নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে রাজনীতি বাংলাদেশ নতুন নয়

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২

১৯৮৬ সাল। সে বছর মার্চ মাসের ৬ তারিখ আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। সে বছর পরীক্ষার হলে হাইস্কুলের শিক্ষকরা অনুপস্থিত ছিলেন। তখন স্বৈরাচার এরশাদ জামানা। হাইস্কুলের শিক্ষকরা তখন কি সব সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির আশায় সারাদেশে আন্দোলন করছিলেন। আমাদের পরীক্ষার হলে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, আর থানার প্রশাসন দিয়ে এরশাদ সাহেব পরীক্ষা নির্বিঘ্নে নিলেন। আমাদের পরীক্ষা যখন শেষ হল, দেখলাম মহান শিক্ষকদের সেই আন্দোলন হঠাৎ একদিন বন্ধ হয়ে গেল। সরকারের কাছে দাবি দাওয়া কতোটা আদায় হয়েছিল, কতোটা সরকার পূরণ করেছিল, তা আর আজ মনে নেই। তবে এটুকু এখন বুঝতে পারি, আমাদের এসএসসি পরীক্ষার বছর শিক্ষকদের অমন একটা অযৌক্তিক আন্দোলনের দিকে তখন ঠেলে দিয়েছিলেন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো। তখনকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যা নেতৃত্ব দিয়েছিল। তারা তখন শিক্ষকদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, আপনারা এসএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করলে সরকারের একটা টনক নড়বে।
গত শতাব্দির ১৪ বছর আর এ শতাব্দির ১৪ বছর মোট ২৮ বছর। এই ২৮ বছর পর এখন মনে হচ্ছে, তখন যারা আমাদের শিক্ষকদের জিম্মি করে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটাতে চেয়েছিল, এখনো সেই রাজনৈতিক দলগুলোর আচার আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখনো কোমলমতি ছেলেমেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা, এসএসসি পরীক্ষার সময় সেই একই রাজনীতি কাজ করছে। আমাদের জীবন থেকে ২৮ টা বছর চলে গেছে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায়, হাবভাব, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে, দুরদর্শীতায় আদৌ কোনো পরিবর্তন আসেনি। আর আমাদের সেই রাজনৈতিক দলগুলোই ক্ষমতায় গিয়ে সব সময়ই দাবি করছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে।
স্বৈরাচার এরশাদের সময় আমরা শিক্ষকদের ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যার পেছনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই মূলত দায়ী ছিল। সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নষ্ট করার সেই যে রাজনৈতিক কুমতলব, কুটকৌশল, দুষ্টুবুদ্ধি তখনো চালু ছিল, এখনো তাই আছে। এখন বাড়তি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নিরাপত্তার ইস্যু। এখন এসএসসি পরীক্ষার সময় দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার ২০ দলীয় জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল দিয়েছে। ২৮ বছরে এই একটা জায়গায় কিছু পরিবর্তন শুধু দেখা গেল। ২৮ বছর আগে সরকার হাইস্কুলের শিক্ষকদের ছাড়াই পরীক্ষা নেওয়ার মত সামর্থ রেখেছিল। আর এখন সেই একই বাংলাদেশে ২৮ বছর পর ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার হরতালের দিন পরীক্ষা না গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানে সরকারের সামর্থ আগের চেয়ে কমেছে।
আমরা যদি খুব বধির না হই, একেবারে অন্ধ না হই, একটু অনুসন্ধান চালাই, তখন দেখব, তখন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলনে নামিয়েছিল এই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সবাই একাট্টা হয়ে। ২৮ বছর পর এখন ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু বিএনপি তো সেই পূরণ অভিজ্ঞতা ভোলে নাই। বান্দর নাকি কখনো গাছে ওঠা ভোলে না। তো তখন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে যখন স্কুলের শিক্ষকদের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামিয়েছিল, তখন এই ২৮ বছর পরের কথা মাথায় ছিল না। ২৮ বছর পর যে সেই একই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সরকার ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দিতেও সামর্থ হারাতে পারে, এই বিষয়টা তখন আমাদের রাজনীতিবিদদের মাথায় ছিল না। নইলে তখন হয়তো ছেলেমেয়েদের জীবনের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতেন না।
স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়ে তথাকথিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের জীবন থেকে ছয়টি বছর সেশনজটের যে আকাল গেছে, আমাদের জীবনের সেই মহামূল্যবান ছয়টি বছর কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দেশে তথাকথিত গণতন্ত্র এনেও ফিরিয়ে দিতে পারেনি। আমাদের সবার জীবনে তাই শিক্ষাজীবন শেষ করতে ছয় বছর বেশি সময় লেগেছিল। কিন্তু যখন আমরা পাস করে বের হলাম, তখন আবার গণতান্ত্রিক সরকার কিন্তু আমাদের সবার যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। এটাই আমরা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি।
বাংলাদেশে রাজনীতিতে এত বেশি দুবৃত্তায়ন হয়েছে যে, রাষ্ট্রের কোথাও কোনো কিছু আর রাজনীতির বাইরে নাই। এখন বিএনপি বলছে, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? বিএনপি যদি আওয়ামী লীগকে হটিয়ে ক্ষমতায় যেতেই না পারলো, তাহলে ছেলেমেয়েদের এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তারা কি করবে? কিন্তু কয়েক দিন আগে মাত্র কয়েক হাজার এ লেভেল ও লেভেল পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় কিন্তু সকল আন্দোলন কর্মসূচি পরীক্ষার আওতামুক্ত ছিল। কারণ, দেশে কাদের ছেলেমেয়েরা ও লেভেল ও লেভেল পড়ে, তা কিন্তু আমরা ভালো করেই জানি। অবৈধ টাকায় যারা বাংলাদেশে এখন দাপট দেখাচ্ছে, চুরি চামারি, ঘুষ, লুটপাট, দখল করে যারা পুঁজি বানিয়েছে, তাদের ছেলেমেয়েরাই এ লেভেল ও লেভেল পড়ছে। বাংলাদেশের গোটা রাজনীতিতে এখন ক্ষমতার প্রশ্ন। কে ক্ষমতায় থাকবে এটাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর একমাত্র নসিয়ত। কি নিয়ে রাজনীতি করতে হবে তা কোনো বিষয় না। কিন্তু সবকিছু জনগণের নামে চালিয়ে দেবার যে প্রাচীন অভ্যাস তারা ধীরে ধীরে রপ্ত করেছে, সেখান থেকে এখনো মুক্তি ঘটেনি, অদূর ভবিষ্যতে যে মুক্তি ঘটবে, তার কোনো নিশানা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এবার সারা দেশে অন্তত ১৫ লাখ ছেলেমেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে। একটি পরিবারে যদি গড়ে সাত জন সদস্য হয়, তাহলে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে গোটা দেশে অন্তত এক কোটি মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্য যদি ১৮ কোটি হয়, সেখানে এক কোটি মানুষ কেবল আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ভবিষ্রৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এরা সবাই কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। কিন্তু এই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কানে যায় না। যাচ্ছে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে কি হারে বধির, তা তারা নিজেরাও জানে না। বিএনপি চাইছে এই উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে। সরকার চাইছে এই উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা যে করেই হোক সরকারের পক্ষে রাখতে। মাগার মাঝখানে ১৫ লাখ কোমলমতি ছেলেমেয়েরা পড়েছে গ্যাড়াকলে। তারা এখনো নিশ্চিত নয় কোন দিন কোন পরীক্ষা হবে। কোন বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে তারা তৈরি হবে। ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবাকে বারবার প্রশ্ন করছে, কোন বিষয় আগে পড়ব? কোন বিষয় আগে পরীক্ষা হবে, এটা তারা এখনো নিশ্চিত নয়। আমাদের মহান শিক্ষামন্ত্রীও নিশ্চিত নন কোন পরীক্ষা কখন নেবেন।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনার এই ষোষণাটি এতো দেরিতে আসল কোন যুক্তিতে? হরতালের দিন আপনি পরীক্ষা নিতে পারবেন না এটা দেশের ১৮ কোটি মানুষ জানে। আর আপনি জানেন না? পরীক্ষা নিয়ে রাজনীতি আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আগামীতেও হবে। এই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আপনার আছে। তো ছেলেমেয়েদের একটা সোজা সাপটা কথা জানিয়ে দেন, যে প্রতি শুক্রবার এসএসসি পরীক্ষা হবে। অার সে অনুযায়ী পরীক্ষার বিস্তারিত সূচি আজই জানিয়ে দিন। আর সপ্তাহের ওই একটি দিন অন্তত প্রয়োজনে প্রশাসনের সকল শক্তি প্রয়োগ করে পরীক্ষা নেওয়া নিশ্চিত করুন। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার হলে যাওয়া এবং হল থেকে বাসায় ফেরা পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। নইলে আপনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ছেলেমেয়েদের কোমল মন নিয়ে তালবাহানা করতে পারেন না।
বিএনপি না হয় ক্ষমতায় যাবার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে। আপনারাও ক্ষমতায় থাকার মোহে অন্ধ আছেন। তারা গুহা থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। আর আমাদের বেনিয়া মিডিয়া তাই প্রচারে দলবেধে নামছে। শুধুমাত্র আমাদের মিডিয়া যদি রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মূসূচি প্রচার বন্ধ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি অন্তত শতকরা ৯৮ ভাগ ফেল করবে। কারণ সাধারণ জনগণ এই মাতাল রাজনীতি আর বিশ্বাস করে না। মিডিয়া বরং রাজনৈতিক কর্মসূচি মধ্যরাতে হলেও তা প্রচার করে জনমনে এক ধরনের আতংক সৃস্টি করায় এখন সমান অপরাধ করে যাচ্ছে। রাজনীতির মত আমাদের মিডিয়াও এখন সমানভাবে এই দুবৃত্তায়নে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি যদি পরীক্ষার দিন হরতাল অবরোধ ডেকে শতকরা ৮০ বা ৯০ ভাগ দায়ী হয়, সরকার কিন্তু পরীক্ষা যথাসময়ে নিতে না পারার ব্যর্থতার জন্য বাকি ২০ ভাগ বা ১০ ভাগ দায়ী। এই দায় বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউ এড়াতে পারে না। আমাদের দুষ্টু রাজনীতি এই দায় কিছু্তেই এড়াতে পারে না।
যে বা যারা সাধারণ মানুষের উপর পেট্রোল বোমা ছুড়ছে, মিডিয়া তাকে দুষ্কৃতকারী বা দুবৃত্ত বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। এসব দুবৃত্তদের কেন সঙ্গে সঙ্গে ক্রোসফায়ার দেওয়া হচ্ছে না? পুলিশ প্রটেকশানে যাত্রীবাহী বাসেও হামলা হচ্ছে। সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপি ও তার জোট নিরীহ জনগণের লাশের উপর দিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার খেলায় নেমেছে। সরাকারও সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। মাগার সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো পক্ষই কিন্তু মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। এই হল বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের রাজনীতি। আগেও এখানে সাধারণ মানুষের লাশের রাজনীতি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আজ পর্যন্ত রাজণনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো হত্যার বিচার হয়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির নামে নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যা করার যেন লাইসেন্স পেয়েছে। পার্থক্য শুধু আগে দলগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের আগে হোমওয়ার্ক করতো। সারা দেশে জনগণের সঙ্গে ধাপে ধাপে কর্মসূচি করে, জন যোগাযোগ বাড়িয়ে তারপর আন্দোলনে যেত। এখন মাঝরাতে মিডিয়াকে ডেকে বা গুহা থেকে প্রেসরিলিজ পাঠিয়ে সরাসরি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে।
যে কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মিডিয়ায় প্রচার বন্ধ করতে হবে। এটা প্রয়োজনে আইন করে বন্ধ করুন। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মিডিয়ার কল্যানে যে রাজনীতি এখন করছে, তা আসলে রাজনীতির চরম দুবৃত্তায়ন। বিএনপিকে তাদের এই আন্দোলন থেকে সংলাপের টেবিলে ফিরিয়ে আনা ছাড়া সরকারের কাছে অন্য কোনো বিকল্প নাই। বিএনপি'র ও এই সন্ত্রাস বন্ধ করে সংলাপে বসা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। যত তাড়াতাড়ি উভয় পক্ষ সংলাপের টেবিলে বসবে, তত দ্রুত জনগণ এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থেকে স্বাভাবিক হবে। সরকার যদি মনে করে কিসের সংলাপ, কাদের সাথে সংলাপ, তা শেষ পর্যন্ত কোনো যুক্তিতে পানি পাবে না। আবার বিএনপি যদি মনে করে এভাবে সাধারণ জনগণের উপর টাকার বিনিময়ে দুবৃত্ত দিয়ে হামলা চালিয়ে আন্দোলন আরো বেগবান করা যাবে, সেই যুক্তিও পানি পাবে না। উভয় পক্ষকেই নমনীয় হয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থেই তাদের বসতে হবে। নইলে তাদের রাজনীতি মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষান করবে। অন্তত নতুন প্রজন্ম নিশ্চয়ই করবে। এখন যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে, এরা বড় হয়ে এই রাজনীতি ঘৃণা করবে। নিশ্চয়ই করবে।
যে ১৮ কোটি মানুষের সমর্থন নিয়ে আপনারা এখন রাজনীতি করছেন বলে দাবি করছেন, আপনারা কি দয়া করে একবার একটা ওপেন গণভোট করবেন, যে আপনাদের এই রাজনীতি দেশের কয়জন মানুষ সমর্থন করছে? স্রেফ কাউকে কোনোরূপ মটিভেশান না করে, প্রভাব না খাটিয়ে, সম্পূর্ণ জনগণের উপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে একটি গণভোট করবেন? আপনাদের যদি সত্যি সত্যি জনগণকে সেবা করার এতোই খায়েস, তাহলে একবার একটা গণভোট দিয়ে দেখুন। আমার ধারণা, দেশের শতকরা আশিভাগ মানুষ আপনাদের এই নষ্ট রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ জনগণের নাম ভাঙিয়ে আপনারা এই ৪৫ বছরে গোটা বাংলাদেশকে এক নরক রাজ্যে পরিনত করেছেন। আপনাদের নিজেদের যার যার আখের গোছানো হয়েছে। বিদেশে আপনাদের দলীয় নেতাকর্মীদের নিরাপদ সেকেন্ড হোম রেডি আছে। সেখানে সবার ছেলেমেয়েরা আরামে নির্বিঘ্নে নিরাপদে পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে পড়াশুনা করছে। আর আপনারা রাজনীতির নামে দেশের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে এক মহা দুষ্টু খেলায় মেতেছেন। এই খেলা দয়া করে বন্ধ করুন।
দেশের ১৫ লাখ কোমলমতি ছেলেমেয়েদের যে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে রেখে আপনারা যে রাজনীতি করছেন, এটা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। আপানাদের রাজনীতির খেলায় কে জিতবে তা নিয়ে দেশের সাধারণ জনগণের কোনো লাভ হবে না। সত্যি সত্যিই হবে না। কেবল আপনাদের লাভ হবে। যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা লুটপাট করবেন, চুরিচামারি করবেন, সরকারি সম্পত্তি ভোগদখল করবেন। মাগার সাধারণ নিরীহ জনগণের তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। আমরা নিরাপদে নিজেদের কাজকর্ম করতে চাই। ছেলেমেয়েরা নির্বঘ্নে পড়াশুনা করতে চায়। নিরাপদে পরীক্ষা দিতে চায়। এই সামান্য চাওয়া নিয়েও আপনাদের নষ্ট রাজনীতির স্বীকার আর আমরা হতে চাই না।
আপনারা জনগণকে নিরাপদে রেখে, জনগণকে দুর্ভোগ না দিয়ে কিভাবে রাজনীতি করবেন, কিভাবে ভাগাভাগি করবেন, কিভাবে লুটপাট করবেন, সেজন্য নতুন করে কৌশল ঠিক করেন, নতুন কোনো ফর্মুলা বের করেন। আপনাদের সেই রাজনীতি নিয়ে সাধারণ জনগণের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু দয়া করে আপনাদের এই তামাশার রাজনীতি বন্ধ করুন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, কোমলমতি ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার সময়সূচি দয়া করে হরতাল অবরোধ মুক্ত শুক্রবার নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। নইলে এসব ছেলেমেয়েরা যখন আর কিছুদিন পর ভোটার হবে, সেই ভোটগুলো যখন আপনারা চাইতে যাবেন, তখন যে কোনো রাজনৈতিক দলের মুখে তারা কিন্তু থুথু ছিটিয়ে দিতে পারে। সেই থুথু থেকে বাঁচার আগে এখনই কিছু একটা করুন। নইলে নতুন প্রজন্ম কিন্তু আপনাদের সকল রাজনৈতিক দলের সকল অপকর্মকে তীলে তীলে মনে রাখছে। যার একদিন এই বাংলাদেশে ধাপে ধাপে বিচার হবার সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতএব সাধু সাবধান।

.....................................
১ লা ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) বলেছেন: কী আর করবেন?

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

খেলাঘর বলেছেন:


এত বড় লেখা? পড়তে পারবো না।

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫১

ভোরের সূর্য বলেছেন: আসলে দুদলই সমান দ্বায়ী। এবং কেউ এর দায়ীত্ব এড়াতে পারেনা। আমি আওয়ামীলীগ বা বিএনপি নিয়ে কথা বলবোনা কিন্তু আপনিতো ২৮বছর পরের কথা বলছেন। আমরা আসলে খুব তাড়াতারি ভুলে যাই কিন্তু ১৯৯৬ সালেও আওয়ামীলীগের অসহযোগের সময় এসএসসি পরীক্ষা প্রায় ১মাস পিছিয়েছিল আর এখন কিনা তারাই বিএনপি কে ব্লেম দিচ্ছে।

জানিনা আমরা কবে এই দুদলের হাত থেকে রক্ষা পাবো। কবে এদের রাজনীতির খেলা বন্ধ হবে আমাদের মতন আমজনতাকে নিয়ে।

৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দেশের শিক্ষার মান কি কিছু বলুন? এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এস এস সি পরিক্ষা নিয়ে রাজনীতি নতুন না হলে ও ।।

ধারাবাহিক ভাবে নিয়মিত ঘোষনা দিয়ে প্রশ্ন পত্র ফাঁস কিন্তু এই সরকারের আমলেই এক্সক্লুসিভ ।

৬| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৩

মহান অতন্দ্র বলেছেন: গল্পের ছলে চমৎকার লেখা। সেই সাথে সামাজিক সমস্যা ও সচেতনতা ভাল লাগল ।

৭| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমাদের জীবন থেকে ২৮ টা বছর চলে গেছে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায়, হাবভাব, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে, দুরদর্শীতায় আদৌ কোনো পরিবর্তন আসেনি। সহমত।। ব্লগে আসার উৎসাহই ছিলেন আপনারা।। আজ হারিয়ে গেছেন।। কিন্তু রয়ে গেছে আপনাদের প্রত্যয়ী মনোভাব।। হোক না তা যে কোন দলীয় বা নির্দলীয় দৃষ্টিতে।।
আর নির্দলীয়দের কথাই বা বলি কি করে,তারা পড়ে আছে এককোনে।। ধন্যবাদ।।

৮| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন। সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.