নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলর ঘটনা মোটেও একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই ছাত্রীদের যৌন হেনস্থার খবর শোনা যায়। কিছু ঘটনা কেবল ডেপার্টমেন্টের বারান্দার বাইরে যায় না। কিছু ঘটনা কেবল সেই শিক্ষকের ড্রয়িংরুমের বাইরেও যায় না। কিছু ঘটনা সেই ছাত্রী নিজের বুকের ভেতর গোপন রেখে এই সমাজের কাছে নিজের সম্মানকে আর খাটো করতে দেয় না। কিছু ঘটনা বেশি জানাজানি হলে নানান কিসিমের আপোষ শালিশের মাধ্যমে মেটানোর এক ধরনের ব্যবস্থাপত্র এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অলিখিতভাবে চালু আছে। যার সারমর্ম দাঁড়ায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চরিত্র মোটেও ধোয়া তুলশিপাতা নয়। সুযোগ পেলেই অতি উচ্চ শিক্ষিত এসব লোলুপ লম্পটদেরও মেয়েদের শরীরের প্রতি বরাবরাই শকুনি নজর ফেলতে দেখা যায়।
ফলে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো ধরনের সামাজিক লোকচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে যে কাজটি অনেকটা নিয়মিত প্রাকটিসে পরিণত করেছেন, সেখানে একই ক্যাম্পাসের তাদেরই ছাত্ররা তো ওস্তাদের পদ অনুসরন করেই এগোবে এবং আসলে হচ্ছেও তাই। শিক্ষক যদি এই বিষয়ে সচেতন থাকতেন, তাহলে তার ছাত্রও কিছু হলেও শিখত। এটা এমন ঘটনা যে অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলা হয় র্যাচেট ইফেক্ট বা প্রদর্শন প্রভাব। একই ক্যাম্পাসের অন্য সকল পুরুষ প্রজাতির মধ্যেই শিক্ষকদের প্রদর্শিত সেই কুকর্মের একটা দীর্ঘ এবং ধারাবাহিক প্রদর্শন প্রভাবের কারণে এখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী-সুইপার সহ সকল স্তরে সবার মধ্যেই এই যৌনবিষ উলম্ফিত।
এবার আপনারাই বলুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কলেজে প্রভাব ফেলবে কিনা? কলেজের শিক্ষকদের সাথে কি লিঙ্গ নেই? কলেজের শিক্ষকদের শরীরে কি রিপুর তাড়না নেই? কলেজের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী-সুইপার তাদের মধ্যে কি কাম-খায়েস নেই? কলেজের ছেলেদের মধ্যে সেই বিষবাস্প ছড়াবে না, এটা আপনি কিভাবে চিন্তা করতে পারেন? ফলে আমাদের কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শিত পথই কেবল অনুসরন করছে।
এবার আসুন স্কুলের কথায়। স্কুলকে আপনি কয়ভাগে ভাগ দেখাতে চান? হাইস্কুল, প্রাইমারি স্কুল, প্রি-স্কুল বা আরো কিছু ভাগ? যত ভাগেই স্কুল দেখান, সেখানেও লোলুপ পুরুষের অভাব নেই। সেখানেও পরিমলদের অভাব নেই। সেখানেও ছাত্রীদের যৌন নিপিড়কদের অভাব নেই। কেবল ঘটনা যতগুলো ঘটে, তা সেই সুনির্দিষ্ট ক্যাম্পাসের দেয়ালের বাইরে আর কয়টা যায়? কয়টা পত্রিকার সাংবাদিকদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়? কয়টা যৌন নিপিড়নের ঘটনাকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই আমলে নেয়?
এই দীর্ঘ প্রাকটিসের ফসল এখন আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে প্রকাশ্যে রাজপথে ঘটতেও দেখছি। পহেলা বৈশাখের ঘটনা এখন আর মোটেও কেবল পহেলা বৈশাখেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে রাষ্ট্রের পুলিশও হাজার হাজার সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে সেই একই প্রাকটিস করে দেখিয়েছে। গাউসিয়া-নিউমার্কেটের ভিড়ের মধ্যে যে ঘটনা নব্বই দশকেও ঘটত, এখনো ঘটছে। এখন তো যে কোনো ভিড়ের মধ্যেই এই যৌন নিপিড়নের ঘটনা অহরহ ঘটছে। পাবলিক বাসে কি ঘটছে না? কোথায় কোথায় রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে?
