নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

Ernest Hemingway আমার প্রিয় লেখক!!!

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৪৪

অস্কার ওয়াইল্ডের নাটক দি ইমপোর্টেন্স অব বিয়িং আর্নেস্ট (The Importance of being Earnest) এর প্রধান চরিত্রের নাম আর্নেস্ট। যে খুব সাদাসিধে, বোকাসোকা টাইপের একজন মানুষ। এই আর্নেস্ট চরিত্রটি মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে একদম পছন্দ করতেন না। নিজের ফার্স্ট নাম রাখা হয় তার নানার নামের আর্নেস্ট নিয়ে। যা হেমিংওয়ের একদম পছন্দ হয়নি। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে অনেক ঝগড়াও করেছেন। হেমিংওয়ের মা গ্রেস হল হেমিংওয়ে ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী। ক্লারেন্স এডমন্ডস হেমিংওয়ে, যিনি পেশায় একজন ডাক্তার, তাকে বিয়ে করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবা আর্নেস্টের ইলিয়ন্সের ওক পার্কের বাড়িতে তারা থাকা শুরু করেন। সেখানেই ১৮৯৯ সালের ২১ জুলাই হেমিংওয়ে জন্মগ্রহন করেন।
ওক পার্কের ওই বাড়িতে মোট সাতটি রুম ছিল। একটি রুমে এডমন্ডস রোগী দেখতেন। একটি রুমে গ্রেস গানের স্টুডিও বানান। মা গ্রামে কোনো গানের অনুষ্ঠান হলেই সেখানে গান গাইতেন। মায়ের বেদম পিড়াপিড়িতে হেমিংওয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেলো বাজাতে শিখলেন। আর এই সেলো বাজানোকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে সংঘাত বাধে। এক গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মিসিগানের উইন্ডমেয়ারের ওয়ালুন লেকে চার বছরের বালক হেমিংওয়ে বাবার কাছে শিকার করা, মাছ ধরা, ক্যাম্প করা শিখেছিলেন। পরবর্তীকালে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেমিংওয়ের অ্যাডভান্সার ভালো লাগতে শুরু করে। তারপর থেকে তিনি অনেক দূরের জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে শিকার করা বা মাছ ধরার জন্য ছুটে যেতেন। বালক হেমিংওয়ে ওক পার্ক অ্যান্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে ১৯১৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। স্কুলে তিনি বোক্সিং, ওয়াটার পোলো, দৌঁড়ঝাঁপ আর ফুটবল খেলতেন। এছাড়া ছোট বোন মার্সেলিনকে নিয়ে স্কুল অর্কেস্টায় দুই বছর পারফর্ম করেন। স্কুলেই হেমিংওয়ে একটি সাংবাদিকতার কোর্স পড়েছিলেন, যেখানে ক্লাসরুমের পরিবেশ ছিল সংবাদপত্র অফিসের মত। তিনি স্কুলের দেয়াল পত্রিকাতে লিখতেন। সেখানে সম্পাদনার কাজও করতেন। ক্লাসে যারা ভালো লিখতে পারতো তারা স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা দিতেন। হেমিংওয়ে ও মার্সেলিন দুজনেই সেই পত্রিকায় লেখা জমা দেন। সিকাগো সিম্ফনি অর্কেস্টা'র পারফর্ম নিয়ে হেমিংওয়ে দ্য ট্রপেজে নামের লেখাটি স্কুল ম্যাগাজিনে ১৯১৬ সালে ছাপা হয়। পরে স্কুলের ইয়ারবুকে তার দ্য ট্রপেজে অ্যান্ড দ্য টাবুলা নামে আরেকটি লেখা ছাপা হয়। যেখানে তিনি রিং লারডেন জুনিয়ন ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। স্কুল পেরোনোর পর হেমিংওয়ে শিক্ষানবিশ সংবাদদাতা হিসেবে দি আরকানসাস সিটি স্টার পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
১৯১৮ সালে কানসাস সিটিতে রেড ক্রোসের এক নিয়োগ বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে হেমিংওয়ে ইতালিতে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ পান। সে বছর মে মাসে তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে প‌্যারিসে আসেন। জার্মান আর্টিলারি সেনারা তখন প‌্যারিস শহর বোমা মেরে ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে রেখেছে। জুন মাস নাগাদ হেমিংওয়ে ইতালি সীমান্তে পৌঁছান। মিলানে যেদিন পৌঁছালেন, সেদিনই একটি একটি যুদ্ধোপকরণ কারখানার বিস্ফোরনস্থলে তাকে পাঠানো