নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলার ডায়েরি (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!!

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:১৩

৩ তারিখ বইমেলায় যেতে পারিনি। আমার বইয়ের মেকআপ নিয়ে রাত এগারোটা পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম। ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বুধবার। বইয়ের মেকাআপ শেষ করে প্রিন্টকপি নিয়ে বইমেলায় পৌঁছাতে চারটা বেজে গেল। বইমেলায় ঢোকার মুখে প্রথমেই গেলাম উদ্যানে বইমেলার প্রধান অংশে। মাধবদার সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা মারলাম। সেখানেই দেখা হল কমরেড লেখক রুদ্র সাইফুলের সঙ্গে। মাধবদা আর রুদ্র আমার বইটি কিভাবে কি করলে ভালো প্রিন্ট আসবে, সে বিষয়ে ভারী জ্ঞানগর্ব পরামর্শ দিলেন। তথাস্তু।
তারপর গেলাম সোজা বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় লিটল ম্যাগ চত্বরে। নন্দন স্টলে বইপত্র সাজালাম। আজও কোনো বেচাবাট্টা নাই। কিন্তু জাম্পিস আড্ডা হল বটে। দেখা হল লেখক স্বকৃত নোমানের সঙ্গে। নোমানের সঙ্গে আড্ডা মারার সময় সেখানে আসল শিল্পী চারু পিন্টু। এই সময় আড্ডায় যোগ দিলেন চিরনীল দম্পতি। কবি নীলসাধু ও শিমুল ভাবী। শিমুল ভাবী বললেন, আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ট করেছি, অ্যাড কইরেন নইলে খবর আছে! ফেসবুকে নীলসাধু আর শিমুল ভাবী লিওনার্দো আর কেট উইন্সলেট নামে পরিচিত। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, অ্যাড না করে কী উপায় আছে! বইমেলা থেকে বাসা পর্যন্ত যাবার সময়টুকু দেন, দয়া করে। কিছুক্ষণ পর আড্ডায় হাজির হল কবি মামুন খান ও তার বাংলা ভিষণ চ্যানেলের পুরো গ্যাং। আমাদের পুরো আড্ডা ততক্ষণে জমে উঠল। এই সময় দেখা হল বন্ধু কবি কবির হুমায়ুনের সঙ্গে।
পিন্টু জানতে চাইল, লিমনের নাটকের বইটা আসছে কিনা? বললাম, হ্যা, স্টলে আছে। পিন্টু ছুটে গেল নন্দন স্টলে। নাট্যনির্মাতা, নাট্যকার ও অভিনেতা ফরহাদ লিমনের নিরীক্ষাধর্মী মুক্তনাট্য সমগ্র-১ আজ মেলায় এসেছে। পাওয়া যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে নন্দন স্টলে। বইটিতে মোট পাঁচটি নাটক আছে। নাটকগুলো হল- ভুঁই, পাদুকা বিস্তার, হায় বৃক্ষ, ওলট পুরাণ ও ঢিমেতাল। অভিনন্দন ফরহাদ লিমন।
এই সময় আড্ডা থেকে আমাকে ছুটিয়ে নিল বন্ধু মোশতাক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার ও কবি মোশতাক আহমদ। এবার পাঠসূত্র থেকে প্রকাশ পেয়েছে মোশতাকের কাব্যগ্রন্থ 'ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। পাঠসূত্রের এবারের প্রডাকশন খুব সুন্দর হয়েছে। মোশতাক আমাকে 'ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি'র একটি কপি গিফট করল। আহা সাধু সাধু। নতুন বই গিফট পেলে খুব আনন্দ লাগে। আর তা যদি হয় কবি বন্ধুর কাছে থেকে, তো সোনায় সোহাগা...
এবার পিন্টু, মোশতাক আর আমি চা খেতে একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে বাইরে গেলাম। সেখানে দেখা হল বদরুল ভাইয়ের সঙ্গে। কবি বদরুল হায়দার। বদরুল ভাই একটা দৈনিক পত্রিকা ধরিয়ে দিলেন। দৈনিক বাংলা ৭১। বদরুল ভাই জানালেন, এখন থেকে নিয়মিত বইমেলা নিয়ে তিনি এই পত্রিকায় লিখবেন। পত্রিকাটি চার পাতার হলেও বদরুল ভাই এটার ব্যাক পেইজে একেবারে বাম কোনায় একটা স্পেশাল বক্সে নিয়মিত বইমেলা নিয়ে লিখবেন, এটাই আমাদের কাছে বেশ খুশির খবর। বদরুল ভাই হলেন এখনো ডিজিটাল যুগে আমাদের এনালগ ঋষি কবি। কারণ বদরুল ভাই ফেসবুক ব্যবহার করেন না। যা লেখেন, হাতে কলমেই লেখেন।