এখন দিল্লীর অনুকরণে নারায়নগঞ্জেও বাসের মধ্যে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফেরা ক্লান্ত নারী শ্রমিক বাসের ড্রাইভার-হেলপার-কন্টাক্টরদের দ্বারা গ্রুপ ধর্ষনের শিকার হচ্ছে। যে রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যায়লের শিক্ষকদের যৌন নিপিড়নের কোনো বিচার হয় না, ছাত্রদের ধর্ষনের সেঞ্চুরি ঘটনার কোনো বিচার হয় না, পুলিশের নারী নিপিড়নের কোনো বিচার হয় না, সেই বিচারহীনতার দেশে কোথাকার কোন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর এক ছোট্ট শিশুকে যৌন নিপিড়নের বিচার হবে, এটা আপনি কিভাবে আশা করেন?
এই ঘটনা কি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ আছে? এই ঘটনা কি এই রাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে সংক্রামিত হয় নাই বলে আপনি দাবি করতে পারবেন? কোনো অফিসে বসের কাছে কোনো নারী কর্মী যৌন নিপিড়নের শিকার হয় নাই এমন ঘটনা কি আপনি অস্বীকার করতে পারবেন? আমাদের মিডিয়াপাড়ায় চাকরির নামে, বিভিন্ন পদ পাওয়ার নামে, বসের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে ক্যারিয়ার গঠনের নামে, বিভিন্ন ঘটনায় যত ওপেন সিকরেট নারী ধর্ষনের ঘটনা মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, এগুলো কি আপনি সব মিথ্যা বানোয়াট বলতে চান?
আমাদের আমলাদের বিদেশ সফরের সময় অফিসের সুন্দরী অধিনস্ত নারী কর্মীদের যে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে সফর সঙ্গী করা হয়, সেখানেও নারী ধর্ষনের ঘটনা একদম ঘটে না, আপনি কি এসবও অস্বীকার করতে চান? এই রাষ্ট্রে নারী ধর্ষন বা নিপিড়নের আর কোন কোন ঘটনাকে আপনি অস্বীকার করতে চান?
এবার বলুন, আপনি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ঘটতে থাকা কয়টি নারী ধর্ষন বা নিপিড়নের ঘটনার বিচার করেছেন? কয়টি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে রাষ্ট্রের বিচারকাঠামো? যে দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনি পহেলা বৈশাখের নারী নিপিড়নের ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে আড়াল করার চেষ্টা করছেন, সেই একই দৃষ্টিভঙ্গিতে এই রাষ্ট্রে সংঘটিত অপর প্রায় সকল নারী ধর্ষন ও নিপিড়নের ঘটনাকে আড়াল করার কৌশল কি আপনি মোটেও অস্বীকার করতে পারবেন?
আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, আজ যদি সেঞ্চুরি করা ধর্ষকছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, আজ যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিমলদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, আজ যদি পহেলা বৈশাখের ঘটনাকে রাষ্ট্র যথাযথভাবে আমলে নিয়ে দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো, আজ যদি প্রকাশ্যে পুলিশের নারী নিপিড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, আজ যদি অফিস-আদালত-রাজপথ সর্বত্র নারীদের প্রতি রাষ্ট্রে সম্মান প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে আর নতুন করে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ছোট্ট শিশুর প্রতি যৌন নিপিড়নের ঘটনা হয়তো ঘটত না।
এই রাষ্ট্রে যারা আইন তৈরি করেন, সেই আইন প্রণেতাদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে যে আবাসিক ভবন নির্মান করা হয়েছে, সেখানে কত ধরনের ধর্ষনের ঘটনা, নারী নিপিড়নের ঘটনা রোজ ঘটছে, তার কয়টি ঘটনা রাষ্ট্র জানতে পারছে? কয়টি ঘটনা কতভাবে আড়াল করা হচ্ছে, তা কি আমরা কেউ জানি?
একদিকে রাষ্ট্র নারায়নগঞ্জের মত স্বীকৃত পতিতাপল্লী বা অন্যান্য কান্দিপট্টি ধর্মের দোহাই দিয়ে ঊঠিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে বনানী, গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, বনশ্রী, মগবাজারে হাজার হাজার প্রাইভেট আবাসিক কান্দিপট্টি গড়ে তুলছে। এই রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, অফিস-আদালত, সরকারি বেসরকারি কোয়ার্টার কোথায় বলুন অলিখিত কান্দিপট্টি নেই? আপনি এই রাষ্ট্রের কোন কোন ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করবেন?
মূল বিষয় হল, প্রায় প্রতিটি নারী নিপিড়নের ঘটনায় রাষ্ট্র এক ধরনের নিরব দর্শক থাকার চেষ্টা করে। একান্ত যে ঘটনায় কিছুটা সাড়া না দিলেই নয়, একেবারে বেশি মাত্রায় জানাজানি হয়ে গেছে, অন্য কোনো বিকল্প নেই, তখন এই ঠুটো জগন্নাথকে কিছুটা সচল হবারই কেবল উদাহরণ আছে। অন্যান্য সকল ঘটনায় আশ্চার্য এক নিরবতা পালনে বা আমলে না নেবারই কেবল উদাহরণ আমাদের।
এভাবে আমাদের সামাজিক কাঠামোতে নারীদের প্রতি আচরণের বা দৃষ্টিভঙ্গির যে প্রাকটিস গড়ে উঠেছে সেটি এখন ভয়ংকর রকম আতকে ওঠার মত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনা ঘটল, তার যদি আপনি বিচার না করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেঞ্চুরি করা ধর্ষক ছাত্রের যদি আপনি বিচার না করেন, পহেলা বৈশাখের নারী নিপিড়নের ঘটনাকে নানান কিসিমের কাসুন্দি দিয়ে যদি আপনি ধামাচাপা দিতে চান, তাহলে বুঝতে হবে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের ছোট্ট শিশুর প্রতি যে যৌন নিপিড়নের ঘটনা ঘটেছে, ওটাকেও আপনি কোনো না কোনো অযুহাতে এড়িয়ে যাবার কৌশল নেবেন।
একদিকে রাষ্ট্রে আইনের শাসনের কোনো বালাই নেই। সরকার বাহাদুরের কারো কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুন-ধর্ষন-গুমের কোনো বিচার নেই। অন্যদিকে কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনায় স্বয়ং এসব অপরাধীদের পুরস্কৃত করার রাষ্ট্র যেনো এক পুতুল খেলার তাসের ঘরে পরিনত হয়েছে। যে কারণে এসব ঘটনা দিন দিন ক্রমেই কেবল বেড়েই যাচ্ছে। আর ধীরে ধীরে বাংলাদেশ যেনো মধ্যযুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সত্যি সত্যিই এক অদ্ভুত উটের পৃষ্ঠে চলছে এই দেশ। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনা কোনোভাবেই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এই রাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিচারহীনতা ও নারী নিপিড়নের ধারাবাহিক প্রাকটিসের এক জলন্ত দৃষ্টান্ত ওটা।
যতক্ষণ না রাষ্ট্র এই বিষয়ে আন্তরিক সদিচ্ছা দেখিয়ে নারী নিপিড়নের যে কোনো ঘটনায় 'নো টলারেন্স' নীতি গ্রহন না করবে, পূর্বে সংগঠিত ঘটনাগুলোর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না করবে, ততক্ষণ এই ঘটনা কেবল ঘটতেই থাকবে। এটা অনেকটা ভূমিকম্পের পর আফটার শকের মত এক ধারাবাহিক প্রবনতা। রাষ্ট্র এ বিষয়ে এখনই আন্তরিক না হলে ভবিষ্যতে এটা আমাদের সমাজের সকল স্তরে সংক্রামকের মত ছড়িয়ে যাবে। দেশে নারী নিপিড়ন, ধর্ষন ইত্যাদির অনেক কঠিন আইন আছে বটে, কিন্তু সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগের দায়টি সরকার বাহাদুর কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। অতএব সাধু সাবধান।
..............................
১৫ মে ২০১৫
ঢাকা
২| ১৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
যান্ত্রিক বলেছেন: শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেয়া আর আম্লীগ-বিম্পির হাতে ক্ষমতা দেয়া একই কথা।
এবং এই ক্ষেত্রে শিয়ালই যদি বিচারক হয়, তাইলে তো সোনায় সোহাগা।
৩| ১৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯
তৌফিক মাসুদ বলেছেন: আমার সবচেয়ে বাজে লাগে ছাত্র রাজনীতির দলগুলোর অবস্থান নিয়ে। এদের নিজেদের গায়ে যতক্ষণ আঘাত না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত খুজে পাওয়া জায়না। সার্থে আঘাত লাগলেই দেশ, ধর্মের কত কিছু ছিড়ে যায়!!!!!
আমার মতে ধর্মীয় নেতাদের শুধু নারীদের শালীনতা নিয়েই কথা বলে ক্ষ্যন্ত থাকা উচিত নয়। পুরুষদের ব্যপারেও জোড়ালো গুরতব দিতে হবে। কারন মেয়ে শিশুদের পর্দা করার আর কি আছে? তারা কি বোঝে। সমস্যা আমাদের পুরুষদের চরিত্রে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৮
ঢাকাবাসী বলেছেন: ধর্ষকের বিচার হয়না তাই এটা বেড়েই চলেছে।