নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বাংলাদেশে নতুন মেরুকরণ !!

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪৫

আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাসের পেছনে তাকাই, আসলে সেখানে কী দেখতে পাই? স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও এদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কি তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে? দেশের সাধারণ মানুষেরা ব্রিটিশ শাসন দেখেছে, পাকিস্তানি শাসন দেখেছে, আর এখন বাংলাদেশ শাসন কাল দেখছে। শাসকের চরিত্রের কী তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে? গুটিকয়েক মানুষের কেবল ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। সেটা ব্রিটিশদের সময়েও হয়েছিল। পাকিস্তানের সময়ও হয়েছিল। আর এখন বাংলাদেশের আমলেও হচ্ছে। মাঝখানে যুক্ত হয়েছে কিছু চেতনা নামধারী সাইনবোর্ড। চেতনা বিক্রির মলম বিক্রি করে এরা কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। পার্থক্য শুধু আগে ইংরেজরা খেতো, পাকিস্তানিরা খেতো, আর এখন বাংলাদেশীরা খাচ্ছে।

সোজা কথা শুনতে খারাপ শোনালেও ইতিহাস আমাদের সেই সাক্ষ্যই দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয় ঘর রাজাকার ছিল? বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুুষ সেই সব কুলাঙ্গারদের ভালো মত চেনে। অথচ দেশ স্বাধীনের পর আমরা রাজাকারদের লিস্ট না করে করলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। আমার প্রয়াত বাবাও একজন মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ওই তালিকায় তার নাম নেই কেন? আমার প্রয়াত মা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত রান্না করে খাইয়েছেন। ওই তালিকায় তার নাম নেই কেন? আমার প্রতিবেশী হাজার হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় নানাভাবে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। তাদের কারো নাম ওই তথাকথিত তালিকায় নেই কেন? তাহলে আপনারা কারা? যারা নিজেদের পছন্দমত এই তালিকা করলেন? আমাদের গ্রামে তো দুই একজন চিন্থিত রাজাকার ছাড়া আর সবাই দেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করেছেন। তাদের নাম আপনারা কোন অযুহাতে বাদ দিলেন? আপনারা তাদের নাম বাদ দেওয়ার কে?

স্বাধীনতা যুদ্ধের গোটা নয় মাস বাংলার পথে ঘাটে হাজার হাজার মানুষ, লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করেছে। তারা কি লড়াই করেনি? হাতে গোনা দুই চারজন রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই কেন মুক্তিযোদ্ধা হবেন না? রাজাকারদের তালিকা আপনারা কোন অযুহাতে করলেন না? আপনাদের এই অযুহাতের পেছনে কি কি খোড়া যুক্তি আছে শুনি? যুক্তি দিয়ে আপনারা কূল পাবেন না। কারণ, আপনাদের কাছে সত্যি সত্যিই কোনো যুক্তি নেই। যা আছে, তা সব খোড়া যুক্তি। শাসন করার জন্য কিছু বড় বড় কথাবার্তা বলতে হয়। তাই দিয়েই আপনারা দেশের সহজ সরল মানুষদের মগজ ধোলাই করেন। আসল ব্যাপার স্যাপার ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়।

পাকিস্তানের স্বীকৃতি পাবার জন্য আপনারা ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে আতাঁত করলেন। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, এই যুক্তিতে সেদিন নরপিচাশ টিক্কা খানের সাথে হাত মেলালেন। তখন কি একবারও মনে পড়েছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পেছনে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মাহুতি জড়িত। ত্রিশ লাখ তরতাজা প্রাণের শোক এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? তিন লাখ মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারালো। টিক্কা খানের সাথে হাত মেলানোর সময় কি একজন মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর কথাও আপনাদের মনে পড়েছিল? চুয়াত্তর সালে ইসলামী দেশগুলো যদি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশের বন্ধু হয়, তাহলে চুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষে আবার বিশ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায় কিভাবে? মাত্র তিন বছর আগের ভয়াবহ যুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করল। আর ঠিক তিন বছরের মাথায় সেই দেশে না খেয়ে, খাবারের অভাবে বিশ লাখ মানুষ মারা গেল। এই পঞ্চাশ লাখ মানুষের শোক আপনারা কিভাবে বেমালুম ভুলে গেলেন? বিশ্বের অনেক দেশ তখন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু একটা দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য কেন সেই বন্ধু রাষ্ট্রগুলো নিরব রইল?

