নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি'র শুভ বোধদয় ও সাধারণ মানুষের কল্যানে করণীয় কিছু প‌্যাঁচালী!!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৩

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নের্তৃত্ব শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভুল রাজনীতি বুঝতে পেরে লাগাতার অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করল। শুভস্য শীঘ্রম অশুভস্য কালহরনামঃ। তাদের এই শুভবুদ্ধি উদয় হবার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। এখন খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে, বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ভুল রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের বিগত তিন বছরে যে বিশাল ক্ষতি হল, তার দায় তাহলে এখন কার? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নাশকতা, যাত্রীবাহী বাসে আগুন, চলন্ত রেলগাড়িতে আগুন, রেললাইন খুলে ফেলা, যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন, মানুষের ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন, গাছকাটা, পেট্রোল বোমা, সাধারণ নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে কতিপয় সন্ত্রাসী দিয়ে বিএনপি যে জনসম্পৃত্তহীন রাজনীতি করে আসছে, সেই দায় বিএনপি'র এড়ানোর সুযোগ নেই। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের পোড়া মানুষের আর্ত-চিৎকার কেন বিএনপি নের্তৃত্বের কানে পৌঁছাতে এতো দেরি হল? কেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হল? তাদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট হল? তাদের মা বোনেরা ধর্ষিত হল? এসব ঘটনার দায় এখন বিএনপিকেই নিতে হবে।

নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি ছিল প্রধানবিরোধী দল। একটি দেশের প্রধানবিরোধী দল কেন দেশের জন্য এমন এমন আত্মঘাতী রাজনীতির পথ বেছে নিল? নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি'র সাংসদ ছিলেন সাকুল্যে ৩০ জন। কিন্তু তারা লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। আবার সরকারি সুযোগ সুবিধা যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য সদস্যপদ বাতিল হবার আগে আগে সংসদে হাজিরা দিয়েছিল। ছল ছুতা অযুহাত দিয়ে আবার লাগাতার সংসদ বর্জন অব্যাহত রেখেছিল। এক সময় আন্দোলনের জন্য একটি মোক্ষম অযুহাতও পেয়ে গেল। নির্বাচন কালীন সরকার। বিএনপি দাবী করল, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি এই দাবীটা তোলার আগে আয়নায় কি নিজেদের চেহারা একবারও দেখেছিল?

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে ২০০৬ সালে বিএনপি কি করেছিল? কেন বিএনপি তখন একটি ইয়াজউদ্দিন সরকার গঠন করেছিল? তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সেই আইন তো বিএনপি'র করা। সেখানে যতোগুলো অশুভ লক্ষণের সুযোগ ছিল, সেই সুযোগটি তখন কেন তারা অপব্যবহার করেছিল? কেন তখণ বিএনপি ইয়াজউদ্দিনকেই তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করেছিল? বিএনপি'র সেই আগের করা ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতেই আওয়ামী লীগ নবম সংসদে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের সুযোগে সেই কালো আইনটি সংবিধান থেকে তুলে নিল। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। এটি দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। বাংলাদেশকে নির্বাচন কালীন সরকার প্রশ্নে আজ হোক কাল হোক একটি স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই প্রশ্নে রায়ের পর আওয়ামী লীগ সেই সুযোগটি আর হাতছাড়া করেনি।

আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার উদ্যোগ নিল, তখন বিএনপি কেন সংসদে গিয়ে তাদের সকল যুক্তি তুলে ধরল না? তখন কেন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বলতা গুলো সংসদে গিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরল না? তখন কেন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলল না? তখন কেন নির্বাচন কালীন সময়ে জনপ্রশাসনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কেমন চেহারা দরকার সেটি বিএনপি সংসদে তুলল না? এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের দুর্বল নির্বাচন কমিশনের অপব্যবহারের সুযোগটি বিএনপিও নিজেদের পক্ষে নেবার জন্য একপায়ে খাঁড়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বলতার ফাঁকফোকরগুলো বিএনপিও নিজেদের পক্ষে নেবার জন্য প্রস্তুত। এটা একটা খোড়া অযুহাত। তাই বিএনপি সংসদে এই বিষয়ে কথা না বলে রাজপথের আন্দোলনকে বেছে নিল।

