নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
ক). টাইগার্সদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট মিশন: স্মৃতির পাতা থেকে
......................................................
১৯৯৭ সালের ১২ ও ১৩ এপ্রিলের কথা মনে আছে? মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্ব আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালটি হয়েছিল দুই দিন ধরে। ২২টি দল নিয়ে ২৪ মার্চ ১৯৯৭ শুরু হওয়া সেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্বে ফাইনালে খেলেছিল কেনিয়া আর বাংলাদেশ। ১২ এপ্রিল ১৯৯৭ তারিখে টসে জিতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকরাম খান ফিল্ডিং নিয়েছিলেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে কেনিয়া তুলেছিল ২৪১ রান। কেনিয়ার স্টিভ টিকালো ১৫২ বলে করেছিলেন ১৪৭ রান। আর কেনিয়ার অধিনায়ক মরিস ওদুম্বে ৬৩ বলে করেছিলেন ৪৩ রান। বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক ৬ ওভার বল করে ৪০ রানে পেয়েছিলেন ৩টি উইকেট, সাইফুল ইসলাম ৯ ওভার বল করে পেয়েছিলেন ২টি উইকেট এবং খালেদ মাহমুদ সূজন ৭ ওভার বল করে ৩১ রানে পেয়েছিলেন ২টি উইকেট। তারপর সেই বিখ্যাত বৃষ্টি। সারাদিনে আর খেলা মাঠে গড়ায়নি।
পরদিন ১৩ এপ্রিল ১৯৯৭ তারিখে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জন্য ২৫ ওভারে ১৬৬ রানের জয়ের লক্ষ্য ধার্য করা হয়। বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বিপত্তি। বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম বলেই কেনিয়ার এমএ সুজি'র করা প্রথম বলে নাঈমুর রহমান দুর্জয় শূন্য রানে বোল্ড। অধিনায়ক আকরাম খান সেদিন বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে একটা বড় ধরনের রদবদল করেছিলেন। দুর্জয় আর আতাহার আলী খানের বদলে ওপেনিং করিয়েছিলেন দুর্জয় আর মোহাম্মদ রফিককে দিয়ে। অবশ্য আগের দিন ফিল্ডিংয়ের সময়ে আতাহার আলী চোট পেয়েছিলেন। ব্যাট করতে না পারার মত অবস্থায় ছিলেন তিনি। দুর্জয় প্রথম বলে আউট হবার পর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু উইেকেটে যোগ দেন রফিকের সাথে। দু'জনে ৫০ রান তোলার পর রফিক আবার আরেক সুজি'র শিকাড় হন। কেনিয়া দলে দখন দুই সুজি আর দুই টিকালো ভাইদের রাজত্ব। ১৫ বলে ২৬ রান করে রফিক আউট হবার পর উইকেটে আসেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এই জুটি ১৩ রান তুলতেই ৬৩ রানের মাথায় বাংলাদেশের নান্নু আউট। ৩৩ বলে নান্নু করেছিলেন ২৬ রান। এরপর উইকেটে আসেন বাংলাদেশের অধিনায়ক আকরাম খান। বুলবুল-আকরাম মিলে ৫৩ রানের একটি পার্টনারশিপ দাঁড় করান। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় ৩৭ বলে ৩৭ রান করা বুলবুলকে বোল্ড করেন করিম। উইকেটে আসেন অভিজ্ঞ এনামুল হক। কিন্তু দলে আর মাত্র দুই রান যোগ হবার পরেই আবার কেনিয়ার সেই আঘাত। এবার ঘাতকের নাম মরিস ওদুম্বে। ক্যাপ্টেন টু ক্যাপ্টেন। ২৭ বলে আকরাম করেছিলেন ২২ রান। বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১১৮।
উইকেটে আসার কথা তখন উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলটের। কিন্তু অধিনায়ক আকরাম খান আরেকটা বাজি ধরলেন। উইকেটে পাঠালেন বোলার সাইফুল ইসলামকে। মাত্র ৫ রান যোগ হবার পর বাংলাদেশের রান যখন ১২৩ তখন আবার ঘাতকের ভূমিকায় সেই করিম। ৬ উইকেট বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১২৩ রান। এবার ৭ বলে ৫ রান করা এনামুল আউট। ক্রিজে আসলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে বিধস্ত অবস্থা সামাল দেবার চেষ্টা চালান পাইলট। কিন্তু দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় আবার সেই করিমের আঘাত। ১৩ বলে ১৪ রান করে ওদুম্বের কাছে ক্যাচ দেন সাইফুল। ১৩৯ রানে বাংলাদেশের ৭ উইকেটের পতন।
