নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩৩ বছর ধরে মান্না দে আমার সঙ্গী...

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮

১৯৮০ সালের নভেম্বর মাস। আমার বড় ভাই সিলেটের তমাবিল সীমান্ত ফাড়ি থেকে দুই মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলেন। উদ্দেশ্য এই চাঞ্চে মেয়ে দেখে পছন্দ হলে বিয়ে করবেন। বড় ভাইকে আমরা ডাকি দাদা। তো দাদা বাড়িতে আসার পথে ঢাকায় তিন দিন থাকলেন। অনেক কিছু কেনাকাটা করলেন। একটা লেদারের ভেতরে কি কি সব জিনিসপত্র কিনছেন, ওটা খুলছেন না। তালা মেরে রেখেছেন। এর মধ্যে মেয়ে দেখা শুরু হয়ে গেছে। তিন চার গ্রুপ রোজ নানান জাতের নানান সুন্দরী মেয়ের খবর দিচ্ছেন। কোনো কোনোটার মেয়ের পরিবারের খবরাখবর শুনেই আমার বাবা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। দাদা বিয়ে করবেন এই খবর আমার ছোট ফুফু'র বাড়িতে কিভাবে যেনো পৌঁছে গেল।

পরদিন ছোট ফুফু, ফুফা (আমরা ডাকি জামাই) আর তাদের বড় ছেলে কবীর ভাই আমাদের বাড়িতে আসলেন। কবীর ভাই আমার চেয়ে দুই ক্লাশ উপরে পড়েন। কিন্তু আমার সঙ্গে ভারী বন্ধু'র মতো সম্পর্ক। আমি, আমার ছোট ভাই জাকির আর বাবা আমাদের বাগানে নারকেল গাছ লাগাচ্ছিলাম। ছোট ফুফু আর জামাই বাড়ির ভেতরে গেলেন। কবীর ভাই আমাদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিলেন। এক পর্যায়ে কবীর ভাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, মামা, দাদা নাকি বিয়ে করবে? জবাবে বাবা বললেন, বিয়া করবে, মেয়ে কই? মেয়ে তো মিলতেছে না?

কবীর ভাই বললেন, দাদা'র জন্য মেয়ে কিন্তু আমি একটা দেইখা রাখছি। আমার স্কুলে পড়ে। রোজ আমি সেই মেয়ের পিছু পিছু স্কুল থেকে আসার পথে হাঁটি। টুকটাক কথা বলি। শাঁখারীকাঠী মল্লিক বাড়ির মেয়ে। মেয়ের বাবার নাম বললে আপনি চিনবেন। বাবা জানতে চায়, মেয়ের বাবা'র নাম কি? কবীর ভাই জবাব দেন- কাসেম মল্লিক। বাবা আবার জানতে চান- মেয়ে পড়ে কিসে? কবীর ভাই জবাব দেন- এবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবে। বাবা আবার জানতে চান- এতো ছোট মেয়ে তারা এখন বিয়ে দেবে? কবীর ভাই জবাব দেন, আপনি কাউরে পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়ে দেখেন। কিন্তু মামা আমি গেলে কিন্তু বিয়ে হবে না। মেয়ে আমার উপর খুব ক্ষ্যাপা। বাবা জানতে চান- ক্ষ্যাপছে ক্যান? কবীর ভাই জবাব দেন- আমি রোজ তার পিছু নেই, সেজন্য আমারে একদিন খুব বকাঝকা করছে। আপনি মামা আব্বারে পাঠাতে পারেন।