চা খেয়ে মোশতাক উদ্যানে গেল, পিন্টু আর আমি আবার লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরলাম। যেতে যেতে পিন্টু বলল, দাদা, আমার একটা কভার আমাজন প্রকাশ করেছে। পিন্টুকে কংগ্রাচুলেট করলাম। বহেড়াতলায় এবার বসার ব্যবস্থা নেই। বর্ধমান হাউজের সিড়িতে তখন আড্ডা দিচ্ছিলেন মানিকজোড় লেখক ঋষি এস্তেবান ও কবি সাফি সমুদ্র এবং তাদের দলবল। আমরা গিয়ে ওদের দলে ভিড়লাম। সেখানে অনেক আড্ডার পর আমি একটু একা একা মেলা প্রাঙ্গনে ঘুরতে বের হলাম।
বর্ধমান হাউজের সামনে এবার একটি স্পেশাল স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকল বই ব্রেইল মেশিনে ছাপানো স্পাইরাল করা। যারা অন্ধ, তাদের বিশেষভাবে পড়ার জন্য যে ব্রেইল পদ্ধতিতে বই ছাপানো হয়, তাদের জন্য বাংলা একাডেমি এবার একটি স্টল বরাদ্দ করেছে দেখে খুব ভালো লাগলো। স্টলে ছিলেন মিলন ভাই। মিলন ভাই কালো গ্লাস পড়া। চোখে দেখেন না। ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে পড়াশুনা করছেন। ঢাকার বাংলা কলেজ থেকে মিলন ভাই এবার পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স পড়ছেন। মিলন ভাই খুব সুন্দর আবৃত্তি করেন। ব্রেইল করা বই থেকে কিভাবে পড়েন, জানতে চাইলে, মিলন ভাই একটা বই হাতে নিয়ে নিজের হাতের তর্জনি আঙুল ঘষে ঘষে আমাকে বেশ কিছুক্ষণ পড়ে শোনালেন। বইটির নাম, প্রকাশক, মূল্য, এবং প্রথম পাতা থেকে একটা অংশ। তারপর ব্রেইল করা আরেকটা পাতা থেকে আঙুল ঘষে ঘষে আবৃত্তি করলেন কবি নুরুন্নাহার শিরীনের 'রক্ত পদ্য' কবিতাটি।
আমি খুব অবাক হলাম। বইগুলোর পৃষ্ঠা সব সাদা। কিন্তু সবগুলো পৃষ্ঠাই ব্রেইল করা। আমি হাত দিয়ে সেগুলো টের পেলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। আর মিলন ভাই আঙুল টেনে টেনে ভারী অনায়াসে পড়ে যাচ্ছেন। মিলন ভাই বললেন, এখনো বাংলাদেশে অন্ধজনদের জন্য পর্যাপ্ত পড়াশুনা করার মত বই নেই। কারণ, অন্ধজনের পড়ার জন্য বইটি বিশেষ উপায়ে ব্রেইল আকারে প্রকাশ করতে হয়। সেই ব্রেইল করা সাদা পৃষ্ঠায় আঙুল টেনে অন্ধজন অনায়াসে পড়তে পারেন। জানতে চাইলাম, অনার্স মাস্টার্সের সব বই কি ব্রেইল করা? কিভাবে আপনি একাডেমিক কোর্সগুলো সম্পাদন করেন?
মিলন ভাই জানালেন, এজন্য তাদের এক বিশাল যজ্ঞ করতে হয়। ক্লাসরুমে রেকর্ডার নিয়ে যান। সেই রেকর্ড শুনে শুনে ক্লাসে স্যারদের ক্লাসগুলো ফলো করেন। এছাড়া বন্ধুদের দিয়ে বইটি পড়িয়ে সেটি রেকর্ড করে নেন। সেই রেকর্ড শুনে শুনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের সকল পাঠ্যবইয়ের একটা ব্রেইল ভার্সান প্রকাশ করা। তাহলে আমাদের অন্ধজন সেই বই অনায়াসে পড়তে পারবেন। বাংলাদেশে হেলেন কিলার ফাউন্ডেশানের একটি শাখা আছে ঢাকার ধানমন্ডিতে। সেখানে আমি মাঝে মাঝে যেতাম। আমার বন্ধু গল্পকার তুহিন সমদ্দার ওখানে চাকরি করতো। তুহিন চাকরি ছেড়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানাতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আমার আর হেলেন কিলার ফাউন্ডেশানে যাওয়া হয় না।
