নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
এক.
বটতলার পাগলা বাবা'র সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল বা্জুয়া বাজারে। ওপাশে পশুর নদীর উথাল পাতাল থৈ থৈ পানি, এপাশে সোনাই খালের রাস্তার মোড়ে বিশাল বটগাছ। একটু অদূরেই লঞ্চ টার্মিনাল। ওই টার্মিনালে নামার আগেই আকাশ ভেঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে হাড় কাঁপুনে অলক্ষুণে হিমেল বাতাস। বৃষ্টি বাতাস আর পশুর নদীর উজান ঠেলে চালনা থেকে বাজুয়া আসতেই সকাল গাড়িয়ে মধ্যান্থ। ওই টুকু ছোট্ট ইঞ্জিনের লঞ্চে কি আর পরাণ রাখা যায়! বুকের মধ্যে ভারী উচাটন নিয়ে দুরু-দুরু ভীরু-ভীরু চোখে তবু বড় বড় ঢেউ ফুরে লঞ্চ যখন ঢেউয়ের ডগায় ওঠে তখন কেবল এক টুকরো আকাশ দেখা যায়। আর লঞ্চ যখন পাল্টা ঢেউয়ের তলানীতে হাবুডুবু খায় তখন চারপাশে শুধুই পানি আর পানি। এই বুঝি দরিয়ার যোম মরণ কামড় দেয়। আমার সঙ্গে নিতীশ ভয়ে ছিদ্র হওয়া বেলুনের মত একেবারে চুপশে গিয়ে ভারী হায় হুতোশ করছে। ভাগ্যিস ঝড় ওঠার আগেই আমাদের লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাল। মাটির নিশানা পেয়ে আমরা ঝড়ো বৃষ্টির মধ্যেই সোনাই খালের পার ধরে সামনে এগিয়ে গেলাম। সোনাই খাল পারে সারি সারি দোকান। একটা ভাতের হোটেলে আমরা ঢুকে পরলাম।
ভয় পেলে কি মানুষের খুব ক্ষুধা লাগে? দোকান মালিক ক্যাশ বাক্সের সামনে বসে আছেন। তার স্ত্রী আমাদের খাবার পরিবেশন করছেন। খাবারের মেনুতে তেমন বৈচিত্র্য নেই। ফাইসা মাছ ভাজি, ভাইসা মাছের ঝোল, মুরগি, আলু ভর্তা আর ডাল। ঘরের মধ্যেই টিউবওয়েল। সেখানে হাতমুখ ধুয়ে আমরা খেতে বসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা খাবার। আমাদের খাবারের জোস দেখে দোকানি আরেকটা নতুন আইটেম বানালেন। শুটকি মাছের ভর্তা। পাঁচ ফোড়নের ডাল দিয়ে সেই ভর্তা ভারী সুস্বাদু। আমরা খাবার শেষ করে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আয়েশ করে বসলাম। ততোক্ষণে নিতীশ আবার প্রাণে ফিরে আসল। দুষ্টু চোখের রহস্য মাখিয়ে বললো, এখন একটা পান খাব। এক্কেবারে মামা বাড়ির আবদার? আশে পাশে কোথায় পানের দোকান? দোকানি বললেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী পান খাই, বসেন পান বানিয়ে দিচ্ছি। পান তামুক খেতে খেতে বিল কত জানতে চাইলে দোকানি তার স্বামীর কাছে হিসেব দিতে দিতে দু'জনে মিলে হিসেব কষে জানালেন, আশি টাকা। সেই সুযোগে দোকানিকে আমরা মাসী ডেকে বসলাম।
এবার মাসী আর মেসোকে আমরা আমাদের বাজুয়ায় আসার হেতু খুলে বললাম। কাকে কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে একটু খোঁজ খবর নিলাম। সোনাই খালের সাঁকো পেরিয়ে ওপারেই বাজুয়া বাজার। সেখানে বাজুয়া'র চেয়ারম্যান বাবুকে আমরা পেয়ে গেলাম। চেয়ারম্যান বাবু আমাদের নিয়ে গোটা বাজুয়া বাজার ঘুরে দেখালেন। শনিবার আর মঙ্গলবার বাজুয়া বাজারে হাটের দিন। সেই হাটের দিনের বাজুয়া বাজারের চিত্র একেবারে অন্যরকম। গোটা দক্ষিণবঙ্গের সকল মানুষ সেই হাটে তখন কেনাবেচা করতে আসেন। ইতোমধ্যে আমাদের ঘিরে চেয়ারম্যান বাবু'র নের্তৃত্বে অম্বরেশ বাবু'র দোকানে বিশাল একটা জটলা পাকিয়েছে। উৎসুক সবাই আমাদের দেখছেন আর আমরা কি জানতে চাইছি তার জবাব দিচ্ছেন।