যুক্তরাষ্ট্র খাবার দিতে রাজি হল বটে, কিন্তু একটা কঠিন শর্ত জুড়ে দিল। কি সেই শর্ত? কিউবার কাছে বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। কিউবা কে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চির শত্রু। আমরা তখন কি করলাম? কিউবায় পাট রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাবার সাহায্যের আশায় বসে রইলাম। ততদিনে দেশে মৌসুমি ফসল উঠতে শুরু করেছে। আমার দেশের কৃষক নিজেরাই দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে আবারো জিতেছে। বন্ধ হয়ে যায় খাবার না খেয়ে মারা যাবার ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পি-৮০ খাদ্য সাহায্য পাঠিয়েছিল, তা না খাওয়া মানুষের কোনো কাজে লাগেনি। তা দিয়ে শাসকদের গোলা ভরেছে। এটাই আসল সত্য। আমাদের কৃষকই খালি পেটে লড়াই করে, মাটি চষে সেখানে ফসল ফলিয়ে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। কোনো ইসলামী দেশ কেন তখন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ালো না? আমরা তো মুসলমান রাষ্ট্র হবার খুব খায়েস দেখালাম। জবাব পাওয়া যাবে না। কারণ, ইতিহাস নিজেই জবাব দিয়ে রেখেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বীজের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু খুনের আসল রহস্য জড়িত। কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিডেল ক্যাস্ত্রো সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু উল্টো কিউবায় পাট রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে আমরা হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে বৈঠক করলাম। উইলিয়াম ফোর্ডকে খুব পামপট্টি দিলাম। পাকিস্তানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি আদায় করলাম। আর নিজের কবর নিজে খুড়লাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পেছনে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সরাসরি হাত ছিল।

একটি সদ্য স্বাধীন দেশের এত বড় বড় বিপদের পর, সেই দেশটি আবার তখন নেতৃত্ব হারালো। তারপর থেকে যারাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ কখনো আর আস্থা পায়নি। বাংলাদেশের একজনই নেতা ছিলেন, তিনি শেখ মুজিব। নেতা মুজিব যখন শাসক হলেন, তখন তাঁর কিছু ভুল সিদ্ধান্তই নিজের জন্য কাল হল। দেশের জন্যও অমঙ্গল ডেকে আনলো। সবচেয়ে বিশ্বস্থ তাজউদ্দিনকে দূরে ঠেলে দিয়ে ঘাতক মোশতাককে কোলে টেনে নেওয়া হয়েছিল, মুজিবের সবচেয়ে বড় ভুল। আজকের আওয়ামী লীগ স্বীকার করুক আর না করুক, বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী পলিটিশয়ান ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নেতা। কিন্তু নেতা কি সিদ্ধান্ত নিবেন, তা তৈরি করে দিতেন তাজউদ্দিন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হুট করেই সম্পর্ক স্থাপনেও তাজউদ্দিনের দ্বিধা ছিল। কিন্তু মোশতাক ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের চর। মুজিব তাজউদ্দিনের কথা শুনলেন না, তিনি শুনলেন মোশতাকের কথা। তারপরের ইতিহাস সবার জানা।

মোশতাকের বেঈমানী ইতিহাসে নতুন মীর জাফরের খেতাব পেয়েছে। এরপর সামরিক বাহিনী থেকে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা নিলেন। পাকিস্তানপন্থীদের বাংলাদেশে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর যোগ্য নেতৃত্ব দিলেন জিয়া। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শুরুটা করেছিলেন স্বয়ং আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যে শর্তে তিনি পাকিস্তানে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলেন, এবং যে শর্তে জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করলেন, সেই শর্ত ভুট্টো একটাও পালন করেন নি। বরং ব্যক্তিগত বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের সঙ্গে, তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বতের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করা হল, সেই ভুল সিদ্ধান্তের ফলে। নইলে ৪৩ বছর পরেও কেন বাংলাদেশে চার লাখ অবাঙালি বিহারি জেনেভা ক্যাম্পে পড়ে থাকবে?

