নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের সংবাদ শিরোনাম এই মুহূর্তে চার বছরের জিয়াদ!!!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২২

চার বছরের জিয়াদ খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে বিকাল সাড়ে তিনটায়। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। এখন বাজে রাত সোয়া বারোটা। মানে ঘটনা প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা আগের। রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে মাঠসংলগ্ন পানির পাম্পের গভীরতা কত? ৩০০ ফুট না ৬০০ ফুট? আসলে কত? মিডিয়া নিজেদের পছন্দমত তথ্য দিচ্ছে! প্রাইভেট চ্যানেলগুলো একটা প্রতিযোগিতায় নেমেছে, কে বেশি ভালো ফুটেজ তুলতে পারে। এরা কি সংবাদকর্মী নাকি মাস্তান? দুর্নটনাস্থলটি পুলিশ কেন ফিতা টানিয়ে ব্যারিকেড করছে না? উৎসুক জনতার ওখানে কাজটা কী?



জিয়াদের বাবা নাসিরুদ্দিন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নৈশপ্রহরী। মানে জিয়াদ গরীব বাবার হতভাগ্য পুত্রধন। ঢাকায় আজ এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে। তাপমাত্রা প্রায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। জিয়াদের গায়ে শীতবস্ত্রের করুণ দশা আমরা অনুমান করতে পারি। এই শীতের মধ্যে বেচারা এখনো জীবিত আছে, এটাই একমাত্র আশার কথা।



আমাদের ফায়ার সার্ভিসের প্রচলিত যন্ত্রপাতি সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে ব্যর্থ। বুঝুন অবস্থা। এটা স্বয়ং রাজধানীর ব্যবস্থা। যারা পাঁচবার পাইপে রশি ফেলে জিয়াদকে তোলার চেষ্টা করেছেন, তাদের ঘটে বুদ্ধি আছে বটে। আপনি একটা রশিতে কতক্ষণ ঝুলে থাকতে পারবেন? অনুমান করুন। তারপর এই শীতের মধ্যে দুর্ঘটনায় পতিত চার বছরের জিয়াদ কিভাবে সেই রশি ধরে ঝুলে উপরে আসবে, জবাবটা পেয়ে যাবেন।



যারা পাইপের ভেতরে অক্সিজেন পাঠানোর চিন্তা করছেন, তাদের জন্য বলি, পাইপে একটু ঘষা লাগলেই এই অক্সিজেন থেকে পাইপের ভেতর আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকবে। সেক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা টেকসই না হলে এটাতে ঝুঁকি অনেক বেশি। সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে পাশেই একটা বিকল্প গর্ত খুড়লে এতোক্ষণে জিয়াদকে উদ্ধার করা যেতো। এখন ক্রেন দিয়ে পাইপ টেনে টেনে কেঁটে ছোট করার যে পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে, এটা অনেক সময় সাপেক্ষ।



সবচেয়ে বড় কথা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিস এতো নিচ থেকে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য এখনো সঠিক পরিকল্পনাটি করতে পারেনি। তাই একটা ব্যর্থ হলে অন্য চেষ্টায় যাচ্ছেন। যা হয়তো জিয়াদের জন্য আরো ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জিয়াদ এখন কেমন আছে এটা জানার কোনো উপায় নেই। এতো নিচে সে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে কিনা, সেটাও সন্দেহের বিষয়। দুর্ঘটনায় বেঁচে গেলেও জিয়াদ আহত নাকি অক্ষত সেই খবর এখনো ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করতে পারেনি।

এখন ক্যাচার সেট করা হচ্ছে। এটা কতদূর কাজ করবে বলা মুশকিল। জিয়াদের জ্ঞান আছে কিনা, সেটা একটা বিষয়।



প্রধান সমস্যা হচ্ছে পাইপের মুখের দিকে ব্যাস মাত্র ১৪ ইঞ্চি। নিচের দিকে আরো কম। তারপর রয়েছে মোটর ও ছাঁকনি। পাম্পের নিচ থেকে তিন ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি সরু পাইপ ৩০০ ফুটের বেশি নিচে চলে গেছে। মাঝখানে ওই পাম্পের ওপরই জিয়াদ আটকে রয়েছে। তাই শিশু জিয়াদকে উদ্ধারের জন্য বড় কাউকে পাইপ দিয়ে নিচে নামানো যাচ্ছে না। ভেতরে থাকা তিন ইঞ্চি ব্যাসের সাড়ে তিনশ ফুট দীর্ঘ একটি পাইপ ক্রেইন দিয়ে টেনে তুলে জায়গা করা হয়েছে। ওই পথে তুলনামূলভাবে সরু নতুন একটি পাইপ ঢুকিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের একটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন জিয়াদকে উদ্ধারের নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।



আমরা চাই জিয়াদ জীবিত উদ্ধার হোক। ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বুয়েট প্রতিনিধিদল, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম, আবাল মিডিয়া ও বলদ জনতা রুখতে পুলিশ ছাড়া অন্যদের ওখানে কোনো কাজ নেই। আমাদের এই অতি উৎসাহী দর্শক আর অতি উৎসাহী মিডিয়ার ওখানে এখন কোনো কাজ নাই। এদের ওখান থেকে ডাণ্ডা মেরে সরিয়ে দেওয়া হোক। মিডিয়া যদি লাইভ কাস্ট করতে চায়, দূরবর্তী কোনো বাসার ছাদ থেকে সেটি করতে পারে। ওখানে বক্তৃতা করার কিছু নাই। শুধু ক্যামেরা তাক করে বসে থাকা। নইলে দুর্ঘটনাস্থলে টিভি ক্যামেরা নিষিদ্ধ করা হোক।



ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আমাদের সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ইউনিট জিয়াদকে উদ্ধারের ব্যাপারে তৎপরতা দেখালে বিষয়টি আরো সহজ হয়তো হতো। কিন্তু যাদের আকামের কারণে আজ এই দুর্ঘটনা ঘটল, তাদের কি হবে? শোনা যাচ্ছে, ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহজাহানপুরের পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপে শিশু পড়ে যাওয়ার ঘটনায় রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর নতুন গভীর নলকূপ স্থাপনে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর হাউসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই সাজাই কি যথেষ্ঠ?

কিন্তু পুরনো ডিপ টিউবওয়েলের মুখ বন্ধ না করেই তারা সেখানে কাজ করছিল। অথচ এ ধরনের কাজ করার সময় পরিত্যক্ত নলকূপের মুখ ঝালাই করে বন্ধ করার নিয়ম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম ভঙ্গ করে যে দুর্ঘটনার জন্ম দিল, এই দায় এখন কার?



যে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না, দুর্ঘটনাস্থলে সবকিছু পৌঁছাতে এতো দেরি হচ্ছে কেন? আজ শুক্রবার থাকায় ঢাকার রাস্তায় আজ কোনো ট্রাফিক জ্যাম নেই। জিয়াদ এক গরীব নৈশ প্রহরীর অভাগা ছেলে। তাই সবকিছুতে কী এতো দেরি? দেখার বিষয় এখন একটাই, এরা জিয়াদকে কতক্ষণে উদ্ধার করে। জিয়াদ শুধু বেঁচে থাকুক। আমরা এই প্রত্যাশাটুকু করতে চাই। জীবিত জিয়াদ উদ্ধার হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।



এই দুর্ভাগা রাষ্ট্রের কাছে এর চেয়ে আর কোনো বড় চাওয়া এই মুহূর্তে নেই। গোটা দেশবাসী জিয়াদের জন্য দোয়া করছে। প্রাণভরে দোয়া করছে, যাতে জিয়াদ জীবিত উদ্ধার হোক। আমরা আর কোনো বিকল্প এখন চাই না। সবাই জিয়াদের জন্য শুভ কামনা করেন, প্লিজ...

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৪

নতুন বলেছেন: আগে ছেলেটার বেচে থাকার জন্য বাতাস+পানিও..গরম কাপড় ( যদি ঠান্ডা থাকে... কিন্তু পানি থাকার কথা..

আগে সে বেচে আছে কিনা... তা নিশ্চিত করা দরকার আগে...

ক্যামেরা+যোগাযোগ করে কথা বলা দরকার...

বেচে থাকলে উদ্ধার করা যাবে...

বাতাস + পানি পেলে বেচে থাকবে...

এরা যেইভাবে ব্লোয়ার দিয়ে বাতাসের চেস্টা করছে...সেটা কয়েক ফুট নিচে যাবে... ৩০০ বা ৬০০ ফুট নিচে না.. :(

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৩

মাহমূদ হাসান বলেছেন: সারা দেশ একটি শিশুর দিকে তাকিয়ে,অন্যদিকে আজকেও ৫/৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়, এদেশের মানুষদের জীবনের কি কোন মূল্য নেই?
কখনো রাস্তার উপরে ডাস্টবিন, খোলা ম্যানহোল, আর কত অপরিকল্পিত জিনিস দেখব। একটা ৬০০ ফুট লম্বা পাইপ কীভাবে খোলা থাকে।
আমাদের জন্য জন্য কি কোনই সুসংবাদ নেই?

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৭

নতুন বলেছেন: মানুষের সচেতনতা দরকার

৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১২

বাংলার পথিক বলেছেন: পোষ্টটি ভালো লাগলো । বাচ্চাটিকে ঘিরে মিডিয়া তার টি আর পি বাড়াচ্ছে আর মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে মতামত দিন এইসবের মাধ্যমে ব্যবসা করে যাচ্ছে আর জনতা আছে মিডীয়াতে নিজের চেহার টুকু দেখানোর জন্য আর কিছু না ।এত চ্যানেল না গিয়ে জাষ্ট বিটীভি যাইতো আর বাকি টেভি গুলা বিটিভির টা সম্প্রচার করতো তাইলে এতক্ষণে কাজ কিছুটা হলেও আগাইতো আর ভীড়টাও কমতো না

৫| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৭

রাফা বলেছেন: কিছু বলার মত ভাষা নেই।

৬| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: আওয়ামী মিডিয়া জিন্দাবাদ (থুক্কু, জয় মিডিয়া!) কিভাবে একটা ফালতু জিনিস নিয়া সারা দেশবাসীকে দৌড়ের উপর রাখলো! যেখানে সারাদেশের মানুষের ব্যস্ত থাকার কথা শনিবার গাজীপুরে বিএনপির জনসভা নিয়া!

৭| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩০

সুমন কর বলেছেন: এরা মিডিয়া নাকি চিটিয়া !!!!!!!!!!! X((

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.