নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ বাংলাদেশ হারেনি, হেরেছে জেনটেলম্যান ক্রিকেট !!!

১৯ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬

আলোচনার শুরুতেই আজকের খেলার বিতর্কিত বিষয়গুলো একটু সামনে আনা যাক:



১. ৩৪তম ওভারে মাশরাফি'র করা দ্বিতীয় বলে রায়ানা ক্লিয়ার এলবিডব্লিউ ছিল। যখন ভারতের রান ১৪৭/৩, তখন রায়ানার আউটটি আম্পায়ারদ্বয় দেয়নি। ওই সময় রায়ানা আউট হলে ভারতের ইনিংস ২০০ রানের আগেই গুটিয়ে যেত!!! আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সুরেশ রায়না তখনো রান পেতে হাঁসফাঁস করছেন। ভারত হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড কিছুক্ষণ মাথা নেড়ে ‘না’ বলে দিলেন। কিন্তু মাশরাফি আত্মবিশ্বাসী। চেয়ে বসলেন রিভিউ। পরে তৃতীয় আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস রিপ্লে দেখলেন। কিন্তু তিনিও নাকচ করে দিলেন আবেদন। বলটি শতভাগ স্টাম্পেই ছিল।



২. রায়ানা লাইভ পেয়ে পাওয়ার ব্যাটিং শুরু করে। যেখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে'র ৫ ওভার থেকে ভারত ৪৭ রান নিতে সক্ষম হয়।



৩. ভারতের রান যখন ৩৯ ওভারে ১৯৪ তখন রোহিত শর্মা ব্যক্তিগত ৮৭। ৪০ তম ওভারে রুবেলের চতুর্থ বলে রোহিতের ব্যক্তিগত রান তখন ৯০, তখন রোহিত ক্লিয়ার আউট ছিল। এবার পাকিস্তানের আম্পায়ার আলীম ধর লেগ আম্পায়ার থাকা অবস্থায় রুবেলের বলকে নো কল দেয়। যেটি ক্রিকেটের ভাষায় শিষ্টাচার বর্হিভূত। ক্রিকেটে কখনো কোনো লেগ আম্পায়ার নো বল কল করতে পারে না। আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ডের দেওয়া ‘নো’ বলটা যে স্পষ্ট ভুল ছিল। পাকিস্তানের ও ইংল্যান্ডের দুই আম্পায়ারের দেয়া নো বলের সিদ্ধান্ত ভুল বলে মন্তব্য করেন মাইকেল হোল্ডিং, অজিত আগারকার, শেন ওয়ার্ন, ভিভিএস লক্ষন ও মার্টিন ক্রো।



৪. রোহিত শর্মা লাইভ পেয়ে সেঞ্চুরি করা সহ ১২৬ বলে করেন ১৩৭ রান, যা ভারতকে অন্তত বাড়তি ৪৭ রান এনে দেয়। যা ভারতের রান ৩০০ ক্রোস করতে সহায়তা করে।



৫. ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়ানা দুইবার লাইভ পেয়ে ভারতের স্কোর তিনশো করতে সক্ষম হয়। যা সরাসরি শিষ্টাচার বর্হিভূত আম্পায়ারিংয়ের কুকর্মের ফসল। নইলে ভারত ২৬০ রানে গুটিয়ে যেত।



৬. বাংলাদেশের ভাইটাল উইকেট মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদের যে ক্যাচটি শেখর ধাওয়ান তিনবারের প্রচেষ্টায় ধরেছে, সেটা সুস্পষ্টভাবে ছক্কা। কারণ, ধাওয়ান যখন দ্বিতীয় প্রচেষ্টা নেন, তখন তার পা সাইড লাইন স্পষ্টভাবেই স্পর্শ করেছে। তাই তৃতীয় প্রচেষ্টায় ধাওয়ান যখন বলটি হাতে জমায়, তার এটিচুডে এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করেছে। কারণ ছক্কার বলটিকে আম্পায়ারগণ সম্মিলিতভাবে আউট দিলেন!!



