নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আন্তরিক উদ্যোগই কেবল এই বিশাল শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে কাবু করতে পারে!!

১১ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১

স্বাধীনতার পর থেকেই আদম ব্যবসা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, বাংলাদেশের কোনো সরকার আজ পর্যন্ত আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কোনো আদম ব্যবসায়ীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। এমন কি বাংলাদেশ থেকে আদম ব্যবসা বন্ধ করার কোনো সরাকারি উদ্যোগের খবর কোথাও বাটি চালান দিয়েও জানা যায় না।

বাংলাদেশ থেকে যাতে মানবপাচার বন্ধ হয়, সেজন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি বা রাষ্ট্রীয় রেডিও বাংলাদেশ বেতারেও কোনো জনসচেতনামূলক প্রচার বা প্রোগ্রাম নেই। স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রীয় এই দুই প্রচারযন্ত্রের প্রধান কাজ হল সরকারের প্রপাগাণ্ডা করা। জনসাধারণের জন্যে এই প্রচার মাধ্যম অনেকটা ঠুটো জগন্নাথ।

মানবপাচার বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য এমনকি রাষ্ট্রের আলাদা কোনো মন্ত্রণালয় বা প্রচার সেল নেই। অথচ মজার ব্যাপার হল, আমাদের রাষ্ট্রীয় টেলভিশন ও বেতারে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমও আছে। কিন্তু মাগার সাধারণ অশিক্ষিত মানুষকে সচেতন করার কোনো উদ্যোগ নাই।

একদল চালাক চতুর লোক যাদের সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, তারা এসব আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের সারা দেশেই নেটওয়ার্ক আছে। এরা বারো মাস সক্রিয়। গরীব ও অশিক্ষিত লোকজনই এদের প্রধান টার্গেট। এদের সঙ্গে আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজনও নানাভাবে জড়িত থাকে। সব কাজ চলে টাকার বিনিময়ে।

সাগর পথে মানবপাচারের প্রধান রুট হল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, কুয়াকাটা ও কোস্টাল এরিয়াসমূহ। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হল টেকনাফ। মূলত ১৯৭৮ সালে কক্সবাজারে মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীরা উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেবার পর থেকেই কক্সবাজার টেকনাফ রুটটি মানবপাচারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আর এরসঙ্গে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙালিদের মধ্যে একটি ব্যবসায়ী কুচক্র এই মানবপাচার ব্যবসায় সরাসরি জড়িত।

বাঙালি যে চক্রটি মানবপাচারে সক্রিয় তাদের রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে নানান কিসিমের সখ্যতা। আমাদের প্রশাসন মানবপাচারের প্রায় প্রতিটি ঘটনাই আগে থেকে জানে। কিন্তু এই কুচক্রের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে তারা তাদের পাচার করার কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে থাকে।

আমাদের কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অনেক অসৎ কর্মবর্তা-সদস্য এই কাজে নানাভাবে জড়িত। বাংলাদেশের যে কোনো সীমান্ত থেকে কিছু পাচার হবে আর সেই খবর বিজিবি'র কাছে থাকবে না, এটা হতেই পারে না। বরং গোটা চক্রটি এই অসৎ সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেই তারপর পাচার কাজটি করে থাকে।

আমরা হাজার কোটি টাকায় গোয়েন্দা সংস্থা লালন পালন করি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা সারা বছর কি কাজে ব্যস্ত থাকে, তা কেবল তারাই বলতে পারবেন। সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সীমান্তে বন্দীশিবির আর গণকবরের সন্ধান পাবার সাথে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষের পাচার হবার করুণ চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কেন মানবপাচারের এসব তথ্য নেই?

বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বেড়ে যাবার কথা যখন বলা হচ্ছে , তখন আমাদের সরকারি মাধ্যম থেকে এটাকে কম দেখানোর একটা প্রবনতা সব সময়ই সক্রিয়। সরকারিভাবে এই যে অস্বীকার করার প্রবণতা, বা কম দেখানোর একটা প্রবনতা, এটা এই অপকর্মের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে আরও উৎসাহিত করে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবপাচারকারীদের সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে আদম ব্যাপারিরা এই কাজে আরো নতুন উদ্যমে সক্রিয় থাকে। পুরো খেলাটা আসলে টাকার।

