নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলার ডায়েরি (৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫১

আজ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার। অমর একুশে বইমেলার নবম দিন। বইমেলায় ঢুকতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা হল কবি আয়শা ঝর্না, কবি ফারুক ও মোজাম্মেলের সঙ্গে। আজ ঐতিহ্য থেকে মেলায় এসেছে বিশ্বের নারী কবিদের কবিতার অনুবাদ নিয়ে আয়শা ঝর্নার কাব্যনুবাদ 'নারীস্বর'। ৩৪ টি দেশের নারী কবিদের কবিতা আছে বইটিতে। আছে এশিয়া, আমেরিকা, মিডল ইস্ট ও সাউথ আফ্রিকার কবিদের কবিতা। ঝর্না জানালেন, বিভিন্ন দেশের নারী কবিদের চিন্তার জগতে উঁকি মারতে গিয়েই এই অনুবাদে আকৃষ্ট হয়েছেন। বিশ্বের আরো যেসব নারী কবিদের কবিতা ঝর্নার ভালো লাগে, সেগুলোর অনুবাদ আগামীতে আসবে। আশা করি ঝর্নার কাব্যনুবাদ বন্ধুদের ভালো লাগবে।
লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনে গিয়ে নন্দনের স্টলে বই সাজিয়ে ঝর্নাদের সঙ্গে চা খেতে যাই একাডেমির ক্যাফেতে। তার আগে ঝর্না আমার গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু' কিনে নিলেন। বাংলা একাডেমির ক্যাফেতে চা কেবল ওদের তালিকায় আছে বটে, বাস্তবে নেই সেই চায়ের কোনো অস্তিত্ব টের পেলাম না। সেখানে বিক্রি হচ্ছে নানান কিসিমের খাবার। এমন কি পাটিসাফটা পিঠাও আছে। তবে কফি পাওয়া গেল। ঝর্নার সঙ্গে আমার সরাসরি পরিচয় পাঠসূত্র আমলের শুরুর দিকে, ২০০৭ সালে। ২০০৮ সালে পাঠসূত্র থেকে বের হয়েছিল ঝর্নার কবিতার বই 'চারকোল'। বর্তমানের পেট্রোলপোড়া রাজনীতিতে আমার মত ঝর্নার মধ্যেও পথেঘাটে, রাস্তাঘাটে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। তাই আলো থাকতেই ঝর্না উত্তরায় বাসার উদ্দেশ্য চলে গেলেন।
লিটল ম্যাগ চত্বরে শুরু হল আমাদের রোজকার আড্ডা। ভিন্নচোখের প্রকাশক ও এন্টিম্যাটার লেখক আলী আফজাল খান, বাস্টার্ড-এর লেখক মহান ঋষি এস্তেবান, শিল্পী চারু পিন্টু আর আমাকে চা খাওয়াতে বাইরে নিয়ে আসলেন। আমরা চা খেতে খেতে পুলিশ ভাইদের সঙ্গে আড্ডা দিলাম। পুলিশ ভাইয়েরা জানালেন, তারাও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারাক্ষণ এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরে আবার পিন্টু আর আমি গেলাম উদ্যানে ঘুরতে। অনেক ছোটবড় বইয়ের স্টলে ঢু মারলাম। দেখা হল কবি শহিদুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে। ঘুরতে ঘুরতে গেলাম অনুপ্রাণন প্রকাশন-এ। সেখানে ক্যামেরা নিয়ে ওৎ পেতেছেন কুহক মাহমুদ। পিন্টু আর আমি কুহক ভাইয়ের ক্যমেরার শিকার হলাম।
উদ্যানে বইমেলার প্রধান অংশে ঘুরতে ঘুরতে আবিস্কার করলাম বাংলা একাডেমির আরেকটি অবদান। নামাজি বইপ্রেমীদের জন্য উদ্যানের পূর্বপাশে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজ পড়ার জন্য পাশাপাশি আলাদা আলাদা দুইটি জায়গা বরাদ্দ করেছে এবার বাংলা একাডেমি। সেদিন বাংলা একাডেমির নতুন ভবনের পঞ্চম তলায়ও দেখলাম এমন ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলা একাডেমির অবদান সত্যি মনে রাখার মত বটে।
বইমেলায় বইয়ের ক্রেতা তেমন চোখে পড়ল না। টেলিটকের সিম কেনার লাইন আর প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টারদের সংখ্যার তুলনায় মেলায় বইপ্রেমীদের সংখ্যা কি কম না বেশি, সেটা বরং সাধারণ দর্শকদের জন্য একটা মজার ধাধা হতে পারে। আচ্ছা বলুন তো, হরতাল অবরোধ পেট্রোলপোড়ার দেশে এবার অমর একুশে বইমেলায় টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার আর টেলিটকের সিম কেনার দর্শকদের চেয়ে বইয়ের ক্রেতা বেশি না কম? অথচ বাংলা একাডেমি এবার ৬০ বছর পূর্তি পূরণ করেছে। ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মেলার প্রথম চারদিন ছিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। যেখানে ২৯টি দেশের কবি সাহিত্যিকরা এসেছিলেন। কেমন ছিল বাংলা একাডেমির সেই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন? কেউ যদি আমাকে এমন প্রশ্ন করেন, আমি ভাই আমাদের আদালতের মহামান্য বিচারকদের মত সেই প্রশ্নে ভারি বিব্রতবোধ করব। কারণ, বাংলা একাডেমি বিদেশি কবি লেখকদের সঙ্গে বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মের কবি-লেখকদের কোনো আড্ডার ব্যবস্থা করেনি। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সেই গৎবাধা সেমিনারের আয়োজন ছিল। সেখানে দেশের বড় বড় মন্ত্রী বাহাদুরেরা গেস্ট ছিলেন। মিডিয়ার কিছু রিপোর্টার ছিলেন। আর ছিলেন বাংলাদেশের কিছু নামিদামি কবি লেখক। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের কোনো কবি বা লেখকের কাছে বিগত নয়দিনে একটা নতুন গল্পও শুনলাম না। তাহলে এমন নামকাওয়াস্তে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন করে বাংলা একাডেমি আসলে গোটা বাংলাদেশকে কি উপহার দিল? তরুণ প্রজন্মের লেখকরা বা এই সাহিত্য সম্মেলন থেকে কি পেল?
আমাদের বাংলা একাডেমি কি আদৌ কোনো পরিকল্পনা সুন্দর করে করতে জানে? ৬০ বছরে একটা প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান হবে না, এটা বিশ্বাস করা যায় না। চারদিন ব্যাপী একটা আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করল বাংলা একাডেমি, আর দেশের তরুণ প্রজন্মের যারা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত তারা কেউ একদম কিছু জানল না, কিচ্ছু শিখল না সেখান থেকে, কিচ্ছু পেল না সেখান থেকে, এমন অকর্মন্য বাংলা একাডেমি পুষে আমাদের আসলে কি লাভ হচ্ছে!!
বাংলা সাহিত্যের কোন কোন লেখকের ইংরেজি বা অন্য ভাষার অনুবাদ বিদেশি লেখকদের সামনে তুলে ধরল এবার বাংলা একাডেমি, আমরা কিন্তু কিচ্ছু জানি না। শুধু বিদেশ থেকে কিছু কবি সাহিত্যিককে বিমানভাড়া দিয়ে এনে পাঁচতারা হোটেলে রেখে চারদিন প্রাগৈতিহাসিক মার্কা সেমিনার করে রাষ্ট্রের কি কি দায় মেটাল বাংলা একাডেমি? আমাদের বুজুর্গ মুরব্বি লেখকরা বা কেন তরুণ প্রজন্মকে এই সাহিত্য সম্মেলনে যোগদানের ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দিলেন না বা নিরব ভূমিকা পালন করল? তাদের কি কোনো গোপন ইন্টারেস্ট আছে? নইলে দেশের তরুণ প্রজন্ম কিভাবে এত বড় একটা আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে? প্রশ্নের পিঠে আরো প্রশ্ন উঠবে। সোজা কথায় স্বয়ং ভগবান রাগ দেখান। সো সাধু সাবধান।
লিটল ম্যাগ চত্বরে ফিরে আড্ডা হল শিল্পী ভব, কবি শহিদুল্লাহ সিরাজী, কবি নীলসাধু, কবি কবির য়াহমদ, কবি সরসিজ আলীম, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি আলোড়ন খিসা, কথাসাহিত্যিক মণিকা চক্রবর্তী প্রমুখের সঙ্গে। শিল্পী ভব বইমেলায় ঘুরে ঘুরে লালনের পোস্টার বিক্রি করছেন। শিল্পী চারু পিন্টু'র করা লালনের পোট্রেট এটা। দাম ৫০ টাকা। লালনভক্তরা পোস্টারটি ভব'র থেকে বা নন্দন স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
আজ মেলায় এসেছে কথাসাহিত্যিক মণিকা চক্রবর্তীর নভেলেট 'যখন ভেসে এসেছিল সমুদ্রঝিনুক'। বইটি প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর। বন্ধুদের সংগ্রহ করার অনুরোধ রইল।
মেলা থেকে বের হতেই ফোন করলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি টোকন ঠাকুর। কালী মন্দিরের গেটে আমরা মিলিত হলাম। ঠাকুর পরিচয় করিয়ে দিলেন কবি জয়ন্ত চক্রবর্তীর সঙ্গে। উদ্যানে বইমেলার প্রধান গেট ততক্ষণে বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার মানে আজ আর কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবে না, কেবল বের হতে পারবে। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে ঠাকুর আর আমি চলে গেলাম যথারীতি ধ্রুবদার বাসায়। ধ্রুবদা জানালেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ বইমেলার চাপ কিছুটা কমবে। আমরা কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে বাসায় চলে আসলাম।


..................................
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ মজা তো বইমেলায় , আমিও আসব নিজের বই , মেঘ বালিকার দেশে এর মোড়ক উম্মুচনে ১লা ফাগুন ।

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৬

রেজা ঘটক বলেছেন: অভিনন্দন পরিবেশ বন্ধু।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৫

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: 'পঞ্চভূতেষু' একটি রিভউ পোস্ট দিলে ভাল হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.