নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
২২ নভেম্বর ২০১৪, শনিবার রাত সাড়ে বারোটায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইহকাল ত্যাগ করেন এই সময়ের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক অনিল ঘড়াই। দীর্ঘ আট মাস দিন ধরে তিনি কিডনির কঠিন অসুখে ভুগছিলেন ৷মৃত্যুকালে এই লেখকের বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৭ বছর ৷
কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই ১৯৫৭ সালের ১ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার অম্তর্গত রুক্সিণীপুর গ্রামে জন্মগ্রহন কেরন ৷ তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে নদীয়া জেলার কালীগঞ্জে ৷ তিনি পড়াশুনা করেছিলেন টেলি-কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি চক্রধরপুরে রেলের ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি খড়গপুর রেলবিভাগে বদলি হন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়েতে আধিকারিক হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরিসূত্রে চক্রধরপুর ও পরে খড়্গপুরে বসবাস করতেন। ১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয় `দেশ' পত্রিকায়।
১৯৯৪ সালে তিনি দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত 'সর্বভারতীয় সংস্কৃতি পুরস্কার' লাভ করেন। নদিয়ার রাজোয়াড় বিদ্রোহ নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাস `অনন্ত দ্রাঘিমা' ২০১০ সালে `বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার' লাভ করে।
তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘নুনবাড়ি’ এবং গল্প-সঙ্কলন ‘কাক’ থেকেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য সাহিত্য সৃষ্টির যাত্রা শুরু ৷ অনিল ঘড়াই'র সাহিত্যের মূল সম্পদ হল দলিত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনচর্যা। তাঁর লেখনির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জীবনের বিস্তৃত পরিসর, মানসিক টানাপোড়েন, জীবনঘনিষ্ট খুঁটিনাটি অনুসঙ্গ। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ষাটেরও বেশি। ঔপন্যাসিক ও গল্পকার পরিচয়ের আড়ালে তিনি ছিলেন আসলে অসাধারণ এক আত্মভোলা কবি। কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম ৷ কবিতার জন্য তিনি পেয়েছেন ‘আকাশ সাহিত্য পুরস্কার’ ও ‘কবি নিত্যানন্দ পুরস্কার’৷
এছাড়া কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন 'সোমেন চন্দ পুরস্কার', 'তারাশঙ্কর পুরস্কার (২০০১)', 'মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৯৪), 'তিস্তা-তোর্সা সম্মাননা-সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা ৷
তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প-উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘পরীযান ও অন্যান্য গল্প’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘কামকুঠিয়া’, ‘ফুলপরী’, ‘জন্মদাগ’, ‘নীল দুঃখের ছবি’, ‘সামনে সাগর’, ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’, ‘বনবাসী’, ‘জার্মানের মা’, ‘লোধগ্রামে সূর্যোদয়’, 'বিপরীত যুদ্ধের মহড়া', 'চৈত্রফুল', 'নুনা সামাদের গল্প', '২৫টি নির্বাচিত গল্প', 'খেলাঘর', 'অন্তজা প্রেমের গল্প', 'বক্ররেখা', 'শ্রেষ্ঠ গল্প', 'স্বপ্নের খোড়াপাখি', 'মিঘ জীবনের তৃষ্ণা', 'কলের পুতুল', '৫১টা গল্প', 'বাবাবাসি', 'জ্ঞানবৃক্ষের ফুল', 'গর্ব দাও', 'আগুন', 'পরাধীন', 'শ্বেতপদ্ম' প্রভৃতি ৷ এছাড়া হিন্দী ও ইংরেজি ভাষাতেও তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি সমানে চালিয়ে গেছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম। আর ‘তূর্য’ পত্রিকার সম্পাদনাসহ অন্যান্য লেখালেখির কাজ।
মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা ও স্ত্রী রেখে গেছেন। গতকাল রবিবার নদিয়ার কালীগঞ্জের আদি বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই'র বাবার নাম অভিমন্যু ঘড়াই আর মাতার নাম তিলোত্তমা ঘড়াই। মানুষের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার ছিল কথাসাহিত্যক অনিল ঘড়াই'র চরিত্রের একটি অন্যতম উজ্জ্বল দিক। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য হারালো চলমান সময়ের একজন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিককে।
২০১৩ সালে আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ 'ভূমিপুত্র' প্রকাশিত হয় অন্যপ্রকাশ থেকে। বইটি বাংলা একাডেমি'র অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসে ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি। ২২ তারিখ গল্পকার রাজীব নূর (Rajib Noor) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বইয়ের কী নাম রাখছেন, রেজা ? বললাম 'ভূমিপুত্র'। রাজীবদা বললেন, রেজা, ওই নামে তো মিলন ভাই'র একটা বই আছে। কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস 'ভূমিপুত্র'। সম্ভবত ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে। আমি তো কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম, এখন কী হবে?
যাউকগা!! মিলন ভাইয়ের সাথে দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেব, এমনটা মনে মনে ভাবলাম। কিন্তু মিলন ভাইকে একথা আজ পর্যন্ত আর জানানো হল না। তাছাড়া মিলন ভাই'রটা উপন্যাস। আমারটা ছোটগল্প। কি আর করা। রাতে বাসায় ফিরে ইন্টারনেটে 'ভূমিপুত্র' লিখে সার্স দিলাম। গুগল মহাশয় তিনটি নাম শো করলো। ইমদাদুল হক মিলন, অনিল ঘড়াই আর রেজা ঘটক। আরো সার্স দিয়ে পেলাম যে, অনিল ঘড়াই'র বইটিও একটি গল্পের বই।
তখন থেকেই একটা চাপা কষ্ট আমাকে পেয়ে বসল। যে করেই হোক অনিল ঘড়াই'র সঙ্গে যোগাযোগ করে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। মনে মনে ভাবলাম, কার কাছে অনিলদা'র ইমেইল অ্যাড্রেস পাওয়া যাবে? টোকন ঠাকুর (Tokon Thaakoor), তপন বাগচী (Tapan Bagchi), জাকির তালুকদার (Zakir Talukder), শামীম রেজা (Shamim Reza), আলফ্রেড খোকন (Alfred Khokon), সায়মন জাকারিয়া (Bhab Nagar)? কিন্তু এদের অনেকের সাথে এরপর দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। কিন্তু অনিলদা'র ইমেইল অ্যাড্রেস চাইতে ভুলে গেছি। আমার ইমেইল অ্যাড্রেস আর নেওয়া হয়নি। দু"খপ্রকাশও করা হয়নি। কাল রাতে জাকির (Zakir Talukder) ভাই'র ফেসবুক স্টাটাস পড়ার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পৃথিবীতে কত যে কাজ যে সময় মত মনে পড়ে না। অনিলদা'র সঙ্গে কথা হল না। দেখা হল না। আড্ডা হল না। অথচ মাত্র ৫৭ বছর ২১ দিন কি এমন সময়? এই বয়সে এভাবে চলে যেতে হবে দাদা!!! দাদা, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার আত্মা চির শান্তি পাক, এই কামনা করি...
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৪
খেলাঘর বলেছেন:
কিডনি, বাংলাদেশের ২ কোটী মরবে এই রোগে।