নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার কুঁড়িতম দিবস। আজ সত্যিকার ভাবেই বইমেলা জমে উঠেছিল। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় শুক্রবার। সকালে মেলায় কিছুটা ভিড় কম থাকলেও সকালটা ছিল শিশু প্রহর। তাই সকালে বইমেলায় শিশুদের বেশ ভিড় ছিল। এবার বাংলা একাডেমির ভেতরে যে শিশু কর্নার করা হয়েছে, সেখানে বড় বড় প্রকাশকদের শিশুদের জন্য প্রকাশিত বইগুলো না থাকায়, শিশুরা এক ধরনের বঞ্চিত হচ্ছে ভালো বই কেনা থেকে। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় প্রকাশকদের স্টল থাকায় সেখান থেকে শিশুদের জন্য বই কেনা একটু বিব্রতকর হচ্ছে। অনেক প্রকাশক তাই বাংলা একাডেমির সমালোচনা করেছেন। শিশুরা একাডেমির কর্নার থেকে কিছু বাজে বই বা কার্টুন বই কিনে বাসায় ফিরছে আমাদের কোমলমতি শিশুরা। ভালো বইগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মেলায় থাকায় শিশুরা তা থেকে একপ্রকার বঞ্চিত হচ্ছে। প্রকাশকরা আশা করেন, ভবিষ্যতে শিশুদের কর্নারে তাদের বই রাখারও ব্যবস্থা করবে একাডেমি।
আজ বইমেলা শুরু হয়েছে সকাল এগারোটায়, একটানা চলেছে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। আজ মেলায় দুপুরের পর থেকে ছিল বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। আজ কিন্তু বইপ্রেমীরা বই কিনেছেন। যেমন ভিড় ছিল, তেমন বই বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। প্রকাশকরা অবশ্য সঙ্কায় আছেন আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বইমেলায় বইপ্রেমীদের কতোটা ভিড় থাকবে তা নিয়ে। অথবা মেলার বাকি দিনগুলোতে কতোটা বই বিক্রি হবে তা নিয়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ২৪ ঘণ্টা অবরোধ স্থগিত করায় দুপুরের পর থেকেই সত্যিকার ভাবেই অমর একুশে বইমেলা প্রাণ ফিরে পায় বইপ্রেমীদের ভিড়ে। কিন্তু রবিবার থেকে আবার টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকায় প্রকাশকদের মনে সেই আশংকা আবারো বেড়েছে।
আজ অমর একুশে বইমেলায় এসেছে আমার লেখা 'বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী- মুজিব দ্য গ্রেট'। বইটি প্রকাশ করেছে ত্রয়ী প্রকাশন। বঙ্গবন্ধুর ছবি অবলম্বনে বইটির প্রচ্ছদ আমি নিজেই করেছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ত্রয়ী প্রকাশনের স্টলে (স্টল নং ১৩৯-১৪০) পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৭৫ টাকা। এছাড়া আজ চৈতন্য প্রকাশনী থেকে মেলায় এসেছে কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধার গদ্য সংকলন 'নদীর জলে ছায়া'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী তৌহিন হাসান। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে দুইশো টাকা। 'নদীর জলে ছায়া' বইটির প্রডাকশান এতই ভালো হয়েছে যে, যে কারো বইটি হাতে নিলেই মনে ভারী প্রশান্তি আসবে। কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধার ব্যক্তিগত এই গদ্যের বই অনেকটাই তাঁর গল্প বলার সেই চেনা ঢঙ্গের মতই। যেখানে ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পারিপার্শ্ব, সমাজ ও রাষ্ট্র। প্রশান্ত'র গদ্যে তাই উঠে এসেছে চেনাজানা চৌহদ্দির পাশাপাশি ব্যক্তির অন্তর্গত অনুভূতি। যা মিলেমিশে অনেকটা একাকার কাহিনিগদ্যের ধরন আর ব্যক্তিগত গদ্যের কৌতূহলী পরিব্রাজকের ভঙ্গিতে সমাজে বসবাসকারী প্রতিজন মানুষের জীবনযাপনে জড়িয়ে থাকা বিষয় আশয় হিসেবে ফুটে উঠেছে।
