নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর: যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিক উন্মোচন!!!

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৩

এই প্রথম কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ভারতের রিপাবলিক ডে প‌্যারেটে যোগ দিলেন। তিন দিনের (২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ২০১৫) রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবারের ভারতীয় রিপাবলিক ডে প‌্যারেটে যোগ দিলেন। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দো মোদি গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তখন থেকেই দুই নেতা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন চাপ্টার খোলার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তখন মোদি ওবামার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেছিলেন প্রেসিডেন্টের গাড়িতে চড়ে। আর এবার দুই নেতা শীর্ষ বৈঠকটি করলেন পায়চারি করে। মিস্টার মোদি এবার ওবামাকে নিজ হাতে চা বানিয়ে আপ্পায়ন করেছেন। যা মিস্টার ওবামাকে অভিভূত করেছে।
মূলত চীনকে টেক্কা দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একটি কমোন এজেন্ডায় একমত। চীন বর্তমানে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইকোনোমিক শক্তিতে পরিনত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্ববাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন, তেমনি ভারত চীনের সামরিক শক্তির উত্থানকে মোটেও সুনজরে দেখছে না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমানবিক ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার সহযোগিতা পেতে আগ্রহী। পাশাপাশি ভারত আমেরিকাকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, এই পারমানবিক সহযোগিতা কোনো ভাবেই প্রতিবেশি চিরবৈরি প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়িয়ে দেবে না। বরং দুই নেতা একমত হয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা আগ্রাসনকে মোকাবেলা করার মত সামরিক সক্ষমতা অর্জন করা উভয়ের জন্য জরুরী। মিস্টার মোদি ও মিস্টার ওবামা একটি যৌথ বিবৃতি সাক্ষর করেন। ৪৫ মিনিটের শীর্ষ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল চীনকে মোকাবেলা করার কৌশল। আর সেখানে উভয় নেতাই পরস্পরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপনকে চীন অবশ্য পজিটিভলি দেখছে। চীন বলছে, যদি চীনকে বিরক্ত না করে তারা কোনো যৌথ বাণিজ্য করে তা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর মেয়াদি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি সংস্কার করতে একমত হয়েছে। এর ফলে রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয়ে এতোদিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত হলেও, গত বছর নরেন্দ্র মোদি ভারতে সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার জায়গা দখল করতে যাচ্ছে। মোদি অবশ্য দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করার কথাই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হাইডোফ্লোরোকার্বন উৎপন্ন করে বিশ্ব উষ্ণায়ন করছে যে তিনটি দেশ তারমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত সেক্ষেত্র যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। গত বছর নভেম্বর মাসে যেখানে মিস্টার ওবামার চীন সফরে বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার দিল্লী থেকে সৌদি আরবে যাত্রার প্রাক্কালে মিস্টার ওবামা ভারতে মানবাধিকার বিষযে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, ধর্ষণ, মানবপাচার, দাসপ্রথা ও কট্টর ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি তরুণ প্রজন্মকে বেশি বেশি এমপাওয়ার করার পরামর্শ প্রদান করেন। মিস্টার ওবামা বলেন, রক্তারক্তি, খুনোখুনি ও ধর্মীয় উন্মাদনা কখনোই একটি দেশের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে না। এসব বন্ধ করে উভয় দেশ পরস্পর অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো মজবুত করতে আগ্রহী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সিরি ফোর্ট অডিটরিয়ামে এক বক্তৃতা করার সময় মিস্টার ওবামা ‘নমস্তে’ দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। আর বক্তৃতা শেষ করেন ‘জয় হিন্দ’ বলে। বারাক ওবামা তাঁর ব্কৃতায় বন্ধুত্বের মোড়কে সুকৌশলে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তার গুরুদায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “ভারত তত ক্ষণই সফল, যত ক্ষণ না সে ধর্মের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।”
ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠতে পারা যে ভারত ও আমেরিকার ঐতিহ্য, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওবামা বলেন, “আমরা এমন দেশের বাসিন্দা হতে পেরে গর্বিত, যেখানে রাঁধুনির নাতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন, দলিতের ছেলে হন ভারতীয় সংবিধানের রূপকার, আর চা-বিক্রেতা হন প্রধানমন্ত্রী।” কথা প্রসঙ্গে নিজের জীবনের গল্প শুনিয়ে বলেন, 'সাদা চামড়া না-হওয়ায় অল্প বয়সে কী ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে তাঁকে। আমায় চিনতেন না, এমন অনেকে আমার ধর্মবিশ্বাস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যেন অন্য কোনও ধর্মাবলম্বী হওয়াটা অপরাধ।'
শান্তির নোবেলজয়ী মিস্টার ওবামার মতে, প্রত্যেক দেশেরই সরকারের দায়িত্ব এটা দেখা, যাতে প্রত্যেকটি নাগরিক স্বাধীন ভাবে নিজের ধর্মাচরণ করতে পারেন। এই সময়েই তিন বছর আগে উইসকনসিনের গুরুদ্বারের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলেছেন ওবামা। ভারতীয়-মার্কিন মিলিয়ে ছ’জন মারা গিয়েছিল ওই হামলায়। ওবামার মতে, ওই ঘটনা ধর্মাচরণের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল দু’দেশকে। এই সময়েই শাহরুখ খান, মেরি কম, মিলখা সিংহ, কৈলাস সত্যার্থীর নাম করে ওবামা বলেন, এঁদের প্রত্যেকের জন্যই ভারতবাসীর একই ভাবে গর্বিত হওয়া উচিত। তাঁরা কার উপাসনা করেন, তাঁদের চামড়ার রং কী, সে সব গৌণ বিষয়।
ওবামা বলেন, ভারত ও আমেরিকা যৌথ ভাবে কী কী দায়িত্ব পালন করতে পারে। যেখানে দু’দেশেই নানা জাতি-নানা ধর্মের মানুষ বাস করে। এই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারা এবং মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী, এই দুইয়েরই বক্তব্য এক ‘ধর্মাচরণের স্বাধীনতা’।
ভারত সফরে এসে বিমান থেকে নেমেই আড়াই দিনের ঠাসা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু তাঁর স্ত্রী মিশেলকে এবার তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। প্রজাতন্ত্র দিবসেও বেশির ভাগ সময়টা তিনি বসেছিলেন মুখ গোমড়া করে। মিশেলের এই ‘মুখ গোমড়া’ হওয়া নিয়ে দিল্লির অলিন্দে এখন নানান গুজব শোনা যাচ্ছে। তবে কি কোনও কাজ না থাকায় বসে বসে বিরক্ত হলেন মার্কন ফার্স্টলেডি মিশেল? নাকি বারাক ওবামার সঙ্গে কোনও বচসা হয়েছে? না কি প্রেমের সৌধ তাজমহলে যেতে না পারায় ভারী আক্ষেপ হল? সৌদি আরবের রাজা আবদুল্লার জীবনাবসানের পর ওবামা দিল্লীর আগ্রার তাজমহল সফর কাটছাঁট করে সৌদিআরব গেছেন। সেখানে গিয়েও মিশেলের নাকি বিশেষ কিছু করার নেই!
অথচ গতবার ভারতে এসে অনেক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন মিশেল। দিল্লির ক্রাফট ভিলেজে গিয়ে কেনাকাটা করেছিলেন। গানের তালে পা মিলিয়ে নেচেওছিলেন। আগ্রা সফর বহাল থাকলে এবারে তাজমহলে যেতে পারতেন ওবামা দম্পতি। অতীতে বিল ক্লিন্টন-হিলারি গিয়েছিলেন তাজমহলে। ২০০০ সালে মেয়ে চেলসিকে নিয়েও তাজে ঘুরে গেছেন ক্লিন্টন। প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি থেকে পারভেজ মুশারফ সকলেই তাজমহল গেছেন। কিন্তু বারাক ওবামা মিশেল ওবামার এবার ভারত সফরে সেটি হল না।
তাজমহলে যেতে না পাওয়ার আক্ষেপ যে মিশেলের মনে থেকে গেছে, সেটি ভারত ছাড়ার আগে স্পষ্ট করলেন তিনি। যেতে যেতে তিনি মিনিস্টার-ইন-ওয়েটিং পীযূষ গয়ালকে বলেছেন, “তাজমহলে যেতে না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে গেল। পরের বার ব্যক্তিগত সফরে ভারতে এসে তাজমহলে অবশ্যই যাব। সে বারে মেয়েদেরও নিয়ে আসব।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিক উন্মোচন করবে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে উভয় দেশ সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে চীনের আগ্রাসনকে মোকাবেলা করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য সহযোগিতা ও পারমানবিক প্রকল্পে উভয় দেশ অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে পরস্পর সহযোগিতা করবে বলে সম্মত হয়।
ওবামার ভারত সফরে একটি বিষয় কুবই সুস্পষ্ট যে, চীনকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে নতুন করে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল নিয়েছে। যা নতুন করে এশিয়া প‌্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক অস্থিরতায় উন্মাদনা ছড়াবে। বিষয়টিকে চীন যে খুব গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে, তা বোঝা যায় চীন কিভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তাঁর আসন্ন বেইজিং সফরে আপ্পায়ন করবে, তার রকামারি ঘোষণা থেকেই।

.....................................
২৯ জানুয়ারি ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৫

রাজু রহমান বলেছেন: ফেইক ছবি টা ব্যাবহার না করলেও পারতেন। লেখাটা ঠিকই ছিল, কিন্তু ছবি টা দিয়েই লেখার মান নষ্ট করলেন।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১১

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৩

খেলাঘর বলেছেন:


২৭ তারিখ, যখনওবামা ৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সাইন করছিলেন, আমাদের ১ লাখ মানুষ অসৎ ব্যবসায়ী কোকোর জানাজা পড়ছিল।

জাকির নামে পোড়া ছেলেটার জানা হয়নি, একই সময়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.