৭. যখন ভারতের সকল খেলোয়াড় আউটের জন্য চিৎকার করছে, তখন ধাওয়ান কিন্তু অপরাধবোধ থেকে একেবারে চুপ ছিল। ওই সময় মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদকে জোড়পূর্বক এভাবে দুঃখজনক আউট দিয়ে আসলে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজের প্রধান প্রযোজক আজকের আম্পায়ারগণ।



এমনিতে ভারত একটি শক্তিশালী দল। বর্তমান ডিপেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দলটি এবারের বিশ্বকাপেও জোড়ালো প্রতিপক্ষ। কিন্তু ভারতের মত একটি শক্তিশালী দলকে যখন বাংলাদেশের মত প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা একটি দলের বিরুদ্ধে এভাবে নির্লজ্বভাবে আম্পায়ারদের উপর ভর করতে হয়, সেই জয়ে ভারত নৈতিকভাবে দুর্বলই থাকবে।



নৈতিকভাবে দুর্বল একটি দল বড়জোড় সেমি-ফাইনাল খেলবে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হবারই সম্ভাবনা খুব বেশি। যদি কোনো কারণে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠে, তখন হয়তো আজকের আম্পায়ারিংয়ের মত আবারো ভারতকে আম্পায়ারদের উপর নির্ভর করতে হবে একটি জয়ের জন্য। কারণ ভারত ফাইনাল না খেললে তো আইসিসি'র ইভেন্ট কমর্শিয়ালি লাভজনক হবে না। স্রেফ একটা লস প্রজেক্ট হয়ে যাবে।



বিশ্বকাপের মত একটি বড় টুর্নামেন্টে এত বাজে আম্পায়ারিং থাকলে সেই খেলাকে কোনোভাবেই জেনটেলম্যান খেলা বলা যাবে কিনা, এটা এখন একটি কঠিন প্রশ্ন! আজকের আম্পায়ারগণ কত মিলিয়ন ডলারে এই কুকর্মটি করেছেন, তাই নিয়ে এখন ক্রিকেটপ্রেমী সবার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পক্ষে সৌম্য, সাকিব, মুশফিক ও মাশরাফি খুব বাজেভাবে আউট হয়েছে, সত্য। শাকিব তো মনে হল ক্যাচ প্রাকটিস করল!! আইপিএল খেলা নিশ্চিত করার জন্য শাকিব কী আজ এত নিস্ক্রীয় ছিল? মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন বটে!! শাকিব ১০ ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়ে পেয়েছে একটি মাত্র উইকেট। কিন্তু আগের ম্যাচে শাকিব ক্যাপ্টেন হিসেবে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচে অনেক সিরিয়াস ছিল। শাকিবের আজকের খেলায় নিউজিল্যান্ডের খেলার মত সিরিয়াসনেসের ঘাটতি ছিল। এটা মনে হয় আইপিএল খেলার ফল। দাদাদের বিরুদ্ধে ভালো খেললে না আবার আইপিএল ডাক বন্ধ হয়ে যায়!!!



বাংলাদেশ টস হেরে ফিল্ডিং করার সময় প্রথম উইকেট পায় ১৬.৩ ওভারের মাথায়। ভারতের রান তখন ৭৫। অর্থ্যাৎ ভারত একটি শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু ৪ রান পরে ভারতের ৭৯ রানের মাথায় যখন কোহলি মাত্র ৩ রান করে আউট হল, তখন কিন্তু ভারতের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। যে কারণে ভারতের ১০০ রান করতে লেগেছে ২৬ ওভার। তারপর একটা ড্রিংকস ব্রেক। আর ঘটনাটা তখনই পাল্টে যায়। ভারত ওই ড্রিংকস ব্রেকে আম্পায়ারদের পুরোপুরি চোখ রাঙিয়ে দেয়। যদি ভারত তিনশো পেরোতে না পারে, তাহলে গোপন চুক্তির মিলিয়ন ডলার আর দেওয়া হবে না, এমন হুমকি হয়তো ছিল তখন। তাই রোহিত শর্মার আউটকে নো বল দেওয়া হল।



তারপরও ৩০৩ রান টার্গেট বাংলাদেশের জন্য কোনো ব্যাপার না। তামিম আর কায়েস যখন শুভ সূচনা করল, তখন তামিমের দলীয় ৩৩ রানের মাথায় আউটের পর সৌম্য সরকার যেভাবে ইমরুল কায়েসকে রান আউট করাল, এটাও আজকের ম্যাচের একটা টার্নিং পয়েন্ট। পরের বলেই সৌম্য যেভাবে ইমরুলকে রান আউট করাল, এই আউটর ফলে মুহূর্তে ৩৩ রানে ১ উইকেট থেকে বাংলাদেশ ৩৩ রানে ২ উইকেটে পরিনত হয়।



এবারের বিশ্বকাপে বলতে গেলে বাংলাদেশ মূলত ওপেনারদের অবদান ছাড়াই খেলেছে। ভারত এবং কন্ট্রাকচুয়াল আম্পায়ারগণ সেই ঘটনা জানতেন। মোহাম্মদউল্লাহর ভাইটাল উইকেটটি তাদের খুব প্রয়োজন ছিল। তাই মোহাম্মদউল্লাহর ছক্কার বলকে ওরা আউট দিয়ে দিল। ১৬.৩ ওভারে ৭৩ রানে ৩ উইকেট পরার পরেও বাংলাদেশ ম্যাচে ছিল। তারপর সৌম্য সরকার আউট হবার উপায় খুঁজল। শাকিব আইপিএল খেলা নিশ্চিত করল। মুশফিক সাব্বিরকে নিয়ে যখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, ঠিক তখনই আবার একটা বাজে শটে মুশফিক দুর্ভাগ্যজনক আউট। বলটি ব্যাটের ব্লেডে লেগে উপরে উঠে যায়। ধোনি যা ধরতে একদম ভুল করেনি।



তারপরেও নাসির আর সাব্বির বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু দলের যখন প্রয়োজন চার ছয়, তখন তো যে কোনো বলেই একটু রিক্সের জন্য আউট হওয়া একটা ব্যাপার। ব্যাটিং পাওয়াার প্লেতে নাসির আউট হবার পর ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ একপ্রকার ছিটকে যায়।



বাংলাদেশ ১০৯ রানে হারলেও এই ম্যাচে আসলে ভারত জেতেনি। জিতেছে শিষ্টাচার বহির্ভূত বাজে আম্পায়ারিং। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মত একটি বড় আাসরে শুধুমাত্র ভারতকে জেতানোর জন্য এমন নির্লজ্ব বাজে আম্পায়ারিং আগামী দিনের জন্য একটি কালো উদাহরণ হয়ে থাকবে। নইলে অবুঝ গাঙচিল পাখি কেন পাকিস্তানের আম্পায়ার আলীম ধরকে কামড়ে দেবে? আর ইংলিশ আম্পায়ার গৌল্ডের গায়ে হাগু করবে?? আজকের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একমাত্র অবুঝ গাঙচিল পাখি আর বাংলাদেশি সমর্থকরা ছাড়া বাকি সবাই ছিল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ।



তবু টিম টাইগার্সদের হারানোর কিছুই নেই। এবারের বিশ্বকাপে আমাদের লক্ষ্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। আমরা সেই লক্ষ্য শতভাগ অর্জন করেছি। বাজে আম্পায়ারিং না হলে আমরা সেমি-ফাইনালেও যেতাম। ওয়েল ডান টাইগার্স। বিশ্ববাসী এখন জানে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এখন আর কেউ নাক সিটকাতে পারবে না। এখন আমরা ইচ্ছে করলেই এক নাম্বার টেস্ট প্লেয়িং দল ইংল্যান্ডকে ওয়ান ডে তে যখন তখন নাকানি-চুকানি খাওয়াতে সক্ষম। ভারত এখন আমাদের রীতিমত সমীহ করে। নিউজিল্যান্ড তো হারতে হারতে জিতেছিল।



এবারের বিশ্বকাপে বিশ্ববাসী বাঘের সত্যিকারের গর্জন দেখেছে। এখন থেকে সামনের সকল বিশ্বকাপে এই গর্জন আরো জোড়ালো হবে। এই প্রত্যাশা আমাদের। ডোন্ট অরি ব্রাদার্স। আওয়ার বয়েস হ্যাভ ডান এ গুড জব। ইউ অল সুড গো টু এয়ারপোর্ট টু রিসিপ আওয়ার টিম টাইগার্স উইথ ফ্লাওয়ারস। রাজনৈতিক টানাপোড়নের এই দিনে বাংলাদেশে যখন কোথাও মানুষের ভরসা করার মত কিছু নেই, তখন টিম টাইগার্স আমাদের লাল-সবুজের পতাকা তলে যেভাবে একবিন্দুতে একত্রিত করেছে, আমরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই স্মরণীয় মুহূর্তগুলো মনে রাখব।



২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নব যুগের সূচনা। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এখন স্বয়ং আইসিসি (কেউ কেউ বলছেন আই ছিঃ ছিঃ) হিসেবে নেবে। নিতে বাধ্য হবে। কারণ, আগামী ২০১৯ সালে চার বছর পরে ইংল্যান্ডে যে বিশ্বকাপ হবে, সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ স্বয়ং কাপের ভাগিদার। এখন আমরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারি। এটাই আমাদের এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অর্জন। মন খারাপ করার কিছু নেই। টিম টাইগার্স দেশে ফিরলে আমরা টিম টাইগার্সকে নিয়ে গোটা রাজধানীতে ট্রাক মিছিল করব। আনন্দ করব। ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশ এখন সত্যি সত্যিই গর্ব করতে পারে। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট।



...............................................

ঢাকা

১৯ মার্চ ২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.