বিএনপি'র এই রাজপথের আন্দোলনে প্রধান ভরসা কি ছিল? প্রধান ভরসা ছিল বিএনপি'র মিত্র জামায়াত শিবির। জামায়াত শিবির কেন বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনে নামাতে বাধ্য করল? কারণ, একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। সেখানে জামায়াতের বড় বড় নেতারা সবাই কাঠগড়ায়। তাদের বিচার চলছে। তাদের বাঁচানোর জন্য জামায়াত শিবিরের রাজপথের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। তাদের সেই আন্দোলনে বিএনপি কেন বলি হবে? কারণ, বিএনপি যদি আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে ভোটের রাজনীতিতে হারাতে চায়, তাহলে এককভাবে সেটি সম্ভব নয়। জামায়াতের সঙ্গে আতাত করে অতীতে এটার সফল পাওয়া গেছে, তাই জামায়াত বিএনপি'র কাছে ভোট ফ্যাক্টর।

যদি জামায়াত বিএনপি'র শুধু ভোটের মিত্র হয়, তাহলে যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিএনপি কেন দেশের মানুষের কাছে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান খোলাসা করছে না? রহস্যটা এখানেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিএনপি এখনো চরিত্রহীন। বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় এসে এই বিচার প্রত্রিয়া বন্ধ করে দিয়ে তাদের নেতাদের মুক্ত করবে নাকি এই বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে, তা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপি'র কোনো সুস্পষ্ট কথা নেই। অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করেছিলেন। তখন একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছিল, তা বন্ধ করেন। পাশাপাশি মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অন্তত বিশ হাজারেরো বেশি জেলে বন্দী জামায়াতের নেতাদের জেনারেল জিয়া মুক্ত করে দেন। গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্ম ভিত্তিক যে চারটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই দলগুলোকে আবার জেনারেল জিয়া রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন।

বেগম জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে সেই ধারবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখেন। তখন বেগম জিয়া চরম ঔদ্বত্য দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চরম অবমাননা করেন। মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী সেই জামায়াতের নেতাদের বিচার বেগম জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে যে বন্ধ করে দেবেন, এটা দেশের সাধারণ মানুষ স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারে। আর যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি'র কোনো সুস্পষ্ট কথা নেই। তাদের কথা হল বিচার আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বিচার স্বচ্ছ হতে হবে। এটা একটি গোয়েবলীয় ধোয়াশা। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে চলমান মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করাই হবে তাদের প্রধান কাজ। এটা দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপি'র এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকেই বুঝতে পারে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে যেখানে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনে তরুণ প্রজন্মের নের্তৃত্বে একটি শাহবাগ আন্দোলন হয়ে গেল, সেখানেও বিএনপি কার্যত নিরব ছিল। তাদের এই নিরাবতাও প্রমাণ করে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। বরং বিএনপি অনেক জনসভায় প্রকাশ্যে এই যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবী করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেগম জিয়ার সামনে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বন্দী নেতাদের মুক্তি চাই খচিত ব্যানার ফ্যাস্টুনের শো ডাউন করেছে। বেগম জিয়া তখনো এই বিষয়ে জামায়াতের পক্ষে সাফাই গেয়ে তাদের নেতাদের মুক্তি দাবী করেছেন।

এই বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত যতগুলো রায় এসেছে সেখানে বিএনপি নিরব ছিল। রায় নিয়ে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল না। এমন কি কসাই আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবার পর যখন পাকিস্তানের হাতীয় পরিষদ নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছে, তখনো বিএনপি শুধু 'মর্মাহত' এই একটি শব্দ উচ্চারণ করেছে। এই মর্মাহত মানে হল বিচারে কসাই কাদেরের ফাঁসিতে বেগম জিয়া আসলে মর্মাহত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় আর দশম সাধারণ নির্বাচন একই সময়ে হওয়ায়, বিএনপি জামায়াতকে সাথে নিয়ে রাজপথে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেটাকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন বলার সুযোগ নাই। এটি স্রেফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এটি স্রেফ নাশকতা। আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনের মত গোপন ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বিএনপি যে আন্দোলনে নের্তৃত্ব দিয়েছে, সেটি ছিল দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার জলন্ত উদাহরণ।

দেশের মানুষের সেবা করার রাজনীতির কথা বলে সেই দেশের মানুষের উপর এমন বর্বর হামলার নাম রাজনীতি হতে পারে না। নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অধিকার। বিএনপি'রও সেই অধিকার আছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে বিএনপি সর্বশেষ যে কাণ্ডটি করেছে, সেটি সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। ভোটকেন্দ্রে হামলার নামে বিএনপি জামায়াত শিবির আসলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের সেই পুরানো খেলায় মেতে উঠেছিল। ভোটারদের হামলা করে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে শক্তি প্রয়োগ করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। লাগাতার অবরোধ-হরতাল দিয়ে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে বিএনপি নির্বাচনী ট্রেন মিস করেছে। এখন দেরীতে হলেও বিএনপি বুঝতে পেরেছে যে, এতোদিন তারা ভুল রাজনীতি করেছিল।