পরে ছোট জামাইয়ের নের্তৃত্বে আমার মেঝো ভাই এমদাদ আর বিলু দাদা তিন দিন পর মল্লিক বাড়ি গেলেন মেয়ে দেখতে। এমদাদ ভাই আর বিলু দাদা'র মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তারা মেয়েকে উপহারও দিয়ে এসেছে। কিন্তু মেয়ের বাবা একটা শর্ত দিয়েছেন- মেয়ের পরীক্ষার আগে কোনো বিয়ে হবে না। আর তারাও আমাদের বাড়িতে একটা গ্রুপ পাঠাবেন ছেলে দেখতে। তো, মেয়ের একমাত্র বড় ভাই আর এক মামা ছেলে দেখতে আসলেন তিন দিন পর। দাদাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। মেয়ের ভাই মাকে মাঐ সাহেবা আর বাবাকে তালঐ সাহেব সম্মোধন করলেন। মেয়ের মামাকে আমি ভুলে ইলিয়াস মামা বলে ডাকলাম। ইলিয়াস মামা সিখারেট খান। আমাকে নিয়ে আমাদের বাগানে গিয়ে তিনি সিগারেট খেলেন। সেই সুযোগে ইলিয়াস মামা আমার একটা নাতিদীর্ঘ ইন্টারভিউ করলেন। সেই প্রথম কেউ আমার ইন্টারভিউ করছিল। কিন্তু সেই ইন্টারভিউতে আমার সম্পর্কে প্রশ্নমাত্র একটি। তুমি কোন ক্লাসে পড়? অন্যসব প্রশ্ন আমাদের পরিবারের নানা কুসন্দি সম্পর্কে। আমার মেজাজ ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছিল। আমি তখন পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনার চুল খুব সুন্দর। বড় হলে আমি আপনার মত লম্বা চুল রাখব। মেয়ের ভাই কাইউম দাদা'র চুলও লম্বা। ইলিয়াস মামা আর কাইউম দাদা সমবয়সি। কিছুক্ষণ পরে কাইউম দাদাও সিগারেট খেতে বাগানে আসলেন।

ইলিয়াস মামা'র সঙ্গে আমার খাতির দেখে জানতে চাইলেন, তুমি কোন ক্লাসে পড়? জবাব একটু ঘুরিয়ে দিলাম। কইলাম, আমি এবার স্কলারশিপ দেব। কাইউম দাদা বললেন, বুঝছি, তুমি ফাইভে পড়।

তারপর আমার স্কলারশিপ পরীক্ষার ঠিক তিন আগেই ঘটা করেই দাদা'র বিয়ে হল। বিয়ের আগের দিন সেই তালা মারা লেদার খোলা হল। তার ভেতরে একটা ন্যাশনাল ক্যাসেট প্লেয়ার। আর ৬টি ক্যাসেট। একটা মান্না দে, একটা লতা মুঙ্গেশকার, একটা হৈমন্তী শুক্লা, একটা মোহাম্মদ রফি, একটা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর একটা সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। সবগুলো ক্যাসেটের গান বাজলো। ব্যাটারি দিয়ে সেই গান শুনতে হয়। আমার ভালো লেগে গেল মান্না দে'র গান। আমার স্কলারশিপ পরীক্ষা শেষ করে যখন গান শোনার মত অবসর পেলাম, শুনলাম ব্যাটারি নাই। তখনই বাজারে গেলাম বড় আপার হাসের ডিম নিয়ে। চারটা নতুন ব্যাটারি কিনলাম। বাড়িতে এসেই ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করলাম। অবশ্যই মান্না দে'র গান দিয়ে। আমার ছোট ভাই জাকির চাঞ্চ পেলেই ক্যাসেট চেইঞ্জ করে। কোনোটাই ও ভালো মত শোনে না। পরে আমি ব্যাটারি খুলে নিয়ে নিলাম। জাকির বাবা'র টর্চ লাইটের ব্যাটারি নিল তিনটা আর পুরান ব্যাটারি নিল একটা। তাই দিয়ে আবার গান বাজাতে লাগলো।

সেই শুরু আমার মান্না দে'র গান শোনা। সেই দশ বছর বয়স থেকেই আমি মান্না দে শুনি। প্রিয় মান্না দে'র অসংখ্য কালেকশান ছিল আমার। নতুন ক্যাসেট আসলেই আমি কিনে ফেলতাম। সেই ১৯৮০ সাল থেকেই মান্না দে আমার সঙ্গী। সারা জীবন মান্না দে শুনতে আমার কখনোই খারাপ লাগবে না। আজ আমার প্রিয় গায়ক মান্না দে ৯৪ বছর বয়সে ব্যাঙ্গালোরের একটি হাসপাতালে ইহকাল ত্যাগ করলেন। মান্না দে'র আত্মার চির শান্তি কামনা করি। যতোদিন বাঁচব হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন মান্না দে। মান্না দে'র গান...সে এক অন্য জগতে নিয়ে যায় আমাকে...জয়তু মান্না দে...



মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:২৯

েবনিটগ বলেছেন: চমৎকার মর্মস্পর্শী লেখা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.