নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আবারো বাংলা একাডেমি সেই কথিত হে উৎসবের ভ্যেনু। বাংলা একাডেমি'র লজ্বা নেই! গত বছর দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক প্রথম আলো'র যৌথ প্রযোজনায় বাংলা একাডেমিতে বিতর্কিত হে উৎসব করেছিল। তখন বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক এটাকে আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব বলে গোটা জাতিকে ধোকা দেবার চেষ্টা করেছিলেন। এ বছর হে উৎসব তিন দিনের। বাংলা একাডেমি সারা বছর ঘুমিয়ে কাটায়। আর বছর শেষে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের মেয়েকে আর দৈনিক প্রথম আলো'র ভাড়াটে লেখক আনিসুল হককে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেবার জন্য কথিত হে উৎসবের নামে একটি বুর্জোয়া চুতিয়ার খপ্পরে আর কতো কাল ঘুম পাড়ানি গান শুনাবে? এ বছর আবার তালিকা আরেকটু দীর্ঘ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকের নামও যুক্ত হল।
আগেও বলেছি হে উৎসব কোনো আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন নয়। এটা একটি ব্যবসায়ী চক্রের সাহিত্য নিয়ে মাতলামী। সেখানে কিছু বিদেশি লেখককে আনা হয় এর রঙ ছড়ানোর জন্য। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মদদে ও ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো'র সহযোগিতায় এই কুকর্মটি'র সঙ্গে বাংলা একাডেমি কেন জড়ায় সেটি আমার বুঝে আসে না। গত বছর হে উৎসবের প্রতিবাদ করায় বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যারা হে উৎসবের প্রতিবাদ করছে, তারা সবাই জামাতের লোক। আমাদের সঙ্গে তখন বাংলা একাডেমি'র প্রাক্তন পরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা যোগ দিয়েছিলেন এবং হে উৎসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এবারো দেশের অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিককে নানা আলোচনায় নাম রাখা হয়েছে। হে উৎসবের নামে আসলে বাংলা একাডেমি দখলের একটা পায়তারা করছে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গংরা।
প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কিছু মূলধারার লেখকদের নানা ভাবে ফুসলিয়ে হে উৎসবে হাজির করছে। অনেকটা ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না এই প্রাচীন সূত্র প্রয়োগ করে। আর আমাদের মূলধারার সেই সব খ্যাতিমানরা মধু খাবার লোভে হে উৎসবে হৈ হৈ করে যোগ দেবেন! অথচ বাংলা একাডেমি'র উচিত ছিল গত বছর বিতর্কিত হে উৎসবের পরে নিজেকে সংশোধন করার। বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিয়ে নিজেই আয়োজক হয়ে বিদেশি লেখকদের আমন্ত্রণ করে একটি আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন আয়োজন করতে পারতো। তা না করে বাংলা একাডেমি'র সেই কীর্তিমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নের্তৃত্ব আবারো হে উৎসবের ভাড়াটে ভাগাড়ে পরিনত করছে বাংলা একাডেমিকে।
আমি হে উৎসবের তীব্র প্রতিবাদ করছি। হে উৎসবের ভ্যেনু ব্রিটিশ কাউন্সিলে হলে আমার কোনো আপত্তি থাকতো না। ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো'র নিজস্ব ভ্যেনুতে হলে বা অন্য কোনো ভ্যেনুতে হলেও আমার কোনো আপত্তি ছিল না। বাংলা একাডেমিতে কেন ভ্যেনু সেখানেই আমার আপত্তি? পাশাপাশি বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক কেন এর জবাব দেবেন না, সে বিষয়ে সচেতন লেখক সমাজের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি। বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কারো ভাড়া খাটার জন্য ভাষা শহীদরা প্রাণ দেয়নি। বাংলা একাডেমি'র কবে ঘুম ভাঙবে? লেখক সমাজের কবে ঘুম ভাঙবে? নাকি মধু খাবে? বিনা পয়সার মধু!! বাংলা একাডেমি'র বর্তমান মহাপরিচালক নীতিগত ভাবেই আর একাডেমি'র এই পদে থাকার যোগ্য নন। বিদেশি সংস্কৃতি'র হে উৎসব দিয়ে লেখক হওয়া যায় না। হয়তো দুই চারজন লেখক বানানোর প্রজেক্ট এতে চালানো যায়।