২০১২ সালে বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য সরকার একটি চুক্তি করার পর এতে প্রায় চৌদ্দ লাখ মানুষ নিবন্ধন করে। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আসলে যেতে পেরেছেন এগারো হাজারেরও কম লোক। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন বলেছে, এ বছরের প্রথম তিনমাসেই সমুদ্রপথে ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাকে পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যাপারে প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা সারাদেশ থেকে লোক জড়ো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে উখিয়ার উপজেলায় আনে। এরপর ছোট ছোট নৌকায় করে সমুদ্রে জাহাজে তোলার পর মূল প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া বা রুটটির বিষয় গোপন কিছু নয়। বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারের পর অনেক মামলাও হয়েছে। কিন্তু দালাল বা মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় দৃশ্যমান নয়।

অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু’র অনুসন্ধান বলছে, মানব পাচারের সাথে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার চক্রের সাথে সমুদ্রের দস্যুরাও যুক্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের একক কোন পদক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে যৌথ টাক্সফোর্স গঠন করে পদক্ষেপ নিলে হয়তো কিছুটা কাজ হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে যারা আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার যারা এই দালালদের সহযোগিতা করে, তাদের রুট উৎপাটন করতে না পারলে, এই যৌথ টাক্সফোর্সও কার্যকর হবে না।

সরকারি উদ্যোগে এখন সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীদের ক্রোসফায়ারে মেরে ফেলার উদ্যোগ আসলে, এই গোটা কুচক্রের নেটওয়ার্ক ও এর সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় যাতে প্রকাশ না পায়, সেই ঢাল তৈরি করা। বন্দুকযুদ্ধের নামে দু'চারজন মানবপাচারকারীকে সরকারিভাবে ক্রোসফায়ার দেওয়া হলেও এই সুবিশাল চক্রের কার্যক্রমকে কোনোভাবে বন্ধ করতে পারবে না। বরং এই বিশাল চক্রের যারা হোতা, যারা এই ব্যবসার মূল উক্ত্যোক্তা, তাদের এক ধরনের আড়াল করার সামিল।

মানবপাচারের যারা মূল উদ্যোক্তা তাদের সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে, সারাদেশে এদের নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে না পারলে এবং সর্বসাধারণের মধ্যে এই বিষয়ে সক্রিয়ভাবে সচেতনতা আনতে না পারলে, এই ক্রোসফায়ার কোনো কাজে লাগবে না। কারণ মিডিয়া এক সময় নতুন ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশ থেকে এই দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা মানবপাচার চলতেই থাকবে।

মানবপাচার বন্ধে যতক্ষণ না সরকার আন্তরিকভাবে সদিচ্ছা না দেখাবে এবং যতক্ষণ না মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সকল যোগাযোগ মাধ্যম, এর সঙ্গে জড়িত কুচক্র ও নেটওয়ার্ককে নিস্ক্রিয় করতে না পারবে, ততক্ষণ এই মানবপাচার আসলে বন্ধ হবে না।

শুধুমাত্র লোক দেখানো কিছু ব্যর্থ সরকারি উদ্যোগ কোনোভাবেই বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার রোধ করার জন্য যথেষ্ঠ নয়। মানবপাচারের সঙ্গে প্রশাসনের যারা জড়িত, তাদেরও চিন্থিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিকভাবে যারা এই সুযোগ ব্যবহার করে কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সকল অনুসঙ্গ যতক্ষণ সক্রিয় থাকবে, ততক্ষণ এই আদিম প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না।

আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা যতক্ষণ না এই বিষয়ে আন্তরিক না হবে, ততক্ষণ এই মানবপাচারের নাড়িনক্ষত্র জানারও কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বন্ধ করার জন্য সমন্বিত যৌথ উদ্যোগ ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। সরকারকে শুধু আন্তরিক থাকলেই হবে না, পাশাপাশি এই প্রভাবশালী কুচক্রের গোটা সাম্রাজ্যেই হানা দিতে হবে। হানা দিতে হবে সকলপ্রকার দলীয় বা স্বজনপ্রীতিকে এড়িয়ে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণ দেখিয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হলে, এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না। সরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কতোটা আন্তরিক ভাবে এই মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে, তার উপরই নির্ভর করবে মানবপাচারের এই গোটা চক্রকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া।

..............................
১১ মে ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।

কিন্তু সাধারণ পাব্লিক কি করবে, প্রশাসন যন্ত্র যদি কাজ না করে?

২| ১৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩২

রূপা কর বলেছেন: সহমত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.