আপনারা রাজাকারদের লিস্ট করলেন না, করলেন মুক্তিযুদ্ধার তালিকা। এটাও একটা মস্তবড় গোড়ায় গলদ। আপনারা ১৯৫ জন চিন্থিত যুদ্ধাপরাধীকে বিনা বাধায় তখন ছেড়ে দিলেন। ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়। হাজার হাজার রাজাকার-আলবদর-আলসামশদের জেল থেকে বেকসুর ছেড়ে দিলেন। বললেন, আমরা পেছনের ত্যাগের কথা ভুলে সামনে অগ্রসর হব। তাই এই সাধারণ ক্ষমা। কিন্তু পরবর্তীতে কি করলেন? হাজার হাজার আওয়ামী বিরোধী মানুষকে বেআইনিভাবে জেলে ঢুকালেন। বিনা বিচারে অসংখ্য বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শদের খুন করলেন। তখন রক্ষীবাহিনী যা বলে, তাই-ই দেশের আইনে পরিনত হয়েছিল। তারপর ঘটনা যখন হাতের মুঠো থেকে ফসকে যেতে থাকল, তখন বানালেন সোভিয়েত রাশিয়ার ভাবধারায় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। যা সংক্ষেপে বাকশাল নামেই একটা কালো অধ্যায়ের জন্ম দিল। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য বাকশালের যে কর্মসূচি ছিল, সার্বিক বিচারে সেই কর্মসূচি অনেক সুন্দর। কিন্তু একটা যুদ্ধ বিধস্ত দেশে, যেখানে আবার দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ থাবা মারলো, সেখানের জন্য ওই কর্মসূচি কতোটা যুক্তিযুক্তি ও যুগোপযুগি ছিল, তা না খতিয়ে জোর করে বাকশাল চাপাতে গেলেন। জিয়া ক্ষমতায় আসার পর, দেশের মানুষ জিয়ার প্রপাগাণ্ডায় বাকশাল সম্পর্কে সত্যি সত্যিই কোনো আসল ধারণা নিতে সক্ষম হয়নি। এমন কি, বঙ্গবন্ধু'র সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, এই আওয়ামী লীগও বাকশালের কর্মসূচির ভালো দিকগুলো দেশের মানুষকে আজ পর্যন্ত ঠিকমত বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং দেশের মানুষ জিয়া ও তার পত্নী বেগম খালেদা জিয়ার বাকশাল নিয়ে যে প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়েছেন, সেই গুজব বিশ্বাস করে বসে আছে। রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে জিয়া যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন, সেই ঘটনা যেমন সত্য, তেমনি শাহ আজিজকে আওয়ামী লীগ জেল থেকে মুক্ত করেছিল, সেই ঘটনাও ইতিহাসের সাক্ষি। জিয়া মারা যাবার পর, সামরিক বাহিনীর আরেক ঘুঘু জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা নিলেন। এরশাদের বিরুদ্ধে তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, কমুনিস্ট সবাই যুগপথ আন্দোলন করলেন। ছাত্রদেরকে ভুল বুঝিয়ে সামরিক জান্তাকে উৎখাত করার ফন্দি করলেন। আন্দোলন সফল হল। স্বৈরাচার এরশাদের পতন হল। তারপর কি হল?

নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে ছাত্র-শ্রমিক-মজুর যুক্ত না হলে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলো কয়েক শো হরতাল করে, সাতদল, আটদল, পাঁচদল, তিনদল, চৌদ্দদল, আঠারোদল, কুঁড়িদল গঠন করলেও এরশাদের কিছুই হতো না। আমাদের মত ছাত্রদের তখন আন্দোলনে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রাজপথে নামালেন। আন্দোলন সফল হল। এরশাদের পতন ঘটল। কিন্তু তারপর?

তারপর তো আপনাদের মুখোশখানি ধীরে ধীরে খুলতে লাগল। জামায়াতকে কে আগে দলে টানবে এই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত আওয়ামী লীগকে রেখে পুরানো বন্ধুকেই মিত্র বানালেন। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় আসল। আওয়ামী লীগের তখন ক্ষমতায় যাবার জন্য মাথা খারাপ অবস্থা। ক্ষমতায় যাবার জন্য কারো মাথা খারাপ হবার দরকার নেই। যদি ক্ষমতাসীন শাসক খারাপ আচরণ করে, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তার পতন হবেই। এটাই বাঙালির ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। যে বাহানায় বিএনপি'র সেদিন পতন হল, সেই বাহানাটি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ঠিক হয়েছে? নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক কি শেষ হয়েছে? নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ইচ্ছা কোনো ক্ষমতাসীন দলেরই মনের কথা নয়। শুধু লোক দেখানো আন্দোলনের নামে বারবার এদেশের বোকাসোকা হাবাগোবা মানুষগুলো কিছু না বুঝেই রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়।

