![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটবে সেই দিশা ঠিক করার জন্যই নিশা দেশাই'র আগমন! নিশা দেশাই বিসওয়াল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নিযুত্ত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক নতুন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাপান থেকে গতকাল ঢাকায় এসেছেন তিন দিনের সফরে। তিন দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী'র সঙ্গে নিশা দেশাই বিসওয়াল আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবেন। এছাড়া তিনি ঢাকা সফরের প্রথম দিনে গতকাল মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার বাসায় নাগরিক সমাজের ব্যানারে একটি প্রতিনিধিদল গতরাতে তার সঙ্গে ডিনার করেন। এই ছয় সদস্যের নাগরিক সমাজের তারা কারা? আদিলুর রহমান খান শুভ্র, ফারুক সোবহান, অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম, সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, বদিউল আলম মজুমদার ও ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসান। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় কি? মার্কিন মদদপুষ্ট বিতর্কিত মানবাধীকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি হলেন আদিলুর রহমান খান শুভ্র, যিনি গত ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতবিরোধী সরকারি অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। যাকে মিথ্যা তথ্যের অভিযোগে গত ১০ অগাস্ট আটক করা হয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে গত ১১ অক্টোবর তিনি ছয় মাসের জামিন পান। বিএনপি আমলের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হলেন ফারুক সোবহান। বিএনপি পন্থী সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স স্টাডিজের (আইজিএস) পরামর্শক ব্যারিস্টার মঞ্জুর হোসেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর বদিউল আলম মজুমদার। আর জাতীয়তাবাদী উকিল অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম। তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড বর্তমানে যাই হোক না কেন তারা আসলে সবাই বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবী। নাগরিক সমাজের ব্যানারে আসলে বিএনপি'র অ্যাডভান্স টিম হিসেবে তারা নিশা দেশাই'র সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন।
আজ সকালে নিশা দেশাই নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলবেন। দুপুরে তিনি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। বিকেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার বাসায় বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। রাতে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে দেখা করবেন।
সফরের শেষ দিন অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার সকালে নিশা দেশাই প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। আগামীকাল দুপুরে তিনি মধ্যাহ্নভোজসভায় শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দেখা করবেন। পরে তিনি পর্যায়ক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে তিনি ঢাকা ছেড়ে দিল্লি যাওয়ার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। মোটামুটি এই হল নিশা দেশাই বিসওয়ালের তিন দিনের সফর সূচি।
এবার আসা যাক আসল কথায়। নিশা দেশাই কে? ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন নাগরিক। ওবামা প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার কূটনীতি ঠিক করার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি। এটা দিবালোকের মত পরিস্কার, তিনি ভারত বা বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বন্ধনে যুক্ত হলেও মার্কিন প্রশাসনের লাভক্ষতি দেখার দায়িত্ব ওনার। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিশা দেশাই'র ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে এ সপ্তাহের শুরুতে বিএনপি কোনো হরতাল বা অবরোধ দেয়নি। পাশাপাশি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তারা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে এখন প্রস্তুত। সকল দাবী ত্যাগ করে হঠাৎ মির্জা সাহেবের এই ঘোষণা স্রেফ লোক দেখানো। সোমবার রাতে নিশা ম্যম ঢাকা ছাড়ার পরেই মির্জা সাহেবের গতিবিধি তা প্রমাণ করবে। যদি নিশা দেশাই'র উদ্যোগ বেহেস্থে যায়, তাহলে মঙ্গল-বুধ-বৃহস্পতিবার হরতাল বা অবরোধ ডাকতে পারে বিএনপি। আর যদি সত্যি সত্যি বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাহলে এই সপ্তাহেই সেই লক্ষণ আরো সুস্পষ্ট হবে।
