নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গরীব কৃষকের আবার মাংস খাবার লোভ হয় কি করে!!!

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৬

সরকারের মগজ যখন নগরায়নের দুষ্টচক্রে আবিষ্ট হয়ে থাকে, তখন নানান ভুলভাল প্রেসক্রিপশানে শিল্পায়নের দিকেই তার আগ্রহ বেশি হয়। তখন সেই সরকার সুন্দরবনের অস্তিত্ব কেন প্রয়োজনীয় তা যেমন ভুলে যায়। তেমনি কৃষিজমি কেন প্রয়োজনীয় তা অনুভব করতেও খেই হারিয়ে ফেলে। সরকারি সদ্দিচ্ছা পুরোপুরি কৃষি বিমুখ হয়ে গেলে, সেই দেশ যতই কৃষিপ্রধান হোক, সেই কৃষি উৎপাদন ধীরে ধীরে আর কৃষকবান্ধব থাকে না। কৃষিখাতে তখন শিল্পায়নের দানব থাবা মারতে থাকে। তখন কৃষিখাতে শ্রমিক হটানোর জন্য শহরে নানান কিসিমের চাকরির মূলা ঝুলানো হয়। বাংলায় যার নাম ফুটানি। যে ধান একসময় সে নিজে বানাতো, সেই ধানের চাল সেই ফুটানির টাকায় শহরে বসে কিনে তখন ভারী ডাট দেখায়। যাকে বলে টাউনের ডাট। এই টাউনের ডাটে যখন সরকার বাহাদুর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়, তখন সেই দেশের কৃষির কপাল লাটে ওঠে। আর তখন কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম না পেলেও, সরকারের ওই ডাটগিরির কারণেই মধ্যস্বত্তভোগী দালালরাই তখন বেশি মুনাফা লোটে। বাংলাদেশের কৃষিখাতের চিত্র বর্তমানে সেই দশায় আছে।

এই যে সরকার বাহাদুর দিনাজপুরের চালকল মালিকদের কাছ থেকে যেখানে ১ লাখ ৬ হাজার টন চাল কিনবে, সেখানে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনবে মাত্র ৩ হাজর ৫৬১ টন ধান! আর সারাদেশের চিত্রটা একবার ভাবুন? সারা দেশের চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনবে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টন। আর কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন। যেখানে এবার বরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টন। কোথায় ১ কোটি ৯০ লাখ টন আর কোথায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন! এত অল্প পরিমাণ ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনে কি হবে! (লেখক কবিরউদ্দিন সরকারের স্টাটাস থেকে)। কৃষক নিজের খাবারের জন্যই লোকসান গুনে হলেও ওই ক্ষেতে পরে থাকে। সরকারের মনের খায়েস তখন পূরণ হয়। কারণ যে দুষ্ট চক্রের সিন্ডিকেট এই পুরো ব্যাপারটায় খবরদারি করে, তখন তারা বাইরে থেকে চোরাকারবারি বা অতিরিক্ত চাল আমদানিরও একটা বাড়তি সুযোগ পায়। অনেকটা ফাঁদ পেতে মাছ শিকাড়ের মত। শিল্পায়নের ভুল ফাঁদে পা দিয়ে এভাবে সরকার বাহাদুরও একসময় এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে পরাজয় মেনে নেয়। তখন গোটা দাম ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাটুকুও এই সিন্ডিকেট বা ফরিয়াদের হাতে চলে যায়। বাংলাদেশে বাজারের নিয়ন্ত্রণ মোটেও সরকারের সামর্থ্যের মধ্যে নেই। সরকার বরং এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতার ভান করে ভোট হালাল করার জন্য কল্যানমূলক রাষ্ট্রের নানান কাসুন্দি ঘাটতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আজকে আমার কৃষক এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি খাসির মাংস কিনতে পারছে না। এটা নিয়ে সরকারের তখন কোনো আফসোস হয় না। বরং সিন্ডিকেটের নতুন নতুন বাজার কাঠামোর নানান কিসিমের ঘেরাটোপে তখন সরকার বাহাদুর নিজেরাও ঘুরপাক খায়। তখন তাদের নতুন নতুন ডিমান্ড তৈরি হয়। নতুন এয়ারপোর্টের জন্য কৃষি জমি প্রয়োজন হয়। কিন্তু কৃষি বান্ধব সড়ক বা রেল যোগাযোগ নিয়ে সরকারের তেমন ঘুম হারাম হয় না। বাংলাদেশে আরো বেশি করে এয়ারপোর্ট জরুরী নাকি সড়ক ও রেল যোগাযোগ বেশি জরুরী? এমন কি নদীমাতৃক দেশ হিসেবে আমাদের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জরুরী উপলব্ধিগুলোও তখন হারিয়ে যায়। বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যে এতো জায়গা থাকতে তখন সুন্দরবনের কাছে রামপালেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নেই সরকার বাহাদুর পাগলা হয়ে যায়। একবারও ভাবে না, দেশের কোথাও আর একটাও সুন্দরবন নেই। যে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবে।

সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারলে সরকারকে বুদ্ধি দেওয়া এসব সিন্ডিকেটেরই পোয়া বারো। তখন বছর বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে। সেই সুযোগে এরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে অনেকটা স্থায়ী দাওয়া মারতে পারবে। সরকারের যারা চুরিচামারি করে, তাদের চোখেমুখে তখন চকচকা হাসি ফুটবে। কারণ রিলিফ চুরি আর বিদেশি সাহায্য চুরিতে তখন সবাই মিলে হিরিক লাগাতে পারবে। ফলে বাংলাদেশের কৃষিখাতকে ধ্বংস করে দেওয়াই সরকার লালিত এসব সিন্ডিকেটের সুপ্ত কামনার মধ্যে অন্যতম। তাই এরা যত খুশি কৃষি জমি দখল করছে। গ্রাম উঠিয়ে সেখানে শহর বানাতে পাগলা হয়ে যাচ্ছে। শিল্পায়নের পেছনে সরকার বাহাদুরের এই পাগলা হওয়ার প্রবনতা টাই বাংলাদেশের কৃষির জন্য চরম বিপদ ডেকে এনেছে।

কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, না বলে এখন বলতে হবে সরকার কৃষককে ন্যায্য দাম দিতে আসলে মোটেও আর ইচ্ছুক নয়। তাই রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো গড়ায় সেভাবেই কৃষি বান্ধব না করে শিল্প-বান্ধবের দিকেই সরকারের আগ্রহ। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন এই শ্লোগানেই সরকার বাহাদুর খুশি। কৃষক মাংস খেতে পারল কিনা, তাতে তো সরকারের আগ্রহ নাই। বরং সরকার পালিত সিন্ডিকেটের কর ফাঁকি, ব্যবসায়ী সুযোগ সুবিধা, লাল পাসপোর্ট, বিদেশ টাকা সরানোর নেটওয়ার্ক গুলো ঠিকঠাক কাজ করল কিনা, তা নিয়েই সরকারের যত দুঃশ্চিন্তা। সরকার বাহাদুরের কাছে বদ লোকদের কদর বেশি। একজন তৌফিক-ই-এলাহী যে রাষ্ট্রের কত বড় ক্ষতি করতে পারে, তা তখন সরকার বুঝতে পারে না। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের দেশীয় এজেন্ট তখন জ্বালানী উপদেষ্টা সেজে দেশের তেল-গ্যাস-কয়লা বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আচ্ছা, মাগুরছড়ায় গ্যাস ফিল্ডের অগ্নিকাণ্ডে যে বিদেশী কোম্পানি জড়িত ছিল, তারা কি বাংলাদেশকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিয়েছে? সরকার বাহাদুর যে সেই ক্ষতিপূরণের টাকা তাদের মাফ করে দিয়েছে, তা কি দেশের ১৬ কোটি মানুষ জানে? ঢাকায় নিযুক্ত সেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়র্টের সঙ্গে এলাহী সাহেবের সেই যে দূতিয়ালি, তা কি বাংলাদেশ মনে রেখেছে? সেভরন, নাইকো, অক্সিডেন্টাল এরা কি বাংলাদেশের মানুষকে সেবা দিতে এসেছে বলে আপনাদের বিশ্বাস হয়? এলাহী সাহেবের ব্যাংক হিসাব কেন দুদক তলব করে না? প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলে?

বরং সারের জন্য এদেশের কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ফুলবাড়িতে কয়লা উক্তোলন নিয়ে সরকার বাহাদুর একচুলও ছাড় দিতে নারাজ। কানসাটের ঘটনা এখনো বাতাসে টের পাওয়া যায়। এতসব অনিয়মের পাহাড়কে আড়াল করার জন্য এদেরই মালিকদের তৈরি করা মিডিয়ায় একশ্রেণীর টকশো বন্দোবস্ত করে জনগণকে একধরনের ন্যাপকিন পরিয়ে রাখা হয়েছে। এই নাও, তোমরা কয়লা বিদ্যুতের আলোয় ঘরে বসে বসে টকশো দেখো। অথচ সুন্দরবনের কোনো মউয়াল বা কোনো জেলে কখনো বিদ্যুতের দাবিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যায়নি। তাদের বিদ্যুৎ দেবার নাম করে সরকারই এসব তামাশা খেলছে।

আর এসব টিকিয়ে রাখতে সরকারকে বেশি বেশি স্বৈরাচারি আচরণের উপরই জোর দিতে হচ্ছে। কারণ, জনগণের সাথে তো আর সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখানে জনসভায় টাকায় লোক ভাড়া পাওয়া যায়। এখানে ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য দলীয় চ্যালাচামুন্ডা পালতে হয়। কত কিসিমের ব্যাপার স্যাপার। সেসব আড়াল করতে ধর্মকে একটা জুতসই হাতিয়ার বানানো হয়েছে। কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করলেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার ঘটনা ঘটে। গোটা সিস্টেমটাকে একটা দুষ্টচক্রের খপ্পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাকে আমরা বলছি রাজনীতি। সেখানে গরীব কৃষক কি খেল না খেল, দুঃখে-কষ্টে থাকল কিনা, তা দেখার সময় কোথায়?

যতই দিন যাবে, এসব অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখতে সরকারকে তখন আরো বেশি বেশি বিদেশি শক্তির মুখাপেক্ষী হতে হবে। আরো বেশি সম্পদ তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। আরো বেশি নিপিড়ণমূলক আচরণেরর দিকে মনযোগ দিতে হবে। এভাবেই একটি গণতান্ত্রিক সরকার ধীরে ধীরে স্বৈরাচারে পরিনত হয়। এটাকে বলা যায় টেকঅফ স্টেজ। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেই দুষ্টুচক্রের টেকঅফ স্টেজ পাড়ি দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা মানে আপনি সরকারের দৃষ্টিতে জাতীয় দুশমন। কারা যে দুশমন সেই কথা কে কয়রে সূজন! ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে এখানে আর কি হবে? ধানের দামই যেখানে নাই। সেখানে শিবের আশির্বাদ কিভাবে পৌঁছাবে?

কৃষিমন্ত্রী যেমন বলেছেন, প্রাচুর্যের বিড়ম্বনা নিয়ে আমরা সাময়িক অসুবিধায় আছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যা কেটে যাবে। আহা মরি মরি। জয় হরি। জয় হরি।

.............................
২৩ মে ২০১৫
ঢাকা



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.