এবার ক্রিজে আসেন বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য ফাইটার খালেদ মাহমুদ সূজন। ৫ বলে ৫ রান করে ওদুম্বের বলে ওটিয়েনোর কাছে ধরা পড়েন সূজন। বাংলাদেশের রান তখন ৮ উইকেটে ১৫১। জিততে দরকার আরো ১৫ রান। হাতে আছে দুই উইকেট। আতাহার আলী যেহেতু ব্যাট করার মত অবস্থায় নাই, তাই একটি উইকেট পরলেই ম্যাচ জিতে যায় কেনিয়া। ২৪.৫ ওভারে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ তখন ১৬৫ রান। স্ট্রাইকিংয়ে পাইলট। অপর প্রান্তে হাসিবুল হোসেন শান্ত। গোটা বাংলাদেশ কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠের সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে তাকিয়ে। শেষ বলে পাইলট এক রান নিলেই বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়লাভ করে বাংলাদেশ। পাইলট ৭ বলে করেছিলেন ১৫ রান আর শান্ত ৫ বলে করেছিলেন ৪ রান। এরা দুজন অপরাজিত ছিলেন। আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। আইসিসি ট্রফির ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন কেনিয়ার স্টিভ টিকালো। আর কাপ নিয়ে পরদিন ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের সকালে দেশে ফিরেছিল আকরাম বাহিনী। গোটা বাংলাদেশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেই সাফল্যে তখন এক হয়ে গিয়েছিল। শেরে বাংলা নগরের মানিক মিঞা অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে বীরের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তারপর গোটা রাজধানী জুড়ে চলেছে বিজয় মিছিল। ট্রাকের উপর জাতীয় দলের ক্রিকেটারগণ। আমরা তখন সেই মিছিলের পেছনে পেছনে।
সে বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আইসিসি টুর্নামেন্টের রানার-আপ কেনিয়া ও তৃতীয় স্থান দখলকারী স্কটল্যান্ডও বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। এর আগে বাংলাদেশ উল্লাসে মেতেছিল ৯ এপ্রিল ১৯৯৭ তারিখে। সেদিন আইসিসি কাপের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে স্কটল্যান্ডকে ৭২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। সেমি-ফাইনালের সেই খেলাটিও ছিল দীর্ঘতম। আর বৃষ্টিবিঘ্নিত। ৮ এপ্রিল টস জিতে স্কটল্যান্ড বাংলাদেশকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২৪৩ রান। সেদিনও অধিনায়ক আকরাম খান ওয়ানডাউনে নান্নুর বদলে মাঠে পাঠিয়েছিলেন পাইলটকে। পাইলট ১৩৬ বলে করেছিলেন সর্বোচ্চ ৭০ রান। বুলবুল করেছিলেন ১০৪ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৭ রান। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন নান্নু। জয়ের জন্য স্কটল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৫০ ওভারে ২৪৪ রান। তারপর সেই ঐতিহাসিক বৃষ্টি। দ্বিতীয় ইংনিসে ব্যাট করতে স্কটল্যান্ড কিলাতক্লাব মাঠে নেমেছিল পরদিন ৯ এপ্রিল। ৪৪.৫ ওভারে ১৭১ রানে স্কটল্যান্ড অলআইট হয়েছিল। বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৭২ রানের। ৫.৫ ওভারে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। এছাড়া এনামুল হক ১০ ওভারে ৩১ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট আর ৯ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ১উইকেট নিয়েছিলেন দুর্জয়। আর স্কটল্যান্ডের দুইজন হয়েছিলেন রানআউট। লোকিকে রানআউট করেছিলেন শান্ত আর ব্লায়ানকে রানআউট করেছিলেন সাইফুল। স্কটল্যান্ডকে সেদিন ৭২ রানে হারিয়ে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা টিএসসিতে উল্লাসে মেতেছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই অর্জনে।
তারপর মাঝখানে প্রায় আঠারো বছর চলে গেছে। এর মধ্যে কেনিয়া একটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও খেলেছে। এখন সেই কেনিয়া বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই থেকে বাদ। সেখানে যোগ দিয়েছে নতুন আসা আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড আর সংযুক্ত আরব-আমিরাত।
খ). বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল থেকে টিম টাইগার্স মাত্র তিন ম্যাচ দূরে!!!
....................................................................
এবারের ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। পুল-এ তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড। ১৮ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশ প্রথম খেলায় আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারিয়ে পূর্ণ ২ পয়েন্ট লাভ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ১ পয়েন্ট ভাগ পায়। তৃতীয় খেলায় ২৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীলংকার কাছে বাংলাদেশ হারে ৯২ রানে। চতুর্থ খেলায় ৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের করা ৩১৮ রান টপকে বাংলাদেশ করে ৩২২ রান। বাংলাদেশ ৬ উইকেটের জয় পায়।
৯ মার্চ ছিল বাংলাদেশের পঞ্চম খেলা। প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। টস জিতে ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায়। শুরুতেই আবার বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়। দলীয় ৩ রানের মাথায় বাংলাদেশের ওপেনার কায়েস আউট। ৫ রান পরে দলীয় ৮ রানের মাথায় অপর ওপেনার তামিম আউট। তারপর সৌম্য আর মোহাম্মদুল্লাহ রিয়াদ মিলে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। দলীয় ৯৪ রানের মাথায় ৫২ বলৈ ৪০ রান করে সৌম্য আউট হন। রিয়াদ সৌম্য জুটি গড়েন ৮৬ রানের একটা কার্যকর পার্টনারশিপ। তারপর আবার বাংলাদেশ দলের ছন্দপতন। ৫ রান পরে দলীয় ৯৯ রানের মাথায় শাকিব আউট। ২ উইকেট ৯২ থেকে মুহূর্তে ৪ উইকেটে ৯৯-এ পরিনত হয় বাংলাদেশ। এবার আবার বাংলাদেশের ত্রাণের ভূমিকায় নামেন বাংলাদেশের লিটল মাস্টার মুশফিকুর রহিম আর তার ভায়রাভাই মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটি বাংলাদেশকে উপহার দেন ১৪১ রানের পার্টনারশিপ। দলীয় ২৪০ রানের মাথায়। বাংলাদেশের পক্ষে এই প্রথম কোনো ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপের আসরে সেঞ্চুর তোলেন। মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ ১৩৮ বলে করেন ১০৩ রান। তারপর আবার সেই ছন্দপতন। দলীয় ২৬১ রানের মাথায় মুশফিকুর রহিম ফিরে যান ৭৭ বলে ৮৯ রান করে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে তুলে নেয় ২৭৫ রান। ইংলান্ডের জন্য যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টিকে থাকার বাঁচা-মরার লড়াই। জিততে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে ৫০ ওভারে ২৭৬ রান।
ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার মোমেন আলী আর ইয়ান বেল বেশ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করেন। দলীয় ৪৩ রানের মাথায় মোমেন আলী রানআউট। তারপর উইকেটে এসে হেলস বেলকে নিয়ে সেই বিপর্যয় সামাল দেন। দলীয় ৯৭ রানের মাথায় হেলসকে শিকাড় করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তাজা।
২৭তম ওভারের প্রথম বলে ইয়ান বেলকে এবং চতুর্থ বলে ইংলিশ দলনায়ক মর্গনকে আউট করে বাংলাদেশ দলের আস্থা ফিরিয়ে আনেন রুবেল হোসেন। তারপর মুহূর্তে ইংল্যান্ড যেন খেই হারিয়ে ফেলে। ৯৭ রানে ২ উইকেট থেকে ১৬৩ রানে ৬ উইকেটে পরিনত হয় ইংল্যান্ড। তারপর আবার ব্রিটিশদের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাটলার এবং ওকস। সপ্তম উইকেট জুটিতে এই দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এবং বাংলাদেশ শিবিরে তখন আবার পরাজয়ের হাতছানি। ৪৬ তম ওভারের ৫ম বলে দলীয় ২৩৮ রানের মাথায় ৭৫ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৬৫ রান করে বাটলার তাসকিনের শিকাড় হন। আবার বাংলাদেশ শিবিরে উক্তেজনা। ম্যাচে ফেরার চেষ্টা। পরের ৪৬ তম ওভারের শেষ বল জর্ডান রানআউট। ২৩৮ রানে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ৮ উইকেটে ২৩৮ রান। শেষ ২৪ বলে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৮ রান। ক্রিজে আছেন মারকুটে ওকস। পরের দুই ওভারে ইংল্যান্ড সংগ্র করে মূল্যবান ২২ রান। শেষ ১২ বলে ইংল্যান্ডের ১৬ রান। ততক্ষণে মাশরাফি ও শাকিবের ১০ ওভারের কোটা শেষ। এছাড়া আরাফাত সানি ৮ ওভার, রুবেল ৯ ওভার, তাসকিন ৯ ওভার ও সাব্বির ২ ওভার করেছেন। বাংলাদেশের বিচক্ষণ অধিনায়ক মাশরাফি এবার দলীয় ৪৯তম ওভারে বল তুলে দিলেন রুবেলের হাতে। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ব্রডকে সরাসরি বোল্ড করে দেন রুবেল। ক্রিজে আসেন শেষ ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যান্ডারসন। অপরপ্রাপ্তে দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকা ওকস অপরাজিত ৪২ রানে। যা করার এই ওভারেই করতে হবে। নইলে ওকসের হাত থেকে আর ম্যাচ বাঁচানো যাবে না। রুবেলের দ্বিতীয় বল অ্যান্ডারসন ব্যাটে লাগাতে পারেননি। একটি ডট বল। ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে রুবেল করেন সেই অবিশ্বাস্য দুর্দান্ত বলটি। এবার অ্যান্ডারসন সরাসরি বোল্ড। আঠারো বছর পরে আবার উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ।
কারণ, এবার এই প্রথম বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। গোটা বিশ্ব আবারো প্রত্যক্ষ করল বাঘের গর্জন। বিশ্বের এক নাম্বার টেস্ট ক্রিকেটের দল ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে গ্রুপ পর্বে বিদায় বাংলাদেশের কাছে হেরে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেও এই ম্যাচের আসল নায়ক রুবেল। ৯.৩ ওভারে ৫৩ রানে রুবেল নেন ইংল্যান্ডের মূল্যবান ৪টি উইকেট। আর ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহিমের ঝড়ো ৭৭ বলে ৮৯ রান এবং প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ দলকে সৌম্য সরকারের ৮৩ বলের ৪০ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটি বাংলাদেশের এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়া ভালো খেলতে থাকা ইংলিশ ব্যাটসম্যান হলস ও রুটকে ফিরিয়ে দিয়ে এই ম্যাচের অপর নায়ক অধিনায়ক মাশরাফি। ব্যাটিংয়ে শাকিব আল হাসান খারাপ করলেও ১০ ওভার বল করে ৪১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পায়নি এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু রুবেলের করা ২৭তম ওভারের চতুর্থ বলে ইংলিশ অধিনায়ক মর্গনের যে ক্যাচটি শাকিব তালুবন্দি করেন, সেটিও এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আগামী ১৩ মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে। নিউজিল্যান্ড ইতোমধ্যে ৫ খেলায় জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে অবস্থান করছে। ৪টি জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থানে শ্রীলংকা। ৩ জয় ও একটি ভাগাভাগি থেকে সমান সংখ্যক ৭ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান গ্রুপের তিন নাম্বারে আর বাংলাদেশ চার নাম্বারে। ১৪ মার্চ অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে। যদি বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে হারায় আর অস্ট্রেলিয়া স্কটল্যান্ডের কাছে হারে, তাহলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ চলে যাবে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থানে। শ্রীলংকা চলে যাবে তিন নাম্বারে আর অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে চার নাম্বারে। আর যদি নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ হারে এবং স্কটল্যান্ডের সাথে অস্ট্রেলিয়া জেতে, তাহলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থানে, শ্রীলংকা চলে যাবে তিন নাম্বারে আর বাংলাদেশ চার নাম্বারেই থেকে যাবে।
