নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প: ।। দপ্তরবিহীন ।।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৫

ভগবান কৈলাসের বিদেশ বিষয়ক সচিব হলেন চিত্তগুপ্ত বাবু। গোটা বিশ্বের শান্তি ও শৃঙ্খলা'র করুণ দশা তিনি ভগবান কৈলাসকে বর্ণনা করছিলেন। এক পর্যায়ে ভগবান কৈলাস চিত্তগুপ্ত বাবুকে থামিয়ে দিলেন- চুপ, তোমার এই একই ঘ্যানর ঘ্যানর আমার আর শুনতে ভালো লাগছে না। নতুন কিছু থাকলে তাই বল? জবাবে খুব খুশি আর নতুন উদ্যম নিয়ে এবার চিত্তগুপ্ত বাবু বললেন, জি স্যার, আছে তো, অনেক ভালো ভালো নতুন খবর আছে। আমি কোনটা দিয়ে শুরু করব, স্যার?

শুনে ভগবান কৈলাস একটু মুচকি হাসলেন। বিদেশ সচিবের আপাদমস্তক এক নজরে পর্যবেক্ষণ করে বললেন, তার আগে বল, সূর্য কোনদিকে ওঠে আর কোনদিকে অস্ত যায়?

চিত্তগুপ্ত বাবু কপাল কুচকে একটু চিন্তা করলেন। এমন সহজ পাঠশালা'র প্রশ্ন নিশ্চয়ই ভগবান কৈলাস আমাকে করেননি। আরেকটু ভেবে নিয়ে বললেন, স্যার, সূর্য তো অস্তই যায় না, সব সময়ই সে উদয় হয়ে বসে আছে, স্যার। অবশ্য পৃথিবীবাসী'র ধারণা সূর্য পূর্বে ওঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়। কিন্তু স্যার, আমি জাপান টু চিলি ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সূর্য সব সময় আকাশের কোথাও না কোথাও থাকে, স্যার।

ভগবান কৈলাস একটু বিরক্ত হন। সহজ প্রশ্নেও চিত্তগুপ্ত বাবু তিন হাত প‌্যাচান। বিষয়টি কখনো তার ভালো লাগে, কখনো বিরক্তির চরম সীমা অতিক্রম করে। একটু তেজের সঙ্গেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন ভগবান কৈলাস। পৃথিবীবাসী খালি চোখে যা দেখে অভ্যস্থ, তুমি সেই জবাবটাই দাও। না পারলে, আজই তোমার দপ্তর আমি পুনর্বণ্টন করব?

ভগবান কৈলাসের একটু ধমকে চিত্তগুপ্ত বাবু একটু নেড়েচেড়ে বসলেন। একটু একটু তোতলাতে থাকলেন। স্যার, আমি মনে করেছিলুম, আপনি তো আর আমাকে অতো সহজ প্রশ্ন করেননি, তাই একটু ব্যাখ্যা করছিলুম, স্যার। আপনার যদি ধৈর্য থাকে তো, আমি আবার জবাব দেবার চেষ্টা করি, স্যার?

ভগবান কৈলাস এবার মহাবিরক্ত হলেন। চেয়ার ছেড়ে ড্রয়িংরুম থেকে বেডরুমের দিকে যেতে যেতে বললেন, আজ থেকে তুমি দপ্তরবিহীন, তুমি এখন যেতে পারো, আমি এখন ঘুমাবো।

চিত্তগুপ্ত বাবু অসহায়ের মত কিছুক্ষণ চুপচাপ ভগবান কৈলাসের ড্রয়িংরুমে একা একা বসে রইলেন। দপ্তরবিহীন মানে কি? আমাকে কি বিদেশ সচিবের মন্ত্রক থেকে ছ্যাক করা হল? সূর্য উঠলে বা কি, না উঠলে বা কি? তাই বলে আমার উপর স্যার এমুন একটা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিলেন? এতোদিন ধরে আমি স্যারের কতো ধরনের সেবা করছি। আর সামান্য সূর্য ওঠা নিয়েই আমার চাকরি যাবে? না না না, এর মধ্যে অন্য কোনো রহস্য আছে। নিশ্চয়ই স্যারের কাছে কেউ আমার সম্পর্কে কুটকথা লাগিয়েছে। সেই কুটকথা কে কে লাগাতে পারে? ভগবান কৈলাসের দপ্তরবিহীন শব্দটি যতোবার কানে বাজছে, ততোবারই চিত্তগুপ্ত বাবু শিউড়ে উঠছেন। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন কঠিন সংকটের মুখোমুখি কখনোই পড়েননি তিনি। চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু পায়চারী করলেন। না, বিষয়টা নিয়ে আরো সূক্ষভাবে ভাবতে হবে।

