নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখবর সুখবর সুখবর... আপনি চাইলেই দেশের বাইরে টাকা পাঠাতে পারবেন... তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে!!!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২২

যে অযুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসীদের দেশ থেকে বাইরে টাকা নিয়ে যাবার অনুমতি দিতে যাচ্ছে, এই অযুহাতের ভেতরে বড় ধরনের সমীকরণ জড়িত। এর পেছনে ক্ষমতা জড়িত। রাঘববোয়ালরা জড়িত। দুবৃত্ত একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত। এতোদিন হুণ্ডি বা অবৈধ পথে বাইরে টাকা যেত। এখন বৈধ পথেই দুর্নীতিবাজদের টাকা বাইরে পাচার করার চক্রের কাছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নত হল। এটি কোনো একটি দেশের মধ্যে অত্যন্ত চরম অবস্থা তৈরি হলেই কেবল সম্ভব।

কী ভয়ংকর কথা। আপনি কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেই আপনার একাউন্টে থাকা টাকা বাইরে পাচার করতে পারবেন। তাহলে দেশের দুবৃত্তায়নকে একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে চুপচাপ মেনে নিল? অবৈধ হুন্ডি বন্ধ করতে না পেরে সোজাসুজি টাকা বাইরে পাঠানোর রাস্তা করে দিতে হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক ওইসব দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে যে সব কারণ জানতে চাইবে, বা পরখ করবে, তা নিয়ে যে আরো দেনদরবার হবে না, আরো দুর্নীতি হবে না, সেই গ্যারান্টি কোথায়? অবৈধ পথে বাইরে টাকা যাবার ক্ষেত্রেও কিছু ঝুঁকি থাকে। বৈধ কাগজপত্র থাকে না। এক ধরনের আস্থা ও কোডিং সিস্টেমের উপর আস্থা নিয়েই এই অবৈধ ব্যবসা চলছে। একটা পিন নাম্বার বা একটা কোড বলতে পারলে বা দেখাতে পারলেই পাচার হওয়া টাকা বাইরে অবস্থানরত সোর্স ক্যাশ করতে পারছে।

আর এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এটাকে জায়েজ করে দেওয়ায়, অনেকে নানান বাহানা দেখিয়ে বৈধ পথেই টাকা বাইরে পাচার করবে। দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো কড়াকড়ি আরোপ করার কথা, সেখানে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়ে দুবৃত্তায়নের কাছে নতি স্বীকার করে, দুর্নীতিকে এক ধরনের ছাড়পত্র দিতে যাচ্ছে।

এমনিতে এতোদিন শুনতাম, দুর্নীতিবাজদের বাইরে সেকেন্ড হোমের কথা। এখন সেকেন্ড হোমে যাতে অনায়াসে টাকাও গিয়ে হাজির হয়, সেই ব্যবস্থা এই ঘোষণায় পাকাপাকি করা হল। আপনার বউ ছেলেমেয়ে কী বাইরে থাকে? আপনি কি দুর্নীতির টাকা বাইরে পাঠাতে চান? আপনার জ্ঞাতী গোষ্ঠীর কারো স্থানীয় খরচের ব্যবস্থা রেখে, অবশিষ্ট টাকা এখন চোখের সামনেই বাইরে পাচার করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাকে সেই নিশ্চয়তা দিতে যাচ্ছে।

একটি দেশ যখন ধ্বংসের চূড়ান্তপ্রান্তে চলে যায়, সেই দেশে যখন সততার কোনো উপস্থিতি না থাকে, দুবৃত্তায়নে সেই দেশের যখন সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চরম অরাজকতায় নিপতিত হয়, তখন সেই দেশের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এমন একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখে ফেলে দেয়? বাংলাদেশ আসলে স্বাধীন কিনা? স্বাধীন হলে দুর্নীতিবাজরা বাইরে টাকা পাচার করবে কেন? বাইরে তাদের কিসের স্বার্থ? তাহলে তাদের আসল দেশ কোনটি? তাহলে কি একটি দেশের ধারণার মধ্যে একদল মানুষ শুধু এখানে থেকে নানাভাবে ব্যবসা করে অন্যত্র পাচারেই ব্যস্ত থাকবে। আর তাদের পরিবারগুলো থাকবে ক্ষমতায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি?

