নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থশাস্ত্রে গবেষণার জন্য আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে চালু করে 'দ্য এসভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ ইন ইকোনমিক সায়েন্সেস' স্মৃতি পুরস্কার। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত প্রতি বছর অর্থশাস্ত্রে গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা হয় এই 'দ্য এসভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ ইন ইকোনমিক সায়েন্সেস'কে। অনেকে এটাকে বলেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার। এটি আসলে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত নোবেল স্মৃতি পুরস্কার। এ বছর অর্থনীতিবিজ্ঞানে অবদানের জন্য স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ইউজিন এফ. ফামা, লার্স পিটার হ্যান্সেন ও রবার্ট জে. শিলার। ‘সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণে প্রায়োগিক বিশ্লেষণ’ নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর এই তিন মার্কিনকে অর্থনীতিশাস্ত্রের নোবেল বলে খ্যাত নোবেল স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
ইউজিন এফ. ফামা ও লার্স পিটার হ্যান্সেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনমিক্সের প্রফেসর। আর রবার্ট জে. শিলার যুক্তরাষ্ট্রের ইয়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনমিক্সের প্রফেসর। তিনজনেরই গবেষণার বিষয় ''empirical analysis of asset prices"। শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের মূল্য আগামী কয়েকদিনে বা পরবর্তী সপ্তাহে কেমন হতে পারে সে বিষয়ে কেউ ভবিষ্যৎবানী করতে পারে না। তবে অনুমান নির্ভর একটি যুক্তি হাজির করতে পারে, যেখানেও তারা বলতে পারে, আগামী তিন বা পাঁচ বছরে শেয়ারবাজারে স্টক ও বন্ডের দাম কেমন হতে পারে। যদিও সেই অনুমান নির্ভর যুক্তি সঠিকও হতে পারে, আবার উল্টো ফলও ফলতে পারে। কিন্তু শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের দাম নির্ধারণী সেই ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডকে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা এবং আগাম দাম নির্ধারণে একটা যুগপোযুগী ও যুক্তিসঙ্গত দাম বিবেচনায় অসাধারণ বিশ্লেষণের জন্য অর্থনীতি'র এই তিন পণ্ডিতকে এবছর এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
১৯৬০ সালের দিকে প্রফেসর ইউজিন এফ. ফামা ও তার তখনকার সহযোগী গবেষকগণ শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের দাম নির্ধারণে কি কি বিষয় ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে গবেষণা করেন। তখন তাঁরা বুঝতে পারেন যে, শেয়ারবাজারে স্টক ও বন্ডের আগাম দাম নির্ধারণে কিছু বিষয় দ্রুত প্রভাববিস্তার করে। যা শেয়ারবাজারে দ্রুত ছড়িয়ে যায় আর তা স্বল্পকালীন সময়ে শেয়ারের দাম নির্ধারণে একটা প্রভাববিস্তারকারী ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এটা অনেকটা গুজবের মত দ্রুত ছড়িয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘকালীন সময়ে শেয়ারের আগাম দাম নির্ধারণে এটি অনেকটা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেয়ারবাজারের স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন সময়ে শেয়ারের দাম নির্ধারণে এই যে বৈপরীত চেহারা এটি গোটা শেয়ারের আগাম দাম নির্ধারণেও ভূমিকা পালন করতে পারে- এমন একটি বিশ্লেষণ থেকেই তারা শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের আগাম দাম নির্ধারণ নিয়ে আরো গবেষণায় রত হন।
শেয়ারবাজারে স্টক ও বন্ডের দাম নিয়ে সারা বিশ্বের শেয়ারবাজারের উপর তারা পর্যবেক্ষণ করে প্রায় একই ধরণের আচরণ খুঁজে পান। স্বল্পকালীন সময়ে শেয়ারবাজারে স্টক ও বন্ডের দাম দীর্ঘকালীন সময়ের চেয়ে বেশি অস্থিতিশীল। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এবং কিভাবে শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের আগাম দামের একটা যথাযথ পূর্বাভাস দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে তারা গবেষণা অব্যাহত রাখেন।
সেই একই গবেষণায় ১৯৮০ সালের দিকে প্রফেসর রবার্ট জে. শিলার আবিস্কার করেন যে, শেয়ারবাজারে কর্পোরেট ডিভিডেন্টের দামের চেয়ে স্টকের দাম বেশি ওঠানামা করে। আর স্টকের দাম যখন বাড়ে তখন ডিভিডেন্টের দরপতন ঘটে। আবার যখন ডিভিডেন্টের দাম বাড়ে তখন স্টকের দরপতন ঘটে। আর একই ঘটনা শুধু ডিভিডেন্টের বেলায়ই ঘটে না, এটা বন্ডের বেলায়ও কার্যকর। বন্ডের দাম যখন বাড়ে তখন স্টকের দরপতন ঘটে। আবার বন্ডের দাম যখন কমে তকণ স্টকের দাম বাড়ে। এই বিষয়ে শিলার আরো গবেষণা করে দেখেন যে, এটি অন্যান্য সম্পত্তির মূল্যের বেলায়ও অনেকটা কার্যকর। স্টকের দাম যখন বাড়ে তখন অন্যান্য সম্পদের দাম কমে এবং স্টকের দাম যখন কমে তখন অন্যান্য সম্পদের মূল্য বাড়ে। শেয়ারবাজারের এই প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে, স্টকের দাম বাড়লে ডিভিডেন্ট, বন্ড ও অন্যান্য সম্পদের দাম কমবে এবং স্টকের দাম কমলে ডিভিডেন্ট, বন্ড ও অন্যান্য সম্পদের দাম বাড়বে। পরবর্তী সময়ে এই হাইপোথিসিস নিয়ে আরো অনেকে গবেষণা করতে থাকেন।
প্রফেসর লার্স পিটার হ্যান্সেন ও তাঁর দল গবেষণা করে দেখেন যে, সম্পদের মূল্য নির্ধারণে বিনিয়োগকারী যুক্তিসঙ্গত কি কি উপায় অবলম্বন করেন? সম্পদের মূল্য নির্ধারণী সেই যুক্তিগুলো নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রফেসর লার্স পিটার হ্যান্সেন আবিস্কার করেন যে, সম্পদের অস্থির দাম নির্ধারণে বিনিয়োগকারী কিছুটা ঝুঁকি নেন এবং সেই ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠার জন্য সম্পদের দাম নির্ধারণের আগে কিছুটা কমপেনসেশান হাতে রাখেন। ঝুঁকি যদি কার্যকর হয় তো সেই কমপেনসেশান তখন বিনিয়োগে বাড়তি আয় সৃস্টি করে। আর ঝুঁকি যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তা কাটিয়ে উঠতে সেই কমপেনসেশান অনেকটা দায়িত্ব নেয় টোটাল বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে। এই যে ঝুঁকি গ্রহন এবং ঝুঁকিপূর্ণ সময়ের আগাম দাম বিশ্লেষণে বিনিয়োগকারী যে পন্থা অবলম্বন করেন, সেই ঝুঁকিও একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। সেটি কি? স্বল্পসময়ে সেটি ঝুঁকি হলেও দীর্ঘমেয়াদে সেটি আসলে সম্পদের দাম নির্ধারণে একটি পূর্বাভাস হিসেবে আবিস্কৃত হয়। অর্থ্যাৎ সম্পদের দাম নির্ধারণে স্বল্পমেয়াদে যা একটি ঝুঁকি হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা একটি ফলপ্রসু অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। যা সম্পদের মূল্য নির্ধারণে যুক্তিসঙ্গত বিনিয়োগকারী অনেকটা আগাম ঝুঁকি মোকাবেলা করেই উত্তীর্ণ হন। আর সেই ঝুঁকি মোকাবেলায় যে সব বিনিয়োগকারী কমপেনসেশান যতো সঠিক রাখতে পারেন, তাদের ঝুঁকি দীর্ঘমেয়াদে ততোটা বেশি কার্যকর হয়।
সম্পদের দাম নির্ধারনে বিনিয়োগকারীর আচরণ, তার প্রতিষ্ঠানের ঋণ নেয়ার ক্ষমতা, এবং দাম নির্ধারণী কৌশল সবচেয়ে বেশি প্রভাববিস্তার করে বলেই প্রফেসর লার্স পিটার হ্যান্সেন বিশ্বাস করেন। অর্থ্যাৎ সম্পদের দাম নির্ধারণে স্মার্ট বিনিয়োগকারী বাজারের সুফল বেশি ঘরে তুলতে সক্ষম হন। যুক্তিসঙ্গত দাম নির্ধারণে একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী যেসব কৌশল নেন, তার মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, ঋণ নেয়ার ক্ষমতা, এবং বিনিয়োগকারীর আচরণ অনেকটা যুক্তিসঙ্গত নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।
পরবর্তী সময়ে শেয়ারবাজারে স্টক ও বন্ডের দামের সঙ্গে সম্পদের দাম কিভাবে কাজ করে তার একটি সুত্র আবিস্কার করতে এই তিন মার্কিন প্রফেসর সক্ষম হন। সুত্রটি হল, সম্পদের দাম নির্ধারণে অস্থির বাজার, ঝুঁকি এবং ঝুঁকির সক্ষমতা ততোটা যুক্তিসঙ্গত হবে, যতোটা একজন বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের ও ডিভিডেন্টের দাম ওঠানামা সূক্ষভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন। সম্পদের মূল্য নির্ধারনে তাই শেয়ারবাজারের স্টক ও বন্ডের দরের ওঠানামা একটি সূক্ষ প্রভাববিস্তারকারী নিয়ামক। আর কেবল একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী সেই বাজার পরিস্থিতি আগাম বুঝতে সক্ষম হন। শেয়ারবাজারের অস্থিরতা যিনি যতো যুক্তিসঙ্গতভাবে আবিস্কার করতে পারবেন, সম্পদের মূল্য নির্ধারণে সেই বিনিয়োগকারী ততোটা সফল ঝুঁকি গ্রহন করতে পারবেন। আর এটা স্বল্পকালের চেয়ে দীর্ঘসময়ে ততোটা বেশি কার্যকর হবে।
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৩২
বশর সিদ্দিকী বলেছেন: বাংলাদেশের মন্ত্রিরা আর একখান নুবেল এর জন্য এত আর্তনাদ করাল তাও নুবেল কমিটির কানে গেলনা। আজকে বক্তৃতায় তার ছাপ উনার মুখে পরেছে দেখলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২৬
েবনিটগ বলেছেন: আরেকটি বৈচিত্র্যময় লেখার জন্য ধন্যবাদ। আপনি আপনার লেখার পরিধিকে দিন দিন বাড়ান এই শুভ কামনায়...