তাহলে দেশের এই যে এতো প্রাণহানী, এই যে এতো ধ্বংস এর জন্য বিএনপি কেন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াবে না? ভুল রাজনীতি করে দেশের মানুষের উপর সন্ত্রাসী হামলা করা, বা দেশের সম্পদ ধ্বংস করার এই লাইসেন্স কি বিএনপি পেয়েছে? যদি না পায়, তাহলে বিএনপিকেই এই দায় নিতে হবে। বিএনপি'র নের্তৃত্ব দেরীতে হলেও বিষয়টি এখন বুঝতে পেরেছে যে, এভাবে আন্দোলন করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। এখন তারা বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিএনপিকে যে জিনিসটি সবার আগে বুঝতে হবে সেটি হল, বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশ কিভাবে চলবে, কিভাবে উন্নয়ন করবে, কে সরকারে থাকবে, কে বিরোধীদলে থাকবে, কিভাবে দেশে শান্তি বজায় থাকবে, তা বাংলাদেশের মানুষকেই ঠিক করতে হবে। আর সেটি ঠিক করতে হবে একটা প্রশ্নে সরাসরি অবস্থান নিয়ে। বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কোনো অধিকার নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ চলবে। সেই চেতনার যারা শত্রু, তাদের নিয়ে হাজারো ষড়যন্ত্র করেও শেষ রক্ষা হবে না। বিদেশী কূটনীতিকদের বুদ্ধিতে ষড়যন্ত্র করেও কোনো লাভ হবে না। যা করার জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের সঙ্গে মিলেই করতে হবে। বেগম জিয়া হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, এতো বিতর্কের পরেও নতুন সরকার শপথ নেবার সময় সেখানে বঙ্গভবনে বিদেশী কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। একে একে বিদেশী রাষ্ট্রনেতারা নতুন সরকারকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তাদের শুভেচ্ছা জানানো বা না জানানোর উপরেও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ একেবারে নির্ভর করে না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রটি কিভাবে চলবে তা বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে। কোনো বিদেশী কূটনীতিকদের ইসারায় তা ঘটবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যদি কোনো বিদেশী কূটনীতিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি লাফালাফি করেন, তাদেরকে বহিস্কার করারও এখতিয়ার বাংলাদেশের রয়েছে। তাই বিএনপি যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে চায় এবং দেশের মানুষকে সেবা করতে চায়, তাহলে কয়েকটি বিষয়ে বিএনপিকে এখনই নাকে খত দিতে হবে।

বিএনপিকে দেশের মানুষের কাছে যেসব বার্তা নিয়ে সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে হবে সেগুলো হল-

১. একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়, প্রশ্রয়, সহযোগিতা দেওয়া, আর তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও বন্ধুত্ব করার অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে।

২. বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। পাকিস্তানের অপশক্তির ভূত মাথায় নিয়ে পাকিস্তান প্রীতি মাথায় নিয়ে, বাংলাদেশে রাজনীতি করা চলবে না।

৩. রাজনৈতিক আণ্দোলনের ভাষা হতে হবে জনগণের কল্যানের কথা বিবেচনা করে জনকল্যানমুখী। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, নাশকতা করে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করে, জানমালের ধ্বংস করে, হনসম্পৃক্তহীন রাজনীতি করে পার পাওয়া যাবে না।

৪. নির্বাচন কালীন সরকার প্রশ্নে আলোচনার টেবিলে সুস্পষ্ট প্রস্তাব নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের উপায় বের করার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সংলাপ করতে হবে। সেই সংলাপ যতবেশি গঠনমূলক হবে, যতবেশি জনগণের কল্যানের কথা বিবেচনায় রেখে হবে, যতবেশি শান্তিপূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে হবে, ততবেশি সেটি কার্যকর হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে। নির্বাচনের মাধ্যম ছাড়া ক্ষমতায় যাবার আর যে কোনো উপায় নেই, সেই সত্যকে মেনে নিয়েই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই বিএনপিকে আলোচনার জন্য সরকারের সঙ্গে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসতে হবে। শুধু আলোচনা করলে হবে না, আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের উপায়ও বের করতে হবে।