বাংলাদেশে আমরা যারা সত্যি সত্যি সাহিত্য চর্চা করি, তারা রাজনীতি একটু কম বুঝি। অথবা রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখি। অথবা রাজনীতিকে মন থেকে ঘৃণা করি। রাজনীতি করা রাজনীতিবিদদের কাজ। সাহিত্য চর্চা করা আমাদের মতো রাজনীতিবিমুখ মানুষদের কাজ। কিন্তু কিছু মানুষ সাহিত্য চর্চাও করেন। তলে তলে রাজনীতিও করেন। সাহিত্য চর্চায় তাদের অবদান কতোটুকু তা হয়তো তারা নিজেরাও অনুধাবন করতে পারেন। তাই তাদের সাহিত্য চর্চাকে প্রচারের নামে তারা এই রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। শুদ্ধ বাক্য লিখতে পারেন না অথচ এমন অনেক লেখক বাংলা একাডেমী পুরস্কারও পেয়েছেন। সেখানেও কাজ করেছে তাদের সাহিত্যের শক্তির চেয়ে রাজনীতির সফলতাটুকু।
প্রথম আলো গংদের উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার। কিন্তু আমাদের বুঝতে একটু সময় লাগে বেশি। এটা আসলে আমাদের খামখেয়ালী অসচেতনতার কারণে। আমাদের অনেক লেখক আছেন যারা প্রথম আলো'র কল্যানে আজ লেখক। আমাদের অনেক কলাম লেখক আছেন যারা প্রথম আলো'র কারণে কলাম লেখক। আমাদের অনেক কবি আছেন যারা প্রথম আলো'র কারণে আজ কবি। প্রথম আলো কী বাংলা সাহিত্যের অঘোষিত তুঘলক? প্রথম আলোতে আপনার লেখা ছাপা হল না মানে আপনি লেখক-ই না। আমাদের অনেক লেখককে এমন হিনমন্যতায় ভুগতে দেখেছি। সেই সব হিনমন্যতায় ভুগতে থাকা লেখকদের কিন্তু চট করেই দলে ভিড়ানো সম্ভব। প্রথম আলো গং সেই সুযোগটি খুব কৌশলের সঙ্গেই নিয়েছে।
আমার অনেক লেখক বন্ধু আছেন যারা হে ফেস্টিবলে নিজের কবিতা পড়বেন বা গল্প পড়বেন বা চেহারা দেখাবেন, এতেই মহা খুশি। কিন্তু তিনি জানেন না যে তার ওইটুকু উপস্থিতিই প্রথম আলো গংদের বদ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কতোটা মহিয়সী! কিন্তু অতোটা চিন্তা ভাবনা না করেই তিনি কিন্তু প্রথম আলো গংদের ঘি খেতে গেছেন। ঘি কতোটা নকল আর কতোটা আসল সেই বিচার বিশ্লষণ করেননি। ফ্রি ঘি পেয়েছেন লোলুপ জিহবা নিয়ে হাজির হয়েছেন। সেখানেও সমস্যা নেই। ফ্রি ঘি যে কেউ নিতে পারে। কিন্তু সেই ঘি'র সঙ্গে যদি আমাদের বাংলা ভাষার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মান সম্মানের অপমান হয় অথবা বাংলা ভাষার মূল ধারার লেখকদের নিয়ে মস্করা বা তিরস্কার করা হয়, তখন তা নিয়ে মন বিষিয়ে ওঠে।
বাংলা একাডেমী বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রচারের জন্যে এ পর্যন্ত কী কী করেছে? সেই উদ্যোগে তাদের তো তেমন কোনো বড় উৎসাহ দেখি না। বাংলা একাডেমী কেনো গত ৫৭ বছরে একটিও আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠান করতে পারলো না? কারণ, সরলভাবে বললে বলতে হয়, এতোদিন আমাদের রাজনৈতিক সরকারগুলো বাংলা একাডেমীতে একদল তোষামোদপ্রিয় লোকবল পুষেছেন। যারা নিজেদের যোগ্যতায় বা আগ্রহে বাংলা ভাষার সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেবার কাজে ব্যর্থ বা অযোগ্য। তাদের তোষামোদ যোগ্যতা ছাড়া সেই যোগ্যতা ছিল না। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কিছু কামাই করা ছাড়া তাদের আর কোনো যোগ্যতা কী আছে?