আওয়ামী লীগ দীর্ঘ একুশ বছর পর ছিয়ানব্বই সালে আবার ক্ষমতার স্বাদ পেল। কিন্তু দেশ কি পেল? জনগণের সামনে নতুন আরেকটা মূলা ঝুলানো হল। কি সেই মূলা? এবার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলার বিচার করবেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হল। সবাই আশায় বুক বাঁধলেন। কিন্তু বিচার শুরু হল স্বাভাবিক আদালতে। কেন বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলা পরিচালনার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হল না? আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ধারণা, বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলার মূলাকে সামনে ঝুলিয়ে আবার ক্ষমতায় আসা যাবে। কিন্তু সেই গুড়ে বালি। ততোদিনে জল অনেক গড়াল। তারপর কি হল? ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসল। এবার জামায়াত সরাসরি কেবিনেটে স্থান করে নিল। নির্বাচনের পরদিন সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী পক্ষ হত্যা-ধর্ষণ, লুণ্ঠন, জ্বালাও-পোড়াও চালালো। আর আওয়ামী লীগের নেতারা অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজেরা সুরক্ষা গর্তে গিয়ে ঢুকলেন। তাহলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এই পাঁচ বছর কি এমন করলেন যে নির্বাচনের ফুল রেজাল্ট সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের আগেই গর্তে লুকাতে হল? আওয়ামী লীগ এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলা কেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হল না, এই ব্যাখ্যাও আওয়ামী লীগ জোড়ালোভাবে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি'র সাথে জামায়াতের সখ্যতা এই কথা তো মিথ্যে নয়। আরেকটি সত্য হল, জামায়াত যদি আওয়ামী লীগের বন্ধু হতো, তাহলে জামায়াতের হাজার হাজার লাখ লাখ অপরাধ স্রেফ মাফ। এটা কোন ধরনের যুক্তি?

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের নামে কিছুই করতে হয়নি। বরং বিএনপি নিজেদের দুর্নীতি, অপরাধ, হত্যা, গুম, বিনা বিচারে আটক, জ্বালাও-পোড়াও, ধর্ষণ, বোমা হামলা, ইত্যাদি ঘটিয়ে নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছে। আবারো সেই রাজনীতির পুরান চাল? নির্বাচন কমিশন। তার সঙ্গে যুক্ত হল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে যাবার সময় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রেখে গেল, আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে তার কেন পরিবর্তন করলো না? কারণ, হল রাজনীতির মওকা। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবার সর্বশেষ অপসান রাষ্ট্রপতিই ছিল, নাকি? সেই কথা ২০০৬ সালে কেন উত্থাপিত হল? কারণ, বিএনপি ১৯৯৬ সালে যে ভুল করেছিল, ২০০৬ সালে তা নিজেরাই সংশোধন করেছে। তাই তারা এবার সরাসরি ইয়াজউদ্দিনকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারোরই আজ পর্যন্ত সদিচ্ছা নেই। এটা হল আসল সত্য। নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা নিয়ে আন্দোলন পাকিয়ে ক্ষমতায় যাবার ওটা একটা রাস্তা। এই রাস্তা এই দুই প্রধান দলের কেউ-ই হাতছাড়া করতে রাজি নয়। তাই বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়নি।

তারপর ফকরুদ্দিন-মঈনুদ্দীন দুই বছর খেলা দেখাল। সেই ভেলকিতে নতুন যোগ হল, দুই নেত্রীর রাজকীয় জেল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি'র এক যুবরাজ যা করেছেন, দেশের মানুষ কিন্তু সেই জ্বলন্ত দগদগে ইতিহাস তখনো ভোলেনি। তাই বিকল্প হিসেবে আবার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিল। মাঝখানের এই সময়টায় বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলা স্থবির হয়ে ছিল। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকার্য শেষ করলেন। কিন্তু রায় কার্যকর এখনো অর্ধেকের চেয়ে বেশি বাকি আছে। সেই অবশিষ্ট রায় কখন কার্যকর হবে, তা দেশের মানুষ কেউ জানে না। এটি আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর একটা মূলা হিসেবে ঝুলে আছে। যদি আমরা পুনরায় ক্ষমতায় আসি, তখন বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামীদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে। এটা এখন ভবিষ্যৎ কাল। কখন কোন যুগে এটা পালিত হবে কেউ জানে না। কারণ, এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। সত্যি কথা বলতে কি সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগই নেই। যেসব উদ্যোগ আছে, তা সব লোক দেখানো।

এবার আওয়ামী লীগ টের পেল শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কথা বলে বারবার ক্ষমতায় আসা যাবে না। তাহলে নতুন কোনো টাটকা মূলা ঝুলাও। সেই টাটকা মূলার নাম একাত্তরে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বাঙালি হুজুগে একটা জাতি। এই নতুন মূলায় সবাই ভারী খুশি। কিন্তু এটা যে ক্ষমতায় যাবার একটা সিড়ি, সেই কাণ্ডজ্ঞান দেশের অশিক্ষিত অবুঝ সাধারণ মানুষের নেই। বুঝলাম, আওয়ামী লীগ এবার সত্যি সত্যিই প্রাণ থেকে একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চায়। তাহলে এটা কেন আন্তর্জাতিক আদলতে তোলা হল না? তোলা হল না এই অযুহাতে যে, তাহলে দেশের মানুষের এই বিষয়ে তেমন আগ্রহ তৈরি হবে না। দেশের মানুষের আগ্রহ তৈরি হলেই কেবল তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা ঘরে তোলা সম্ভব। তাই নিজেরাই একটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এটাকে আন্তর্জাতিক আদালত বলে ঘোষণা করলেন। এবার বিএনপি মিউমিউ কণ্ঠে বলতে শুরু করলো, এটা আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। মানে আওয়ামী লীগ যা চেয়েছিল, তাই হয়েছে। এই নিয়ে সময়ক্ষেপন করার একটা যুতসই অযুহাত পাওয়া গেল। যদি যুদ্ধাপরাধীদের সত্যি সত্যিই বিচার করার আওয়ামী লীগের সদিচ্ছা হয়, তাহলে এই সময়ক্ষেপনের পেছনে যুক্তি কি? যুক্তি হল, এই সময়ক্ষেপন করেই তো একটি নির্বাচনী বৈতরণি বিনাভোটে পার করা সম্ভব হল। যদি আওয়ামী লীগের আসল সদিচ্ছা থাকত, তাহলে এই মামলা নিয়ে বছরের পর বছর তালবাহানা চলত না। তারপর এই মামলা পরিচালনার জন্য যে আইন বানানো হল, খুব ঠাণ্ডা মাথায় সেখানে অসংখ্য ফাঁকফোকর রাখা হল কেন? কেন সেই আইন পরিবর্তনের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের মত নতুন একটা বসন্ত বিপ্লবের প্রয়োজন হল? আবার যখনই দেখা গেল, গণজাগরণ মঞ্চের ভাষাই সারা দেশের সাধারণ মানুষের মনের কথা, সেটি টের পেয়েই এই মঞ্চকে ভেঙ্গে দেওয়া হল। সাধারণ মানুষ কিন্তু এইটুকু রাজনীতি বোঝার মত বুদ্ধি নব্বইয়ের পরের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন আর কিছু একটা বুঝিয়ে দিলেই মানুষ সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নামে না। একটা জিনিস খুবই সুস্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ যখন আন্দোলন করে, তখন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে। কিন্তু যখন ক্ষমতায় যায়, তখন দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া ভুলে গিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনের সরকারে পরিনত হয়। এই যুক্তির পেছনে হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালে ছাত্রদল যা করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কি ছাত্রলীগ তার চেয়ে ভালো কিছু কি করছে? যুবদল যা করেছে, এখন যুবলীগ কি তার চেয়ে ভালো কিছু করছে? চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখল, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, জ্বালাও-পোড়াও বরং কে কার চেয়ে বেশি করেছে, তা বিচার করতে গেলে গবেষণা করা প্রয়োজন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় যায়, সঙ্গে করে ছাত্রদল-যুবদলকেও নিয়ে যায়। আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় যায়, সঙ্গে করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকেও নিয়ে যায়। ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এ নিয়ে দেশের দুই প্রধান দলের কারো কোনো বিকার নেই। যেনো এরা যা কিছু করছে, তা করা তাদের জন্য জায়েজ!!!

নিজামীর মামলা অনেক দিন ঝুলে ছিল। কেন ঝুলে ছিল, সে বিষয়ে সরকার মহোদয় নিরব। মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী সর্বোচ্চ সাজা থেকে রেহাই পেল। কেন পেল? সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হবার পর সারা দেশে জামায়াত শিবির যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেই তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য ওই আপোষের রায়। রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজম সর্বোচ্চ সাজা পেল না। বয়সের অযুহাতে!!! ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর তিন লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিপরীতে গোলাম আজমের বয়স কেন বিবেচনায় আসবে? একাত্তরে গোলাম আজম কি কোনো মানবিক বিবেচনায় কাউকে ছেড়ে দিয়েছিল? তাহলে সে কেন সেই সুবিধা পাবে? তারপর ২১ প্রকারের খাবারের ধক্কল সামলাতে না পেরে বেচারা ৯২ বছর বয়সে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিতে নিতে পটল তুললো। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় গোলাম আজম এই খাবার ও চিকিৎসা পেয়েছেন। জনগণ দেশ স্বাধীন করেছিল একজন যুদ্ধাপরাধীকে আমৃত্যু রাজকীয় খাবার দাবার সাপ্লাই দেবার জন্য? এর নাম রাজনীতি?

তারপর সুযোগ পেয়ে জামায়াত সেই গোলাম আজমের জানাজা পড়ল দেশের প্রধান মসজিদে। সরকারি প্রশ্রয়ে সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে দেশের সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধীর জানাজায় রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট পর্যন্ত লোকারন্য হল! সম্ভবত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পর গোলাম আজমের জানাজায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোকারন্য হয়েছিল। এবার জনগণের মনের বিট টের পেয়ে হঠাৎ করেই আবার সাধারণ মানুষের অন্তর জয় করার অযুহাত হিসেবে তালবাহানা করে ঢিলেতালে চলতে থাকা নিজামীর মামলার আজ রায় হল। নিজামী'র সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে বটে। কিন্তু জনমনে আসল স্বস্তি নেই। কেন নেই? কারণ, এর আগে সাঈদী সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েও আপিল বিভাগ থেকে ছাড় পেয়েছে। যদি নিজামী'র ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটে?? সেকারণে আজ সাধারণ মানুষ এই রায়ে স্বস্তি পাচ্ছে না। পুরোপুরি আস্থাও পাচ্ছে না। বুকের ভেতর গোপন ব্যথা ঠুকরে উঠছে। কারণ, এর পেছনে আবার কোন রাজনীতি আছে, মানুষ এখন তাই ঠাওর করার চেষ্টা করছে।

এই যে ৪৩ বছর ধরে আমরা যে রাজনীতি দেখছি, এর শেষ কোথায়? বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি যে সাম্প্রদায়িক, তা আজ নিজামীর রায়ের সময়েও আদালত উল্লেখ করেছে। তাহলে এই জামায়াতের মত বিষ ফোঁড়া বাংলাদেশ কেন আরো বহন করবে? কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে না? জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এই যে তালবাহানা করছে, এতে সাধারণ মানুষ জামায়াতের উপর আগের মত ক্ষিপ্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের উপরও নাখোশ হচ্ছে।

কেউ যদি উচিত কথা বলে, তাহলে তাকে আদালতের ভয় দেখানোর এই খেলায় বেশিদিন জেতা যায় না। নব্বইয়ের আন্দোলনে আমার শিক্ষা জীবনে যে সেশনজট গেল, তা তো আমি ফিরে পাইনি। কিন্তু সেই স্বৈরাচার এরশাদ কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর এখন বিশেষ দূত। তাহলে রাজনীতির কলকাঠি বোঝার মত বয়স, মেধা, বুদ্ধি সবই আছে ঘটে। কিন্তু কোনো দল করিনা বলে, আমরা সবাই অনেকটা নপুসংকের মত। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সত্যটি উপলদ্ধি করেছে। মেধার কোনো দরকার নাই। যে তাদের দলের কথা বলবে সেই যোগ্য লোক!!

আওয়ামী লীগ এখন যে ভুলটা করছে, তা সময় নিশ্চয়ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। ইতিহাস কখনো বেঈমানী করে না। যে দুধকলা দিয়ে এখন আওয়ামী লীগ জামায়াত শিবির পুষছে, এই কালসাপই একদিন আওয়ামী লীগকে দংশন করবে। এমনিতে দেশ শাসনের নামে সারা দেশে আওয়ামী লীগ এখন যা যা করছে, ছাত্রলীগ যা যা করছে, যুবলীগ যা যা করছে, এই প্রাকটিস কিন্তু এমনিতেই বলে দেয়, ক্ষমতার পালাবদল কিভাবে হবে। বাংলাদেশের মানুষের সামনে বিকল্প কোনো দল নাই বিধায় এরা দায়ে পরে কেবল ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে নামানোর জন্য বিএনপিকে ভোট দেয়। এছাড়া বিএনপিকে ভোট দেবার আর কোনো যুক্তি দেখি না। আওয়ামী লীগ নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। দেশে হাজারো সমস্যা। কিন্তু কোনো আওয়ামী লীগের কোনো বন্ধু'র কথা শুনলে মনে হয়, আমরা মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা স্বর্গে বসবাস করছি। একইরকম বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি'র বন্ধুরাও এই স্বর্গে বসবাসের কথা বলত। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিএনপি'র সেই স্বর্গ টেকেনি। হাওয়া ভবনের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। তেমনি ইতিহাস ধার করে আমরা বলতে পারি, আওয়ামী লীগের নিজেদের ভেতরে এই যে দম্ভ, ধরাকে সরা জ্ঞান করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে রাজনীতি, সারাধরণ মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, ভয় দেখানো, হুমকি, খুন, হত্যা, ধর্ষণের মত কুকর্মকে প্রশ্রয় দেওয়া, এগুলো কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

আচ্ছা বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলার বাকী আসামীরা কবে নাগাদ দেশে ফেরত আসবে, এই সরকার কি তা নিশ্চিত করে বলতে পারে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হবে, তা কি আমরা কোনো কালে জানতে পারব? বাংলাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি কবে নাগাদ নিষিদ্ধ হবে, এই কথাটি কি আমরা জানতে পারি? কিছুই আমরা জানতে পারি না। সবখানে রাজনীতি। আর আমরা সেই রাজনৈতিক মূলার খপ্পরে হুদাই প‌্যাচাল পারি। এমনিতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এমন কোনঠাসায় পড়েছে যে, অনেকটা মাজা ভেঙ্গে যাবার মত। সেখান থেকে মাঝে মাঝে হাই তুলছে, চোখ রাঙাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে তাদের কোনো আন্দোলন নাই। তাদের আন্দোলন কেবল কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে। মানুষ আর সেই তপোধ্বনিতে নাচে না। কিন্তু ৪৩ বছর পর জামায়াত যখন নিজামী'র রায়কে কেন্দ্র করে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকার সাহস পায়, বুঝতে হবে জামায়াত সেই সক্ষমতা এতদিনে অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে জামায়াতের বা রাজাকার-আলবদর-আলসামশের একটি পরিবারেরও অর্থকষ্ট নেই। ৪৩ বছরে তারা সবাই ব্যবসা, সম্পত্তি, সবকিছু কামিয়েছেন। এখন জামায়াতের শুধু এককভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাওয়াটা বাকী আছে। আর সবকিছু আমাদের দুবৃত্তায়নের রাজনীতির খপ্পরের সুযোগ নিয়ে জামায়াত-রাজাকাররা করেছে। কিন্তু দুঃখ হয়, যখন দেখি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জাতীয় পতাকা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মরে যায়। আর গোলাম আজম দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়ে মরার পর, আবার জাতীয় মসজিদে তার জানাজা হয়। দেশ স্বাধীনের পর যাদের ভালো থাকার কথা ছিল, সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের না খেয়ে, অনাহারে, অর্ধাহারে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। আর রাজাকার-জামায়াত বেশ তেল-তেলে অবস্থায় আছে। সেই জামায়াতকে এখনো আওয়ামী লীগ যে সব ছাড় দিচ্ছে, ভাসুরের নাম মুখে আসলে নজ্বা নাগার মত অবস্থা আওয়ামী লীগের, এই যে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন, এটাই এই দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বিকাশের পথে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের সকল রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলো ধ্বংস করে, দলীয় লোকদের দিয়ে কেবল টার্ম অতিক্রম করা সম্ভব, ক্ষমতার পালাবদল হলে, এই লোকগুলো যে আবার চোখ উল্টাবে, নতুন দলে চলে যাবে, ভাগ বসাতে, সেই জায়গাটা আওয়ামী লীগ এখনো বুঝতে পারে না। ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মা কোনো দিন শান্তি পায়নি। ভবিষ্যতে এই ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে পাবেও না।

বাংলাদেশে শাসকদের ভাগ্যে সব সময় কেন মোটা বুদ্ধির লোকগুলো ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুর আশেপাশে জায়গা পায়, এ ভারী এক রহস্যময় ব্যাপার। এই মোটা বুদ্ধির লোকগুলোই নিজেদের স্বার্থে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। আর সময় সুযোগ মত বাইরে ভীনদেশে নিরাপদ সেকেন্ড হোমে চলে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য সত্যিকার ভাবেই যারা অন্তর থেকে যুদ্ধ করেছে, তারা কেউ ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার সুযোগ পায়নি। আর ৪৩ বছর ধরে যারা দেশ শাসন করছে, তাদের এখন সেকেন্ড হোম বলে একটা নিচ্ছিদ্র দেশ আছে অন্তরে। এদের সত্যিকার দেশপ্রেম নেই। নইলে এরা দেশের কথা ভাবত। বিদেশে সেকেন্ড হোমের কথা ভাবত না। বাংলাদেশে এরা আছে লুটপাট আর সম্পত্তি বাড়ানোর জন্য। এদের দিয়ে বাংলাদেশের আসল উন্নয়ন কোনো দিন হবে না। রাজনৈতিক মূলা দিয়ে সময়ক্ষেপন করা সম্ভব, কিন্তু কাল উত্তীর্ণ সম্ভব না। সো, সাধু সাবধান। ৪৩ বছর পর, স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের ৭২ ঘণ্টা হরতাল জাতিকে বহন করতে হবে, এ ভারী কষ্টের ব্যাপার। ৪৩ বছরেও এরা নিঃশেষ তো হয়নি, বরং ক্ষমতায় যাবার মত সক্ষমতা অর্জন করেছে। ধিক এসব রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নদের। ধিক বস্তাপচা রাজনীতি। নিজামীর রায়ের পর আজ অনেকে দিল খুলে জয় বাংলা বলতে আস্থা পায়নি। কারণ যদি সাঈদীর মত এই ব্যাটায়ও ছাড় পায়। এই যে রাজনীতি চলছে, এটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বাংলাদেশের। এটা আমাদের নেতানেত্রীদের কি কোনোকালোও বোধোদয় হবে না? জামায়াত কেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে না? সেইে প্রশ্ন আবারো রেখে জয় বাংলা বলে চিৎকার করে বলতে চাই, আবার তোরা মানুষ হ।।



২৯ অক্টোবর ২০১৪

ঢাকা

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৫৮

মদন বলেছেন: +++++++++++++

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৯

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৩৪

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: ভাই আপনি অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। সুন্দর পোস্ট কিন্তু অনেক বড় হওয়ায় মূলভাব মনে নাই। একটু সংক্ষিপ্ত হলে ভালো হত।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৯

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:১৩

খেলাঘর বলেছেন:

"মন কি, বঙ্গবন্ধু'র সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, এই আওয়ামী লীগও বাকশালের কর্মসূচির ভালো দিকগুলো দেশের মানুষকে আজ পর্যন্ত ঠিকমত বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং দেশের মানুষ জিয়া ও তার পত্নী বেগম খালেদা জিয়ার বাকশাল নিয়ে যে প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়েছেন, সেই গুজব বিশ্বাস করে বসে আছে। "

-শেখ হাসিনা বাকশাল বিরোধী।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪০

রেজা ঘটক বলেছেন: আপনার কথা বুঝলাম না...

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২

আমিনুর রহমান বলেছেন:




চমৎকার লিখা +


আমার "মা" বলেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে রাজাকার ও তাদের সহযোগী ছিলো ১% এর ও কম তাহলে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আর তাদের জন্য স্পেশাল কোটা কেনো? তখন এমন একটা মানুষ দেখিনি যে যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্তি ছিলো না। যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে সকলের জন্য শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নহে।

রাজাকারের লিষ্ট করে বাকী যারা থাকবে সবাই মুক্তিযোদ্ধা।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪১

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে.....হ্যা ঠিক বলেছেন...

৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


প্রতিটি কথায় একমত।

রাজনীতিবিদদের মুখে যখন মুক্তিযুদ্ধ আর চেতনার কথা শুনি, তখন নিশ্চিত জানি সেটি ধুকাবাজি.......

মুক্তিযুদ্ধ আর ধর্ম এখন ক্ষমতায় যাবার জন্য ব্যবহৃত রাজনৈতিক অস্ত্রের নাম।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪২

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে....বাংলাদেশে তাই হচ্ছে ভাই...

৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩

ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: আগুন পোসট++++++++++

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

খাটাস বলেছেন: ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: আগুন পোসট++++++++++

সোজা বক্সে।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৮| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫০

প্রণব দেবনাথ বলেছেন: ফাটিয়ে দিয়েছেন দাদা...+++++++++++++

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৯| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:৫২

ব্ল্যাক পাইরেট বলেছেন: বোমা ফাটাই দিলেন যে ভাই ;) ;) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.