নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির শিল্পের জাদুকর ফ্রান্সের নিভৃতচারী কথাসাহিত্যিক প্যাট্রিক মডিয়ানো পেলেন ২০১৪ সালের সাহিত্যে নোবেল

১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৫:৩৮

এবার নিয়ে ফ্রান্সের ১১ জন সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কার পেলেন। আর সাহিত্যে এটি ছিল ১১১তম নোবেল পুরস্কার। আর এ পর্যন্ত ফরাসি ভাষায় মোট ১৪ জন লেখক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেলেন ফ্রান্সের নিভৃতচারী কথাসাহিত্যিক প্যাট্রিক মডিয়ানো। মডিয়ানো মূলত তাঁর লেখায় ফ্রান্সে নাৎজি দখল আর তার প্রভাব নিয়ে স্মৃতি, বিস্মৃতি, পরিচয় এবং অপরাধ বোধের হাত ধরে পাঠককে নিয়ে যান মানবজীবনের অধরা ভাগ্যের দিকে, আর উন্মোচিত করেন নাৎজি দখলকে। এর আগে ২০১২ সালে তিনি লাভ করেন ইউরোপীয় সাহিত্যে অস্ট্রিয়ার জাতীয় পুরস্কার, ২০১০ সালে লাভ করেন ইনস্টিটিউট ডি ফ্রান্সের লাইভ-টাইম পুরস্কার 'প্রিক্স মন্ডিয়াল কিনো ডেল ডুকা', ১৯৭৮ সালে 'দ্য মিসিং পারসন' উপন্যাসের জন্য জেতেন বছরের সবচেয়ে আলোচিত গদ্যের পুরস্কার 'প্রিক্স গোঁকুর্ট', আর ১৯৭২ সালে লাভ করেন 'রিং রোড' উপন্যাসের জন্য ফরাসি অ্যাকাডেমির 'গ্র্যান্ড প্রিক্স ডু রোমান ডি আই' পুরস্কার।

১৯৪৫ সালের ৩০ জুলাই প্যারিসের শহরতলি বোলোঙ্গে বিল্লাকোঁতে প্যাট্রিক মডিয়ানো জন্মগ্রহন করেন। তখন মাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। মডিয়ানোর বাবা আলবার্ট মডিয়ানো একজন ব্যবসায়ী আর মা লুইসা কোলপেঁ একজন অভিনেত্রী। মডিয়ানোর বাবা আলবার্ট ছিলেন গ্রিসের সালোনিকা শহরের বাসিন্দা, যিনি একজন ইতালীয় ইহুদি। আর মা লুইসা ছিলেন বেলজিয়ামের একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, একজন বেলজিয়ান ফ্লেমিশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁরা প‌্যারিসে মিলিত হন। তারপর তাঁরা পরম্পর প্রেমে পড়েন এবং বিয়ে করেন। বালক মডিয়ানো ছোটবেলার বেশির ভাগ সময়ে বাবাকে কাছে পাননি। মা লুইসাও অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর একমাত্র খেলার সাথী ছিল ছোট ভাই রুডি। মাত্র ১০ বছর বয়সে ছোট ভাই রুডি মারা গেলে মডিয়ানো ভারী একা হয়ে যান। যে কারণে শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ছোটকাল থেকেই মডিয়ানো ইতিহাস ও খবরের কাগজের প্রতি ভারী আকর্ষণ অনুভব করতেন। সময় পেলেই পত্রিকার ক্লিপ কাটিং করে যত্ন করে রেখে দিতেন। আর তাঁর লেখায় সেই সব ইতিহাসের চুম্বক অংশ ঘুরে ফিরে জীবন্ত হয়ে উঠত।

প্যাট্রিক মডিয়ানোর লেখায় বার বার উঠে এসেছে প্যারিসের কথা। তাঁর লেখাগুলো অনেকটা আত্মজীবনীর মত। যেখানে ধরা পড়ে প‌্যারিসের কথা, প‌্যারিসে তাঁর কাজের বিবরণ, প‌্যারিসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আগ্রাসনের ছবি। লেখার কাজে মডিয়ানো ব্যবহার করেন সংবাদপত্রের খবর, নানা গুনিজনের সাক্ষাৎকার আর নিজের দীর্ঘ দিন ধরে জমানো নানান কিসিমের নোট। মডিয়ানোর উপন্যাসগুলির মধ্যেও পারস্পরিক একটা গভীর সম্পর্ক আছে। কখনও তিনি ইচ্ছে করেই এক উপন্যাসের চরিত্র অন্য উপন্যাসে ঢুকিয়ে দেন। নিজের শহর আর ইতিহাসের নানান অধ্যায় তাঁর গল্পের মধ্যে হুটহাট ঢুকে পড়ে। মডিয়ানোর আত্মজীবনীর ঢঙে লেখা বিখ্যাত উপন্যাস 'ডোরা ব্রুডার' (১৯৯৯)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানের প‌্যারিস আগ্রাসনের সময়ে প্যারিসের ১৫ বছরের এক কিশোরীর সত্য গল্প অবলম্বনে তিনি লিখেছেন 'ডোরা ব্রুডার' উপন্যাসটি। উপন্যাসে ওই কিশোরী নাৎসী বাহিনীর হাতে ইহুদি গণহত্যার শিকার হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে প্যাট্রিক মোদিয়ানোর নাম ঘোষণা করে সুইডিশ একাডেমি। নোবেল বিজয়ের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছেন । নোবেল কর্তৃপক্ষ জানায়, মডিয়ানো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত জার্মান আগ্রাসনের সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প তাঁর বিভিন্ন লেখায় খুব নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘স্মৃতির শিল্প’ দিয়ে তিনি মানুষের ভাগ্যের সেই সব করুণ দিক গুলো বর্ণনা করেছেন, যেগুলো মুঠোয় ধরা সত্যি সত্যিই খুব কঠিন কাজ।

এ বছর নোবেল জয়ের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন জাপানের লেখক হারুকি মুরাকামি, কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, বেলারুশের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও লেখক সোয়েলনা এলেক্সিয়েভিচ এবং সিরিয়ার কবি আদোনিস। কিন্তু সবাইকে পেছনে ফেলে বাজি মাৎ করেন ফরাসি ‘স্মৃতির শিল্পের’ জাদুকর প্যাট্রিক মদিয়ানো। সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব পিটার ইংলান্ড বলেন, 'মদিয়ানোর বইগুলো যেন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে, একটি অপরটির সাথে একই সুর ও লয়ে প্রতিধ্বনি করে। তাঁর বইগুলোতে আছে স্মৃতি, পরিচয় ও গভীর ইতিহাসের অনুসন্ধান। যে কারণে তাঁর লেখা বইগুলো ছোট ছোট হলেও নানা বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঘুরেফিরে এসেছে সেই একই আখ্যানবস্তু- স্মৃতির কথা, ক্ষয়ক্ষতির কথা, পরিচয়ের কথা, সুগভীর অনুসন্ধানের কথা। এককথায় তাঁকে বর্তমান সময়ের মার্সেল প্রুস্ত বলা যেতে পারে'।

বর্তমানে ফ্রান্সে সবচেয়ে সমাদৃত লেখকদের একজন হলেন মডিয়ানো। নোবেল বিজয়ের পর নিজের সাহিত্যজীবন সম্পর্কে মডিয়ানো ফ্রান্স টুডেকে বলেন, ‘আমি আসলে জীবনে কখনো অন্য কিছু করার কথা ভাবিনি। তাছাড়া আমার কোনো ডিপ্লোমা ছিল না। সুনির্দিষ্ট কিছু অর্জনের জন্য তেমন কোনো নিবিষ্ট লক্ষ্যও ছিল না। একজন তরুণ লেখক হিসেবে শুরু করাটা সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল। আমি নিজের শুরুর দিকের বইগুলো পড়তে তেমন একটা পছন্দ করি না। কিন্তু সেই বইগুলো আমি অপছন্দও করি না। ওই সময়ের লেখাগুলোতে আমি ঠিক নিজেকে তেমন চিনতে পারি না। একজন প্রবীণ অভিনেতার যেমন তার তরুণ অবস্থার ছবি দেখে ভালো লাগে, ওই সময়ের লেখাগুলো নিয়ে আমারও ঠিক তেমন একটা অনুভূতি হয়।’

মদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস 'লা প্লাস দো লেতোয়াল' প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর। এখনো তিনি সমানে লিখে চলেছেন। চলতি মাসে তাঁর সর্বশেষ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি শিশুদের জন্য লেখার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছেন। বন্ধুর সঙ্গে একটি ছবিতে নির্দেশনাও দিয়েছেন। ফরাসি ভাষা ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিদেশি ভাষায় তাঁর বই প্রকাশ পেয়েছে। মূলত ফরাসি, ইংরেজি, স্প‌্যানিশ, জার্মান ও সুইডিস ভাষায় তাঁর বই বেশি প্রকাশ পেয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত মডিয়ানোর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে 'রু দে বুতিক অবসকিউর' (দ্য মিসিং পারসন), 'ভয়্যাজ দো নোস' (হানিমুন), 'লা রন্দ দো নুই' (নাইট রাউন্ডস), 'দু প্লু লোয়াঁ দো লুবলি' (আউট অব দ্য ডার্ক), 'দোরা ব্রুদার' (দ্য সার্চ ওয়ারেন্ট), 'লে বুলভার্দ দো সোন্তিউ' (রিং রোডস)। তিনি এককভাবে 'লাকোম্বে লুসিয়েঁ' (১৯৭৩) ও যৌথভাবে 'বোন ভয়েজ' (১৯৯৪) নামে ফরাসি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ভাষায় তাঁর উপন্যাসগুলো অনূদিত হয়েছে।

খুব তরুণ বয়সেই মডিয়ানো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে লিখতে শুরু করেন। নিজের লেখার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মডিয়ানো উনিশ শতকের ফরাসি লেখক স্তন্দালকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমি ঘটনার বাস্তবতা দিতে পারি না, তবে ছায়াটাকে উপস্থাপন করতে পারি।’ মদিয়ানোর বিভিন্ন বইয়ের সম্পাদক অঁতোয়ান গ্যালিমার্দ এএফপিকে বলেন, নোবেল জয়ের খবরে মোদিয়ানো খুব খুশি হয়েছেন। কিন্তু স্বভাবসুলভ বিনয় প্রকাশ করে বলেছেন, ঘটনাটি ‘সত্যি অদ্ভুত’। মডিয়ানো সাধারণত গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে ভালবাসেন। সাক্ষাৎকার দিতেও খুব একটা পচ্ছন্দ করেন না।



[সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, লন্ডন টাইমস, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, এপি, টেলিগ্রাফ, ইনডিপেনডেন্ট, সুইডিস নোবেল একাডেমি ও উইকিপিডিয়া।]

...........................................

১০ অক্টোবর ২০১৪

ঢাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

শুভ্র গাঙচিল বলেছেন: ভালো লাগলো। +++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.