হে ফেস্টিবলের নাম করে প্রথম আলো গং বর্তমান বাংলা একাডেমী পর্ষদকে এটা বুঝিয়েছেন যে, হে ফেস্টিবল করলেই একটা আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠানের খ্যাতি জুটবে বাংলা একাডেমীর ললাটে। আর সেটা করতে গিয়ে যে নিজের এতো কষ্টে অর্জিত বাংলা ভাষা. বাংলা ভাষার ঐতিহ্য, ইতিহাস, আর অর্জনে একটা কালো দাগ লাগবে, তা কে জানতো? হে কারা? আমাদের নীলক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকানদারদের মতো ব্রিটিশদের ওয়ালসের একটি কর্পোরেট বইয়ের গোষ্ঠী। যারা চা খাবার নাম করে গান বাজনার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইংরেজি সাহিত্যের প্রচারে একটা ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে তাদের আগ্রহ কেন?
কারণ, আমাদের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তনয়া একজন ইংরেজি সাহিত্যের লেখিকা। যার দুইখানা উপন্যাস-ই পুরস্কার পেয়েছে বা পুরস্কার অর্জনের তালিকায় রয়েছে। এটা তো জাতির জন্য বড়োই গৌরবের খবর। সেই খবরকে বাংলাদেশের মূলধারার লেখকদের একটু চা নাস্তা ঘি দিয়ে পাতার আসনে বসিয়ে হে ফেস্টিবলের নামে শোনাতে চান। ব্যাপারখানা ব্রিটিশ কাউন্সিলে গত বছর শোনানো হয়েছিল বটে। কিন্তু তাদের সারাদেশে চালানো জরীপের ফলাফল বলছে বাংলাদেশের মূলধারার লেখকরা এখনো জানেন না বা মানেন না তাহমিমা আনাম একজন মস্তবড় লেখিকা। বাংলা একাডেমীতে বসে সেই গল্প শোনালে সবাই তা ধেই ধেই করে মানতে বাধ্য হবেন এবং সারাদেশে একটা হৈ হৈ কাণ্ড রটে যাবে।
নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার বাগধারাটি এতোদিন কেবল বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের পৃষ্ঠায় ছিল। প্রথম আলো গংরা এবার তা বাংলা একাডেমীর চত্বরে এনে প্রমাণ করলেন আসলে এটা কী! এবার বাংলা একাডেমী স্বয়ং নিজেই নিজের নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ করার দায়ে অভিযুক্ত। বাংলা একাডেমীর এমন অসচেতন কর্মকাণ্ডের দুর্বিসহ জ্বালা অনেক দিন সত্যিকার বাংলা ভাষার লেখকদের তাড়িয়ে বেড়াবে। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ধ্বংসের জন্য হে ফেস্টিবল সংশ্লিষ্ট প্রধম আলো গংদের একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।
হে ফেস্টিবল কী এবং কারা? কী উদ্দেশ্যে?
