নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আবারো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক খুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনকে (৪৯) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ (শনিবার) বেলা আড়াইটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিটিং শেষে তিনি মোটর সাইকেল টড়ে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিসংলগ্ন চোদ্দপাই এলাকায় অবস্থিত বাসার সামনে পৌঁছালে, একদল দুর্বৃত্ত তাঁকে মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পুলিশ জানায়, রাজশাহী শহরের উপকন্ঠে নিজের বাড়ি থেকে অল্প দূরে তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় হত্যাকারীরা। মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, বিকেল ৩টার দিকে রাবি শিক্ষক শফিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসা চৌদ্দপায় এলাকায় ফিরছিলেন। পথে বিহাসের কাছাকাছি এলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথ রোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রামেক হাসপাতালে নেন। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ওসি।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও হাসপাতাল এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের নিবন্ধক ডা. মমতাজ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ওই শিক্ষকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পরপরই তিনি মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ৩টার দিকে শফিউল ইসলাম বিহাসের সামনে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ কয়েকজন তাকে ঘিরে ফেলে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। মাথা ও ঘাড়ে রক্তক্ষরণের মধ্যেই তিনি একটি রিকশায় চেপে হাসপাতালের পথে রওনা হয়েছিলেন। ক্যাম্পাস লাগোয়া বিনোদপুরে এসে তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান। যেখানে অধ্যাপক শফিউলের ওপর হামলা হয়েছিল, সেখান থেকে র্যাব একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যলায়ের শিক্ষক খুনের প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
কারা কি উদ্দেশ্যে এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো স্পষ্ট কোন ধারণা দিতে পারছে না। অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম একজন লালন গবেষক ছিলেন এবং ব্যক্তিগত জীবনাচরনেও তিনি লালন দর্শন মেনে চলতেন।
নিহতের সন্তান সৌমিন শাহরিদ জাবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। ছেলের বরাত দিয়ে সংবাদদাতারা বলছেন, প্রগতিশীল চিন্তার ধারক হবার কারণে তিন বছর আগেও তাঁকে হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে এসবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা সেটা এখনই স্পষ্ট করে বলতে পারছে না পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। হত্যাকান্ডের কারণও জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, তারা তদন্তের জন্য যেসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে, তার মধ্যে একটি হলো প্রফেসর ইসলামের লালন দর্শনের চর্চ্চা।
তাঁর এক সহকর্মী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রফেসর ইসলাম ছিলেন একজন লালন গবেষক এবং একই সাথে ব্যক্তিগত জীবনেও লালনের দর্শন মেনে চলতেন তিনি। প্রফেসর ইসলাম শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আওয়ামী লীগ সমর্থক গোষ্ঠির একজন নেতা ছিলেন।
এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০০৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক এস তাহেরকে হত্যা করা হয়। প্রফেসর তাহেরও প্রগতিশীল চিন্তার অনুসারী ছিলেন। এই নিয়ে আট বছরের মধ্যে দুইজন প্রগতিশীল চিন্তার অনুসারী শিক্ষককে হত্যা করল দুবৃত্তরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলনের প্রথম জানাজা আজ শনিবার রাত নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। কাল সেখানে দাফন হবে। হঠাৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই শিক্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, ভূতাত্ত্বিক ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার ক্যাম্পাসের বাসায় হত্যা করা হয়। তার লাশ বাসার পাশের ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অধ্যাপক তাহেরের বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিন, বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের পাশাপাশি আব্দুস সালাম ও নাজমুল নামে আরো দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সালাম ও নাজমুলের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
অধ্যাপক শফিউলের বাসায় প্রতি সোমবার লালন ভক্তদের আড্ডা জমত। এক বছর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসা ছেড়ে চৌদ্দপাই এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। গত মঙ্গলবার তাঁর বাসায় সারা দেশের লালন ভক্তদের একটি মিলন মেলা বসেছিল। ভারত থেকেও লালন ভক্তরা সেই মেলায় এসেছিলেন। অধ্যাপক শফিউলের একজন সহকর্মী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ছিলেন একজন লালন সাধক। লালন সঙ্গীতের মাধ্যমে ঈশ্বর দর্শন ছিল তাঁর চর্চার ক্ষেত্র। যে কারণে তিনি কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোপানলের শিকাড় হতে পারেন।
অধ্যাপক শফিউলের তিন বিয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রী অনেক আগে মারা যান। তাঁর দ্বিতীয় সংসার ভেঙ্গে যায়। আর বাউল চর্চার কারণে তাঁর তৃতীয় স্ত্রীও আলাদা বসবাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে।
©somewhere in net ltd.