দেশের কোনো বিরোধীদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একটি ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে চোখে পড়ল না। সংবাদপত্রে খরবটি তেমন গুরুত্ব পেল না। সাদামাটা খবরের মত একটি খবর মাত্র। অথচ এই খবরটি টানা একমাস সকল সংবাদপত্রের হেডলাইন হতে পারে। দেশ থেকে টাকা পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধতা দিচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলাও অনেকটা ঝুঁকির। কারণ, যাদের টাকা আছে, তাদের কাছে বিরোধিতা মানে যেচে শত্রু হওয়া। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা দুবৃত্তায়নের এমন ভয়ংকর একটি গোপন সত্য প্রকাশ করবে!!!

জামার্নির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারকে আমি শুধুমাত্র একটি কারণে খুব পছন্দ করি। হিটলার ঘোষণা দিয়েছিলেন, একটি মার্কও জার্মানির বাইরে যেতে পারবে না। আর সেটা তিনি কঠোরভাবেই অনুসরণ করতেন। হিটলারের মানিটারি পলিসি খোদ জার্মান রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত কল্যানকর ছিল। যে কারণে খুব কম সময়ের মধ্যেই জার্মানি এক শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে গোটা বিশ্বকেই চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও এই চ্যালেঞ্জ কেবল জার্মানিই দুইবার পৃথিবীবাসীকে করেছিল। যার পরিনতি দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ। লাখ লাখ প্রাণহানি।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই মোড়ল রাশিয়া আর আমেরিকা যেভাবে গোটা বিশ্বকে ভাগ করে নিল, নব্বইয়ে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতনের পর যা এখন আমেরিকার একক করায়াত্ত, যেখানে এখন নতুন সিংহ হিসেবে চিন দাঁড়িয়ে আছে। এই গোটা রাষ্ট্র কাঠামো চিন্তার মধ্যে একটা ব্যাপার খুব পরিস্কার। সেটা হল, সারাবিশ্বে দুবৃত্তায়নকে কঠোর ভাবে শক্তিশালীরা অনুসরণ করে। তাদের কাছে রাষ্ট্রকাঠামো একটি ধারণা মাত্র। তাদের কাছে বাংলাদেশ বা ইসরাইল বলতে কোনো আলাদা রাষ্ট্র নয়। তাদের কাছে পুরো গ্লোবটাই একটি মাত্র রাষ্ট্র।

মজার ব্যাপার হল, বিশ্বায়নের এই যুগে এখন বাংলাদেশেও অনেক টাকাওয়ালা নিজেদের বিশ্ব নাগরিক দাবি করতে পারেন। কারণ, এরা কিভাবে টাকা বানালো, তার চেয়ে তাদের কাছে কোথায় কিভাবে কত আমোদ-প্রমোদে জীবনযাপন করছে, কত ক্ষমতা নিয়ে জীবন উপভোগ করছে, এটাই বড় কথা। তাদের কাছে ঢাকা যা, লন্ডনও তাই। ফ্লোরিডা যা, ঢাকাও তাই। যেখানেই থাকবে গোটা দেশের রাষ্ট্রকাঠামো সেই অদৃশ্য শক্তির কাছে নতি স্বীকার করে বসে থাকে। তাদের কাছে দেশ ধারণাটি একেবারে গৌণ। ক্ষমতার ধারণাটাই একমাত্র মৌলিক ব্যাপার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সেই অদৃশ্য অশুভ শক্তির কাছে স্বেচ্ছায় পরাজয় মেনে নিয়ে, তাদের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে এখন বলছে, দেশের বাইরে টাকা নেওয়া যাবে। তার মানে, দেশের বাইরে এখন অনেকের টাকা পাচার করা খুব প্রয়োজন। তার মানে দেশের বাইরে এখন টাকা নেওয়ার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তার মানে দেশের বাইরে টাকা নেবার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তার মানে দেশের বাইরে টাকা নেবার মত একটি পক্ষ এখন খুব সচল। তার আরো হাজারো মানে। সেই সমীকরণের পেছনে গোলক ধাঁধায় হাঁটার মত সময় কোথায় সাধারণ মানুষের। তোমরা আমজনতা, আমজনতা হয়েই থাক। আমাদের বাইরে টাকা পাঠানো প্রয়োজন, তাই আইনে একটু সংশোধন আনা হয়েছে। সো, সাধু সাবধান।

...............................
১১ ডিসেম্বর ২০১৪
ঢাকা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১২

পথিক মুরাদ বলেছেন: Overseas workers are sending their remittance in Bangladesh from other country of the world, but if ever they need help from the family in any emergency , they cant get it due to one way remittance policy. You will only get , but you will not give, is not unfair?

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২০

এমএম মিন্টু বলেছেন: বাহ বাহ দেশের টাকা বিদেশে পাচারের বুদ্ধি । :P :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.