নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলার ডায়েরি (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! রেজা ঘটক

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০৪

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বৃহস্পতিবার। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন।
দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলার ১৯ দিন দেখতে দেখতে চলে গেল। আর মাত্র ৯ দিন আছে বইমেলা। আজ বইমেলায় প্রচুর বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল। গত রাতে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় মেলার মাঠে অনেক বই বৃষ্টিতে ভিজেছে। অনেকে রাতে আবার বইমেলার মাঠে গিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে বই রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। যারা ফাল্গুনের ঝড়-বৃষ্টিকে তোয়াক্কা করেননি, তাদের যা একটু ক্ষতি হয়েছে। এবার হয়তো প্রকাশকরা মেলা শেষে স্টল বন্ধ করার সময় ঝড়-বৃষ্টিকে আরো কলকে দিয়ে মনে রাখবেন।
আজকের আবহাওয়া ছিল চমৎকার রোমান্তিক। সন্ধ্যায় বইমেলা খুব জমে উঠেছিল। কপোত কপোতি, প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলরা দল বেধে মেলায় ঘুরেছে। অনেকে বই কিনেছে। অনেকে গাল-গপ্প করে সময় কাটিয়েছে। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে মেলায় গিয়েছে। অনেকে নতুন বই দেখতে গিয়েছে। অনেকে নিজের বইয়ের বাজার যাচাই করেছে। এক প্রবাসী কবি তো বিভিন্ন স্টলে স্টলে নিজের বই খোঁজাতে লোক ভাড়া করেছিলেন। তারা দল বেধে প্রত্যেক স্টলে গিয়ে সেই কবি'র কি কি বই আছে, তা খোঁজ খবর করেছেন। ফলে ওইসব স্টলে সেই কবি'র নামটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বেশ চমৎকার বইয়ের মার্কেটিং। অনেকে মেলার গেটে নিজেদের বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন। যাতে পাঠকরা তাদের বই সহজে খুঁজে নিতে পারেন।
আজ বইমেলায় গেছি বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আর থেকেছি একেবারে মেলায় ছুটির ঘণ্টা পড়া পর্যন্ত। মেলায় এসেছে কবি বিদ্রোহী কৃষকের কবিতার বই 'পাইপ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। প্রকাশ করেছে ‘শব্দ প্রকাশ’। কৃষক বলছিল, ইচ্ছে ছিল একটা বড় পাইপের মধ্যে একজন একজন করে ঢুকবে আর আমার বই হাতে বের হবে। তারপর নতুন বই নিয়ে বন্ধুরা আড্ডা দেব। এভাবে আমার বইটার মোড়ক উন্মোচন বা পাঠ উন্মোচন হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বড় পাইপ এলাউ করবে কিনা, তাই ভেবে ভেবে শেষে এই চিন্তা বাদ দিয়েছি। বইয়ের আরেকটি চমৎকার মার্কেটিং আইডিয়ার কথা আজ আড্ডায় বলছিল কামু আর পদ্ম। বাঁশের লাঠিতে ভর দিয়ে গোটা মেলায় একটা লোক হাঁটবে। যার বুকে আর পিঠে বইয়ের বিজ্ঞাপন বা ছবি থাকবে। লোকটি শুধু মেলায় হাঁটবে। আর তার বুক ও পিঠে বইয়ের খবর দেখে সবাই স্টলে গিয়ে সেই বইটি কিনবে। বইয়ের মার্কেটিংয়ের পক্ষেই সবার মতামত ছিল।
বিকালে একাডেমির মূল মঞ্চে দেখলাম, এক মহিলা আলোচক ইংরেজি লেকচার দিচ্ছেন। ক্লাস ফাইভ সিক্সে পড়ার সময় ছেলেমেয়েরা যেমন খুটিয়ে খুটিয়ে ইংরেজি পড়ে, তেমন একটা সারল্য নিয়ে তিনি লিখিত বক্তৃতা আমতা আমতা করে বকবক করছেন। বক্তার সামনের সারি সারি ফাঁকা চেয়ার চুপচাপ তা শুনছে। সেই শব্দের মধ্যেই একাডেমির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল থেকে একটি প্রাপ্তি সংবাদ প্রচার করা হল। আমাদের আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যদের কারো একজনের একটি আইডি কার্ড বইমেলার মাঠে পাওয়া গেছে। উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে আইডি কার্ডটি বাংলা একাডেমি'র নিরাপত্তা সেল থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
