নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলার ডায়েরি (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!!

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:০৩

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার। আজ অমর একুশে বইমেলায় গেছি সাড়ে চারটায়। ছিলাম মেলার শেষ পর্যন্ত। যথারীতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটু ঢু মেরে চলে যাই একাডেমির লিটল ম্যাগ চত্বর। গোটা বিকেল মেলায় আগত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি। ফাঁকে ফাঁকে বই বিক্রি করেছি। আজ পাঁচটি বই বিক্রি করেছি। তিনটি আমার গল্পের বই, একটি লিমনের নাটকের বই, আরেকটি নন্দন পত্রিকা।

আজকের লিটল ম্যাগ চত্বরে আড্ডা ও দেখা হয়েছে যাদের সঙ্গে তারা হলেন- শিল্পী চারু পিন্টু, কবি কাজী টিটো, কবি সাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, লেখক ও গবেষক জয়শ্রী বীথি, কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি ও সম্পাদক নীলসাধু, কবি কবির হুমায়ুন, কবি অমিতাভ পাল, কবি ও প্রকাশক আলী আফজাল খান, রিয়াজ ভাই, রানা ভাই, তুলা ভাবী ও দুই কন্যা, কবি মারিয়া রিমা, মেধা, কবি শহিদুল্লাহ সিরাজী, কবি তপন বড়ুয়া, কবি সরসিজ আলীম প্রমুখ।

বইমেলায় আজ উপস্থিতি ছিল মোটামুটি। কিন্তু বইপ্রেমীদের মধ্যে বই কেনার তেমন কোনো তাড়া ছিল না। এ বছর সম্ভবত বইয়ের চেয়ে অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে ফুল বিক্রি বেশি হচ্ছে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরানো বই, পাইরেসি বই ও বারোয়ারি জিনিসের মেলা বসেছে জাকিয়ে। প্রশাসনকে টু পাইস দিয়ে বইমেলার সময় প্রতিবছরই এই কম্মটি হরহামেশা হয়। এটি নিয়ে লিখে বাংলাদেশে কোনো লাভ নেই। কারণ সরকারের প্রশাসন যা চায়, অমর একুশে বইমেলা ঠিক সেভাবেই চলে।

মজার ব্যাপার হল, আজও একাডেমির মূল মঞ্চে বিকালে প্রথম অধিবেশনে ছিল যথারীতি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। আমি বেশ কয়েকবার সেখানে উকি দিলাম, দেখলাম দর্শক সারির চেয়ে মঞ্চে আলোচকের সংখ্যা বেশি!!! ফাঁকা চেয়ারের উদ্দেশ্যে মহান বক্তাগণ চমৎকার লিখিত বা মুখস্থ বক্তৃতা করছেন। মাভৈ মাভৈ। সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে ছিল যথারীতি গানের অনুষ্ঠান। কান্ট্রি সং থেকে শুরু করে নজরুল গীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, পাঁচ মিশেলি গান।

টিএসসি তে আজ বিকালে ছিল একটি প্রতিবাদ সমাবেশ। ইরানি লেখক আলি দাশতি'র বই বাংলায় প্রকাশ করার দায়ে হেফাজতে ইসলামের নালিশের জবাবে বাংলা একাডেমি কর্তৃক রোদেলা প্রকাশনীকে বইমেলায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধের প্রতিবাদে, প্রগতিশীল কবি, লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশক ও সচেতন সর্বস্তরের পাঠকদের প্রতীকি সমাবেশ আয়োজন করে।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদ থেকে জানা যায়, ইরানি লেখক আলি দাশতির মূল ফার্সিগ্রন্থ ‘বিস্ত ও সেহ সাল’ এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে ‘মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত’ করায় নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান। পাশাপাশি গত কয়েকদিনে নানাভাবে তিনি জীবননাশের হুমকিও পাচ্ছেন। রিয়াজ খান জানিয়েছেন, তার গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাবাজারের পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ।

এসব দাবির পেছনে জামায়াতে ইসলামী এবং নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদসহ জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে সরকারের একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাবাজারে রোদেলা প্রকাশনীর বিরুদ্ধে সামনের কাতারে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মাকতাবাতুল আশরাফের কর্ণধার হাবিবুর রহমান খান।

বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদে দাবি করা হয়, ''বাংলাবাজারে রোদেলা প্রকাশনীর দোকানে হামলা, গোডাউনে তালা লাগানোর মতো ঘটনা প্রকাশক জগতে এই প্রথম। মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান খান কামরাঙ্গীরচর থেকে প্রকাশিত মাসিক রহমতের পূর্বসংস্করণ মাসিক জাগো মুজাহিদ পত্রিকার প্রস্তুতিকালীন সময়ে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই পত্রিকাটি নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিত ছিল''।

বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদে বলা হয়, ''গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা যায়, সরকারের বিরুদ্ধে একটি মহল যেকোনও মুল্যে চলমান অবরোধ-হরতালের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষকে রাজপথে নামানোর পরিকল্পনা করছে। এ কারণেই বাংলা একাডেমিতে স্টল নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও বিষয়টিকে নিয়ে আরও বড় করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিবাদী কোনও গোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মতেই আন্দোলনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে গোয়েন্দাসূত্রে''।

বাংলা ট্রিবিউনকে রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান বলেন, ''প্রথম কথা হচ্ছে, আমি একজন বংশগতভাবে মুসলমান এবং ইমানদার মানুষ। নিজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি, রোজা রাখি। আমার বাবা-মা, স্ত্রী সবাই ধর্মপ্রাণ। ফলে, আমি বুঝতে পারছি আমার এই অনাকাঙ্খিত ভুলে যেকোনও মুসলমানমাত্রই কষ্ট পাবেন। আমি নিজেও এই গ্রন্থটি দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। অনুতপ্ত হচ্ছি। তওবা করছি বারবার। এরকম ভুল যেন আর না হয় আল্লাহ। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এই গ্রন্থটি এবারের বইমেলায় প্রকাশিত প্রায় ৪০টি বইয়ের প্রায় শেষ মুহূর্তের গ্রন্থ, যা আমি নারায়ণগঞ্জ বসবাসকারী কবি ওয়াহিদ রেজার অনুরোধে প্রকাশ করি। আমি বইমেলার কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, ওই সময় পর্যন্ত আমি ৩০টির মতো বই নিজে পড়েছি, দেখেছি। কিন্তু বইয়ের কাজ শেষ করার প্রায় শেষ দিকে, ওয়াহিদ রেজা অনুরোধ করেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ইরানের একজন লেখকের একটি গ্রন্থ যেন প্রকাশ করি। আমি ওয়াহিদ রেজাকে বিশ্বাস করি। আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তার গ্রন্থও আমি প্রকাশ করেছি। কিন্তু তিনি আমাকে জানালেন, শেষ মুহূর্ত হলেও সমস্যা নেই। পুরো বইটি তিনিই দেখবেন। প্রয়োজনে দশবার প্রুফ ও সম্পাদনা করবেন''।

রিয়াজ খান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, ''এখানে বলে রাখি যে, অনুবাদকদ্বয় আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী দুজনকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং জানি না। ওয়াহিদ রেজাই আমাকে বললেন- খুব ভাল অনুবাদ করা হয়েছে। আপনি নিশ্চিত হয়ে প্রকাশ করতে পারেন এবং গ্রন্থটি স্বত্বাধিকারীও কিন্তু ওয়াহিদ রেজা''।

রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশিত সেই বিতর্কিত বইয়ের লেখক আলি দাশতি'র জন্ম ১৮৯৬ সালে ইরানের বুশেহর রাজ্যের দাস্তেস্তান জেলার একটি গ্রামে। তিনি শিয়া ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন। ট্র্যাডিশনাল শিয়া ধর্মের শিক্ষা পেলেও জীবনের বিভিন্ন সময়ে আলি দাশতি পশ্চিমা দুনিয়ার সংস্পর্শ পেয়েছেন। আলি দাশতিকে বলা যায় আধুনিক ইরানের মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদের প্রাণপুরুষ। বেশ কয়েক বছর তিনি রেজা শাহ পাহলভি'র পার্লামেন্টে তিনবার সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আয়াতুল্লাহ খোমেনির বিপ্লবের সময় ১৯৭৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধারণা করা হয় যে, ১৯৮৩ সালের কোনও এক সময় বন্দি অবস্থায় তিনি মারা যান। অভিযোগ রয়েছে, খোমেনি সরকারের নির্যাতনেই তার মৃত্যু ঘটে। সত্তরের দশকে তিনি ‘বিস্ত ও সেহ সাল’ গ্রন্থটি রচনা করেন। লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে গ্রন্থটির ইংরেজি সংস্করণ ‘২৩ ইয়ার্স, এ স্টাডি অব প্রোফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ’ নামে প্রকাশিত হয়।

ফার্সিতে অভিজ্ঞ এক কওমি মাদ্রাসার লেখক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘রোদেলার দুই অনুবাদক আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী সম্ভবত ইংরেজি ভাষা থেকেই বইটির বঙ্গানুবাদ করেছেন। মূল ফার্সির ধারে কাছেও তারা যাননি। এমনকি অনুবাদকরা আলি দাশতির নামটাও ভুলভাবে লিখেছেন। তারা লিখেছেন ‘আলি দস্তি’। অথচ ফার্সিতে তার নাম লেখা ফার্সি অক্ষর শিন দিয়ে, সিন দিয়ে নয়। ইংরেজি থেকে ভুল-ভাল মেরে দিলে যা হয় আর কি!’

এমনিতে আমাদের লেখক প্রকাশকদের বাংলাদেশে কোনো একক শক্তিশালী প্লাটফরম নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু লেখক সংগঠন, কয়েকটি প্রকাশক সংঘটন রয়েছে। তবে রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির ব্যাপারে লেখক বা প্রকাশকদের কোনো সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। নামী দামী লেখক-প্রকাশকদের কেউ এখনো এ বিষয়ে কোনো রূপ বিবৃতি দেননি। সবাই মুখে এক ধরনের কুলুপ এটেছেন। তবে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক লেখক ও প্রকাশক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও প্রকাশ করার বিরুদ্ধে বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্ত একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে বলে অনেকে মতামত ব্যক্ত করেন। যে বইটি প্রকাশক ইতোমধ্যে প্রকাশনা ও বইমেলার স্টল থেকে প্রত্যাহার করেছেন, তারপরেও বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ থাকায় এই উদ্বেগ আরো বেড়েছে।

আমরা চাই, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ শিঘ্রই রোদেলা প্রকাশনীকে অমর একুশে বইমেলায় স্টল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি প্রকাশক রিয়াজ খানের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করবে। হেফাজতে ইসলামের দৃষ্টিতে আজ রোদেলা প্রকাশনী আক্রান্ত হওয়ায় যারা মুখ বুজে আছেন, তারা যে জিনিসটি বুঝতে পারছেন না, যে কাল হয়তো সেও আক্রান্ত হবেন। নিজে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এমন চুপ করে থাকার সংস্কৃতি বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের একটি কৌশল হিসেবে নিয়েছে অনেকে। যা মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও প্রকাশের জন্য এক ধরনের নতি স্বীকারের সামিল। একটি বিশেষ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অযৌক্তিক দাবির মুখে বাংলা একাডেমি কর্তৃক রোদেলা প্রকাশনীর উপর নেওয়া পদক্ষেপ মুক্তচিন্তার উপর আঘাতের সামিল।

আমরা চাই, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ অভিভাবক হিসেবে লেখক-প্রকাশকদের পাশে দাঁড়াবে। রোদেলার স্টল খুলে দেবে এবং রোদেলার উপর আরোপিত আগামী বছরের নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেবে। যে বইটি নিয়ে আপত্তি এসেছে, সেই বইটি যেহেতু ভুল স্বীকার করে প্রকাশক নিজেই প্রত্যাহার করেছেন। এখন রোদেলা প্রকাশনী থেকে অন্যান্য লেখকদের যেসব বই প্রকাশ পেয়েছে, তারা তো এ কারণে পাঠক থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিকে সরকারি প্রশাসন কিভাবে সামাল দেবে, তার সঙ্গে বাংলা একাডেমি জড়াতে পারে না। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জ্ঞান চর্চায় বাংলা একাডেমি যে জাতির মননের প্রতীক, কাজের মাধ্যমেই তাকে সেটি প্রমাণ করতে হবে। কারো অযৌক্তিক দাবির কাছে বাংলা একাডেমি মাথা নত করা মানে, গোটা বাঙালি জাতির মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাথা নত করা। আমরা চাই, সরকারি প্রশাসন এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে সবাইকে জ্ঞানগৃহে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দান করবেন।





.....................................

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঢাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৮

বিদগ্ধ বলেছেন: ~~কারো অযৌক্তিক দাবির কাছে বাংলা একাডেমি মাথা নত করা মানে, গোটা বাঙালি জাতির মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাথা নত করা।~~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.