নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
বাংলাদেশে আমরা এমন একটি শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করছি, এমন একটি সমাজ ব্যাবস্থা চালু করেছি, এমন একটা শাসন ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যে, এখানে নিজেকে আর মানুষ মনে হয় না। এখানে স্কুল পর্যায়ে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক। কোমলমতি শিশুদের মাথায় সেই ছোট্ট বয়সে স্কুলে থাকতেই ধর্মের ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, এই হল তোমার ধর্ম। এখন থেকে ধর্মকে ভয় কর। ধর্মকে মান্য কর। তো বড় হবার পর সেই কোমলমতি শিশুদের কাছ থেকে আপনি কি আশা করতে পারেন? স্কুলেই তো সাম্প্রদায়িকতা শিরায় শিরায় শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বড় হয়ে সেই ছেলে কেন নিজেকে একজন মুসলমান ভাববে না? সেই ছেলে কেন নিজেকে একজন হিন্দু ভাববে না? বড় হয়ে সে তো নিজেকে মানুষ ভাবার সুযোগই পায় না। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির গোড়ার এই গলদ নিয়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোথাও কোনো দিন শুনলাম না, কেউ আবদার করলেন, এটা ঠিক করতে হবে। এটা পরিবর্তন করতে হবে।
অথচ স্কুল পর্যায়ে যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বাধ্যতামূলক করা হতো, তাহলে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ তৈরি হবার সুযোগ ঘটত। কিন্তু আমরা তা না করে ধর্মকে গুরুত্ব দিয়ে স্কুল পর্যায়ে বাধ্যতামূলক করে রেখেছি। এবং এটা নিয়ে গোটা রাষ্ট্রের কারোর কোনো মাথাব্যথা নেই। তাহলে সেই ছোট্ট ছেলে বড় হবার পর তার থেকে কিভাবে অসাম্প্রদায়িক আচরণ আপনি আশা করেন?
ভৌগলিক কারণেই প্রতি বছর বাংলাদেশকে বন্যা, খড়া, ঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। তাহলে স্কুল পর্যায়ে কেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার কোনো পদ্ধতি শিশুদের শেখানো হয় না? বাংলাদেশের এত হাজার হাজার বুদ্ধিজীবী, এত বড় বড় মন্ত্রী-আমলা, এত বড় বড় শিল্পপতি, এত নজরকারা কোটিপতি, কারোর মাথায় কেন স্কুল পর্যায়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা শেখানোর পরামর্শ আসে না?
কারণ, আমাদের যারা শাসক, তারা সব সময় চান বাংলাদেশে মিনিমাম তিনটি শ্রেণীবৈষম্য সর্বদা বজায় থাকুক। সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গরিব থাকুক। কিছু মানুষ শিক্ষা দিক্ষা কর্ম চাকরি-বাকরি নিয়ে মধ্যবিত্ত থাকুক। আর গুটিকয় বড় লোক থাকুক। সেই ব্যবস্থায় শিক্ষা পদ্ধতিকেও শ্রেণীবিভাজন অনুযায়ী রাষ্ট্র ঠিক করে রেখেছে। একেবারে গ্রামের গরিব মুর্খদের জন্য করা হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। মধ্যবিত্তদের জন্য বাংলা মিডিয়াম শিক্ষা। আর বড় লোকদের বাচচ্চাদের জন্য দেশে ইংলিশ মিডিয়াম অথবা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা। মধ্যবিত্ত বাংলা মিডিয়ামে লেখাপড়া শিখে বড় লোকদের চাকর-বাকর হবে। আর বড় লোকদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া পোলাপান হবে প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর। আর গরিবদের জন্য রাষ্ট্র তো মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেখান থেকে পাস করে হয় মসজিদে ইমামতি করবে নতুবা ভিক্ষা করবে। মিলাদ পড়াবে। কেউ মারা গেলে জানাজা পড়াবে। ব্যস। রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব যেন এখানেই শেষ।
মধ্যবিত্ত থেকে কেউ কেউ মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে হুটহাট বড় লোক পাড়ায় সদস্য বনে যায়। প্রথম প্রথম বড়লোকদের তা মেনে নিতে একটু ইর্ষা লাগে। পরে এক সময় তাদেরকে এরা নিজেদের গোত্রে ঠাই দেয়। আর তখন মধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসা সেই নব্য বড় লোকের আচার আচরণও রাতারাতি বড়লোকদের মত হয়ে যায়। মানে হল, মধ্যবিত্তের মধ্যে বড় লোক হবার এক ধরনের ফ্যান্টাসি কাজ করে সারা জীবন। সেই ফ্যান্টাসি যখন কেউ কেউ পেয়ে যায়, সে তখন পেছনের কষ্টের দিনগুলো ভুলে যায়। রাষ্ট্র তাদের জন্য তেমন ব্যবস্থা করেই রেখেছে।
আর গরিবদের কী হয়? শ্রেণীবৈষম্যের গ্যারাকলে আটকা খেয়ে এরা সময় সময় আল্লাহকে ডাকে। ইহকালে জীবনের কোনো পরিবর্তন না আসলে পরকালে এরা তাই পাবার স্বপ্ন দেখে। তাই স্বাভাবিক কারণেই এদের সাথে মধ্যবিত্ত আর বড়লোকদের এক ধরনের শত্রু শত্রু সম্পর্ক। এটা গরিব আর মধ্যবিত্তদের মধ্যে বরং আরো তীব্র। এই যে শত্রু শত্রু ভাবটা রাষ্ট্রই পরিকল্পিত ব্যবস্থায় ঠিক করে দিয়েছে, তা সব সময় গরিব ছেলেটি মন থেকে মেনে নিতে পারে না। মেনে নিতে পারে না বলেই তাদের অন্তরজুড়ে আল্লাহর উপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। রাষ্ট্রই সেই ব্যবস্থায় সকল অনুসঙ্গের যোগান দিচ্ছে। ফলে গরিবদের কাছে তাদের সেই আল্লাহ এবং ধর্ম সবচেয়ে গৌরবের ধন। তা নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে, বা খোঁচা দিলে, বা অবমাননা করলে, সেটা তারা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। মানার কথাও নয়। সমাজে বিড়াজিত এই যে বৈষম্য, এই শিক্ষাপদ্ধতির দোহাই, এই প্রচলিত কাঠামো, সেই কাঠামোর ভেতরেই ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই গরিব ছেলেদের মাথায় জিহাদ ঢুকিয়ে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি সেই সুযোগকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রের সহায়তায় কাজে লাগিয়ে এখন বেশ ফুলেফেঁপে উঠৈছে। খালি চোখে এটা হয়তো আমাদের শাসকগোষ্ঠির এখনো নজরে আসছে না। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যেখানে কেবল নিজেদের মধ্যে দলাদলি আর শতভাগে বিভক্ত হয়েছে। সেখানে এই পরাজিত শক্তিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়েছে। তাদের সেই সংগঠিত হবার পেছনে অনেক নিয়ামকও জড়িত। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জোড়ালো সমর্থন নিয়েই তারা আজ অক্ষশক্তিতে পরিনত হয়েছে। এখন শুধু তাদের এককভাবে রাষ্ট্রকাঠামোর ক্ষমতায় যাবার বাকি আছে।
আজ যে ছেলে মাদ্রাসায় চাপাতি চালোনো শিখছে, তার দায় কার? প্রধান দায় রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে এই দানব বাড়তে যারা দিয়েছে, তাদের। আমি কোনোভাবেই মাদ্রাসা শিক্ষাকে ঢালাউভাবে খারাপ বলার জন্য এই লেখার অবতারণা করছি না। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষার আড়ালে কোথায় কিভাবে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জঙ্গি উৎপাদন করছে, তার খোঁজখবর তো রাষ্ট্রের নেবার কথা। রাষ্ট্র সেই নজরদারি করতে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে বলেই আজ এই দানব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষায় তো কোথাও মানুষ হত্যা করার কোনো মন্ত্র শেখানো হয় না। তাহলে মাদ্রাসার ছাত্রদের কারা কোথায় কিভাবে ব্যবহার করছে, তা কেন রাষ্ট্র নজরদারি করতে ব্যর্থ হচ্ছে? অথচ আমরা ধর্মীয় বড় বড় উৎসবগুলো কিন্তু সবাই মিলে সর্বজনীনভাবেই পালন করি। সেখানে কিন্তু সাম্প্রদায়িক কোনো বিভেদ কারো অন্তরে থাকে না। তখন আমরা বুলি ছাড়ি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কিন্তু ধর্ম যদি যার যার হয়েই থাকে, তাহলে তা স্কুলের পাঠ্য সূচিতে কেন বাধ্যতামূলক? কারণ, ধর্মের ভয়ভীতিটা ছোটবেলায় কোমলমতি শিশুদের অন্তরে একবার ঢুকিয়ে দিতে পারলেই রাষ্ট্র কাঠামোতে অবশিষ্ট বৈষম্যগুলো বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের শাসক গোষ্ঠীর সুবিধা হয়। তাই পরিকল্পিত ভাবেই স্কুলের পাঠ্য সূচিতে এই ধর্ম শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডক্টর হুমায়ুন আজাদের উপর কারা হামলা করেছে দিনের আলোর মতই সবাই তা এখন জানে। রাজীব হায়দারকে কারা খুন করেছে? ডক্টর অভিজিৎ রায়কে কারা খুন করেছে? আর এখন ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কারা খুন করল? রাষ্ট্র এখনো চুপ কেন? বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি দিয়ে একই উপায়ে কুপিয়ে হত্যা করার পর শিখন্ডীরা যাদের হাতে নাতে ধরে দিল, তারা কারা? তারা কেবল ওই ধর্মান্ধ গোষ্ঠির পরিকল্পিত ছকের এক্সিকিউশন দলের সদস্য। তাদের বক্তব্য থেকে এটা এখন সুস্পষ্ট যে, এমন কি ধরা পরা দু'জন বাবু'র কোনো লেখা পর্যন্ত পড়েনি। তারা বাবুকে চেনেও না। তারা নিজেরাও পরস্পর কাউকে দুইদিন আগেও চিনতো না। স্রেফ এক্সিকিউশন দলের সদস্য হিসেবে তাদের একবার মাত্র দেখা হয়েছে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর আগে। তাহলে পুরো বিষয়টি বোঝার জন্য মনে হয় কারো আইনস্টাইন বা সক্রেটিসের মত পণ্ডিৎ হবার দরকার নেই।
কারা ওদের হাতে এই লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল যে, যাও হত্যা নিশ্চিত কর, আর আখেরে নিজেদের জান্নাতও সেই সঙ্গে নিশ্চিত কর। এই হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা কারা করেছে বা এখনো করছে? রাজীব, অভিজিৎ,বাবুদের উপর কারা নজরদারী করেছে? কারা এই হত্যার জন্য নির্দেশ দিয়েছে? সেই গোষ্ঠির রাঘববোয়ালদের যদি আইনের আওতায় আনা না যায়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য এক চরম ভয়ংকর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
যা হয়তো আমাদের শাসকগোষ্ঠী এখন কিছুটা টের পেলেও না বোঝার ভান করছেন। আজ যদি ডক্টর হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার বিচার হতো, আজ যদি রাজীবের খুনের বিচার হতো, আজ যদি অভিজিতের হত্যার বিচারকার্য ঠিকমত হতো, তাহলে হয়তো একজন বাবুকে এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতির নিচে মাথা খোয়াতে হতো না। রাষ্ট্রই এসব বিচারকাজে এক ধরনের নিরবতা পালন করে, এক ধরনের নিস্ক্রিয়তা দেখিয়ে, এক ধরনের ধরি মাছ না ছুঁই পানি ভাব করে, ওদেরকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এসব হত্যায় যারা এক্সিকিউশনের দায়িত্ব পালন করেছে, রাষ্ট্র যদি শুধু এখন তাদের লোক দেখানো একটা বিচার করার দায়িত্ব নিয়ে মনে করে বিচার করেছি বা করছি, তাহলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।
আজ যদি বাংলাদেশে তেল, গ্যাস না থাকতো, আজ যদি বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগর না থাকতো, আজ যদি ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এমন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে না হতো, আজ যদি বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী না হতো, তাহলে হয়তো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বাংলাদেশ নিয়ে ততোটা মাথাব্যথা হতো না। যেহেতু ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থিত। সে কারণে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পুরোপুরি শকুনি চোখ এখন বাংলাদেশের উপর। আর যেহেতু আমাদের তেল-গ্যাস আছে, আমাদের সুন্দরবন আছে, আমাদের কয়লাখনি আছে, আমাদের লোকবল আছে, আমাদের অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের সেই সম্পদগুলোর দিকেই ভারী লোলুপ দৃষ্টি। আমরা আফগানিস্তানে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান সম্পর্কে জানি। আমরা আফগানিস্তানে সোভিয়েত ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানি। আমরা ইরাকে মার্কিন খবরদারি দেখেছি। মিশর, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিনে তাদের আগ্রাসন আমরা দেখেছি, এবং এখনো দেখছি।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রধান টার্গেট হয় একটা জাতির মধ্যে সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক-গত বিভেদ তৈরি করা। সেই কৌশলে তারা কোথাও শিয়া-সুন্নি, কোথাও হিন্দু-মুসলিম, কোথাও হুতু-তুতসি এমন বিভেদ তৈরি করায় পারদর্শী। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অন্য একটি কৌশল থাকে দীর্ঘস্থায়ী বিভেদ ও বৈষম্য তৈরি করা। ১৯০ বছর ব্রিটিশদের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশরা চুক্তি করেই ধর্মের ভিত্তিতে ভারত আর পাকিস্তানকে আলাদা করে দিয়ে যায়। এই উপমহাদেশে ধর্মীয় বিষবাষ্পের সেই শুরু। তারপর ২৪ বছর অর্থনৈতিক বৈষম্যকে হাতিয়ার করে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হবার জন্য লড়াই শুরু করে। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধ হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল রক্তের বিনিময়ে। ভারত বা পাকিস্তানের মত চুক্তি করে নয়। তাই বাংলাদেশের মানুষের রক্তে বদলা নেবার নেশা আছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই পরাজয় এখনো মন থেকে মানতে পারেনি। আর তাদের বংশবৃদ্ধির যাবতীয় আয়োজন স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র শতভাগ উজাড় করেই দিয়ে এসেছে। সেই পরাজিত গোষ্ঠির টার্গেট কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়া। তাদের শক্তির জানান দিতেই তারা উদিচিতে বোমা হামলা করেছে। রমনার বটমূলে বোমা হামলা করেছে। খ্রিষ্টানপল্লীতে বোমা হামলা করেছে। একযোগে সারা দেশের ৬৪ জেলায় বোমা হামলা করেছে। আর যারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে, ফাঁকে ফাঁকে বাছাই করে তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব ডক্টর হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা, রাজীব হায়দারকে হত্যা, ডক্টর অভিজিত রায়কে হত্যা এবং সর্বশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা একটি দীর্ঘ মিশনের অল্পকিছু নমুনা মাত্র। ধর্মকে এখানে কেবল একটা হাতিয়ার হিসেবেই দাঁড় করানো হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকেই এখন ঠিক করতে হবে, তারা কি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের উসকানিতে তাল দিয়ে এই দানবকে আরো বাড়তে সহায়তা করবে নাকি এখনই এর একটা বিহিত করবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই চক্রান্তে একটি বড় অনুসঙ্গ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে এখানে বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী নয়। এসব হত্যাকাণ্ডের তাই বিচারও কেউ পায়নি। সেই সুযোগে এই দানব কিন্তু অক্ষশক্তি নিয়ে বড় হচ্ছে। এমন কি পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলেও, মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর বড় ধরনের উলম্ফন থাকলেও, সেখানে পর্যন্ত প্রকাশ্যে এভাবে কোনো লেখককে হত্যা করা হয়নি। তাই পরিস্থিতি বরং পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশেই এখন ভয়ংকর দিকে যাচ্ছে। এখন আমাদের শাসকগোষ্ঠী যদি এই দানবকে আরো পুষতে চায়, আরো মাথায় নিয়ে নাচতে চায়, তাহলে বাংলাদেশকে রক্ষা করাই আরো কঠিন হয়ে যাবে। সমস্যার শিকড়ে হাত না লাগিয়ে যদি উপরে উপরে লোক দেখানো সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সমস্যা দিনদিন নিশ্চিত আরো প্রকট হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটি হল, বাংলাদেশে এখন কেউ লেখালেখি করলে তাকে যে কেউ নাস্তিক ট্যাগ লাগিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে, কোনো কিছু যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রকাশ্যে হত্যা করার মত কর্মকাণ্ড করতে পারছে। একজন লেখক হিসেবে, একজন বাংলাদেশি হিসেবে, একজন এই সময়ের নাগরিক হিসেবে, বর্তমান সময়ে তাই আমি খুব নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। আমার ধারণা, আমার বন্ধুদের যারাই এখন লেখালেখি করেন, তাদের প্রত্যেকের দশাই এখন আমার মত এক বিশাল অসহায় নিরাপত্তাহীনতা বোধের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা মানুষকে এমনিতেই মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ। বিশেষ করে লেখকদের জন্য। সেজন্য আয়োজন করে কোনো চাপাতির কোপের প্রয়োজন নেই। আর রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থার নিস্ক্রিয়তা, প্রবলভাবে এই বিষয়ে নিরব থাকা এবং অবহেলাই আজ এই ভয়াবহ দাবাদহের সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্র যদি এখনই সজাগ না হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখাই বরং কঠিন হবে। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি, সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামোর ভেতরের দুর্বলতাই আজকের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। অতএব সাধু সাবধান।
......................................
ঢাকা
১ এপ্রিল ২০১৫
২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:০১
***মহারাজ*** বলেছেন: সম্পূর্ণ ভাবে সহমত আপনার লেখার সাথে ।
৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৫৮
রিপন বর্মণ বলেছেন: আর তখন মধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসা সেই নব্য বড় লোকের আচার আচরণও রাতারাতি বড়লোকদের মত হয়ে যায়। মানে হল, মধ্যবিত্তের মধ্যে বড় লোক হবার এক ধরনের ফ্যান্টাসি কাজ করে সারা জীবন। সেই ফ্যান্টাসি যখন কেউ কেউ পেয়ে যায়, সে তখন পেছনের কষ্টের দিনগুলো ভুলে যায়।
৪| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮
গোধুলী রঙ বলেছেন: ভাই রেজা ঘটক, ধর্ম বইতে লেখা থাকে মিথ্যা বলা মহাপাপ, ব্যক্তি জীবনে কতজন মিথ্যা ত্যাগ করে চলে,
সে বইতে লেখা থাকে প্রতিবেশির সেবাই ধর্ম, সেখানে শিখানো হয় না প্রতিবেশি মুসলিম হতে হবে, বাস্তব জীবনে কতজন সেভাবে প্রতিবেশির সেবা করে,
আপনি ধর্ম বইতে শুধু সাপ্রদায়িকতা দেখেন, নৈতিকতাটা দেখেন না, আর যারা শেখে তারাও আসলে ধর্মের নৈতিকতার দিকটা বাদ দিয়ে দেখছে।
তাহলে দাড়ালো কি, দোষটা ধর্মের নাকি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর?
৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪১
ঢাকাবাসী বলেছেন: দুনিয়াতে সবচাইতে নিকৃস্ট শিক্ষাব্যাবস্হা বা...দেশে।
৬| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
আনপ্রেডিক্টেবল রিফাত বলেছেন: অন্ধরে আর কত মুলা দেখাবেন? আর কত জঙ্গী, মৌলবাদী জুজুর ভয় দেখাবেন?
যাদেরকে আপনি মূর্খ, ধর্মান্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা এখন অনেক সচেতন হয়েছে, তারা এখন বুঝতে পারে আপনাদের চেতনা ঠেলা,,,,,,,
তারা জানে কারা জঙ্গী ইস্যু টিকিয়ে রাখছে, কারা এর সাথে জড়িত, কাদের নির্দেশে তথাকথিত ব্লগারদের দিনে দুপুরে পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা করছে,,,,,,
৭| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২২
তিক্তভাষী বলেছেন: ভালো লিখেছেন। সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা কিংবা উগ্রবাদীতার বিষয়গুলো তো আছেই। এমনকি ওগুলো বাদ দিয়ে বিচার করলেও বলতে হয় শিক্ষার পদ্ধতি এবং মান দুটোরই অবনমন ঘটেছে।
৮| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৫৯
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: এত বড় বড় কথা বলার আগে নিজে ঠিক হোন ।
সামুতে লিখবেন না বলেছিলেন । কেন লিখেন তাহলে ?
লজ্জা শরম কি থাকতে নেই ?
৯| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪৯
তিথীডোর বলেছেন: কেউ ধার্মিক হলে সে মানুষ না? ..গাধা কোথাকার !
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৫:১৭
রামন বলেছেন:
সেদিন হয়ত ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা সরকার ঐতিহাসিক শাপলা চত্তর ষড়যন্ত্র থেকে বেঁচে গিয়েছিল, যদি এখনও সরকারের সুমতি না হয় তাহলে সেদিন বেশি দুরে নয় যেদিন হিংস্র দানবদের তান্ডব থেকে গণভবন আর সুধাসদন কোনটাই বাঁচতে পারবে না৷