বইমেলায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে আমাদের প্রকাশকদের উচিত প্রতিবছরই তাদের একটি বা দুইটি করে বই উপহার দেওয়া। যা আমাদের আগ্রহী পুলিশ বন্ধুদের বই পড়ায় নতুন ধরনের উৎসাহ যোগাবে। তারাও তখন দু-একটি বই কিনবে। আমাদের পুলিশ যদি বই পড়ে, সেটা দেখলে আমাদের ভালো লাগবে। একাডেমি চত্বরে দেখলাম, আমাদের পুলিশ বিভাগের যারা লেখক আছেন, তাদের লেখা বই নিয়ে একটি স্টল আছে এবার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওই স্টলটি বেশ সমৃদ্ধ। ভ্রমণকাহিনী লেখক মোসলেউদ্দিন আমার বেশ প্রিয় একজন লেখক। আমাদের পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তাদের জীবনে নানান অভিজ্ঞতার গল্প জমে। সেসব গল্প যদি তারা লেখেন, আর তা বই আকারে প্রকাশ পায়, তাহলে সেই সাহিত্য আমাদের সামষ্টিক সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক শুভ ফল বয়ে আনবে।
বইমেলায় আজ শুধু আড্ডা হয়েছে। কোনো বই বিক্রি করতে পারিনি। তবু ধীরে ধীরে এই আড্ডার দিন কমে আসছে মনে পড়তেই, ক্ষণে ক্ষণে হৃদয়ের গভীরে একটা হাহাকার বা শূন্যতা ঝাপটা মেরে গেছে। আবার এক বছরের অপেক্ষার পর বইমেলা। কেমন দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যাচ্ছে বইমেলা। অথচ এখনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়নি, আড্ডা হয়নি।
রোদেলা প্রকাশনীর পর আজ অমর একুশে বইমেলায় হেফাজতে ইসলামের চোখ রাঙানি ছিল তসলিমা নাসরিনের বইয়ের দিকে। আগামী প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তসলিমা নাসরিনের উপন্যাস সমগ্র। হেফাজতে ইসলাম তসলিমা নাসরিনের সেই বই নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য বাংলা একাডেমি এখন পর্যন্ত তাদের সেই দাবিতে সাড়া দেয়নি। অথচ সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে মেলা থেকে রোদেলা প্রকাশনী বিতর্কিত বইটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও তার উপর বাংলা একাডেমির নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবত আছে। আর আগামী প্রকাশনী বড় প্রকাশনা হওয়ায় এবং গণি ভাই (ওসমান গণি) জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি হওয়ায়, হেফাজতের দাবিকে স্বয়ং আগামী প্রকাশনী তেমন কোনো পাত্তা দেয়নি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, রোদেলা প্রকাশনী অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনা এবং নিরীহ হওয়ায়, বাংলা একাডেমি কত সহজে তা আমলে নিয়ে সাজার ব্যবস্থা করেছে।
এভাবে হেফাজতের দাবি মানতে গিয়ে বাংলা একাডেমি একদিকে ধর্মান্ধ গোষ্ঠির অযৌক্তিক দাবির প্রতি নতি স্বীকার করেছে। যা নতুন করে সেই গোষ্ঠিকে আবার তসলিমা নাসরিনের বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী করেছে। এমন কি ভবিষ্যতে আরো প্রগতিশীল লেখকদের বিভিন্ন রচনাকে নিষিদ্ধ করার দিকে যে হেফাজতের নজরদারি চলছে, তা সুস্পষ্ট ভাবেই বোঝা গেল। যা মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। বাংলা একাডেমি যত শিঘ্র সম্ভব রোদেলা প্রকাশনীর স্টুল খুলে দেবে, তত দ্রুত বইপ্রেমীরা রোদেলা থেকে প্রকাশিত অন্যান্য প্রিয় লেখকদের বই কেনার সুযোগ পাবে। রোদেলা প্রকাশনীর উপর বাংলা একাডেমির নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকায় অন্তত কুঁড়িটি পরিবার, যারা সরাসরি নানাভাবে নানান কর্মযজ্ঞে এই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া এই প্রকাশনার সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মজীবী যেমন বাইন্ডার ও পেস্টারগণ অনেক অর্ডার কাজের প্রাপ্ত অর্থ থেকে বঞ্চিত হলেন। যা তাদের জীবনযাত্রায় ব্যয়ে আগামীতে নানাভাবে প্রভাব ফেলবে।
আজ বইমেলায় যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে তারা হলেন- কবি কামরুজ্জামান কামু, শিল্পী পদ্ম, কবি কবির হুমায়ুন, কবি সাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, শিল্পী চারু পিন্টু, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি বিদ্রোহী কৃষক, কবি নীলসাধু, লেখক ও গবেষক জয়শ্রী বীথি, সিফটি, কবি সরসিজ আলীম, বন্ধু নির্মাতা মেহিদী হাসান, কবি জেবুননাহার জনি, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য, কবি তানিম কবির, পুঁথি কবি কাব্য কামরুল, ত্রয়ী প্রকাশনের প্রকাশক মাধবদা, জাগৃতি প্রকাশনের প্রকাশক দীপন ভাই, শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান, ছায়াবীথি'র প্রকাশক জাহাঙ্গীর আলম সূজন, কবি ও নির্মাতা ঈয়ন, কবি জ্যোতির্য়য় চক্রবর্তী, কবি সোহেল হাসান গালিব প্রমুখ।
বইমেলা থেকে বের হবার আগে শ্রাবণের প্রকাশক বন্ধু রবীন গরম গরম পিয়াজু-পুরি আর দিনাজপুরের লাড্ডু খাওয়ালো। আবার মেলা শেষে বন্ধু কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর সহ ধ্রুবদার বাসায় যাবার পর, ধ্রুবদা খাওয়ালেন রসের মিষ্টি আর চা। ধ্রুবদার বাসা থেকে ফেরার পথে বাকি ভাই দিলেন আরেক চমক। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের পাশে বাকি ভাই আয়োজন করেছেন গরম গরম খিচুরি খাবার ব্যবস্থা। পছন্দের কবি-সাহিত্যিক-প্রকাশক বন্ধুদের ফোন করে এনে গরম খিচুরি খাওয়াচ্ছেন। বাকি ভাইয়ের এই খিচুরি প্রকল্পের ব্যাপার নিয়ে একটা মজার গল্পের আইডিয়া সেই আলো অন্ধকার ঘোর লাগা সময় থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শিঘ্রই সেই গল্পটি লিখে ফেলব।
তার আগে বন্ধুদের বলে রাখি, আগামীকাল ফেব্রুয়ারির তৃতীয় শুক্রবার বইমেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় আর শেষ হবে রাত সাড়ে আটটায়। আর সকালে মেলায় আসবে আমার লেখা 'বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী মুজিব দ্য গ্রেট' বইটি। বইটি প্রকাশ করেছে ত্রয়ী প্রকাশন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় স্টল নং ১৩৯-১৪০।

...................................
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:

"এক প্রবাসী কবি তো বিভিন্ন স্টলে স্টলে নিজের বই খোঁজাতে লোক ভাড়া করেছিলেন। তারা দল বেধে প্রত্যেক স্টলে গিয়ে সেই কবি'র কি কি বই আছে, তা খোঁজ খবর করেছেন। ফলে ওইসব স্টলে সেই কবি'র নামটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। "

-কবিতার যে অবস্হা, গরুর দলাল লাগাতে হবে।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:২৩

মহান অতন্দ্র বলেছেন: শুরু থেকেই সংগে আছি। মেলার অনেক কিছু জানছি আপনার লেখায় । শুভ কামনা। ভাল থাকবেন ।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২০

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:





//এক প্রবাসী কবি তো বিভিন্ন স্টলে স্টলে নিজের বই খোঁজাতে লোক ভাড়া করেছিলেন। তারা দল বেধে প্রত্যেক স্টলে গিয়ে সেই কবি'র কি কি বই আছে, তা খোঁজ খবর করেছেন। ফলে ওইসব স্টলে সেই কবি'র নামটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বেশ চমৎকার বইয়ের মার্কেটিং।// B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.