নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে !!!!

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:২৩

‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’ মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন। আজ পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ ১৪২২ মঙ্গল শোভাযাত্রায় কবিতার এই লাইনকেই প্রতিপাদ্য বিষয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। যার প্রেক্ষাপট ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলার মাটিতে উগ্রবাদী হামলায় লেখক অভিজিৎ রায় ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান খুন হওয়ার ঘটনা। মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান প্রতীকটি ছিল প্রায় ২০ ফুট লম্বা মুষ্টিবদ্ধ হাত, যার আঙুলে রয়েছে লাল রং। আর এই বিশাল হাত গলা টিপে ধরেছে সাধারণ মানুষের কণ্ঠকে।

এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রধান প্রতীক ছাড়াও বড় আকারের অন্যান্য প্রতীকের মধ্যে ছিল কাকাতুয়া, ময়ূর, বাঘ, হাতি, ঘোড়া, ছাগল ও টেপা পুতুলসহ ১১টি কাঠামো। আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল ছাগল ও দুটি ছানা। কলসিসহ বাঙালি গৃহবধূ সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এমন গ্রামীণ দৃশ্যের উপস্থাপনাও ছিল শোভাযাত্রায়। এছাড়া ছিল বিশাল আকারের মাছের পাশাপাশি কয়েকশ মাঝারি ও ছোট আকারের মুখোশ, পাখ-পাখালি। অশুভকে তাড়িয়ে মঙ্গলকে বরণ করে নিতে কেউবা মুখোশ পরে, কেউবা বাহারি বর্ণিল সাজে এই শোভাযাত্রায় শরিক হয়েছেন। এমন কি শোভাযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন আমাদের হিজড়া সম্প্রদায়েরও অনেকে।

বাংলাদেশে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রীয় আয়োজনে মধ্যে রমনা বটমূলে (অশথ্ব তলায়) ছায়ানট কর্তৃক নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গানে গানে 'এসো হে বৈশাখ' বর্ষবরণ আর চারকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা সবচেয়ে বড় আয়োজন। ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে পহেলা বৈশাখ এখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসবে পরিনত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব এবং সর্ববৃহত মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। বিগত বছরগুলোর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে বাংলা নববর্ষ ১৪২২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব আয়োজন ও সর্বস্তরের সকল শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষের মিলনমেলায় টইটম্বুর।

বাঙালি যে একটা উৎসবপ্রেমী জাতি এটা আজ আবারো বিশ্ববাসী বাংলা নতুন বছরের শুভক্ষণে নতুন করে প্রত্যক্ষ করল। বাঙালির এই উৎসবপ্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে করপোরেট বেনিয়া কোম্পানিগুলো এখন উৎসবেও নানান কিসিমের মুনাফা বাণিজ্যের ছোবল মারছে। আজ পারটেক্স বেভারেজের কোমল পানীয় রয়েল ক্রাউন (আরসি) কোলা চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় চারুকলার ডিনের নিষেধ অমান্য করেই সম্পূর্ণ নীতি বহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক প্রচারণা চালিয়েছে। আরসি কোলার লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, ক্যাপ ও ছাতা নিয়ে অন্তত শতাধিক কর্মচারী এই মঙ্গল শোভাযাত্রার পায়রা প্রতীকটির চারপাশ জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এসময় আরসি কোলার নামে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দিতে থাকে। মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের নিষেধকে থোরাই কেয়ার না করে আরসি কোলা আজ এই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। কোনো ধরনের বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রমের ফসল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা গত আড়াই দশক ধরে বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্যের চেতনা বহন করে আসছে। যেখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক প্রচারণার কোনোই সুযোগ নেই। প্রতিবছর বর্ষবরণের উৎসবের মূল আকর্ষণ চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্বেচ্ছায় হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহন করেন। অথচ এবার আরসি কোলার মত একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান সেই শোভাযাত্রায় নিজেদেরকে ব্র্যান্ডিং করার এক অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। যা বিনা অনুমতিতে করপোরেট বল প্রয়োগের সামিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া আরসি কোলা কোন যুক্তিতে এভাবে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রচারে জোরজবরদস্তি করার মত দুঃসাহস দেখাল, সেটাই ছিল আজকের পহেলা বৈশাখের উৎসবের একমাত্র অস্বস্থির জায়গা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা চারুকলা অনুষদের উচিত এখন আরসি কোলার বিরুদ্ধে আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়া। চারকলার শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর একমাসেরও বেশি সময় নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আয়োজন করে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার। পুরো আয়োজনটি করতে গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হয়। যার প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থা হয় শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম বিক্রি করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কিছু অনুদান দেয়। তবে তা বিরাট খরচের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এমন একটি পরিশ্রমের ফসলকে আরসি কোলা এভাবে হীন বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহার করার যে প্রচেষ্টা করেছে এটা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী। চারুকলা অনুষদের সম্পূর্ণ নিজস্ব এই আয়োজনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জোরপূর্বক এভাবে ঢুকে পরা এক ধরনের বলপ্রয়োগের সামিল। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা চারুকলা অনুষদের উচিত পারটেক্স বেভারেজের কোমল পানীয় রয়েল ক্রাউন (আরসি) কোলার বিরুদ্ধে মামলা করা এবং দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতিপূরণ আদায় করা। যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান সর্বসাধারণের এমন অনুষ্ঠানে আর কখনো ধৃষ্টতা দেখানোর দুঃসাহস না দেখায়। কেবল আর্থিকভাবে জরিমানা করলেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এই মানসিকতার বদল হতে পারে। নইলে এই ধরনের করপোরেট বাণিজ্যের ছোবল আগামীতে আরো বেড়ে যাবে।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতিতে একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এত বড় একটি জমায়েত কিভাবে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কলংকিত করল, সেই দায় এখন দায়িত্বরত বাহিনী এড়িয়ে যেতে পারে না। হয়তো আরসি কোলা এই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ধরনের টোপ দিয়েই সবার চোখের সামনে এত বড় একটা অপরাধ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে জিজ্ঞাসা কাজ করেছে যে, চারুকলা অনুষদ কি এবার এই আয়োজনের খরচ আরসি কোলার থেকে স্পন্সর নিল নাকি? চারুকলার উচিত মঙ্গল শোভাযাত্রার মানহানীর জন্য এখন আরসি কোলার নামে বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ মামলা করা। নইলে ভবিষ্যতে এ ধরনের করপোরেট হামলা সর্বজনিন এমন উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশে চলতেই থাকবে। যা কারো কাছেই মোটেও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।

মঙ্গল শোভাযাত্রার অর্থ যেখানে সকল অমঙ্গল ও অশুভকে জয় করে সকলের জন্য মঙ্গল ও কল্যানকর আগামীর প্রত্যাশা। সেখানে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় এভাবে আরসি কোলার বিনা অনুমতিতে জোরপূর্বক আগ্রাসনকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা অনুষদকে আরসি কোলার এই হীন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এখনই মামলা করার পাশাপাশি সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষন করার অনুরোধ জানাই। বাঙালির সর্ববৃহত প্রাণের উৎসবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কালো থাবাকে এখনই দমন করা না গেলে আমাদের ঐতিহ্য ও চেতনাকে এরা এক সময় গিলে ফেলার চেষ্টা করবে। বাঙালির উৎসবের ভেতরে অপসংস্কৃতি আমদানির জন্য এসব করপোরেট বেনিয়াশ্রেণীরাই দায়ী। এদের বিরুদ্ধে এখনই সজাগ না হলে বাঙালি এক সময় ঐতিহ্য সংকটের মুখোমুখি হবে। কারণ, এদের মত করপোরেট প্রতিষ্ঠানরাই আজকের এই ভুভুজেলা বিরক্তিকর শব্দ আমদানি করেছে। এটাকে কোনোভাবেই হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নাই। অতএব সাধু সাবধান। জয়তু পহেলা বৈশাখ। জয়তু বাংলা নববর্ষ।

....................................
ঢাকা
পহেলা বৈশাখ ১৪২২

[সূত্র: বিভিন্ন পত্রিকায় পড়া সংবাদ]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.