এক ফাঁকে আমরা সিগারেট খাবার নাম করে বাজারের জটলা থেকে বাইরে এসে বিশাল এক বটগাছ আবিস্কার করলাম। চুপচাপ সিগারেট খাচ্ছি আর রাতে আমরা কোথাও খাকব সেই চিন্তা করছি। ঠিক ওই সময় পেছন থেকে পাগলা বাবা হাঁক ছাড়লেন। ওরে তুই কিডারে? আমার বটতলায় খাড়ায়া বিড়ি ফুকিস? এতো বড় সাহস তোর? পেছন ফিরে দেখলাম, বিশাল দেহি এক লম্বা চুলের বাউল। খালি পা খালি গা। কপালে সিঁদুর। মুখে চাপ দাড়ি। বিশাল মোঁচ ফসকে সাদা দাঁতের কিঞ্চিত দৃষ্টিত হয় বুঝিবা। এক হাতে ভিজে কাপড়। অন্য হাতে পিতলের বদনা। বদনার উপরে সিঁদুরের কৌটা। পাগলা বাবা সান্ধ্য স্নান সেরে আস্তানায় ফিরছেন। ভারী সুঠাম দেহের গড়ন তাঁর। ভারী বর্জ কণ্ঠ। ভারী রহস্যময় চোখের চাহনী। দূর আকাশের অপার নীলিমার ভারী সৌন্দর্য সেই চোখেমুখে। সেই রহস্যময়ী চোখে চোখ পড়তেই পাগলা বাবা শান্ত হলেন। ঝড় থেমে গেলে যেমন প্রকৃতি একেবারে থমকে যায় তেমনি চমকে রইলেন পাগলা বাবা। যুদ্ধ ফেরত ছেলেকে দেখলে মা যেমন ভারী রহস্যময়ী ভঙ্গিতে খুব ভালো করে ছেলেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেন, তেমনি খুটিয়ে খুটিয়ে ভালো করে পাগলা বাবা আমাদের পর্যবেক্ষণ করলেন। এবার একেবারে সুমিষ্ঠ গলায় জিজ্ঞেস করলেন, কহোন আইছিস? খাইছিস কিছু? দাঁড়া একটু মুছে দি। বাদলায় সব ভিজে গেছে। নিজের পোস্তা করা লাল ইটের আসনখানি ভারী মমতা দিয়ে তিনি মুছতে লাগলেন ভিজে গামছা দিয়ে। তারপর আমাদের সঙ্গে নিজেও বসলেন। যেনো আমরা হাজার বছর ধরে তাঁর পরিচিত কোনো রত্ন বান্ধব। যেনো হাজার বছর পরে আমাদের ফের দেখা হল এক ঘোর লাগা মহাসন্ধ্যায়। যেনো এক নিমিষে পৃথিবীর সকল না বলা কথা কেবল ইসারায় বলা হয়ে গেল একটুখানি চোখাচোখিতে। তখন সূর্য ডোবার ক্ষণ। তখন গোধূলী লগ্ন। পাগলা বাবা আমাদের বসিয়ে রেখে সান্ধ্য প্রার্থণায় মগ্ন হলেন।
............................................... চলবে...................
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৪
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ দুষ্ট বালক....
২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৫
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ইন্টারেস্টিং।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩০
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ...
৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লাগা শুরু করেছিল মাত্র..
ছোটগল্প এক পর্বেই পড়তে ভালো লাগে ।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৪
ছন্নছাড়া ছেলেটি বলেছেন: অসাধারন লাগলো ।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২২
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
সোজা কথা বলেছেন: দৃশ্যায়ন বর্ণনা ভালো লেগেছে।চলুক পাগলা বাবা....
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:১৬
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালোই লাগলো,চালিয়ে যান।তবে আমি ধারাবাহিক না, ছোটগল্প ভেবে পড়া শুরু করেছিলাম...।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ... না ধারাবাহিক নয়, সময় অভাবে লিখতে পারিনি...পরের কিস্তিতে শেষ করে একত্রে দেবার চেষ্টা করব।
৭| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪
তাহমিদুর রহমান বলেছেন: আমার গল্পটি পড়ুন
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৬
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০১
তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ভাল লাগল লেখা, শুভকামনা জানবেন।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৬
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ... না ধারাবাহিক নয়, সময় অভাবে লিখতে পারিনি...পরের কিস্তিতে শেষ করে একত্রে দেবার চেষ্টা করব।
৯| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৬
তামিম ইবনে আমান বলেছেন: পর্ব পর্ব করে দেয়া ঠিক হয় নাই। পাগলা বাবার বিবরন ভাল্লাগছে।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৬
রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ... না ধারাবাহিক নয়, সময় অভাবে লিখতে পারিনি...পরের কিস্তিতে শেষ করে একত্রে দেবার চেষ্টা করব।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫০
দূষ্ট বালক বলেছেন: