নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওরে আমার থিংক ট্যাংক!!!

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সংক্ষেপে যা সিপিডি। এটি আসলে বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি চতুর টাইপের এনজিও। কিন্তু তারা নিজেদেরকে দেশের সিভিল সোসাইটির থিংক ট্যাংক মনে করেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে তারা সরকারকে কিছু পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কিছু ভুল ধরার চেষ্টা করেন। দেশ বিদেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ে নানা সময়ে গুরুগম্ভীর আলোচনাও করেন। বর্তমান সরকারের পঞ্চম অর্থ বছরের বাজেটের তিনমাস পরের ও নির্বাচনের তিনমাস আগে দেশের বর্তমান অর্থনীতি নিয়ে গতকাল সিপিডি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি'র সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সিপিডি ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনে যা যা বলতে চাইলেন, তার সংক্ষিপ্ত চিত্রটা এরকম। দেশের নির্বাচনী বছরে প্রবৃদ্ধি কমে যায়। যেমন ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ হলেও ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে তা ছিল ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। কারণ, ১৯৯৬ সাল ছিল নির্বাচনী বছর। আর সেই বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম ছিল ০.৩০ শতাংশ। একইভাবে ২০০০-০১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ২০ শতাংশ, যা ২০০১-০২ অর্থবছরে হয়েছিল ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। কারণ, ২০০১ ছিল নির্বাচনী বছর। সে বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম ছিল ০.৮০ শতাংশ। আর ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশে। কারণ, ২০০৮ ছিল নির্বাচনী বছর। সে বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম ছিল ০.৩০ শতাংশ।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৪ সাল যেহেতু নির্বাচনী বছর। তাই ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, নির্বাচনী বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না এবং তা ৬ শতাংশেরও কম হবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, মূলত গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে অর্থনীতির গতি এতটাই মন্থর হয়ে পড়েছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে যেসব পূর্বানুমানের ওপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট এবং ৭ দশমিক ২০ শতাংশ হারে যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেসব পূর্বানুমান এখন অবান্তর হয়ে পড়ছে।

ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, নির্বাচনের বছরে আগের চেয়ে বেশি হারে কর আদায় হবে বলে মনে হয় না। বিগত তিনটি নির্বাচনী বছরের সঙ্গে আগের বছরের কর আদায় কিছুটা কম হওয়ার তুলনা দেখিয়েছেন তিনি। তিনি দাবী করেছেন, চলতি অর্থবছর আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, গত বছরের সংশোধিত বাজেটের ভিত্তিতে তা দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ, যা অভূতপূর্ব। কিন্তু প্রথম দুই মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। এছাড়া নির্বাচনের বছরে রাজস্ব ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আগের বছরের তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরেন তিনি। ডক্টর দেবপ্রিয় বলেন, গত অর্থবছরও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ঘাটতি অনেকটা মিটিয়েছিল সরকারি বিনিয়োগ। কিন্তু এবার আর তা হবে না।

তিনি দাবী করেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটি যৌথ স্বার্থ আছে। আর আছে কিছু অভিন্ন স্বার্থ। কাজেই এই জায়গায় সমঝোতা করার সুযোগ আছে। এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন না হয় যাতে মানুষের জীবন-জীবিকা বিঘ্নিত হয়, সম্পত্তি বিনষ্ট হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সেজন্য অর্থনীতির জন্য একটি রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে, যা হতে হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে।

সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। কিন্তু আসলে কতোটা যন্ত্রপাতি দেশে আসছে আর কতোটা ওভার ইনভেয়সিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বিশেষত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করে ব্যবহার বিষয়টি উৎপাদনে এখনো সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। প্রায় সব মূলধনী যন্ত্রপাতি'র আমদানির শুল্কহার শূন্য। কাজেই শুল্ক আদায়ের তথ্য-উপাত্ত থেকেও প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না। প্রতিবছর গড়ে ১৫০ কোটি ডলার দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি'র এই তথ্য উদ্বৃত্ত করে প্রফেসর মোস্তাফিজ বলেন, বিগত সময়ে নির্বাচনের বছরকে সামনে রেখে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডক্টর দেবপ্রিয় দাবী করেছেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর আগেও রাজনীতিকরা ঐকমত্য দেখিয়েছেন। বাটেক্সপোতে সরকারি ও বিরোধীদল উভয় পক্ষের নেতারাই আসেন। এটাকে আরো সম্প্রসারণ করা উচিত।

এবার আসা যাক, দেশের দুইজন অর্থনীতি'র পণ্ডিত আমাদের কি কি খবর দিলেন সেই আলোচনায়। সারা বছর একটি দেশের প্রধান বিরোধীদল সংসদে যায় না। সদস্যপদ রক্ষার জন্য মাঝে মাঝে যায়। বাকি সময় নানান ঢঙের কথাবার্তা বলে হরতাল, ধর্মঘট, সভা-মিছিল-বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা সহ নানা ধরনের অপরাধ করে বেড়ায়। সিভিল সোসাইটি'র থিংক ট্যাংকের নজরে সেই অপরাধে সংঘটিত দেশের অর্থনীতিতে কতোটা ক্ষতি হয়, কিংম্বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি'র কত রকম বারোটা বাজে, সেই হিসেব নেই। কিন্তু তারা দেশের মস্তবড় থিংক ট্যাংক। বাংলাদেশের মত একটি গরিব দেশের রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের মহড়ার হিড়িকের মধ্যে নির্বাচনী বছরে সুযোগসন্ধানী দুবৃত্তরা যে বিদেশে অর্থ পাচার করে, বউ ছেলেমেয়ে পাচার করে, নিরাপদ থাকার একটা সেইফ গার্ড গড়ে তোলে, সেটা বোঝার জন্য মস্তবড় অর্থনীতিবিদ হওয়া লাগে না। শহরের মোড়ের একজন ফলবিক্রেতাও সেই খবর জানে।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যে ১৫০ কোটি ডলার পাচারের সংবাদ সম্মেলন করে জানানোর মহড়া, সেটি স্রেফ এক ধরনের মিডিয়াবাজী। আরে ১৫০ কোটি ডলার পাচার করা তো মাত্র কয়েকজনের জন্য মামুলি ব্যাপার। কত হাজার কোটি ডলার পাচার হচ্ছে, সিপিডি'র মত মস্তবড় থিংক ট্যাংকের কাছে সেই খবরটি নেই। মানি লন্ডারিং করে কত হাজার কোটি ডলার পাচার করা হচ্ছে সেই খবরও তাদের কাছে নেই। তাদের কাছে খবর হল, মেশিনারিজ কতোটা উৎপাদনে ব্যবহৃত হল কিনা সেই চিন্তায় প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমানের ঘুম হারাম। আহারে আমাদের অর্থনীতিবিদগণ!!

বছরে একবার সরকারী আর বিরোধীদলের দুই প্রধান বাটেক্সপো সম্মেলনে হাজিরা দিলেই দেশের অর্থনীতিতে রাজনীতিবিদের ঐক্য বোঝা যায়? কতো বড় গাড়ল হলে এমন অর্থনীতি বুঝতে পারেন ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মহাশয়। আর সারা বছরে প্রধান দুই দলের পারস্পরিক সংঘর্ষ, কলহ, হামলা, মামলা, খুন, গুম ইত্যাদিতে দেশের অর্থনীতি'র কোথায় তারা ঐক্য দেখান? সেই সব বিদ্যমান সাংঘর্ষিক ব্যবস্থায় দেশের অর্থনীতি'র তারা যে ক্ষতি করেন, তার হিসেব কি ভট্টাচার্য মহাশয়ের মাথায় আসে না?

সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, সুধী সমাজ ইত্যাদি'র নাম করে আপনারা দেশের যে পরিমাণ কর ফাঁকি দেন, সেই করফাঁকি জনিত কারণে অর্থনীতি'র কতোটা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলো, সেই হিসেব আপনাদের কাছে নেই কেন?

বিদেশে বিভিন্ন সভা সেমিনার সেম্পুজিয়াম গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবার নাম করে আপনারা বিদেশে যে অর্থ পাচার করেন, সেই অর্থের পাচার জনিত কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি'র কতোটা ক্ষতি হল, সেই হিসেব আপনাদের থিংক ট্যাংক কখনো দেখায় না কেন?

নির্বাচনী বছরে সংঘাত, সহিংসতা থাকলেও ভোটের হিসেবের সঙ্গে নানা কারণে টাকা ওড়ে, যা অর্থনীতিকে অনেকটা ঈশ্বরের হাতের মত সচল রাখে। এটা বোঝার জন্য অর্থনীতিতে বড় বড় ডিগ্রি নেবার দরকার হয় না। একজন রিক্সাচালকও জানে, ভোটের আগের কয়দিন রিক্সায় খ্যাপ মারলে ইনকাম কত? আর নির্বাচনী প্রচারে গেলে ইনকাম কত? আর আপনারা জানেন না? হায়রে থিংক ট্যাংক!!!

আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেজন্য আপনারা সংঘাতমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন। আহারে আমার দেশপ্রেম? দেশের মানুষ যারা তিন বেলা ভাত পায় না, সুচিকিৎসা পায় না, বসবাসের জন্য ঘরের ছাউনি নেই, ডাক্তার দেখানোর টাকা নেই, পোষাক কেনার অর্থ নেই, চাল-চুলো কিচ্ছু নেই, নদী ভাঙনে অনেকে নগরের বস্তিবাসী, তাদের আপনারা ভাবমূর্তি দেখাচ্ছেন? আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি খায়, নাকি মাথায় লয় মিস্টার ভট্টাচার্য?

সুশীল সমাজের নামে, নাগরিক সমাজের নামে, সুধী সমাজের নামে এক শ্রেণী'র এনজিও নানা ব্যানারে বাংলাদেশে এতো বেশি বেড়েছে যে, এরা কথায় কথায় জাতিকে বিনা পয়সায় নানা ধরনের পরামর্শ বণ্টন করেন। যা দিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের পেট ভরে না। অসহায় রোগীদের চিকিৎসা হয় না। বস্তিবাসীদের নির্মল অক্সিজেন নেবার সুযোগ হয় না। এসব বুলি দেওয়ার পেছনে আরেকটি রহস্যময় ভাগ বাটোয়ারার রাজনীতি আছে। সেই ভাগাভাগি কিছু দিন বন্ধ থাকলেই এই সব সুশীল, নাগরিক, সুধী মিডিয়ার সামনে কিছু কথার ঝুড়ি নিয়ে হাজির হন। এদের পেছনের চকচকা শার্টের খবর, এদের শহরের বাড়ির বিশাল উঠোনের খবর, এদের গাড়ির মডেলের খবর, এদের চিকিৎসা'র খবর কেবল দেশবাসী জানতে পারে না। এদের আড়ালের অনেক অনেক খবরও আমরা জানি না।

আমরা কেবল এদের মিডিয়াবাজীতে কিছু কথার ঝুড়ি শুনি। যা দিয়ে আমাদের সত্যি সত্যিই পেট ভরে না। সিভিল সোসাইটি'র থিংক ট্যাংকের নামে এরা দেশের কি কি সম্পদ কিভাবে দখল করে আছে, সেই হিসেব নেবার সময় এসেছে। সো, সাধু সাবধান। থিংক ট্যাংক... নাকি গুজব ট্যাংক!!!



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১৪

আলাপচারী বলেছেন: সত্যি।
এরা কিছু ফিক্সড্ টার্ম ব্যবহার করা, ভাব নেওয়া গাড়ল।
রাশিয়ান চুটকির মতোঃ অর্থহীন কিন্তু সঠিক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.