ্কার বোঝা যাবে জরিপ করতে কাদের কাছে যাওয়া হয়েছিল। যেই মানুষ বিচারের পক্ষে তারা কিভাবে জামাতের রাজনীতির পক্ষে আবার তারা কিভাবে বিচারের প্রক্রিয়ায় দ্বিমত পোষন করে এবং সবশেষে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার প্রতি আস্থা আছে। কমন জোনের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ এই ধারনা পোষন করে যেটা একেবারেই অস্বাভাবিক ব্যাপার। আমি অনেক ভেবে চিন্তেও উত্তর মেলাতে পারছি না। কেউ পারলে একটু বুঝিয়ে দেবেন। নতুবা আমার ধারনা ঠিক বলে ধরে নেব।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৬
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাকে একটা জিনিস বলি, গ্রামের এখনো প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের রাজনীতি নিজেদের পেট কেমনে চলবে, কি কাজ করলে ফসল ভালো হবে, কিভাবে জমিতে কখন সার লাগবে, কখন পোকা মারতে হবে, এসব নিয়েই তারা ব্যস্ত। তারা ভোটের দিন কোনো একটা পক্ষকে ভোট দেয়। বাকি ৫ বছর এ নিয়ে আর তাদের মাথা ব্যথা থাকে না। এটাই আসল সত্য। আর জরিপে কাদের প্রশ্ন করা হয়েছে সেটাই তো স্পষ্ট না। তো, জরিপ তো একটা প্রহসন। আসল কথা হল প্রথম আলো'র কোনো গভীর ষড়যন্ত্র আছে এই জরিপের পেছনে। তারা তলে তলে কোনো গভীর খেলা খেলার পায়তারা করছে....সেটা বুঝতে বা দেখতে আপনাদের আর মাস খানেক অপেক্ষা করলেই চলবে। ধন্যবাদ আপনাকে...
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন বিশ্লেষন!
সমাজবাদী যখন পূজিবাদী হয় তখন ভন্ডামী ছাড়া আর কি আশঅ করা যায়!!!!!!!!!!!!!!!