ঠিক ওই সময় ভগবান কৈলাস বেডরুমের দরজা খুলে আবার চিৎকার করে উঠলেন, তুমি এখনো যাওনি? চিত্তগুপ্ত বাবু আমতা আমতা করে সেই চিৎকারের উদ্দেশ্যে স্বভাবসুলভ হাত উঠিয়ে নমস্কার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলেন।

তখন গভীর রাত। আকাশে কৃষ্ণপক্ষের নবমী চাঁদের মৃদু আলো। চরাচরে তল্লাটে তখন কেউ হয়তো জেগে নেই। চাঁদের ক্ষীণ আলো কিসের সংকেত দিচ্ছে চিত্তগুপ্ত বাবু ভাবতে লাগলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আজকের মত চাঁদকে নিয়ে এভাবে ভাবার সময় পাননি তিনি। তবু চাঁদের মৃদু আলোয় নিজের অস্পষ্ট ছায়াকে ভূতের মতো মনে হল। সত্যি সত্যিই কি আজ তার উপর ভূত ভর করেছে?

দূরে রাজবাড়ির কড়াই গাছের ঝোপ থেকে প‌্যাচা ডাকছে। একটু গা ছমছম করছে কি চিত্তগুপ্ত বাবু'র? এমনিতে রাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য ভগবান কৈলাসের কাছে আসলে চিত্তগুপ্ত বাবু একাই আসেন। সঙ্গে কাউকে রাখেন না। রাতে একা একা পায়চারি করার অভ্যাস তার। গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাথায় আসলে তা শেয়ার করতে ভগবান কৈলাসের কাছে চলে আসেন পায়ে হেঁটেই। এটা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার ঘটেছে। আর তখন ঘটনার একটা যুক্তিসঙ্গত সমাধান নিয়েই চিত্তগুপ্ত বাবু পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরতেন। কিন্তু আজ তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ছিল না। আগামী কালীপূজায় রমনা কালীমন্দিরে তাকে একটি লেকচার দিতে হবে। ওই সময় আবার তার দিল্লীতে একটা সফর হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুই ঘটনার কিভাবে সমন্বয় করা যায়, সেই সমাধান খোঁজার জন্যই আজ ভগবান কৈলাসের কাছে এসেছিলেন চিত্তগুপ্ত বাবু। কিন্তু সেই ঘটনা খুলে বলার আগেই কোথা থেকে কি হয়ে গেল। তাই বলে একেবারে দপ্তরবিহীন? নিজের আত্মসম্মানবোধ বলে একটা বিষয় আছে না?

ভাবতে ভাবতে চিত্তগুপ্ত বাবু'র খেই হারিয়ে ফেলার দশা। কুটনৈতিক পারদর্শীতার কারণেই ভগবান কৈলাস তাকে বরাবরই বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেন। সেই মন্ত্রকের প্রতি কার কার লোভ আছে বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তামগ্ন হলেন চিত্তগুপ্ত বাবু।

গত বছর প‌্যারিস সফরের সময় ইতালী'র প্রধানমন্ত্রী বারলোসকোনি একটা কথা বলেছিলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে যেমন কিছু নেই, তেমনি রাজনীতি হল দুষ্টের দুয়োকাজে জয়ধ্বনি আর ভালো লোকের ভালো কাজের খুদ বের করে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে সফল হওয়ার আরেক নাম। এই কাজটি যে যতো সফলভাবে করতে পারবে, রাজনীতিতে সে ততোদিন টিকে থাকবে। যে পারবে না, তার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া উচিত। একেবারে খাঁটি কথা। তাইতো, বারলোসকোনি জীবনে অনেক কঠিন সংকট পাড়ি দিয়েও ইতালী'র প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বারবার। বারলোসকোনি'র কথা মনে পড়ায় চিত্তগুপ্ত বাবু হাড়ে যেনোবা একটু বাতাস পেলেন। ভগবান কৈলাসের কথা যদি সত্য হয়, রাত পোহালে দুনিয়ার সবাই জানবে আমি দপ্তরবিহীন। কিন্তু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তো সারারাত সচল। তারা অনেক টকশো করেন। তাদের সাবজেক্টে কোনো নতুনত্ব নেই। এখনই তাদের কোনো চ্যানেলে গিয়ে যদি আমি বিদেশ মন্ত্রক থেকে পদত্যাগের বোমাটি ফাটাই, তাহলে কেমুন হয়? বারবার নিজেকে এই প্রশ্নটি করতে করতে চিত্তগুপ্ত বাবু হাঁটতে হাঁটতে অ্যাকশন টিভি'র সামনে গিয়ে হাজির হলেন।

অ্যাকশন টিভি'র গেইটের দারোয়ান লালচাঁন একটা হাবার হদ্দ। দেশের বিদেশ সচিবকে সে কিনা জিজ্ঞেস করছে, নাম কি, কার কাছে যাবেন, এতো রাতে পাস ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়ার নিয়ম নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। অ্যাকশন টিভি'র রেজিস্টার খাতায় চিত্তগুপ্ত বাবু নিজের নাম লিখলেন। পরিচয়ের জায়গায় লিখলেন, সাবেক বিদেশ বিষয়ক সচিব। কোথায় কার কাছে যাবেন এর জবাবে লিখলেন, চলতি টকশো'র অনুষ্ঠানে।

লালচাঁদ চিত্তগুপ্ত বাবু'র লেখাগুলো কয়েকবার পড়লেন। ভালো করে চিত্তগুপ্ত বাবুকে কয়েকবার পরখ করলেন। সাবেক বিদেশ বিষয়ক সচিব, মানে বড় কোনো আমলা? বেসভুষা দেখলে তো আমলা বলে মনে হয় না। আবার পায়ে চটি স্যান্ডেল। লোকটির মতলব তো মনে হয় ভালো না। চিত্তগুপ্ত বাবু'র দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টি রেখেই টেলিফোনের রিসিভার হাতে নিল লালচাঁন।

সাততলায় রিসিপশানে ডায়াল করলো। কেউ ফোন ধরছে না। টুকটুকি কি ঘুমিয়ে পড়লো? নাকি কোনো স্যারের লগে ফিটিস মারতাছে? রিসিভার রেখে লালচাঁন বললেন, এতো রাতে টকশো'র কোনো অতিথি পায়ে হেঁটে আসেন না। আপনার উদ্দেশ্য কি খুলে কন?

চিত্তগুপ্ত বাবু'র ইচ্ছে করছে লালচাঁনকে কষে একটা থাপ্পর দিতে। কিন্তু দরকারটা নিজের বলে চিত্তগুপ্ত বাবু নিজেকে খুব কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করলেন। লালচাঁন বললো, আমনে এইহানে খাঁড়ান। আমি উপর দিয়া আহি। খবরদার আপনি ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করবেন না। তাইলে কিন্তু আমি পুলিশ ডাকুম?

চিত্তগুপ্ত বাবু গেইটের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। লালচাঁন লিফটে চাপ দিয়ে আবার গেইটের কাছে এসেছে রেজিস্টার খাতা নিতে। কারণ লোকটার সব পরিচয় সে এতোক্ষণে গুলিয়ে ফেলেছে। সাততলায় লিফটে পৌঁছে লালচাঁন দেখলো রিসিপশানে কেউ নেই। একটু উঁকি দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই কেরামত বক্সকে সামনে পেলেন। তাকেই রেজিস্টার খাতা দেখিয়ে লালচাঁন বললেন, এই লোকটি নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সে উপরে আসতে চাইছে?

কেরামত বক্স লালচাঁনের হাতে ধরা খাতার লেখাটি একটু ঝুঁকে পড়লেন। ঠোঁঠে রাখা সিগারেট ধরাতে গিয়ে লালচাঁনের হাতে ধরা খাতায় আগুন ধরালেন। লালচাঁন খাতা টেনে নিলেন আর স্যার স্যার করতে লাগলেন। ওই সময় পেছন থেকে রিসিপশানের টুকটুকি ভেতর থেকে ওদিকে আসছিল। কি হয়েছে লালচাঁন?

লালচাঁন খাতাটি এবার টুকটুকির হাতে দিয়ে বললেন, এই লোকটি উপরে আসতে চাইছে? টুকটুকি লেখাটা পড়লেন। চিত্তগুপ্ত বাবু। সাবেক বিদেশ বিষয়ক সচিব। এটুকু পড়েই টুকটুকি চিৎকার করে উঠলো- কেরামত ভাই, পররাষ্ট্র মন্ত্রী কি পদত্যাগ করেছেন? ঘটনা কি?

এবার কেরামত বক্স আবার টুকটুকি'র হাতে ধরা রেজিস্টার খাতায় চোখ বোলালেন। লালচাঁনকে ধমক দিলেন, যাও, এক্ষুণি ওনাকে উপরে নিয়ে আসো। আর টুকটুকি, উনি উপরে আসা মাত্র রজমান স্যারের রুমে পাঠিয়ে দিও। আমি রমজান স্যারের রুমে যাচ্ছি।

রমজান স্যার ফেইসবুকে একটি অচেনা মেয়ের সঙ্গে চুটিয়ে চ্যাট করছিলেন। দরজা খুলেই কেরামত বক্স চিৎকার করে উঠলেন, ঘটনা তো ঘইটা গ্যাছে, ওস্তাদ?

রমজান সাহেব ফেইসবুকের পাতা মিনিমাইজ করতে করতে দরজার দিকে না তাকিয়ে সিখারেটে প‌্যাকেট হাতে নিয়ে জানতে চাইলেন, কোন ঘটনা আবার?

কেরামত বক্স উল্লাসে ফেটে পড়ার মত করে বললেন, চিত্তগুপ্ত বাবু আমাদের চ্যানেলে আসছেন। এখনো নিচে আছেন। উনি পদত্যাগের ঘোষণা দিতেই আসছেন।

চিত্তগুপ্ত বাবু এতো রাইতে আমাদের চ্যানেলে? পদত্যাগ? কি কইতে চাও মিয়া? মস্করা করার আর জায়গা পাও না। শেষ পর্যন্ত চিত্তগুপ্ত বাবুরে নিয়াও তুমি চুটকি বানাইলা? তুমি পারো বটে কেরামত বক্স! তার আগে কও হেয় দেশে আছে কিনা? নাকি কেউ ওনার নামে প্রক্সি দিতে আইতাছে..হা হা হা...

রমজান সাহেবের রুমে হাসির লহড়া উপচে পড়ছে। সিগারেটের ধোয়ায় গোটা রুম আচ্ছন্ন। রমজান সাহেব আর কেরামত বক্স সাধারণত রাতের আড্ডায় দুনিয়ার অনেক ঘটনা নিয়েই মস্করা করেন। এখনো সেরকম মস্করা চলছিল। ঠিক তখনই টুকটুকি চিত্তগুপ্ত বাবুকে নিয়ে রমজান সাহেবের রুমে ঢুকলো।

চিত্তগুপ্ত বাবুকে দেখেই রমজান সাহেব আর কেরামত বক্সের এতোক্ষণের মস্তরা কর্পুরের মত ফিউজ হয়ে গেল। দু'জনেই দাঁড়িয়ে ছালাম দিলেন। চিত্তগুপ্ত বাবুকে বসতে বলে টুকটুকিকে বললেন, স্যারের জন্য কফি দাও।

চিত্তগুপ্ত বাবু খুব সংক্ষেপে রমজান সাহেব আর কেরামত বক্সকে বললেন, তিনি সরকারের মন্ত্রক থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে চান। এটি নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্ত তৈরি না হয়, সেজন্য আমি সরাসরি আপনাদের চ্যানেল থেকে দেশবাসীকে খবরটি জানাতে চাই।

অ্যাকশন টিভিতে তখন যে টকশো চলছিল, সেই অনুষ্ঠানের অ্যাঙ্কর হলেন হাসিখুশি ভট্টাচার্য। তার কানে একটা ফোনের চিপস লাগানো আছে। ফোনের চিপসের তারটি হাসিখুশি ভট্টাচার্য চুলের ভেতর দিয়ে এমন ভাবে লুকিয়ে রেখেছেন যে, টেলিভিশনের যারা দর্শক তারা সেটি দেখতে পায় না। রমজান সাহেব হাসিখুশি ভট্টাচার্যকে ফোন করলেন। আমাদের অফিসে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসেছেন। উনি এখন তোমার টকশোতে কয়েক মিনিটের জন্য অতিথি হিসেবে যাবেন। তুমি ঘোষণাটি দিয়ে দাও। বল, প্রিয় দর্শক, আপনাদের সামনে এখন আমরা এমুন একজন অতিথিকে আনবো, যা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। হ্যা, আমি আপনাদের চমক দেওয়ার জন্য, আজ আপনাদের এমুন অতিথি'র সঙ্গে কিছু সময়ের মধ্যেই পরিচয় করিয়ে দেব। কিন্তু তার আগে আমাকে একটা ছোট্ট বিরতিতে যেতে হবে। আপনারা কোত্থাও যাবেন না।

অ্যাকশন টিভি'তে বিজ্ঞাপন বিরতি চলছে। ওদিকে নিউজ সেকশান রমজান সাহেবের ফোন পেয়ে নিউজ আপডেট দিয়ে দিয়েছে। অ্যাকশন টিভি'র নিউজ স্ক্রলে বিশেষ বুলেটিন হিসেবে যাচ্ছে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিত্তগুপ্ত বাবু পদত্যাগ করেছেন। আপডেট নিউজ দেখতে চোখ রাখুন অ্যাকশন টিভি'র পর্দায়।

মুহুর্তে দেশের সকল টিভি চ্যানেলের নিউজ স্ক্রলে এই মুহূর্তের খবর আপডেট হিসেবে যাওয়া শুরু করলো- পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিত্তগুপ্ত বাবু পদত্যাগ করেছেন।

মাঝরাতে এমন খবরে মিডিয়ার সবাই একটু নেড়েচেড়ে বসেছেন। এফএম রেডিওগুলো প্রচার করতে শুরু করেছে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিত্তগুপ্ত বাবু একটু আগে পদত্যাগ করেছেন। গোটা রাষ্ট্রে এই খবর মুহুর্তে ছড়িয়ে গেল।

কয়েক মিনিট আগে অন্য একটা টিভি চ্যানেলের টকশো থেকে বাসায় ফিরেছেন ইনটেরিয়র ডেকোরেশন মন্ত্রী মিস্টার কুসতবগির কাইজার আল মাঈন। বাসায় ঢোকামাত্র তার স্ত্রী মিসেস চুনারি টিউলিপ চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, চিত্তগুপ্ত বাবু পদত্যাগ করেছেন, তুমি কিছু জানো? একটু খোঁজ না, প্লিজ। নইলে আমি ফোন করি। স্ত্রী'র কথায় টিভিরুমে বসতে বসতেই টিভি'র স্ক্রলের বিশেষ বুলেটিন দেখেই ইনটেরিয়র ডেকোরেশন মন্ত্রী মিস্টার কুসতবগির কাইজার আল মাঈন সাহেব চিত্তগুপ্ত বাবু'র মোবাইলে ফোন করলেন।

