নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

!! একে খন্দকারের বই ১৯৭১: ভেতরে বাহিরে- একটি নতুন বিতর্ক !!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। `১৯৭১: ভেতরে বাইরে'। বইটি প্রকাশ করেছে ‘প্রথমা প্রকাশন’। বইটি নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদ বেশ উত্তপ্ত ছিল। বইটি নিয়ে এখন পক্ষে বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক হবে। আমার সেই কুতর্কে সময় নেই। কিন্তু কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মিস্টার খন্দকার সাহেবের ১৯৭১ সালের সেই বীরত্বসূচক ঘটনাবলী নিয়ে প্রায় ৪২ বছর পর কেন হঠাৎ লেখার ইচ্ছে জাগল ? এর পিছনে রহস্য কি? ইতিহাস নিয়ে লিখতে গেলে বা ইতিহাসের অত্যন্ত চুম্বক অংশ নিয়ে লেখার জন্য সবচেয়ে মোক্ষম সময় তো ছিল স্বাধীনতার পরপরই। বুঝলাম, খন্দকার সাহেব তখন বিমানবাহিনীর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। লেখার মত সময় পাননি। কিন্তু বিমানবাহিনী থেকে অবসর নেবার পরেও কি ওনার সময় হয়নি? সময় যখন হল, মাঝখানে সময় চলে গেছে ৪২ বছর। এই ৪২ বছরে খন্দকার সাহেবের স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণে স্মৃতিভ্রম হবার কথা, অন্তত আসল ঘটনা যা ঘটুক, ৪২ বছর আগের ঘটনা লেখার সময় খন্দকার সাহেব কিছু কিছু স্মৃতিভ্রমের খপ্পরে পড়বেন। এটাই খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তাহলে ৪২ বছর পরে এই বই লেখার পেছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। অন্তত এই বিষয়টা খুবই পরিস্কার। এখন খন্দকার সাহেবের সেই উদ্দেশ্যটা কি তা আগামী দিনে আরো স্পষ্ট হবে।

মুক্তিযুদ্ধের অনেক বীরত্বগাঁথার বই আমরা আগেও পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই বিতর্কিত করার একটা প্রবনতা আমরা দেখেছি। সেই প্রবনতার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরাজিত পাকিস্তানী শক্তির একটা কুমতলব জড়িত। পরাজিতরা কখনোই বিজয়কে ভালোভাবে গ্রহন করতে পারে না। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে পরাজয়। পাকিস্তানও বাঙালিদের কাছে ১৯৭১ সালের সেই পরাজয় মন থেকে মানতে পারেনি। আজো পাকিস্তান বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। বাঙালি জাতিকে সবচেয়ে বেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করে। এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক লেনদেন জড়িত। পাকিস্তান এখনো আমাদের যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বিহারিদের ফিরিয়ে নেয়নি।

১৯৭৪ সালের ওআইসি সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশকে পাকিন্তান যে স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটিও ছিল মুসলিম নেতাদের খুশি করার মত একটা ঘটনা। মন থেকে বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর পাকিস্তান তাদের মিত্রদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে এক ধরনের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেটা কেবল বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পর তাদের মধ্যে যে খুশি কাজ করছিল, সেই স্বীকৃতি। কিন্তু প্রকৃত বিচারে পাকিস্তান বাংলাদেশকে আজো স্বীকৃতি দেয়নি। বরং বাংলাদেশে তাদের দোসর ও এজেন্টদের দিয়ে নানাভাবে অঘটন করার খায়েস তাদের অন্তরের আসল মোটিভ।

জনাব খন্দকার সাহেব সুস্পষ্টভাবেই ৪২ বছর পরে স্মৃতিচারণমূলক বই লিখতে গিয়ে কিছু বিষয়কে ইচ্ছে করেই উসকে দিয়েছেন। এতে বইটির কাটতি ভালো যাবে বটে। কিন্তু জনাব খন্দকার সাহেবের আসল উদ্দেশ্য কি তাতে সফল হবে!! আমরা জানি না। খন্দকার সাহেব ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খুনী মোশতাকের মন্ত্রীসভায় জায়গা পাবার চেষ্টা করেছিলেন। সামরিক প্রেসিডেন্ট জিয়া ও এরশাদের সময়ও খন্দকার সাহেব রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। এমন কি আওয়ামী লীগের আগের সরকারেও তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রীর মত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাহলে এখন হঠাৎ করে খন্দকার সাহেবের এমন একটি বিতর্কিত বই লেখার আসল উদ্দেশ্য আসলে কি?

শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রীসভায় স্থান না পাবার ক্ষোভ? নাকি তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদদে এটি করেছেন? নাকি তিনি রাজনৈতিকভাবে চুপসে যাওয়া বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে গতি আনার জন্য এমনটি করেছেন? খন্দকার সাহেবের ছেলেমেয়েরা কেউ বাংলাদেশে থাকে না। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের যারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন, তাদের ছেলেমেয়েরা প্রায় সবাই বিদেশে থাকেন। এটা এখন বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। তাহলে কি খন্দকার সাহেবরা আজীবন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করার মত মতলব নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন। বাংলাদেশের বাকি ১৬ কোটি সাধারণ মানুষ জালের কাঠি?

খন্দকার সাহেবের বইয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু বিষয়ে জল ঘোলা করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যগুেলার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছেন, তারা আসলে গভীর জলের মাছ। সেই সব রাঘব বোয়ালদের আমরা কখনোই চিনতে পারি না।

বাংলাদেশে চেতনা বিক্রি করে, মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে অনেকেই দু-চার পয়সা আয়রোজগার করেছেন। এখনো করছেন। যদি খন্দকার সাহেবের জল ঘোলা করে আয় রোজগারের বিষয় থাকে, তাহলে তিনি একটি খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। ৪২ বছর পরে আপনি যতোই মেধাবী হোন না কেন, সকল ঘটনা আপনার মনে থাকবে না। ধারাবাহিকভাবে থাকবে না। আপনি ৪২ বছর পর এখন যা যা বলছেন, যেভাবে বলছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বলছেন অথবা আপনার এই লেখার পেছনে আসলে যে উদ্দেশ্যটি সবচেয়ে মুখ্য, সেটি আবারো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার কুমতলব থেকেই করেছেন। আপনার এই কুমতলবটি বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে গ্রহন করার কথা নয়।

খন্দকার সাহেব সারা জীবন ঘি খাবেন, আর একবার দুবার ঘি ভাগে না পেলেই মাথা খারাপ করে পাগলামি করবেন, আর আমরা আপনার সেই পাগলামি মেনে নেব, এটা মনে হয় পাগলের প্রলাপই হবে। আপনার উদ্দেশ্যটি অসৎ। এটি আসল কথা। আপনার মতলবটি নিয়ে এখন যতই তর্ক বিতর্ক হোক, আপনার বুড়ো বয়সের ভিমরতিতে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক দুর্নাম হয়ে গেল। লাভ হল পাকিস্তানের। আপনি পাকিস্তানকে ৪২ বছর পরেও সহযোগিতা করতে চাইছেন। তাই মিস্টার খন্দকার সাহেব আপনাকে আর গ্রহন করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ আপনাকে খারিজ করে দিচ্ছে। আপনি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে আসলে কোন পক্ষের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত ছিলেন, সেই রহস্য এখন নতুন করে গবেষণার বিষয় হতে পারে। নতুবা মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী সাহেবেরই নিয়ম অনুযায়ী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা। ওসমানী সাহেবের বদলে আপনার সেই উপস্থিতি তাহলে কি পাক সেনাদের নিরাপত্তার বিষয়টির সঙ্গে জড়িত? আপনি তাহলে কি পাকিস্তানীদেরই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সেদিন?

৪২ বছর পর আপনার মুখোশটি আসলে উন্মোচিত হয়ে গেল। আপনি এতোদিন বাংলাদেশের অনেক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও আপনার মুখোশটি আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে। আপনি আসলে পাকিস্তানের দালাল। এতোদিন মুখোশ পড়ে ছিলেন। এখন মুখোশটি নিজেই খুলে দিলেন। মিস্টার খন্দকার সাহেব, আপনার মুখোশটি উন্মোচিত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেক সুবিধা হল। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৭

কলাবাগান১ বলেছেন: "পরাজিতরা কখনোই বিজয়কে ভালোভাবে গ্রহন করতে পারে না। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে পরাজয়। "

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৯

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: আমি এই বইটি পড়ি নাই। আমার ধারণা, এই ব্লগের লেখকও পড়েন নাই। তাই না-পড়ে সমালোচনার কিছুই নাই। তবে আমি "মুক্তিযুদ্ধের কথ্য ইতিহাস" নামের একটা বই পড়েছিলাম। তাতে এ কে খন্দকার যা যা বলেছিলেন, তাই মনে হয় উনার বইয়ে লিখেছেন। যে বইয়ের কথা বলছি, সেটা ২০০০ সালে দিকে প্রকাশিত। তখন কথা হল না, আর এখন কথা হচ্ছে কেন? ঘটনা তো আর নতুন করে কিছুই ঘটে নাই, তার সুযোগও নাই।

সমস্যাটা হচ্ছে, এ কে খন্দকার যা লিখেছেন, তা এতই বিতর্কের সৃষ্টি করল কেন? করল এই জন্য যে, "মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানো" লোকেরাই তো আজ আম্লীগ। অন্যদের ভাষ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তাদের কাম্য নয়। তারা তো এমন কি ১৯৭৫ সালে তাদের ঘৃণ্য ভূমিকার জন্য আজ সমালোচিত।

সত্য যতই তিতা হোক, সত্য সত্যই!

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.