কথায় কথায় আমরা সবাই দাবী করি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। সত্যিই কি বাংলাদেশ স্বাধীন? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু যায় আসে না। বিদেশী ভূত পেত্নী কি কি পরামর্শ দেবেন, কিভাবে চলতে হবে, যা বাতলে দেবেন, তাই যেনো তাদের কাছে বেহেস্থি ওহি। ড্যান মজীনা কি বলবেন, পঙ্কজ শরণ কি বলবেন, তার দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন। তার মানে ধরে নিতে হবে, নির্বাচন হল লোক দেখানো একটি নাটক। আমাদের প্রভুরা যাকে আগামীতে ক্ষমতায় দেখতে চান, তিনিই ক্ষমতায় আসবেন। সেই নিয়ে এখন দর-কষাকষি চলছে। কিসের দর-কষাকষি? সুযোগ সুবিধার। কি কি সুযোগ সুবিধা? তেল-গ্যাস-বন্দর-কয়লা-সস্তাশ্রম-বাজার-আর কিছু নতুন প্রজেক্ট।
নব্বই দশকে গোটা ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সারা বিশ্বে চলছে পুঁজিবাদের একক প্রসার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই বাজারে নের্তৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা মার্কিন স্বার্থ কতোটা পূরণ করছে, তার লাভক্ষতির উপর বাংলাদেশে সরকার বদল হয়। জনগণ সাধারণ ভোটার নির্বাচন আন্দোলন এগুলো সব আসলে নাটক। আমরেকিা, ভারত, চীন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য বিদেশী প্রভুদের কে কতোটুকু স্বার্থ রক্ষা করতে পারলো, সেই যোগ্যতায় বাংলাদেশে সরকার বদল হয়। বাকী সময় জনগণকে ধোকা দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বছর বছর নাটক মঞ্চস্থ করতে থাকে।
কিছু দিন আগে আমার এক রাশিয়ান বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা কওতো আমাদের প্রধান সমস্যা কি? সে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিল। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম তার ব্যাখ্যা শুনে। আমার ওই রাশিয়ান বন্ধু বললো, তোমাদের তেল-গ্যাস হল তোমাদের জন্য মরণ ফাঁদ। ওটা যখন ফুরিয়ে যাবে তোমাদের উপর আর কারো আগ্রহ থাকবে না। আকাশ থেকে বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ওরা বাংলাদেশের মাটির নিচের প্রায় পাঁচ হাজার মিটার গভীর পর্যন্ত কি কি আছে সেই ছবি তুলতে সক্ষম। রাশিয়ার মতো আমেরিকা ফ্যান্সও এটা পারে। ওদের ছবিতে বাংলাদেশের মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে তেল-গ্যাস-কয়লা-সোনা ইত্যাদি আছে। আমাদের গোটা দেশই নাকি সোনার উপর ভাসতাছে। যা আমরা জানি না। কিন্তু ওরা জানে। আমি ওর কাছে একটা ব্যাখ্যা চাইলাম। ও বললো, হিমালয় থেকে যতো নদী বঙ্গোপসাগরে নেমেছে সবাই তোমাদের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়ে গেছে। হাজার বছর ধরে হিমালয় থেকে এই জলধারা বঙ্গোপসাগরে মিলিত হতে হতে একটি বদ্বীপ হয়েছে, যেটি এখন বাংলাদেশ। এভাবে যেসব ভূখণ্ডের উৎপত্তি হয়, সেখানে নানা ধরণের খনিজ সম্পদ থাকে। তোমরাও তার ব্যতিক্রম নও। তোমাদের মাটির নিচে কি আছে আমরা জানি। তাই তোমাদের নানামুখি সাহায্য করার লোভ দেখিয়ে আমরা সেই খনিতে হাত দিতে চাই।
সেটা নিউক্লিয়ার প্লান্ট হোক, কয়লা উত্তোলন হোক, গ্যাস উত্তোলন হোক, তোল উত্তোলন হোক। যাই হোক না কেন। পাইপ লাইন নির্মাণ হয়ে যাবার পর তোমরা আর টেরই পাবা না, তোমাদের গ্যাস বা তেল কিভাবে সেই পাইপ লাইন দিয়ে অন্যরা নিয়ে যাবে। হ্যা, তোমাদের কিছু লোক দালালীর মাধ্যমে কিছু টাকা পয়সা কামাই করবে। কিন্তু তোমরা এই সম্পদ রক্ষা করতে পারবা না। আমেরিকা চায় একা খাবে এই নীতিতে চলতে। কিন্তু ভারত বা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেই তাকে খেতে হবে। নইলে তা হজম হবে না। তোমরা আছো মহা ফাঁফরে, বুঝলা?
তোমাদের যতোদিন নিজস্ব টেকনোলজি শক্তিশালী না হবে, যতো দিন তোমাদের নিজস্ব এক্সপার্ট না হবে, যতো দিন তোমাদের রাজনৈতিক মেরুদণ্ড শক্তিশালী না হবে, ততো দিন তোমাদের রাজনৈতিক অচলাবস্থার নামে এই সম্পদ হাতছাড়া হতে থাকবে। তোমাদের দেশ দখল করার খায়েস কারো নাই। ষোলো কোটি মানুষের হাভাতের যোগান দেওয়ার দায়িত্ব কেউ নেবে না। বরং কৌশলে তোমাদের সম্পদগুলো কিভাবে নেওয়া যায়, সেই ফাঁদ পেতে সবাই বসে আছে।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনৈতিক কর্মসূচি খতিয়ে দেখলে আমার ওই রাশিয়ান বন্ধু'র কথাগুলো হাড়ে হাড়ে মিলে যায়। তাইতো, আমরা তো স্রেফ আমজনতা। আমাদের সরকারে কে থাকবে তাতো বিদেশী প্রভুরাই ঠিক করে দিচ্ছেন। গণতন্ত্রের নামে এখানে চলছে ভেতরে ভেতরে অন্যান্য লেনদেন। সেই লেনদেনের ব্যাপার স্যাপার পাবলিক জানে না। পাবলিক খালি চোখে দেখতে পায় হরতাল-অবরোধ-আগুন-জ্বালাও-পোড়াও-লাশ-মানুষের হাহাকার। সম্পদ লুণ্ঠনের কলাকৌশল সাধারণ মানুষের চোখের সামনে হয় না। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ হরতাল অবরোধ না করার জন্য বিএনপি'র প্রতি হাজারো আহবান জানানোর পরেও কোনো কাজ হয়নি। আর কোথাকার কোন নিশা দেশাই'র আগমন উপলক্ষে এখানে রাতারাতি হরতাল অবরোধ বন্ধ হয়ে গেল! শুরু হল রশি টানাটানি। সেই রশি টানাটানিতে বিএনপি অনেকটা এগিয়ে। নিশা দেশাই'র পেছনে লেগে আছে একপাল বিএনপি পন্থী দালাল। সেই দালালরা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ব্যানারে দেশেপ্রেম উছলে দিচ্ছেন। ভাগাভাগিটা কে কতো পারসেন্ট পাবে সেটা ফাইনাল হলেই একটা লোক দেখানো নির্বাচন হবে। আর আমরা হুররে হু-আক্কা-হু বলে সেই উৎসবে ঝাঁপিয়ে পড়বো। হায়রে স্বাধীনতা, হায়রে রাজনীতি!!
©somewhere in net ltd.