নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার প্রথম শুক্রবার। বইমেলা শুরু হয়েছিল সকাল এগারোটায়। চলেছে রাত নয়টা পর্যন্ত। সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ছিল শিশু প্রহর। শিশুদেরজন্য ছিল চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা। এবার শিশু প্রহরে শিশুরা একটু কম এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিএনপির ডাকা অবরোধ ও হরতালের কারণে শুক্রবার-শনিবার বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকছে। তাই অনেক অভিভাবকের ইচ্ছে থাকলেও বাচ্চাদের নিয়ে শিশু প্রহরে আসতে পারেনি।
যথারীতি বইমেলায় ঢোকার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মারলাম। পাঠসূত্র এবারের বইমেলায় যে সকল নতুন বই প্রকাশ করছে সেগুলোর প্রডাকশান মান আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পাঠসূত্রের নির্বাহী প্রকাশক তনুজা আকবর জানালেন, স্টলের দুই পাশে বড় বড় দুই প্রকাশক থাকায় পাঠসূত্র এবার বইপ্রেমীদের অনেকের দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাঠসূত্রের ডানপাশে পরেছে পাঞ্জেরী আর বামপাশে দিব্যপ্রকাশ। ফলে বড় প্রকাশকদের স্টলে যে পরিমাণ বইপ্রেমীরা ভিড় করছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে পাঠসূত্রকে।
ছেট প্রকাশকদের জন্য এমন বিড়াম্বনার বিষয়টি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। বইমেলায় যেহেতু জায়গা সংকুলান নেই। সুতরাং প্যাভেলিয়ন যেমন আলাদা আলাদা জায়গায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, বড় প্রকাশকদেরও বইমেলার উদ্যানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেওয়া উচিত। নইলে ছোট প্রকাশকদের অনেক ভালো বই, অনেক সময় বইপ্রেমীদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান কেবল বাংলা একাডেমি করতে পারে।
বারোটায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে গিয়ে নন্দনের স্টল খুলে বসতেই আসলেন গবেষক ও লেখক রণোদীপম বসু। রণোদা বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলেন। রণোদা আমার গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু' কিনলেন। কিছুক্ষণ পর আসলেন নীলসাধু। আসলেন কামরুল ভাই (কামরুল ইসলাম)। রণোদা আবার ছবি তোলার জন্য বেড়িয়ে গেলেন। রণোদা জানালেন, আজ বইমেলায় এসেছেন মূলত ছবি তুলতে। নীলসাধুও আজ ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছেন।
কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম শিল্পী চারু পিন্টু, লেখক ও হরিজন গবেষক জয়শ্রী বীথি'র সঙ্গে। কিছুক্ষণ পর আমাদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিলেন চিরনীল দম্পতি নীলসাধু ও শিমুল মাসুদ। নীলসাধু আমাদের চারজনের ছবি তুললেন।
আমরা চা খাওয়ার জন্য একাডেমির বাইরের রাস্তায় আসার পথে দেখা হল শাকুর ভাইয়ের (লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্থপতি শাকুর মজিদ) সঙ্গে। শাকুর ভাইয়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরেই দেখা হল রিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে (অভিনেতা শাহরিয়ার খান রিন্টু)। রিন্টু ভাই পুরো পরিবার নিয়ে বইমেলায় এসেছেন। ন্যান্সি ভাবী জোর করে গরম পিঁয়াজো খাওয়ালেন। রিন্টু ভাইদের সঙ্গে আড্ডায় জড়িয়ে পিন্টু আর বীথিকে হারিয়ে ফেললাম। ওরা আগেই রাস্তায় বের হয়েছে। আমরা রিন্টু ভাইয়ের মেয়ে রোদেলার অনুরোধে, ছবি তুলতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছি। আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন কবির ভাই। জাহাঙ্গীর ফেরদৌস কবির। কবির ভাই জানালেন তার শ্বশুর বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ। আমরা বাকেরগঞ্জের গল্প করলাম বাইরে এসে চা খেতে খেতে।
আসার পথে রোদেলা বায়না ধরল মুখোশ কিনবে। মেলার ধুলো থেকে বাঁচার জন্য নাক বাঁচানোর মুখোশ বিক্রি করছিলেন লোকটি। ওনার বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইনটি বেশ চমৎকার। 'ধুলো বালি খাবেন না। ধুলো বালি খাবেন না'। সবার মুখের সামনে মুখোশটি একবার ঘুরিয়ে যখনই এই শ্লোগান দিচ্ছেন, 'ধুলো বালি খাবেন না। পাঁচ টাকা পাঁচ টাকা। ধুলো বালি খাবেন না'। যা রোদেলার খুব ভালো লাগলো। ন্যান্সি ভাবি সবাইকে মুখোশ কিনে দিলেন। আহা, ধুলো বালি খাবেন না। আমরা চা খেতে খেতে আসল লিমন। নাট্যনির্মাতা, নাট্যকার ও অভিনেতা ফরহাদ লিমন। এবার বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে লিমনের নিরীক্ষাধর্মী মঞ্চনাটক সমগ্র-১।
ন্যান্সি ভাবী জানালেন, শুক্রবার বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকায় আজ শিশু প্রহর ধরতে পারলেন না। হরতাল অবরোধ থাকায় এখন শুক্রবার ও শনিবার বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকছে। আমরা চা খেতে খেতে দেখলাম মুহূর্তে মেলায় ঢোকার লাইন দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে গেছে। রিন্টু ভাই ও ন্যান্সি ভাবী বললেন, এই লাইন ঠেলে আর ভেতরে ঢুকবেন না। লিমন আর আমি আবার একাডেমি প্রাঙ্গনে ঢুকে নন্দনের স্টলে বসলাম। লিমনকে বললাম, তুই কিছুক্ষণ দোকানদারি কর। আমি একটু আড্ডা দেই। লিমন বলল, দাদা আমার কিন্তু দোকানদারিতে খুব ভালো ভাগ্য। লিমন ওর বাবার অনেক পুরানো দিনের গল্প শোনালো। আসলেই লিমনের ব্যবসা ভাগ্য খুব চমৎকার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও একটা বই বিক্রি করল। উত্তরবঙ্গ সিরিজ।
আমি আড্ডা দিতে আবার শিল্পী চারু পিন্টুর সঙ্গে যোগ দিলাম। পিন্টু আর বীথি জানাল, আমি চায়ের দোকান পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই ওরা আবার মেলায় ঢুকে পড়েছে। এই সময় আমাদের আড্ডায় যোগ দিলেন আটলান্টা থেকে আসা কবি ও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক রুদ্রশংকর, জ্যোতি ও মণি। রুদ্রদা আমাকে তার প্রেমের কবিতা ও তার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত আবৃত্তির সিডি 'অচেনা হাতে' গিফট করলেন।
রুদ্রদা চা খেতে চাইলেন। বললাম, লম্বা লাইন। চা খেতে বাইরে গেলে ভেতরে ঢুকতে অনেক সময় লাগবে। পিন্টু বলল, বাংলা একাডেমি কেন্টিনে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা চার পরিবর্তে কফি পেলাম। কফি শেষ করে ফেরার পথে দেখা হল লাকী ভাইয়ের সঙ্গে। কবি জায়েদ হোসাইন লাকী। লাকী ভাই আমাতে তার কবিতার বই 'ভালোবাসা উড়ে যায় পাখির ডানায়' গিফট করলেন। বইটি প্রকাশ করেছে জয়তী পাবলিকেশানস। নন্দনের স্টলে ফিরে এসে আমি রুদ্রশংকরকে দিলাম আমার গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু'।
কিছুক্ষণ পর আসলেন লেখক দম্পতি কুমার চক্রবর্তী ও মনিকা চক্রবর্তী। মনিকা নানান অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। মনিকার এবার একটি নভেলা প্রকাশ পাচ্ছে শুদ্ধস্বর থেকে। 'যখন ভেসে এসেছিল সমুদ্রঝিনুক'। বন্ধুরা মনিকার নভেলা সংগ্রহ করতে পারো।
বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকনের কবিতার এক ভক্ত খোকনের দুইটা বই 'সাধারণ কবিতা' ও 'মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ' কিনে নিলেন। আরেক ভদ্রলোক এসে কিনে নিলেন আমার গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু'। আজ বেচাবিক্রি ভালো। ভারী চমৎকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে বইয়ের দোকানদারি করতে এসে। ভাবছি, এই অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে একটা বই লিখব।
একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে নন্দনের স্টল বন্ধ করে উদ্যানে আসলাম। বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। ছুটির ঘণ্টা বাজে বাজে। মাধবদার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে মেলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ এসে পেলাম কবি জাফর আহমেদ জাফর, কবি ফিরোজ এহতেশাম ও টাইগার দোয়েলকে। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে দোয়েল, ফিরোজ আর আমি এক বাসে চড়লাম।
..................................
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩
শায়মা বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো!!!
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪০
ফিল্ড মার্শাল গালিব বলেছেন: আফসোস থেকেই গেল। নবীন তাই আমার পান্ডুলিপি কোন প্রকাশনী ই পড়ে দেখল না আর টাকার অভাবে বইটাও প্রকাশ করতে পারলাম না।