নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, রবিবার। অমর একুশে বইমেলার আজ ছিল বাঁইশতম দিন। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে বইমেলা। আর মাত্র ছয় দিন পরেই ভাঙবে বইপ্রেমীদের এই মাসব্যাপী মহা মিলনমেলা।
আজ বইমেলায় গেছি চারটায়, ফিরেছি মেলায় ছুটির ঘণ্টা বাজার পরে, মানে সাড়ে আটটায়। যথারীতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মেরে প্রিয় লিটলম্যাগ চত্বর বহেতলায় গিয়ে বাকি সময়টা দোকানদারি আর আড্ডাবাজি করে কাটিয়েছি। আজ বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল 'রবীন্দ্রনাথ: মহাজীবনের অঙ্গ'। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছেন বেগম আকতার কামাল। আলোচক ছিলেন আতিউর রহমান ও ফকরুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সনজীদা খাতুন। আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানে একেবারে সামনের দিকে কিছু চেয়ার ভর্তি ছিল। সম্ভবত ছায়ানটের কিছু লোকজন সনজীদা আপার মান রাখতে কিছু চেয়ার ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আলোচনা শোনার মত সেখানে কেউ ছিল কিনা আমি কনফিউজড। কারণ, আলোচনা অনুষ্ঠানের সামনে একেবারে পেছনের দিকে অনেকগুলো চেয়ার দখল করে তখন খোসগল্পে মত্ত ছিলেন আমাদের মহিলা পুলিশ দলের সদস্যাগণ। সন্ধ্যায় যথারীতি একই মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আজও আমার দোকানদারিতে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে ছিল আমার লেখা 'মুজিব দ্য গ্রেট'। আজ আমি বিক্রি করেছি ছয় কপি। আর প্রকাশক মাধবদা জানালেন, তিনি বিক্রি করেছেন পনের কপি। মোট একুশ কপি। তিনদিনে সত্তর কপি। আজ নন্দন পত্রিকার সম্পাদক বন্ধুবর কবি আলফ্রেড খোকন সন্ধ্যায় এক ঝলকের জন্য লিটল ম্যাগে ঢু মেরেছিল। তখন খোকনের কবিতার এক ভক্ত খোকনের দুইটি বই কিনল নন্দন থেকে। 'মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ' আর 'সাধারণ কবিতা'। খোকনের সঙ্গে ছিল আমাদের আরেক বন্ধু কবি পারভেজ চৌধুরী। খোকন আরেকটু সময় লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণে থাকলে হয়তো ওর আরো কিছু বই নন্দন থেকে বিক্রি হতো। কিন্তু বন্ধু সাংবাদিক নজরুল কবির ফোন করে খোকনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুদ্ধস্বরের সামনে যাবার অনুরোধ করায় খোকন আর পারভেজ ওপারের মেলায় চলে গেল।
বইমেলা দুইভাগে হওয়ায় উপস্থিতি মোটামুটি হলেও আজ কিন্তু বই বিক্রি তেমন নজরে পড়েনি। তাই লিটলম্যাগ চত্বরে অনেকেই আজ সন্ধ্যা সাতটার আগেই দোকান গুটিয়ে ফেলল। সেই সুযোগে আমরা আরো বেশি করে আড্ডা দিলাম।
ইতোমধ্যে বইমেলায় আসা দুটি বই নিয়ে লিখব আজ। কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের উপন্যাস 'কালকেউটের সুখ'। বইটি প্রকাশ করেছে জাগৃতি প্রকাশনী। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আমজাদ আকাশ। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৩৩৫ টাকা। নোমানের ‘কালকেউটের সুখ’ উপন্যাসটি মূলত সুন্দরবন অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বজনহারানো মানুষদের আর্তনাদের আখ্যান। সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে একদল মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। যাদের কেউ মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। কেউ মাছ ধরেন। কেউবা মাছের পোনা ধরেন। কেউ গোলপাতা কাটেন। কেউবা সুন্দরবনের মরা বা তাজা গাছ কাটেন। এদের সবার জীবিকা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। জীবিকা নির্বাহের জন্য এদেরকে মোকাবেলা করতে হয় সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হিংস্র সব প্রাণীদের। যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, বিষধর যত সাপ, পোকামাকড় ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে সুন্দরবনের নিত্যকার শত্রুদের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে ওঠে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী। কারণ সুন্দরবন অঞ্চলে যারা সংখ্যালঘু অন্য ধর্মের মানুষ, মূলত তারাই যুদ্ধকালীন সময়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হয়। কেবলমাত্র ভিন্ন ধর্মের মানুষ হওয়ার কারণে এসব নিরন্ন মানুষের জীবনে বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর ধর্ম ব্যবসায়ীরা তখন খুন, ধর্ষণ, অত্যাচার, নির্যাতন করেছিল। যা নোমানের উপন্যাসের মুখ্য বিষয়। উপন্যাসটি আমি এখনো পড়িনি। তবে শিঘ্রই এটি পড়া শুরু করব।
অমর একুশে বইমেলায় এবার সাড়া জাগানো প্রডাকশন করা নতুন প্রকাশনী সংস্থা চৈতন্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে তরুণ কবি রুদ্র আরিফের কবিতার বই 'হাড়ের গ্যারেজ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সুমন। 'হাড়ের গ্যারেজ' কাব্যগ্রন্থে রুদ্র'র সমকালীন কবিতাগুলো যেন বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল রাজনীতির চুলচেরা এক এনাটমিক পোয়েটিক এপিটাফ। ''...এই রাতে চলো খুনি হওয়া যাক; চলো, হাড়ের গ্যারেজ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া যাক মাংসের জং'' (হাড়ের প্রার্থনা)। ''মর্গের বারান্দায় শুয়ে আছে জুঁইফুল: ছোপ ছোপ রক্ত নাকি অন্ধকার...'' (মর্গের বারান্দায়)। '' যখন কোনো অনুভূতি আর কাজ করে না মনে, নিজের দেহকে মনে হয় আদিম কোনো জন্তুর ফসিলের উপর চাপিয়ে দেওয়া মাংসের দালান...'' (জন্তুর ফসিল)। ''দেয়ালে ঝুলে থাকা এমির কুস্তুরিসার ছবিটার দিকে তাকিয়ে মামেশা বলে ওঠে, ‘ফাকিং ফ্যাস্টিস্ট মাদারফাকার!’ আমি বলি, ‘আরে, এটা তো আন্ডারগ্রাউন্ড’-এর ডায়লগ...'' (হাড়ের দ্বিতীয় গ্যারেজ)। রুদ্র'র কবিতাগুলো যেন এসময়ের এক জীবন্ত বারুদ। উচ্চারণ করলেই পেট্রোলবোমায় আহত-নিহতদের হাড়ের কথাই যেন সবাইকে মনে করিয়ে দেয়।
আজ বইমেলায় যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে, তারা হলেন- কবি ও প্রকাশক আলী আফজাল খান, কবি শাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, কবি আরণ্যক টিটো, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি সরসিজ আলীম, কবি ও সম্পাদক নীলসাধু, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি ওবায়েদ আকাশ, কবি রুদ্র আরিফ, কবি ও নির্মাতা কামরুজ্জামান কামু, শিল্পী পদ্ম, কবি তানিম কবির, কবি কবির হুমায়ুন, নির্মাতা সুমন শামস, কথাসাহিত্যিক জেসমিন মুননী ও তার ব্যাটালিয়ন, কবি রহিমা আফরোজ মুন্নী, কথাসাহিত্যিক মণিকা চক্রবর্তী, কবি অমিতাভ পাল, কবি আলফ্রেড খোকন, কবি পারভেজ চৌধুরী, কবি দিলদার হোসেন, কবি মনির ইউসুফ, শিল্পী চারু পিন্টু, নাট্যকার ও অভিনেতা ফরহাদ লিমন পরিবার, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান, মুর্শিদা রিয়াসাত মণি, মেধা, কবি মাহবুব কবির, লেখক ও গবেষক তপন বড়ুয়া প্রমুখ।
সাড়ে আটটায় মেলা থেকে বের হয়ে টিএসসির উল্টাপাশে চা খাচ্ছিলাম বন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি টোকন ঠাকুর, ফটোগ্রাফার সূর্য আর আমি। চা খেয়ে যখন আমরা ছবিরহাটের দিকে যাচ্ছিলাম তখন পরপর দু'বার ককটেল ফাঁটার আওয়াজ শুনলাম। একটু পর আমাদের সঙ্গে যোগ দিল বন্ধু কবি মাহবুব কবির। পথে ছবিরহাটে দেখা হল বন্ধু সাংবাদিক নজরুল কবির আর শিল্পী কফিল আহমেদের সঙ্গে...
বাসায় ফিরে অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম, টিএসসিতে ককটেল বিস্ফোরণে ছয়-সাতজন আহত। কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা এ কোন নিরাপত্তাহীন শহরে বসবাস করছি? ঘর থেকে বের হই মনের ভেতর একগাদা আতঙ্ক নিয়ে। ঘরে না ফেরা পর্যন্ত সেই আতঙ্ক সারাক্ষণ শিরায় শিরায় কাজ করে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন যেদিকে যাচ্ছে, দেশের কোনো মানুষের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। তবু আমাদের পেটের তাগিদে কাজের জন্যে ঘর থেকে বাইরে যেতে হয়। এক তামাশার রাজ্যে সারাক্ষণ আমরা যেন এক যুদ্ধের ভেতর বসবাস করছি।
বন্ধুরা, আগামীকাল অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে বিকাল তিনটায়, চলবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। বাংলা একাডেমি কর্তৃক অমর একুশে বইমেলা থেকে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধের প্রতিবাদে আগামীকাল বিকাল চারটায় টিএসসিতে অনুষ্ঠিত হবে লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের প্রতিবাদ সমাবেশ। হেফাজতে ইসলামের নালিশের অযুহাতে বাংলা একাডেমি সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে রোদেলা প্রকাশনীকে অমর একুশে বইমেলায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ পারস্য লেখক আলি দাশতি'র বইটির অনুবাদ কপি প্রত্যাহার করে নিলেও রোদেলা প্রকাশনীর উপর বাংলা একাডেমির নিষেধাজ্ঞা এখনো কার্যকর রয়েছে। যা সত্যিই দুঃখজনক।
..................................
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা
২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২
এনামুল রেজা বলেছেন: ফুরিয়ে এলো মেলা, ফুরিয়ে এলো ডায়েরির পাতা। পুরো মাস জুড়ে মজাই পেয়েছি যে কদিন পড়েছি আপনার বইমেলা কাহন..
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: বই মেলায় বেশ আনন্দের দিন কেটেছে আপ্নার ।
ভালো থাকুন সবসময়