এই সময় মাইকে বাংলা একাডেমি ঘোষণা করছিল, মেলার স্টল বন্ধ করার শেষ সময় রাত সাড়ে আটটা। রাত নয়টার পর স্টলের লাইট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাত নয়টার পর কেউ মেলা থেকে বই নিতে পারবে না বা স্টলে বই রাখতে পারবে না। নন্দনের স্টলে গিয়ে বইপত্র গোছাতে গোছাতে মোবাইলের টাইম মেশিন বলছে সময় রাত আটটা দশ। আমি নন্দন থেকে উদ্যানে আরেকবার ঢু মারার জন্য দ্রুত বের হলাম। একাডেমি'র সামনে মেইন রাস্তায় এসে পেলাম কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ভাইকে। দুলাল ভাই এক মহা ঝামেলায় পড়েছেন। তার সকল লেখা মেইলে রাখা। দুলাল ভাই জিমেইল ব্যবহার করেন। কিন্তু টরন্টো থেকে ঢাকায় আসার পর আর মেইল চেক করতে পারছেন না। কোনো লেখাও উদ্ধার করতে পারছেন না। অনেকগুলো বইয়ের মূল স্ক্রিপ্ট এখন আটকে আছে মেইলে। আমরা হেঁটে হেঁটে উদ্যানের মেলায় ঢুকছিলাম। দুলাল ভাই বললেন, আসার সময় তিনি টেলিফোন সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে এসেছেন। টেলিফোন সেটটি সঙ্গে আছে। জিমেইলে সাইন ইন করার সময় পাসওয়ার্ড দেবার পর কোড চাচ্ছে। সেই কোড ফোনে আসার কথা। টেলিফোন সংযোগ আপাতত বন্ধ থাকায় কোড পাওয়ার আর কোনো বিকল্প নেই! অন্য কোনো ইমেইল অ্যাকাউন্টেও লেখাগুলো জমা করেননি। তাই দুলাল ভাইয়ের খুব মন খারাপ।
এই সময় গাছপালার মধ্যে আবছা আলোতে চাদর মুড়ি দেওয়া একজন ভূতের মত হঠাৎ এসেই দুলাল ভাইকে জাড়িয়ে উপরে তুলে ধরলেন। দুলাল ভাই আর আমি দুজনেই কিছুটা কিংকর্তব্যবিমুঢ়! এ কোন ভূতরে ভাই! দুলাল ভাই অনেকটা চিৎকার দেবার আগেই ভূত মাথা থেকে চাদর সরিয়ে নিজের চেহারা জাহির করলেন। কবি ও গল্পকার আহমেদ মুজতবা মুর্শেদ। মুর্শেদ ভাই আবেগ-আপ্লুত ভাষায় বললেন, অনেকদিন পর দেখা হওয়ায়, দুলাল ভাইকে এভাবেই স্বাগতম জানালাম। হা হা হা...
ততক্ষণে আমাদের ভূতের ভয় কেটে গেছে। মুর্শেদ ভাই টিএসএসির দিকে গেলেন আর আমরা উদ্যানের মেলায় ঢুকলাম। উদ্যানে ঢুকে দুলাল ভাই অন্যপ্রকাশের দিকে গেলেন আর আমি গেলাম শ্রাবণের দিকে। রবীন নাই। সেখানে দেখা হল জাকির ভাইয়ের সঙ্গে। জাকির তালুকদারকে হেরিকেন ধরিয়ে খুঁজছে আমাদের রম্যলেখক পলাশ মাহবুব। দুপুরে পলাশ আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল, রেজা ভাই, জাকির ভাইরে তো খুঁজে পাচ্ছি না। জাকির ভাইয়ের আর কোনো নাম্বার আছে কিনা? বললাম, না, নাই। হতে পারে জাকির ভাই কোনো আন্ডারগ্রাউন্ডে আছেন এখন। কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে জাকির ভাই প্রায়ই ঢু মারেন। সেখানে থাকতে পারে। পলাশ জিগাইল, পামু কেমনে? কইলাম, তুমি সৈকতকে ফোন কর। পলাশ বলল, সৈকত ভাইয়ের নাম্বার নাই। আমাদের বন্ধু কবি সৈকত হাবিব কনকর্ডে প্রকৃতি নামে একটা প্রকাশনা দিয়েছে। সেখানে জাকির ভাই সময় সুযোগ হলেই আড্ডা মারতে যান। সেই আন্দাজে সৈকতের নাম্বার দিলাম পলাশকে। শুনে জাকির ভাই বললেন, ওই সময় সময় টেলিভিশনে আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিল। তখন আমার মোবাইল বন্ধ ছিল। একটু আগে পলাশের মামলায় হাজিরা দিয়ে আসলাম। হা হা হা...
জাকির ভাই মেলা থেকে বের হলেন। আমি ছায়াবীথিতে ঢু মারলাম। ছায়াবীথিতে পেলাম আমার গল্প সংকলন 'পঞ্চভূতেষু'র প্রকাশক জাহাঙ্গীর আলম সূজনকে। সূজন বলল, চলেন ভাই, বাইরে গিয়ে দুই ভাই দুইটা সিগারেট খাই। আমরা মেলা থেকে বাইরে আসলাম। সূজন বলল, বেচাবাট্টার খুব বাজে অবস্থা। এভাবে চললে তো ভাড়াই উঠবে না। ছায়াবীথি এবার দুই ইউনিটের স্টল পেয়েছে। ভ্যাটসহ বাংলা একাডেমি প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ নিয়েছে। সেই দুশ্চিন্তা সূজনের মাথায়। সত্যি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে প্রকাশকদের এবার ভাড়ার টাকা তুলতেই কুরবানী হয়ে যাবার দশা!!!
সূজনকে শান্তনা দিতে বললাম, মেলায় ১০ তারিখ পর্যন্ত বইপ্রেমীদের ভিড় একটু কমই থাকবে। তবে আগামী শুক্রবার থেকে মেলা জমে উঠতে পারে। আর তখন বইবিক্রি ঠেকায় কে!!! আমাদের রাজনৈতিক নেতারা তো বইপত্র পড়েন না। দেশের সাধারণ মানুষ বইমেলায় এসে স্বাচ্ছন্দে বই কিনবেন, সেই নিরাপত্তাও পাচ্ছেন না। রাস্তায় চলন্ত বাসে পোট্রোল বোমা ছুড়ে মারা হচ্ছে। বই কিনতে এসে কে চায় লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে?
১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থী আর অমর একুশে বইমেলার কথা চিন্তা করে বিএনপি'র উচিত তাদের সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলন পিছিয়ে দেওয়া। বা অহিংস আন্দোনের উপায় বের করা। নইলে ভবিষ্যতে এই ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরিবার এবং অমর একুশে বইমেলায় যারা প্রকাশক তারা কোন সাহসে বিএনপিকে ভোট দেবে? বিএনপি করে এমন প্রকাশকদের কথাও নিশ্চয়ই সূজনের মত। যে জনগণের ভোটে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাবেন, তারা যদি পেট্রোল বোমা ছুড়ে সেই জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্নের ভেতরে যে গলদ আছে, একথা হয়তো বিএনপি নেতৃত্ব এখনো বুঝতে পারছে না। তাহলে এই দলটি জনগণের কথা বলে, জনসেবার কথা বলে কিভাবে আবার মানুষের দুয়ারে যাবে, সেটি এখন আঠারো কোটি বাংলাদেশীর প্রশ্ন হতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কৌশল কি হবে, তার জন্য তো আমরা নিরীহ সাধারণ মানুষেরা রাস্তায় বের হয়ে বলি হতে পারি না। সরকারের উচিত বিএনপিকে সন্ত্রাসি কার্যক্রম থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া। সরকার যদি মনে করে, সাধারণ মানুষ পেট্রোল বোমায় যত মরবে, তত বিএনপি'র ভোট কমবে, আওয়ামী লীগের ভোট বাড়বে, সেই কৌশলও কিন্তু ভুল। কারণ, সরকারে থেকে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কাজ। সরকার সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তাই বিএনপি ও তার জোট যদি লাগাতার অবরোধ হরতাল দিয়ে ভুল রাজনীতি করে, পাশাপাশি সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটও কিন্তু সেই ভুল রাজনীতিই করছে।
রাজনৈতিক বিরোধীতা যদি দেশের সাধারণ মানুষকে অবাধে হত্যা করে আদায় করা বা সেখান থেকে জনপ্রিয়তা পক্ষে টানার কৌশল হয়, সেই কৌশল কোনো ভাবেই রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। আমাদের দেশের রাজনীতিকদের সেই জ্ঞান কবে হবে আমরা জানি না। বাসায় ফিরে নিউজে দেখলাম, গাজিপুরে একটি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে। অনেকেই অগ্নিদগ্ধ। হায়! আমরা কিসের মধ্যে বাস করছি!! আমাদের মত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ভাবনা নাই। তাদের সবার একমাত্র ভাবনা ক্ষমতা! ওরে ক্ষমতা, তোর কত শক্তিরে ভাই। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। আমরা ক্ষমতার কাছে আর কোনো ভিক্ষা চাই না। সত্যি সত্যিই চাই না। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

....................................
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:

"সরকারের উচিত বিএনপিকে সন্ত্রাসি কার্যক্রম থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া। "

-সন্ত্রাসী কার্যক্রম যে শুরু করেছে, তাকে টেবিলে ডাকতে হয় না, তাকে থামাতে হয়; সরকারকে সেটাই করতে হবে।

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৩৮

লিখেছেন বলেছেন: priyo, reza da, apnar diary lekhar ei mohoti uddogke sadhubad janai,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.