গ্রুপ পর্বে পুল-বি তে ৫ খেলায় ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। ৫ খেলায় ৩টি করে জয় নিয়ে সমান সংখ্যক ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। ৫ খেলায় ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পুল-বি তে ভারতের গ্রুপ পর্বের শেষ খেলা জিম্বাবুয়ের সাথে। এই ম্যাচে ভারত হারলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন, জিতলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ১৫ মার্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। ফলে ৬ খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট দাঁড়াবে ৩টি জয় নিয়ে ৬। অন্যদিকে একটু পরেই দক্ষিণ আফ্রিকা মাঠে নামবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়তো অনায়াস জয় তুলে নেবে। সেক্ষেত্রে তাদের দলীয় পয়েন্ট হবে ৪ জয়ে ৮। ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় ও চতুর্থ থাকা পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের খেলা ১৫ মার্চ। এই খেলায় যদি আয়ারল্যান্ড জেতে, তাহলে আয়ারল্যান্ড পৌঁছে যাবে গ্রুপের তিন নাম্বার অবস্থানে। সেক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থানের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে রান রেটে পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডজের সঙ্গে। আর যদি আয়ারল্যান্ড পাকিস্তানের কাছে হারে, তাহলে চতুর্থ অবস্থানের জন্য রান রেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড। মানে পুল-বি তে চতুর্থ দলটি আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে কেউ-ই হতে পারে।
গ). টাইগার্সদের মিশন বিশ্বকাপ ক্রিকেট ট্রফি!!!
............................................................
কোয়ার্টার ফাইনালে পুল-এ চ্যাম্পিয়ন খেলবে পুল-বি এর চতুর্থ দলটির সাথে। পুল-বি চ্যাম্পিয়ন খেলবে পুল-এ এর চতুর্থ দলটির সঙ্গে। পুল-এ রানারআপ খেলবে পুল-বি এর তৃতীয় স্থানের সাথে। আর পুল-বি রানারআপ খেলবে পুল-এ এর তৃতীয় স্থানের সাথে।
সেই হিসেবে বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডের সাথে জিতে যায়, তাহলে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রতিপক্ষ হবে আয়ারল্যান্ড বা পাকিস্তান। এই দুই দলের বিজয়ী দলটির সাথে। আর যদি বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে চতুর্থ অবস্থানেই থাকে তাহলে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।
আমার ব্যক্তিগত সাইকোলজি বলছে, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ কে হবে, সে হিসাব পরে দেখা যাবে। ১৩ মার্চ বাংলাদেশের এখন একমাত্র লক্ষ্য নিউজিল্যান্ডকে হারানো। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৭ ম্যাচে বাংলাদেশ সাতটি-ই জিতেছে। যাকে নিউজিল্যান্ড খুব স্বাভাবিকভাবেই ভয় পাবে টাইগার্সদের। তাছাড়া তিনশো'র উপরে রান করে স্কটল্যান্ডকে চিস করা এবং ইংল্যান্ডের সাথে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে টাইগার বাহিনীর ঐতিহাসিক বিজয়কে গুরুত্ব দিয়েই আমার মন বলছে, ১৩ মার্চ নিউজিল্যান্ডকে আমরা ওদের ঘরের মাটিতে হারিয়ে আবারো লাল-সবুজের পতাকা ওড়াবো। আগামী ১৩ মার্চ, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাতটায় শুরু হবে আমাদের সেই নিউজিল্যান্ড মিশন।
আর আমার হিসাব যদি শতভাগ সত্য হয়, তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড বা ভাগ্যর কোঠায় ঝুলতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে-ই হোক না কেন, কোনো ব্যাপার না। তাদের আমরা তীব্র মনবলের জোরেই হারিয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করব। আপাতত সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন তাই টাইগাররা বেশ জোরেসোরেই করতে পারে। কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত হলেও আমরা ছেড়ে কথা বলব না। আর আমরা সবাই তো জানি, ভারতের শিবিরে একবার টাইগার গর্জন শুরু হলে ওরা কিভাবে লেজ গুটিয়ে যাবে। সে দৃশ্যও যেন চোখের সামনে ভাসছে। আমাদের শুধু মনে রাখতে হবে যে, আমরা একটি ম্যাচ করে জেতার জন্য মাঠে নামব। যেদিন যে ম্যাচ, সেদিন শুধু সেই ম্যাচটিতে দলীয় সকল নৈপুণ্য শতভাগ উজাড় করে দেবার জন্য আমরা মাঠে নামব। আর কিছু না। বিশ্বের যে কোনো দলকে এখন হারানোর মত সামর্থ রাখে টাইগার বাহিনী। এটাই আমাদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান যেন হয়।