৫. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য বিএনপিকেই সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। দায়সারা ভাবে একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় গিয়ে সেটি ভুলে যাবার মানসিকতাও ত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে কতভাবে শক্তিশালী করা যায়, নির্বাচন কমিশনে কারা থাকবে, কিভাবে থাকবে, নির্বাচনের সময় রিটার্নিং অফিসার কারা থাকবে, নির্বাচনী দায়িত্ব কারা পালন করবে, কিভাবে পালন করবে, ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, ভোটার লিস্ট কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ডিজিটাল করা যায়, জাল ভোট এড়ানোর কি কৌশল হবে, মোদ্দাকথা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে কোন আধুনিক পদ্ধতি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য, সেসব বিষয় নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য সঙ্গেই নিয়েই বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। বসতে হবে সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে।

৬. নির্বাচন কালীন সহিংসতা বন্ধে স্থায়ী সমাধান কি হবে, সে বিষয়ে যদি কঠোর আইন করতে হয়, সেই আইনে কি থাকবে, তা নিয়েও আলোচলনায় বসতে হবে।

৭. দেশের যে কোনো রাজনৈতিক সংকটে সংখ্যালঘুরা কেন বারবার আক্রান্ত হবে, তার সমাধানের জন্য স্থায়ী টিকা আবিস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে সন্ত্রাস দমন আইন বা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মত সংখ্যালঘু নির্যাতন আইন পাশ করতে হবে। সেই আইনে বিএনপি কিভাবে সহায়তা করতে চায়, সেই আইন কিভাবে কার্যকর করা যায়, তা খুঁজে বের করতে হবে।

৮. দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে সহায়তা করবে, দুর্নীতি দমন কমিশন কিভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী হবে, সে প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে একটি স্থায়ী সমাধানের উপায় বের করতে হবে।

৯. বাংলাদেশ কি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলকে একটি স্থায়ী সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

১০. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কত সময় সীমার মধ্যে শেষ করা হবে, সে প্রশ্নে একটি স্থায়ী সমাধানে আসতে হবে। যুদ্ধাপরাধী যে দলেরই হোক, তার বিচার করতে হবে, সে যেনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে বিচার থেকে রেহাই না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. দেশের আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের যৌথ করণীয় কি, সেই প্রশ্নে একটি জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে।

১২. বাংলাদেশের যে কোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল ও নীতি নির্ধারকদের নিয়ে কিভাবে একটি জাতীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ গঠন করা যায়, যাতে যে কোনো রাষ্ট্রীয় দুর্যোগের সময় সেই পরিষদ একত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটি কিভাবে গঠন করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

১৩. দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা কিভাবে আধুনিক করা হবে, মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা পরবর্তী সময়ে কোথায় কি কাজ করবে, তার একটি স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে।

১৪. দেশের জনপ্রশাসনকে কিভাবে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করা হবে, সে বিষয়ে একটি বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে যাতে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয়ে থেকে কাজ করতে না হয়, স্বাধীনভাবেই তারা যাতে আইনের শাসনর প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে একটি স্থায়ী উপায় বের করতে হবে।

১৫. কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায়্য মূল্য নিশ্চিত করার জণ্য মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ব কিভাবে খাটো করা যায়, কৃষিকে কিভাবে আরো আধুনিক করা যায়, কৃষিকে আরো কিভাবে রপ্তানিযোগ্য করা যায়, তার জন্য একটি স্থায়ী উপায় বের করতে হবে।

১৬. পরিবেশ বান্ধব শিল্পকে কিভাবে আরো গতিশীল করা যায়, সেই সমাধান বের করতে হবে।

১৭. দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করে সেখানে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, শিক্ষাকে কিভাবে আরো আধুনিক করা যায়, তার উপায় বের করতে হবে।

১৮. দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান কিভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তার উপায় বের করতে হবে।

১৯. দেশের আবাসন ও মানুষের বসবাসের স্থায়ী সমাধান কি হবে তা বের করতে হবে। বাড়িভাড়া আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বাড়িওয়ালাদের বাধ্য করার জন্য কি কি করতে হবে, সেই উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।

২০. দেশের পররাষ্ট্র নীতি কি হবে, সে বিষয়ে আরো যুগপযুগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করার উদ্যোগ নিতে হবে।

২১. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কিভাবে আরো শক্তিশালী করা হবে, তা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে আসতে হবে।