হয়। যেখানে উদ্ধারকর্মীরা নারী শ্রমিকদের লাশের টুকরো টুকরো অংশ উদ্ধারের চেষ্টা করছিল। হেমিংওয়ে তার ‘ডেথ ইন দি আফটারনুন’ বইতে এই ঘটনার বিবরণ লিখেছেন। ৮ জুলাই ১৯১৮ সালে যুদ্ধশিবিরের ক্যান্টিনে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য সিগারেট ও চকোলেট দিয়ে ফেরার সময় মর্টারের গুলিতে হেমিংওয়ে আহত হন। আহত অবস্থাতেই নিজের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি একজন ইতালিয়ান সৈনিককে বহন করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে চলেন। তাঁর এই বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পরবর্তীতে তাকে ইতালিয়ান সিলভার মেডেল অব ব্রেভারি দেয়া হয়।
দুর্ঘটনায়ে তার দুই পায়ে অনেক মর্টারের টুকরো ঢোকে। জরুরি একটি অপারেশনের পর তাকে একটি ফিল্ড হসপিটালে পাঁচ দিন কাটাতে হয়। তারপর তাকে মিলানের রেড ক্রসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে দীর্ঘ ছয় মাস হেমিংওয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মার্কিন ফরেন সার্ভিস অফিসার, অ্যাম্বাসেডর ও লেখক হেনরি সেরানো ভিলার্ড ছিলেন তখন তার রুমমেট। সেখানেই তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় ডোরম্যান স্মিথ (চিঙ্ক) এর সাথে। তাদের এই বন্ধুত্ব প্রায় এক দশকের মত স্থায়ী হয়েছিল। রেড ক্রসে থাকাকালীন সময়েই তিনি অ্যাগনেস ভন কুরোভস্কির প্রেমে পড়েন। যিনি ছিলেন রেড ক্রসের একজন নার্স আর বয়সে ছিলেন হেমিংওয়ের চেয়ে ৭ বছরের বড়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে হেমিংওয়ে আমেরিকা ফিরে যান। তারা কয়েক মাসের মধ্যে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মার্চে অ্যাগনেস হেমিংওয়েকে চিঠি লিখে জানালেন যে, তিনি একজন ইতালীয় অফিসারকে বিয়ে করেছেন। এই ঘটনায় হেমিংওয়ে খুব বিপর্যস্ত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তিনি তার স্ত্রীদেরকে কোনো সুযোগ না দিয়েই পরিত্যাগ করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন।
১৯১৯ সালের শুরুর দিকে হেমিংওয়ে মাত্র ২০ বছর বয়সে একজন যুদ্ধাহত বীরযোদ্ধা হিসেবে বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে তিনি মিসিগানে মাছ ধরার জন্য ক্যাম্প করেন। সেই মাছ ধরার ঘটনা নিয়ে তিনি লেখেন তার ছোটগল্প 'বিগ টু হার্টেট রিভার'। এক পারিবারিক বন্ধু তাকে কানাডার টরোন্টোতে সাপ্তাহিক টরোন্টো স্টার পত্রিকায় একজন রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু কিছুদিন সেখানে কাজ করে জুন মাসে তিনি মিসিগান ফেরত যান। সেখান থেকে ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিকাগো চলে যান। কিন্তু টরোন্টো স্টার পত্রিকায় নিয়মিত ছোটগল্প লিখতেন তখন।
সিকাগোতে হেমিংওয়ে কোঅপারেটিভ কমনওয়েলথ নামে একটি মাসিক
জার্নালে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সিকাগোতে হেমিংওয়ের ছোটবোনের রুমমেটের সঙ্গে দেখা করতে আসেন হ্যাডলি রিচার্ডসন। যিনি হেমিংওয়ের চেয়ে ৮ বছরের বড়। তারা ইউরোপ সফরে যান। আর ১৯২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারা প‌্যারিসে বিয়ে করেন। এর দুই মাস পরে টরোন্টো স্টার হেমিংওয়েকে ফরেন করেসপন্ডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়।
১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল জেমস জয়েস এর ‘ইউলিসিস’ যা আমেরিকা কর্তৃক তখন নিষিদ্ধ হয়েছিল। হেমিংওয়ে তার টরন্টোর বন্ধুদের সাহায্যে গোপনে আমেরিকাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত বইটির কপি পাচার করতেন। ১৯২৩ সালে প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম স্বরচিত বই Three Stories and Ten Poems। প্রকাশক ছিলেন রবার্ট ম্যাকেলমন। ২০ মাস প‌্যারিস থাকার পরে তারা টরোন্টো ফিরে আসেন। সেখানে ১৯২৩ সালের ১০ অক্টোবর তাদের প্রথম সন্তান জন হ্যাডলি নিকানর জন্মগ্রহন করেন। পরিবারের পিছনে সময় দেয়ার জন্যে একপর্যায়ে তিনি পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দেন।
প‌্যারিসের ওই দিনগুলোতে হেমিংওয়ে সঙ্গে শিল্পী পাবলো পিকাশো, জোয়ান মিরো, জুয়ান গ্রিস, লেখক জেমস জয়েস ও এজরা পাইন্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
১৯২৪ সালের জানুযারি মাসে হেমিংওয়ে পরিবার নিয়ে আবার প‌্যারিস চলে আসেন। ১৯২৫ সালে তার প্রথম উপন্যাস In Our Time প্রকাশিত হয়। প্যারিসে অ্যান্ডারসেন তাকে পরিচয় করিয়ে দেন গারট্রুড স্তেইনের সাথে। এই ভদ্রমহিলাই পরে হেমিংওয়ের গুরু (Mentor) হয়ে ওঠেন এবং তাকে ‘প্যারিসের গণজাগরণ’ এর সাথে একাত্ম করে তোলেন। এ সময়ে হেমিংওয়ের লেখক এজরা পাউন্ড কর্তৃক প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন imagism এর প্রবর্তক। প্যারিসের মন্তপারনেস (Montparnasse )এর লা ক্লসারি দেস লিয়াস(La Closerie des Lilas) ছিল হেমিংওয়ের প্রিয় রেস্টুরেন্ট।এখানে বসেই তিনি টানা ৬ সপ্তাহ ধরে লিখে শেষ করেন তার দ্বিতীয় উপন্যাস The Sun Also Rises (১৯২৬)। ফিটজেরাল্ড এর The Great Gatsby পাণ্ডুলিপিটি পড়েই তিনি এই উপন্যাসটি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
লেখক এফ স্কট ফিটজেরাল্ড আর হেমিংওয়ে শুরুতে ভাল বন্ধু ছিলেন। তারা একে অপরের পাণ্ডুলিপি বিনিময়ও করতেন। তাছাড়া লেখক হিসেবে হেমিংওয়ে নানা ভাবে তার কাছে ঋণী। তার লেখা প্রথম বইটি প্রকাশে এই ফিটজেরাল্ড সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সম্পর্কে শীতলতা তৈরি হয়। ফিটজেরাল্ড এর স্ত্রী জেল্ডা প্রথম থেকেই হেমিংওয়েকে অপছন্দ করতেন। ক্রমে তার ধারনা জন্মে যে, হেমিংওয়ে একজন সমকামী এবং তার স্বামীকে তিনি তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।
১৯২৭ সালে হেমিংওয়ে হ্যাডলি রিচার্ডসনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং আরাকানসাসের (যুক্তরাষ্ট্র) একজন একনিষ্ঠ রোমান ক্যাথলিক পলিন ফেইফার (Pauline Pfeiffer) কে বিয়ে করেন। তিনি নিজেও এসময় ক্যাথলিক বাদে দীক্ষিত হন। সে বছরই প্রকাশিত হয় তার আরেকটি ছোট গল্পের সংকলন Men Without Women। এই সংকলনের The Killers গল্পটি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সাড়াজাগানো একটি রচনা। ১৯২৮ সালে হেমিংওয়ের পিতা ডায়াবেটিস ও আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনা তাকে মানসিকভাবে আবারো বিপর্যস্ত করে তোলে। ১৯২৮ সালের ২৮ জুন হেমিংওয়ের দ্বিতীয় সন্তান প্যাট্রিক জন্ম নেয়। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে অনেক জটিলতার পর তার জন্ম হয়। হেমিংওয়ে তার A Farewell to Arms উপন্যাসে সেই দৃশ্যের হুবহু অবতারণা করেছেন। উপন্যাসের পটভূমি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।একজন আমেরিকান সেনা ও একজন ব্রিটিশ নার্সের প্রেম এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য কাহিনী।এটিকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে তার আত্মজীবনীই বলা যেতে পারে। ব্রিটিশ নার্সের চরিত্রের মাঝে তার প্রথম প্রেমিকা জেনা কুরোভস্কির ছাপ পাওয়া যায়। আর আমেরিকান সেনার চরিত্রটি যেন তিনি নিজেই।

হেমিংওয়ের জীবন ও কর্ম নিয়ে ডেউইট সাগে একটি ডকুমেন্টারি বানান। বন্ধুরা দেখে নিতে পারেন সেই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি। ডকুফিল্মের লিংক
https://www.youtube.com/watch?v=mv5ewz4YE1g


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুম

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৭

আবু জাকারিয়া বলেছেন: তার নোবেল জয়ী ওল্ড ম্যান এন্ড ড্যা সি আমার সবথেকে প্রিয় উপন্যাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.