চিত্তগুপ্ত বাবু তখন অ্যাকশন টিভি'র রমজান সাহেবের রুম থেকে টকশো'র অনুষ্ঠান রেকর্ডিং রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। হ্যা, কাইজার ভাই, এতো রাতে, তো কি খবর বলেন? জবাবে ইনটেরিয়র ডেকোরেশন মন্ত্রী মিস্টার কুসতবগির কাইজার আল মাঈন সাহেব বলতে লাগলেন, খবর তো এখন আপনি। আপনি হুট করেই পদত্যাগ করলেন, আমাদের একটু জানালেনও না। আরে অন্যদের কথা না হয় বাদ দিলাম। আমি তো আপনার খুব কাছের মানুষ। আমাকে তো একবার বলতে পারতেন। এরকম একটা ব্যাপারটা, একটু শেয়ার করতে পারতেন?

চিত্তগুপ্ত বাবু আবার রমজান সাহেবের রুমের দিকে পেছনে হাঁটা দিলেন। আপনার কথা কিছু বুঝলাম না কাইজার ভাই? আমি পদত্যাগ করেছি? কখন? আমার পদত্যাগের ঘোষণা কে দিল?

জবাবে, ইনটেরিয়র ডেকোরেশন মন্ত্রী মিস্টার কুসতবগির কাইজার আল মাঈন সাহেব বললেন, সব টেলিভিশনের এখনকার সর্বশেষ নিউজ বুলেটিন, আপনি পদত্যাগ করেছেন। আপনি এখন কোথায়? আমি আপনার কাছে আসতে চাই?

চিত্তগুপ্ত বাবু রমজান সাহেবকে ডান হাতে ইসারা করলেন, পানি খাবেন। আর ইনটেরিয়র ডেকোরেশন মন্ত্রী মিস্টার কুসতবগির কাইজার আল মাঈন সাহেবকে বললেন, হ্যা, আসুন আমার বাসায়। আমি একটু বাইরে আছি। আপনি আসতে আসতে আমি বাসায় পৌঁছে যাবো।

ফোন ছেড়ে দিয়ে পানি খেলেন চিত্তগুপ্ত বাবু। মিডিয়া যে এতো চুটিয়া এটা আগে শুধু শুনতাম, পাত্তা দিতাম না। এখন দেখছি, মিডিয়া আসলেই বড় ধরনের চুটিয়া। আরে আমি পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা তো এখনো দেই নেই। তার আগেই এটা প্রচার করতে হবে? না না না, এই অনুষ্ঠানে আর আমার কথা বলা উচিত হবে না। এমন কি আমার কথা কি যাবে, তা আমার থেকে পারমিশান না নিয়েই প্রচার করা শুরু করে দিল? কোথায় যাচ্ছি আমরা দিন দিন? চিত্তগুপ্ত বাবু রমজান সাহেবকে বললেন, না, আমি কোনো ঘোষণা দিতে চাই না। আমি চলে যাচ্ছি। কাজটি আপনি ভালো করেন নি। এটা আমার মনে থাকবে।

হন হন করে রমজান সাহেবের রুম থেকে বের হয়ে গেলেন চিত্তগুপ্ত বাবু। মেজাজ তার চরম খারাপ। মনে মনে মিডিয়ার চৌদ্দগুষ্ঠির উদ্দেশ্যে কঠিন ভাষায় গালাগালি করছেন চিত্তগুপ্ত বাবু। যা তার পেছনে পেছনে আসা রমজান সাহেব, কেরামত বক্স, টুকটুকি এরা কেউ বুঝতে পারছে না। চিত্তগুপ্ত বাবু'র চোখ দিয়ে তখন আগুন ঝড়ছিল। লিফট আসায় সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে চিত্তগুপ্ত বাবু চিৎকার করলেন পেছনে আগন্তুকদের উদ্দেশ্য- নো, কেউ আসবেন না আমার পেছনে...





মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ বেশ! বেশতো! বেশ না!!!!! =p~ =p~ =p~


চলমান রাজ দিনলিপি রঙ্গ ভাল লেগেছে।

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: চমৎকার গল্প... ভালো লাগল :)

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭

মহিদুল বেস্ট বলেছেন: ভাল লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.