দেশের যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য সমাধানের উগ্যোগ গ্রহন করার জন্য বিএনপিকে এখন সরকারের উপর রাজনৈতিকভাবেই চাপ প্রয়োগ করতে হবে। শুধু ক্ষমতার প্রশ্নে কিছু কিছু মিট মীমাংসা করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন নিয়ে কালবাহানার আলোচনা করে বিএনপি এখন আর সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে এই ভুল আর হবে না, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সকল রাজনৈতিক হত্যার বিচার করতে হবে। বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে। আর দেশের মানুষের সেবা করার জন্য দেশের মানুষের কল্যানের বিবেচনায় রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে হবে। যেখানে জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন থাকবে। সন্ত্রাসী কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। সন্ত্রাসীকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিন্থিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনাতে হবে। সেই যজ্ঞযাত্রায় তালবাহানার কোনো সুযোগ নেই। দেশের মানুষ এখন আর কোনো মিথ্যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে না। সেই সুযোগ নিয়ে অন্দরমহলের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করার দিন শেষ। বিএনপিকে এই বাস্তবতা স্বীকার করেই নাকে খত দিতে হবে।

যদি বিএনপি এই কাজগুলো না করে আবারো ভুল রাজনীতির পথে পা দিয়ে জনগণের সম্পৃক্তাহীন আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এই বৃহত রাজনৈতিক দলটি অচিরেই মুসলিম লীগের মত হারিয়ে যাবে। আর যদি জনগণের জন্য সত্যিই সেবার করার ওয়াদা করে আবারো জনগণের কাছে বিএনপি ফিরে আসতে চায়, তাহলে তাদের সৃষ্ট ভুল রাজনীতির যারা বলি, সেই সব দায় স্বীকার করে, তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে আবারো সুস্থ রাজনীতি করার সুযোগ বিএনপি'র সামনে এখনো খোলা রয়েছে। নতুবা বিএনপি এখন তো শুধু ক্ষমতার বাইরে, ভবিষ্যতে এই বৃহত রাজনৈতিক দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আমরা আশা করব, বিএনপি'র ভেতরে এসব ভাবনাকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানোর মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মেধার কোনো অভাব নেই। সেই শুভ প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি আবারো রাজনীতির মাঠে জনগণের পাশে দাঁড়াবে বলেই আমি বিশ্বাস রাখতে চাই।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমার তো মনে হয় একনায়কতন্ত্র বা একগুঁয়েমির কারণে আওয়ামী লীগই হারিয়ে যেতে পারে ....

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮

রেজা রাজকুমার বলেছেন: বিএনপি এখন কী এজেন্ডা নিয়ে আন্দোলন করবে? সরকারের পতন চাই, এইতো? ম্যাডাম সুযোগ হাতছাড়া !! আর আসবে না। এবার অবসর নিন।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

সৈয়দ মোহাম্মদ আলী কিবর বলেছেন: ১. দায় অবশ্যই সরকারের
২. প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা হরতাল অবরোধ বন্ধ করুন, আলোচনা হবে, নতুন করে নির্বাচন হবে। তাই বিএনপি এই ঘোষণার সম্মান দিয়েছে এবং বলটা ছুড়ে দিয়েছে সরকারের হাতে, এবার দেশের জনগণ অপেক্ষায় আছে সরকার কি করে দেখার জন্য।
৩. এবার আওমীলীগ এর গায়ে কলংকের দাগ লেগেছে, যেই দাগ আওমীলীগের ছিলনা।
৪. দেশের ৯০% জনগণ আওমীলীগকে ঘৃণা করে, যা আওমীলীগসহ দেশের জনগণ কখনোই কল্পনা করেনি।

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

HHH বলেছেন: আপনার কোয়ালিফিকেশন কি যে অন্যদের কি করনীয় তার পরামর্শ দিয়ে বেড়াচ্ছেন?
আপনার কাছে কি বিএনপি জানতে চেয়েছে? নাকি গা-এ মানে না আপনি মোড়ল?
গেট এ লাইফ

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:১০

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: সৈয়দ মোহাম্মদ আলী কিবর বলেছেন: ১. দায় অবশ্যই সরকারের
২. প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা হরতাল অবরোধ বন্ধ করুন, আলোচনা হবে, নতুন করে নির্বাচন হবে। তাই বিএনপি এই ঘোষণার সম্মান দিয়েছে এবং বলটা ছুড়ে দিয়েছে সরকারের হাতে, এবার দেশের জনগণ অপেক্ষায় আছে সরকার কি করে দেখার জন্য।
৩. এবার আওমীলীগ এর গায়ে কলংকের দাগ লেগেছে, যেই দাগ আওমীলীগের ছিলনা।
৪. দেশের ৯০% জনগণ আওমীলীগকে ঘৃণা করে, যা আওমীলীগসহ দেশের জনগণ কখনোই কল্পনা করেনি।

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

এম এ কাশেম বলেছেন: বাকশালের পরিণতি কি হয়েছিলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.