হে ফেস্টিবল সম্পর্কে আমার কোনো পূর্ব ধারণা ছিল না। কিছু বিদেশী ভাষার লেখকদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়েই দুই বছর আগে ২১ নভেম্বর ২০১১ তারিখে ব্রিটিশ কাউন্সিলে হে ফেস্টিবল-এর কারবার দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি মোটামুটি এলাহি কাণ্ড-কারবার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃটেন ও বাংলাদেশী লেখকদের চিন্তা-চেতনা বিনিময় সংক্রান্ত সেই অনুষ্ঠানে কোথাও অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ছিলেন না। সেখানে ছিল বরং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তনয়া তাহমিমা আনাম-এর দ্বিতীয় উপন্যাস `'দ্য গুড মুসলিম'-এর একটি বড় ধরনের মার্কেটিং ব্যবস্থাপনা।
হে ফেস্টিবল:
ইংল্যান্ডের ওয়ালসের ছোট্ট একটি শহরের নাম হে। হে শহরে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হলো ছোট ছোট বইয়ের দোকানগুলো। ১৯৬০ সালের দিকে রিচার্ড বুথ নামের স্থানীয় একজন বইয়ের দোকানদার একটি পুরাতন বিখ্যাত সিনেমাকে বই আকারে কনভার্ট করে বিক্রির জন্যে তাঁর দোকানে রাখলেন। তখন ওই সিনেমার বইটি কেনার জন্যে খুব ভিড় লেগে যায়। রিচার্ড বুথ তখন অন্যান্য বই দোকানদারদের সেকেন্ড হ্যান্ড বই বিক্রির বিষয়ে উৎসাহ দিতে থাকলেন। এভাবে হে শহরে রিচার্ড বুথের নের্তৃত্বে ১৯৭০ সাল নাগাদ `হে-অন-উই'-এর উপর ভিত্তি করে একটি বইয়ের শহর বা বুক টাউন গড়ে ওঠে। সেই থেকে বুক টাউনের বিকাশ শুরু। অনেকটা আমাদের নীলক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকানের মতো।
১৯৮৮ সালে বই প্রেমিকদের জন্য পিটার ফ্লোরেন্স হে শহরে একটি উৎসবের আয়োজন করেন। সেই উৎসবের নাম ছিল হে ফেস্টিবল। ওই উৎসবে লেখকরা প্রকাশকদের সঙ্গে চুক্তি করতেন। আর নিজেদের লেখা ভক্ত দর্শকদের পড়ে শোনাতেন। ধীরে ধীরে ওই উৎসবে যোগ হল গান বাজনা আর ফিল্ম প্রদর্শনী। তারপর এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হল। হে ফেস্টিবলের মূল ধারণা হল লেখক-লেখক চিন্তা বিনিময়, লেখক-প্রকাশক চুক্তি, লেখক-দর্শক ভাব বিনিময় আর একটু উৎসব। সেই থেকে বিশ্বের কয়েকটি শহরে হে ফেস্টিবল হচ্ছে। ইতোমধ্যে নাইরোবি, মালদ্বীপ, বৈরুত, কেরালা, বেলফাস্ট, কার্তাগেনায় হে ফেস্টিবল চালু হয়েছে। গত বছর থেকে চালু হল ঢাকায়।
সে বছর ঢাকার হে ফেস্টিবলের আয়োজক ছিল হে ফেস্টিবল ওয়ার্লড ওয়াইড আর ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল। স্পন্সর ছিল ডেইলি স্টার আর কাতার এয়ারওয়েজ। আর সার্বিক সহযোগীতায় ছিল যাত্রিক প্রডাকশন্স।
ওই ফেস্টিবলে ব্রিটিশ লেখক এন্ড্রু মিলারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এন্ড্রু মিলারের ফরাসী বিপ্লবের উপর লেখা উপন্যাস `পুড়ে (Pure)' নিয়ে আমার আগ্রহ সৃস্টি হয়েছিল। আর বইটি ওই ফেস্টিবলে তখন পাওয়াও যাচ্ছিল। ওই ফেস্টিবলে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল ব্রিটিশ ওরাল স্টোরি টেলার জেন ব্লেক-এর তাৎক্ষণিক গল্পবলার অসাধারণ ক্ষমতা কাছ থেকে দেখে। আফ্রিকার কোনো এক আদিবাসী গোষ্ঠীর গল্প শুনিয়েছিলেন ব্লেক।
ঢাকা হে ফেস্টিবল ২০১২:
গত বছর ঢাকায় হে ফেস্টিবল হয়েছিল ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর বাংলা একাডেমী আর ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে। ১৫ তারিখের ওপেনিং প্রোগ্রাম শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্যে সংরক্ষিত। আর ১৬ ও ১৭ তারিখের প্রোগ্রাম আমাদের মতো আম জনতার জন্যে উন্মুক্ত। ১৫ তারিখে যা যা ঘটেছিল, তাই আসলে এবারের হে ফেস্টিবলের আসল চরিত্র। ইংরেজি ভাষায় যারা এখানে লেখালেখি করেন তাদের আসলে লেখক হিসেবে স্বীকৃতি মিলবে ওই অনুষ্ঠানে। আর যারা বাংলায় লেখেন অথচ কুলিনবংশে নাম উচ্চারিত হয়, অথবা কুলিনবংশের সঙ্গে দোস্তামী রয়েছে, অথবা কুলিনবংশের সঙ্গে বিনিময় চালুর দারপ্রান্তে রয়েছেন, অথবা যাদের লেখা ভবিষ্যতে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হতে যাচ্ছে বা হবার পথে রয়েছে, অথবা যারা কুলিনবংশের সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন, তারাই ওই অনুষ্ঠানের জন্যে ইতোমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন।
১৬ আর ১৭ তারিখের প্রোগ্রাম আম-জনতার জন্যে উন্মুক্ত, তবে যারা কেবল অন-লাইনে রেজিঃস্ট্রেশান করেছেন অথবা ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো'র কর্মী। গত বছর হে ফেস্টিবলে দেশি-বিদেশি ৩৭ টি প্রতিষ্ঠান জড়িত। গত বছর ঢাকা হে ফেস্টিবলের থিম হল `কল্পনায় বিশ্ব' বা `imagine the world'। এখন আপনি বিনা পয়সায় কল্পনায় বিশ্ব দেখার সুযোগ কী হাতছাড়া করবেন? বাংলা একাডেমীতে ১৬ আর ১৭ তারিখ সময় করে একবার ঢু মারলেই তো কম্ম ফতে।
বাংলা একাডেমী জাতীর মননের প্রতীক:
১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এক অবিস্মরণীয় স্মারকের মর্যাদা হিসেবে ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার ও বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ হতে সমৃদ্ধতর কবার দায়িত্ব বাংলা একাডেমীর। ভাষা আন্দোলন থেকেই পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতিসত্তার সূচনা এবং এদেশের মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতার পথে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গৌরবময় প্রতীক এবং সাংস্কৃতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার অবিচ্ছেদ্য প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা একাডেমী। বাংলা একাডেমীর অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কথা নাইবা বাড়ালাম। চিত্তরঞ্জন সাহা'র শুরু করা বই মেলাটি কালের বির্বতনে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রূপ নিয়েছে। বাংলা একাডেমীর সারা বছরের এখন প্রধান কাজ হল একটি সফল অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজন করা। অমর একুশে গ্রন্থমেলাটি এখন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান নিদর্শনে পরিনত হয়েছে।
অমর একুশে বইমেলা মানে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মাসব্যাপী এক বিশাল মিলনমেলা। কয়েক বছর ধরে সেই বইমেলায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের নামে নানা কৌশল এবং কারসাজী আমরা প্রত্যক্ষ করছি। অমর একুশে বইমেলা যেহেতু বাংলাদেশের একটি প্রধান সাংস্কৃতিক মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। তাই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সেখান থেকে ব্যবসা বের করার কৌশলটি এতোদিন ছিল অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। এ বছর হে ফেস্টিবলের নামে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যখন বাংলা একাডেমী চত্বরে প্রবেশ করলো, তখন তাদের কৌশল ও কারবারী নিয়ে দুঃশ্চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে।
বাংলা একাডেমী কেন হে ফেস্টিবলের প্রধান ভেনু?