আজ অ্যাডর্ন প্রকাশন থেকে বইমেলায় এসেছে লেখক ও গবেষক জয়শ্রী বীথি'র উপন্যাস 'অম্বা আখ্যান'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। বইটির দাম রাখা হয়েছে দুইশো বিশ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অ্যাডর্নের স্টলে (স্টল নং ২২২-২২৪)।
আজ শুদ্ধস্বর থেকে মেলায় এসেছে কবি জুয়েল মাজহারের কবিতার বই 'মেগাস্থিনিসের হাসি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কবি বিধান সাহা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুদ্ধস্বরের স্টলে (স্টল নং ১৭৪-১৭৬)।
সকালে আমার প্রকাশক মাধবদা ফোন করে জানান, 'মুজিব দ্য গ্রেট' মেলার মাঠে এসেছে। আমি মেলার মাঠে পৌঁছাতে বারোটা বেজে গেল। নতুন বই হাতে পেয়ে বুকটা ভরে গেল। বারবার সন্তানের গায়ের গন্ধ নিচ্ছিলাম। মাধবদা লিটলম্যাগ চত্বরে বিক্রির জন্য আমাকে দশকপি বই দিলেন। বই নিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রিয় লিটলম্যাগ চত্বরে গিয়ে নন্দন-এর স্টল খুলে বসতেই কবি সরসিজ আলীম ইসারায় ডাক দিলেন। 'মুজিব দ্য গ্রেট' এর প্রথম কপির ক্রেতা কবি সরসিজ আলীমের কন্যা সেঁজুতি। কন্যার মা আমার কাছ থেকে মেয়ের জন্য বইয়ে অটোগ্রাফ নিলেন। ভাবীকে লিটলম্যাগ চত্বরে রেখে আলীম আর আমি চা খেতে বাইরে গেলাম। ফিরে এসে লিটলম্যাগ চত্বরে পেলাম আমার প্রশান্তদাকে। কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা। প্রশান্তদা'র বাড়ি বাগেরহাট। আর আমার বাড়ি পিরোজপুর। কিন্তু কোনাকুনি নৌকা পথে বা হাঁটা পথে আমাদের দুজনার বাড়ির দূরত্ব মাত্র চৌদ্দ-পনের মাইল। টানা অবরোধ থাকায় এবার প্রশান্তদা বইমেলায় আসতে দেরি করল। দাদা জানাল, ছেলে তাতা প্রায় বাবার সমান লম্বা হয়ে গেছে। তাতার মা ফারজানা সিদ্দিকা রনি ইউনিভার্সিটির ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত। চৈতন্যে দাদার বই দেখার পর আমরা আবার উদ্যানে যাই দাদার অন্য বইগুলোর খোঁজ নিতে। জানা গেল দুই একদিনের মধ্যে বাকি বইগুলো মেলায় আসবে। উদ্যানে গিয়ে দেখা হল আরজু দম্পতির সঙ্গে। আরজু আজ আমার দুইটা বই কিনেছেন। ছোটদের গল্প 'গপ্পো টপ্পো না সত্যি' আর আমার গল্প সংকলন 'পঞ্চভূতেষু'। এছাড়া প্রশান্তদা'র 'নদীর জলে ছায়া' কিনেছেন আরজু। আমরা লাঞ্চের জন্য বের হব। পথে একাডেমির মিডিয়া সেন্টারে বই জমা দিতে আমার একটু দেরি হল। তারপর আমরা চাঁনখারপুলে গিয়ে লাঞ্চ করলাম। আবার মেলায় ফেরার পথে দাদা বলল, এবার আমাকে গুলশানে শ্বাশুড়ির বাসায় হাজিরা দিতে যেতে হবে। কাল বেহানে মেলায় থাকমুনে। তুই থাকবি তো? বললাম-হু থাকমু। তুমি তাড়াতাড়ি আইসো।
এরপর লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে ঢুকেই পেলাম কবি ও গবেষক রণদীপম বসুকে। ছেলেসহ দাদা আজ মেলায় এসেছেন। প্রান্ত দীপম আজ মেলায় ঘুরে ঘুরে বই কিনবে। মুজিব দ্য গ্রেট এককপি কিনল প্রান্ত। প্রান্তকে ছেড়ে দিয়ে রণদা আর আমি সিগারেট টানলুম। প্রান্তকে নিয়ে রণদা চলে যাবার পর এলেন কবি অমিতাভ পাল। অমিতাভদা আমার সঙ্গে নন্দনের স্টলে বসলেন। মুহূর্তে পরপর চারটা 'মুজিব দ্য গ্রেট' ও একটা 'পঞ্চভূতেষু' বিক্রি হল। এই সময় কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর এসেছেন দুই ভাগ্নি বর্ষা আর তাথৈকে নিয়ে। বর্ষা আজ ঘুরে ঘুরে মেলায় আমাদের ছবি তুলেছে। তাথৈ আমার কোলে উঠে এক মিনিটে গোটা ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় আসার বিবরণ শোনাল। এরমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল চৈতি আপার মেয়ে মেধা। মেধা টোকন ঠাকুরের 'রাজপুত্তুর' ছবিতে তিনটা চরিত্রে অভিনয় করেছে। বইমেলায় রোজ চৈতি আপার সাথে আসে মেধা। তাথৈ মেধাকে পেয়ে বর্ষার সঙ্গে ঘুরতে গেল। অমিতাভদা টোকন আর আমাকে সিগারেট দিলেন টেনে আসতে...
ততক্ষণে মেলার মাঠে তীল ধারণের ঠাই নাই। আমরা কবি জুয়েল মুস্তাফিজকে নিয়ে পানির সন্ধানে ছুটলাম। একাডেমির নতুন ভবনের সামনে সৈয়দ তারিক ভাই আমাদের পানি খাওয়ালেন আর ছবি তুললেন তার দলবল নিয়ে।
আবার লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে আসার পর আমাদের সঙ্গে যোগ দিল কবি আয়েশা ঝর্না ও কবি সেঁজুতি বড়ুয়া। ঠাকুর বলল, বর্ষা আর তাথৈকে বাসায় রেখে আবার মেলায় আসবেন। তখন জুয়েল তার নানীকে নিয়ে লেখা 'মেরাতুন্নেসা-মনমহাজনের কথা' বইটি কিনে ঠাকুরকে গিফট করল।
কিছুক্ষণ পর তরুণ কবি বিদ্রোহী কৃষকের কবিতার বই 'পাইপ'-এর মোড়ক উন্মোচন হল লিটলম্যাগ চত্বরে আমাদের সবার উপস্থিতিতে।
এরপর অমিতাভদা আর আমি আবার স্টলে বসলাম দোকানদারি করতে। মুহূর্তে বিক্রি হল পাইপের দুইটা কপি আর 'মুজিব দ্য গ্রেট'-এর দুইটা কপি।
এরপর বিচ্ছিন্ন কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। দৌড়ে এসে সিগারেট খাওয়ালেন কবি নীলসাধু। দেখা হল, আড্ডা হল কবি ও গবেষক সায়মন জাকারিয়া, কবি অতনু তিয়াস, কবি শতাব্দী কাদের, কবি মাসুম মোকাররম, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি কাজী টিটো, কবি আরণ্যক টিটো, কবি সাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ, কবি আয়েশা ঝর্না, কবি সেঁজুতি বড়ুয়া, কবি মুর্শিদা ঋশাত মণি সহ অনেকের সঙ্গে।
ততক্ষণে মেলায় ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেল। আজ কখন যে মেলার সময় ফুরিয়ে গেছে কিচ্ছু টের পাইনি। বড় ঘোর লাগা ছোট্ট একটা মুহূর্ত যেন। এক নিমিষেই ফুরিয়ে গেল। আহা এ বছর আজ প্রথম প্রাণের বইমেলা আড্ডায় আড্ডায় জমে উঠেছিল। তারপর অতনু, শতাব্দী, মাসুম, সেঁজুতি সহ আমরা একদল মেলা থেকে বের হয়ে টিএসসি এসে চা খেলাম। তখন বন্ধু নাহিদ আর টোকন ঠাকুর ফোন করল। আমি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ছবিরহাট এসে আবার নাহিদ, টোকন, তিতিল, সূর্যদের সঙ্গে আরেক দফা আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
যে মুহূর্তে আমি এই লেখা লিখছি, ততক্ষণে একুশে ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার, মাননীয় বিরোধীদলের নেতা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সবার ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে পুস্পস্তবক অর্পন করা শেষ। এখন চলছে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্য সর্বস্তরের মানুষের ঢল। কণ্ঠে সবার 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি' গান। আগামীকাল বইমেলা শুরু হবে সকাল আটটায়। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারির এই সূচনা মুহূর্তে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। রফিক-সফিক-বরকত-সালাম লাল সালাম লাল সালাম। একুশের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।
............................
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৫২
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো