নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জেনারেল জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। তারপর ১৯ দফা'র নামে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই ১৯ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থণ আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি কথাকথিত 'হ্যা' বা 'না' ভোটের আয়োজন করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথম বাংলাদেশে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লোক দেখানো সেই গণভোটে জেনারেল জিয়া দাবী করেছিলেন যে, তিনি যে কর্মসূচি দিয়েছেন, তার সমর্থণ যাচাই করার জন্য যে গণভোট হল, সেখানে অন্তত ৮৮.৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। আর জেনারেল জিয়ার কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন অন্তত কাস্টিং ভোটের ৯৮.৯ শতাংশ ভোটার। বাংলাদেশে ভোট নিয়ে মিথ্যাচারের সেই শুরু।
এরপর ১৯৮৫ সালের ২১ শে মার্চ জেনারেল এরশাদ তার পূর্বসুরীর পদ অনুসরণ করে আরেকটি গণভোট দিয়েছিলেন। সেটি বাংলাদেশের তৃতীয় গণভোট। সেখানে জেনারেল এরশাদের একটি ছবি দিয়ে সেই গণভোটে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি প্রেসিডেন্ট এরশাদকে সমর্থণ করেন? সেই দ্বিতীয় গণভোটে এরশাদের পক্ষে ভোট দেখানো হয়েছিল ৩,২৫,৩৯,২৬৪টি। আর 'না' ভোট দেখানো হয়েছিল ১২,৯০,২১৭টি।
বাংলাদেশে তৃতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। সেই গণভোটের বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার কাঠামো প্রবর্তণ। সেই গণভোটে ভোট দাবী করা হয়েছিল ৮৪.৩৮ শতাংশ। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আবার প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তিত হয়।
গণভোট দেবার জন্য কি মানুষ ভোটকেন্দ্র যায়? নাকি নির্বাচন কমিশন একটা ফলাফল বানিয়ে সেটা ঘোষণা করে? বাংলাদেশের তিনটি গণভোটের সকল ইতিহাস আপনারা জানেন। আমার একটি গণভোটে ভোট দেবার অভিজ্ঞতা আছে। সেটি এখানে বলবো।
১৯৮৫ সালের ২১ শে মার্চ। জেনারেল এরশাদের গণভোট। আমাদের প্রাইমারি স্কুল হল ভোট কেন্দ্র। ভোটের দিন হওয়ায় সেদিন আমাদের স্কুলও বন্ধ। তো আমরা কয়েকজন আমাদের প্রাইমারি স্কুলের একটা ফাঁকা রুমে বসে দাবা খেলছি। ওপাশে কয়েকজন প্রাইমারি স্কুলের স্যাররা ভোটের আয়োজন করেছেন। কোনো ভোটারের উপস্থিতি নাই। আমাদের ডেকে বললেন, তোমরা কিছু ভোট দাও। তোমাদের জন্য নাস্তা আছে। তো আমরা কেউ সিল মারছি। কেউ ব্যালট পেপার ভাঁজ করছি। কেউ ব্যালট পেপার বাক্সে ঢুকাচ্ছি। সেকেন্দার মাস্টার বললেন, ২০/৩০ টা হ্যা সিল মারার ফাঁকে ফাঁকে ২/১টা না মারবা। আমরা সেমত মারলাম। দুপুরের আগেই মোটামুটি ভোট শেষ। এখন চারটা বাজলে ওই বাক্স খুলে ভোট গণণা শুরু হবে। ওটাই জীবনে আমার প্রথম ভোট দেবার অভিজ্ঞতা। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি।
ভোটার বিহীন ভোটকেন্দ্রে ভোট কাস্টের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ। খুব ভালো ভোট। তো কে যেনো আমাদের হেডস্যারের বাবাকে বলেছিল যে, আজ ভোট। হেডস্যারের বাবাকে আমরা ডাকি দাদু। তো দাদু দুপুরে লান্স করে ভোটকেন্দ্রে আসলেন। ভোট দেবেন। একজন আনসারকে জিজ্ঞেস করলেন, ভোট কোন রুমে? আনসার দেখিয়ে দিলেন মাস্টারদের। দাদু স্কুল বারান্দায় মাস্টারদের আড্ডায় গিয়ে বললেন, ভোট দিতে আইছি। এক মাস্টার দাদু'র দিকে না তাকিয়ে কইলেন, ভোট শেষ। জবাবে দাদু কইলেন, এখনো তো চারটা বাজে না। ভোট কেমনে শেষ হয়? ওই মাস্টার কইলেন, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। অমনি দাদু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। সেকেন্দার মাস্টারকে দাদু চিনতেন। দাদু কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ওই সেকেন্দার, আমি সারাদিন কোলায় (মাঠে) ছিলাম। মোর ভোট ক্যাঠায় দিল, এ্যা? মোরে চেনো না তুমি? মুই মনীন্দ্র'র বাবা? ওই সেকেন্দার, কি কতা কও না ক্যান?
সেকেন্দার মাস্টার ভারী সমস্যায় পড়লেন। নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কইলেন, আসেন, দাদু, এই যে ব্যালট। নেন, ওই কোনায় ভুতের মধ্যে গিয়া ভোট দেন। জবাবে দাদু কইলো. ওই সেকেন্দার, একটু আগে তোগো মাস্টার কইলো আমার ভোট শেষ? এখন আবার কিসের ভোট? দাদু ভোট না দিয়েই ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে বাড়ি চলে গেলেন। আর মাস্টাররা আমাদের নিয়ে ভোটের বাক্স খুলে গণণা করে ফলাফল ঘোষণা করলেন, হ্যা ভোট ১৭৭৯টি আর না ভোট ১০৭টি। আহারে ভোট!!! তোরা আলু খা।
২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৭
Rubel rana বলেছেন: This is our voice declaring “We, the citizens of the PEOPLE’s Republic of Bangladesh do not accept this election”.
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৯
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: কে বা কারা জেনারেল জিয়াকে ১৯ দফা লিখেদিয়েছিল কে জানে? জিয়া হয়তো ৫ মিনিট সময় ব্যয় করে তা পরে দেখেনি।
তার দক্ষতা ছিল সৈনিক হিসেবে, সে যতদুর পেরেছে তা করেছে: তবে, জাতিকে 'ক্যাপিটেলিজমে' নিয়ে গেছে, এটা ছিল অপরাধ; যার শাস্তি উনি ঠিক মতো পেয়েছেন।