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ক্রিকেট হল চরম অনিশ্চয়তার খেলা। কিন্তু টাইগার বাহিনী এখন এমন চাঙ্গা অবস্থায় আছে যে, বিশ্বের যে কোনো দলকে আমরা চোখ বন্ধ করে হারানোর ক্ষমতা রাখি। বিশ্বের এক নাম্বার টেল খেলুড়ে দল ইংল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে হেরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাঘের গর্জন। সেই গর্জন এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অবশিষ্ট মাত্র তিনটি দলকে টের পেতে হবে। গ্রুপের শেষ খেলায় নিউজিল্যান্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে আয়ারল্যান্ড/পাকিস্তান/ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ভারত যে-ই আসুক বাঘের হুংকার তাকে মোকাবেলা করতেই হবে। উপায় নেই ক্রিকেট মোড়লেরা। এবার বিশ্ব ক্রিকেটের মোড়লদের বধ করার অভিযানে নেমেছে মাশরাফি বাহিনী। অতএব, আইসিসি'র মোড়লগণ ভাইয়েরা সাবধান। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ।
..................................
ঢাকা
১২ মার্চ ২০১৫
২| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:৪৯
আমার বাংলাদেশ স্বাধীন বলেছেন: চাই ---চাই----চাই-----চাই----
বিশ্বকাপ--বিশ্বকাপ--বিশ্বকাপ---বিশ্বকাপ---
অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ-----অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ---
৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২১
নিষ্কর্মা বলেছেন: আমরা আশাবাদী যে আমাদের দেশ তিনটা আরো বেশি খেলবে। কিন্তু তার মানে এই না যে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের গাছে মগডালে তোলা লাগবে। এদের ক্ষমতা সমন্ধে আমাদের জানা আছে। বাঙলার মানুষ এও জানে যে ভারতের সাথে খেলায় তামিম তো বটেই, সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-সৌম্য এরা সবাই ১০ এর নীচে রান করে সাজ ঘরে ফিরে আসবে। এমন দলকে নিয়ে বেশি উঁচু গাছে না চড়াই ভাল।
৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৩২
রাফা বলেছেন: ৩ম্যাচ নয় ২ ম্যাচ জিতলেই ফাইনাল খেলতে পারবে।চ্যাম্পিয়ন হোতে হলে ৩ ম্যাচ।সেই হিসেব করে কোন লাভ নেই ,তবে নিউজিল্যান্ডের সাথে জিতলে সেমি ফাইনালে যাবে।আর তা না হোলে এখান থেকেই বিদায়।
৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৭
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: হার জিত থাকবে কিন্তু ভালো খেলার প্রত্যাশা করি। ভারত এর ব্যাটিং এর শুরুটা অসাধারণ। আঘাতটা তাই মাশ আর রুবেলের করতে হবে। ভারতীয়রা স্পীন ভালো খেলে। সানির পরিবর্তে নাসির কাম্য।
৩০০ এর মধ্যে ওদের রাখতে হবে আর ব্যাটিং পেলে ৩০০+। আমার ভয়টা ধনী কে নিয়ে। হি ইজ অ্যা গ্রেট ক্যাপ্টেন। ওর ক্রিকেটীয় জ্ঞান প্রবল।
৬| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
সুমন কর বলেছেন: জয়তু টিম টাইগার্স !! অাশা রাখতেই হবে..............
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:৫৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
" গোটা বিশ্ব আবারো প্রত্যক্ষ করল বাঘের গর্জন। "
- উপরের এটা কি কোন সুন্দর বাক্য? আমার মনে হয়, নীচের বাক্যের মতো কিছু লেখা উচিত!
-গোটা বিশ্ব আবারো প্রত্যক্ষ করলো বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের নৈপুন্য!