বাংলা একাডেমী'র অমর একুশে বইমেলায় সাধারণত বাংলা ভাষায় রচিত বই প্রকাশ করা হয়। অন্যান্য বিদেশী ভাষার বই যদিও এখন বইমেলায় যাওয়া যায়। কিন্তু বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি এতোদিন সেই মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে যথেষ্ঠ সচেতন ছিল। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় আর সেই সচেতনতা যেনো ধীরে ধীরে পলেস্তারের মতো ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়। হায় জাতীর মননের প্রতীক! একি তবে ঘোর অমাশয়!!
অমর একুশে বইমেলা ছাড়া বাংলা নববর্ষ, বৈশাখী মেলা, পৌষ-ফাগুনের মেলা এবং কিছু বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যকলাপে এতোদিন বাংলা একাডেমীকে ভেনু হতে দেখেছি। তাহলে কী হে ফেস্টিবল দিয়ে সেই বাঙালি সংস্কৃতির গোড়ায় এবার একটি কুঠার আঘাত করতে যাচ্ছ? আর সেই ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী এবার নিজেই সেই কুঠারে হাত লাগিয়েছে?
কী আছে ওই কুঠারের গায়ে?
বহুজাতিক কোম্পানির চরিত্র হল তীলে তীলে গড়ে তোলা কোনো ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি বা সম্পদকে কৌশলে নানা ধরনের মোড়কের আড়ালে নিজেদের কুক্ষিগত করা। প্রথমে এরা বাণিজ্য সুবিধা দেবার কথা বলে। পরে এরা বাণিজ্য সুবিধার পুরোটাই গ্রাস করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'র চরিত্র কী আমরা সবাই ভুলে গেছি? দুইশো বছরের বৃটিশ শাসন কী আমরা ভুলতে পারি? কাবুল, বাগদাদ, কায়রোর জাদুঘর লুটের খবর কী আমরা বেমালুম ভুলে গেছি? প্যারিসে আমাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর নামে জাদুঘর থেকে চুরি হওয়া ভাস্কর্যের ঘটনাটি কী আমরা ভুলে গেলাম? প্যারিসে বাংলাদেশ রাষ্টদূতের আকস্মিক হার্ট ফেল করে মারা যাবার ঘটনাও কী আমরা এতো সহজে ভুলে গেলাম???
হে ফেস্টিবলের আড়ালে কী?
১. বহুজাতিক কোমাম্পানি'র ব্যবসা
২. কুলিনবংশের নতুন প্রজন্মের হাইব্রিড লেখকদের লেখক হিসেবে স্বীকৃতি আদায়
৩. কুলিনবংশের নতুন প্রজন্মের জন্যে পুরস্কার আনার পায়তারা
৪. বাংলা একাডেমী'র ঐতিহ্যকে নষ্ট ও খাটো করা
৫. একপাল কুলিন অনুসারী লেখক গোষ্ঠী সৃষ্টি করা
৬. আর তথাকথিত হাইব্রিড লেখকদের জন্যে একটা পরিচিতি আনা
বাংলা একাডেমী কী পাবে?
বাংলা একাডেমী এতোদিনের ঐতিহ্য হারানোর একরাশ বেদনা পাবে। আর সেই হারাধনের একটি মাত্র ছেলে হারিয়ে আগামীতে বাংলা একাডেমী হয়তো হে ডে পালনে আগ্রহী হবে। আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তখন হয়তো হে রান, হে মানববন্ধন, হে পরিবার, হে মাশালা'র মতো আরো অনেক সুযোগ সুবিধা করার পায়তারা করবে। হে বাংলাদেশ, আমরা কোথায় যাচ্ছি!!!
২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩০
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আসলেই কি তাই
৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
ধুত্তরি বলেছেন: দেখুন, সবখানেই বানিজ্যিকরন হচ্ছে। বাংলা একাডেমির তো এছাড়া আর কোনো কাজ নাই, হে উত্সব উপলক্ষে চেয়ার ছেড়ে উনারা একটু নাহয় নড়ে চরে উঠলেন। হয়ত বানিজ্যিক এই উত্সবের অভিজ্ঞতা আমাদের আসল উত্সব একুশে বইমেলাকে আরও প্রানবন্ত করবে।
তবে আমিও দৈনিক তারা-পয়লা আলুর আগ্রাসনের বিপক্ষে।
৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১১
খেয়া ঘাট বলেছেন: বাংলাদেশে আমরা যারা সত্যি সত্যি সাহিত্য চর্চা করি, তারা রাজনীতি একটু কম বুঝি। অথবা রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখি। অথবা রাজনীতিকে মন থেকে ঘৃণা করি। রাজনীতি করা রাজনীতিবিদদের কাজ। সাহিত্য চর্চা করা আমাদের মতো রাজনীতিবিমুখ মানুষদের কাজ। কিন্তু কিছু মানুষ সাহিত্য চর্চাও করেন। তলে তলে রাজনীতিও করেন।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০০
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: আমার অনেক লেখক বন্ধু আছেন যারা হে ফেস্টিবলে নিজের কবিতা পড়বেন বা গল্প পড়বেন বা চেহারা দেখাবেন, এতেই মহা খুশি।
৬| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০০
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: হে ফেস্টিবলের আড়ালে কী?
১. বহুজাতিক কোমাম্পানি'র ব্যবসা
২. কুলিনবংশের নতুন প্রজন্মের হাইব্রিড লেখকদের লেখক হিসেবে স্বীকৃতি আদায়
৩. কুলিনবংশের নতুন প্রজন্মের জন্যে পুরস্কার আনার পায়তারা
৪. বাংলা একাডেমী'র ঐতিহ্যকে নষ্ট ও খাটো করা
৫. একপাল কুলিন অনুসারী লেখক গোষ্ঠী সৃষ্টি করা
৬. আর তথাকথিত হাইব্রিড লেখকদের জন্যে একটা পরিচিতি আনা
৭| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১
রহমান জর্জ বলেছেন: আরো গুছিয়ে লেখা দরকার বলে মনে হলো। তবে চেস্টা রয়েছে। তবে এটা সত্য হে ডে ফেস্টিভাল করে তাহমিমা আনাম কিংবা কুলীনকুলসর্বস্বদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি দেশেও সমহারে জনপ্রিয় করার প্রচেস্টা এখানে রয়েছে। আর পাশ্চাত্য লেখকদের নাম নিজের সাথে জড়াতে পারলে এদেশের মানুষ এখনো বেতাল হয়। দেশি ঠাকুর রেখে বিলাতি কুকুর পুজা- প্রবাদ তো রয়েছেই। বাংলা একাডেমি একটি অর্থহীণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এতে সন্দেহ নাই। নতুন লেখক প্রকল্প- তিনটা প্রকাশনা না থাকলে মনোনয়নই নেয় না। টেকা থাকলে হাজারটা প্রকাশনা করা যায়। আর আমাদের প্রকাশকরা নতুন লেখকদের পান্ডুলিপি মুড়িওয়ালার কাছে বেঁচে দেয়। পাঠকদের মুড়ি খাওয়ার জন্য।
৮| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১
েমাহাম্মদ েমাজােম্মল হক বলেছেন: গত বছর হে উৎসবের প্রতিবাদ করায় বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যারা হে উৎসবের প্রতিবাদ করছে, তারা সবাই জামাতের লোক। আমাদের সঙ্গে তখন বাংলা একাডেমি'র প্রাক্তন পরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা যোগ দিয়েছিলেন এবং হে উৎসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এবারো দেশের অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিককে নানা আলোচনায় নাম রাখা হয়েছে। হে উৎসবের নামে আসলে বাংলা একাডেমি দখলের একটা পায়তারা করছে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গংরা।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৭
েবনিটগ বলেছেন: সো, সাধু সাবধান