নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ ২৪শে অগ্রাহায়ণ ১৪২০। বাংলা ঋতুবর্ষে এখন হেমন্তকাল চলছে। হেমন্তকাল মানেই কৃষকের ঘরে নির্মল হাসি। এই সময়ে সারা বাংলায় কৃষক নতুন ধান কাটায় ভারী ব্যস্ত। ধান কাটা শেষ হলে নতুন ধানে হবে নবান্ন। গোটা পৌঁষ-মাঘ বাংলায় শীতকাল। আসছে শীতে নতুন ধানে হবে নানা ধরনের পিঠা। শীত যতো বেশি পড়বে খেজুর গাছে রস ততো বেশি হবে। তারপর শীতের সকালে পিঠা আর খেজুর রসের পায়েস, আহা কতো মধুর। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে এই মধুর দৃশ্য ভেসে উঠবে। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষক। অর্থ্যাৎ দেশের ষোলকোটি মানুষের দেশে প্রায় তেরো কোটি কৃষক। এই তেরো কোটি কৃষতক সারা বছর নানা ধরনের ফসল উৎপাদন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের রাজনীতি করার সময় নেই। কিন্তু নির্বাচন হলে তাদের উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যায়। ভোটের দিন একদিনের জন্য তারা রাজনীতি চর্চা করে। তারপর আবার নিজেদের কাজে ফিরে যায়।
আমাদের দেশের এই তেরো কোটি মানুষ রাজনীতি থেকে কোনো সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করেন। রাজনীতি নিয়ে তাদের কারো মাথা ব্যথা নাই। শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। খালেদা জিয়া ক্ষমতা পেলেও তাদের কিছুই যায় আসে না। এমন কি এরশাদের স্বৈরাচারী ক্ষমতার সময়েও এই কৃষকের কোনো আগ্রহ ছিল না। দেশের মানুষের পেটের খাবারের নিরবিচ্ছিন্ন যোগান দেওয়াই এই কৃষকের কাজ। কিন্তু আমাদের এই কৃষক কখনোই তাদের উৎপাদিত ফষসলের ন্যায্য মূল্য পায়নি। কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্তভোগী ফরিয়াদের মুনাফা হয় বেশি। কৃষক চালের দাম পায় না। ধানের দাম পায় না। কফির দাম পায় না। শবজির দাম পায় না। কম মূল্যে সার ওষুধ কীটনাশক পায় না। তবু তাদের মনে কোনো দুঃখ নাই। তারা একটা কথাই জানে এই মাটিকে ভালোবেসে সেই মাটিতে নিজের শ্রম দিয়ে সোনা ফলাতে হবে। সেই সোনা ফলানোর জন্য তারা বারো মাস শীত গ্রিস্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত বসন্ত কায়িক পরিম্রম করেই সেই কাজে ব্রত থাকে। দেশের ক্ষমতার চেয়ারে কে বসলো না বসলো তা নিয়ে তাদের কিছুই যায় আসে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমাদের কৃষকরা ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায় না। ভালো ফসলের দাম পায় না। ভালো যাতায়াত সুবিধা পায় না। ভালো সেচ সুবিধা পায় না। তাদের এই হাজারো না পাওয়া নিয়েও তেমন কোনো প্রতিবাদ নেই। উল্লেখ করার মত কোনো আন্দোলন নেই। কিন্তু এই কৃষককূল বাদ দিয়ে যারা শহরে বসবাস করছে তাদের সকল স্বার্থের জন্য যখন তখন যে কোনো ইস্যুতেই আন্দোলন হয়। জ্বালাও পোড়াও হয়। আবার সেই স্বার্থ মিটে গেলে তারা আবার লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে যায়। এ এক আজগুবি দেশে বসবাস করছি আমরা।
রাজনৈতিক সহিংসতায় সারা দেশে গাড়ি পুড়ছে, মানুষ পুড়ে মরছে, রেললাইন খুলে ফেলা হচ্ছে, গার্মেন্টসে আগুন লাগছে। গার্মেন্টস কর্মীরা বেতনের দাবীতে আন্দোলন করছে। বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাবার জন্য সহিংস আন্দোলন করছে। তারমধ্যে এবার নাকি গার্মেন্টস মালিকরাও আন্দোলন করতে রাস্তায় নামবে! কিন্তু তারা বলছে যে তারা একারা নামবে না। তাদের সঙ্গে শ্রমিকরাও নামবে। গার্মেন্টস মালিকদের এই কথাটি কতোটা হাস্যকর তা যে কেউ শুনলেই চমকে উঠবে। গার্মেন্টস মালিকরা যারা শ্রমিকদের বেতন দিতে নানা ধরনের তালবাহানা করে তারা শ্রমিকদের নিয়ে একসঙ্গে রাস্তায় নামবে? শ্রমিকরা কি তাদের কথায় তাদের পেছন পেছন রাস্তায় নেমে মিছিল করবে? হ্যা করতে পারে একটা শর্তে- আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সকল দাবী দাওয়া মেনে নিয়ে তাদের বকেয়া বেতন সহ সকল পাওয়না পরিশোধ করে হালনাগাদ করতে হবে। তারপর তাদের কর্মস্থলে সুস্ঠু কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে নেবার জন্য তারা রাস্তায় নামতে পারে। কিন্তু মালিকরা শ্রমিকদের সঙ্গে যে আচরণ করে অভ্যস্থ, তাতে তো মনে হয় না শ্রমিকরা মালিকদের এই ভেলকিতে রাজী হয়ে তাদের সঙ্গে রাস্তার আন্দোলনে যোগ দেবে।
আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা শুধু নিজেরা আন্দোলন করতে আসলেই আনফিট। আন্দোলন করার মত দুঃসাহস এবং শারিরীক মনোবল তাদের কোনোদিনই ছিল না। ভবিষ্যতেও হবে না। শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া যতো সহজ, আন্দোলন করা ততো সহজ না মশাই। আন্দোলন করতে হলে রাস্তায় নেমে মিছিল করতে হয়। গার্মেন্টস মালিকদের কয়জন রাস্তায় প্রখর রৌদ্রের মধ্যে কয়ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে? সানগ্লাস ছাড়া যারা বাইরে বের হতে পারে না, তারা করবে রাস্তার আন্দোলন? একঘন্টা রাস্তায় হাঁটলে যাদের ব্যাংক-সিংগাপুর যেতে হয় চেকআপ করাতে, তারা করবে রাস্তার আন্দোলন? তামাশা করারও একটা শ্রী আছে মশাই? গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিক শোষণের নামে তারাও শাসক গোষ্ঠির মত একক আধিপত্যবাদী মানসিকতায় তৈরি। তাদের এসব লোক হাসানো তামাশা শুনলে গরু-ছাগলও হেসে উঠবে!
একটা জিনিস মালিকদের মনে রাখা উচিত, ঘি খেয়ে আন্দোলন করা যায় না। চুরি চামারি লুটপাট দখল কালোবাজারী এসব করার জন্য টাকার গরমই যথেষ্ঠ। কিন্তু রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হলে প্রথমে যে ফিটনেস থাকা জরুরী আপনাদের সেই ফিটনেস নাই। আপনারা মালিকশ্রেণী শুধু শুধু সহিংস আন্দোলনের এই উত্তাপের মধ্যে লোক হাসাবেন না। আগুনে পুড়ে মানুষ কিন্তু হাসতেও ভুলে গেছে। সেই বেদনার দাগ না শুকানোর আগে আপনারা এমন হাস্যকর কৌতুক করা থেকে বিরত থাকুন। হাসতে ভাল্লাগে না মশাই...
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭
নূর আদনান বলেছেন: কৃষক-শ্রমিকরা বরাবরই বন্চিত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা নির্যাতিতও।
গ্রামে এই মধুর দৃশ্য কি আর দেখা যায়? আমার মনে হয় এই মধুর দৃশ্য ইতিমধ্যেই বিলুপ্তির পথে...
৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৫
তৌফিক মাসুদ বলেছেন: মালিকদের বাচাঁতে হবে আগে।
৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২
আরিফ আহমেদ বলেছেন: টক লট ব্যবসায়ীদের জন্য সাইট লট হাট ভিজিট করার আমন্ত্রন রইল
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
নীলতিমি বলেছেন: